E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

গত শতাব্দীর ষাটের দশকের শুরুতে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে কমিউনিস্ট মতাদর্শগত বিতর্কের এক ঝাঞ্চামুখর সময়ে ভারতের অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টির মধ্যেকার সংশোধনবাদী নেতৃত্বের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের ধ্বনি তুলে সংবাদপত্র জগতের আঙ্গিনায প্রবেশ করেছিল সাপ্তাহিক ‘দেশহিতৈষী’। ১৯৬৩ সালের ১৬ই আগস্ট হলো সেই লাল অক্ষরে লেখা দিন, যেদিন দেশহিতৈষীর প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছিল। ১৭২, ধর্মতলা স্ট্রিট (দ্বিতল) ছিল তখন দেশহিতৈষীর ঠিকানা।

চিন-ভারত সীমান্ত সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে উগ্রজাতীয়তাবাদী আক্রমণ নেমে এসেছিল ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির ওপর। দেশজু্ড়ে নেমে এসেছিল গণতন্ত্র, নাগরিক স্বাধীনতা ও ব্যক্তি স্বাধীনতার ওপর আক্রমণ। দেশের চতুর্দিকে দেখা দিয়েছিল ক্ষুধার্ত ও নিরন্নদের হাহাকার। পশ্চিমবঙ্গের গ্রামে গ্রামেও দেখা দিল নিরন্ন মানুষের মিছিলের সারি। কমিউনিস্ট পার্টির মধ্যেও তখন চলছিল মতাদর্শের লড়াই। শ্রেণী সহযোগিতার লাইনের সঙ্গে শ্রেণী সংগ্রামের লাইনের লড়াই। পার্টির বিপ্লবী নেতারা – কমরেড মুজফ্ফর আহমদ, প্রমোদ দাশগুপ্ত, জ্যোতি বসু, হরেকৃষ্ণ কোঙার, সরোজ মুখার্জি প্রমুখ নেতৃবৃন্দ তখন ভারতরক্ষা আইনে কারাবন্দী। রাজ্যের কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যদের মধ্যে বিপুল সংখ্যাধিক্য অংশ তখন শ্রেণী সহযোগিতার লাইনের বিরুদ্ধে, ক্ষুধা, অনাচার ও কংগ্রেসী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার দাবিতে মত প্রকাশ করতে শুরু করেন। বন্দীমুক্তির দাবী নিয়ে হাজার হাজার পার্টি সদস্য ও সমর্থক আন্দোলন শুরু করলেন। সেই সময়ে, সংশোধনবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামের প্রয়োজনে, পার্টির মার্কসবাদী-লেনিনবাদী অংশকে সংগঠিত করার প্রয়োজনে এবং ক্ষুধা-অনাহার সহ কংগ্রেসী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে মানুষকে সমবেত করার প্রয়োজনে একটি পত্রিকার তখন খুবই প্রয়োজন অনুভূত হচ্ছিল। কমরেড সমর মুখ্যার্জি এবং কমরেড বিনয় চৌধুরীর প্রেরণায় উৎসাহিত হয়ে ন্যাশনাল বুক এজেন্সি এবং হাওড়ার কমরেডদের সাহায্যে হাতে তুলে দেন। ‘হাওড়া হিতৈষী’ নাম পরিবর্তিত হয়ে প্রকাশিত হয় ‘দেশহিতৈষী’ নামে।

পার্টির বিপ্লবী অংশের সিদ্ধান্ত মতই দেশহিতৈষীর সম্পাদকমন্ডলীর সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন প্রখ্যাত সাংবাদিক কমরেড মোহিত মৈত্র। পার্টির পক্ষ থেকে ‘দেশহিতৈষী’ পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেন সুধাংশু দাশগুপ্ত। ১৯৬৪ সালে কলকাতায় পার্টির সপ্তম কংগ্রেস (৩১শে অক্টোবর – ৭ই নভেম্বর) অনুষ্ঠিত হওয়ার পর সিপিআই(এম) গঠিত হলে ‘দেশহিতৈষী’ পার্টির সাপ্তাহিক পত্রিকা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।

দেশহিতৈষীকে কেবল সংশোধনবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে হয়নি, নকশালপন্থী হঠকারিতার বিরুদ্ধেও সংগ্রাম করতে হয়েছে। বিগত পঞ্চাশ বছরের দীর্ঘ যাত্রাপথে মতাদর্শগত সংগ্রামের সাথে সাথে বর্তমান রাষ্ট্রকাঠামোয় পুঁজিপতি, সামন্তপ্রভুদের শোষণ-নিপীড়ন-বঞ্চনার বিরুদ্ধে মেহনতি মানুষকে একত্রিত করবার কাজেও ‘দেশহিতৈষী’ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। শ্রমিক-কৃষক-মধ্যবিত্ত-ছাত্র-যুব-মহিলাসহ সমাজের সব অংশের সংগ্রামী মানুষের আন্দোলনের ইতিবৃত্ত দেশহিতৈষীর পাতায় মূর্ত হয়ে আছে। সাপ্তাহিক পত্রিকা ছাড়াও দেশহিতৈষীর বিশেষ শারদ সংখ্যা পাঠক মহলে সমাদৃত। সোভিয়েত ইউনিয়ন সহ পূর্ব ইউরোপে সমাজতন্ত্রের বিপর্যয়ের পরবর্তীতে বিশ্বব্যাপী মার্কসবাদ-লেনিনবাদ বিরোধী কুৎসা ও অপপ্রচারের আবহেও ‘দেশহিতৈষী’ দৃঢ় মতাদর্শগত অবস্থান নিয়ে শোষণহীন সমাজব্যবস্থা গঠনের লক্ষ্যে অবিচল।

আগামী দিনেও শোষণ মুক্তির সংগ্রামে জনসাধারণকে সমবেত করবার যথাসাধ্য উদ্যোগ গ্রহণ করে চলবে ‘দেশহিতৈষী’।

১৯৭০ সালের আগস্ট মাসে দেশহিতৈষীর দপ্তর স্থানান্তরিত হয় ৩৩, আলিমুদ্দিন স্ট্রীট ঠিকানায়।
১৯৮০ সাল থেকে দেশহিতৈষীর ঠিকানা ৩১, আলিমুদ্দিন স্ট্রীট, কলকাতা-৭০০০১৬।



কমরেড মোহিত মৈত্র


দেশহিতৈষীর প্রথম সম্পাদকমন্ডলীর সভাপতি
কার্যকাল – সূচনা সময় থেকে ১৯৬৬ সালের ১৮ই নভেম্বর পর্যন্ত।

জন্ম ১৮৯৮ সালে রাজশাহী জেলার নাটোরে। ১৯১৬ সালে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় ইতিহাসে স্বর্ণপদকসহ প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। কলকাতার সেন্ট পলস্ কলেজ থেকে ইতিহাসে অনার্স সহ বিএ। কলেজের পড়ার সময়ই ১৯১৯ সালে জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে ছাত্রদের সংগঠিত করতে গিয়ে কলেজ হোস্টেল থেকে বিতাড়িত হন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাসে এমএ ক্লাসে ভর্তি হন। কিন্ত্ত অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দিয়ে গ্রেপ্তার হন। ফলে পড়ায় ছেদ পড়ে। জেল থেকে ছাড়া পেয়ে তিনি দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ প্রতিষ্ঠিত ‘ফরওয়ার্ড’ কাগজে যোগ দেন। এই সময়ে তিনি সুভাষচন্দ্র বসু ও শরৎচন্দ্র বসুর সংস্পর্শে আসেন। এরপর তিনি ‘লিবার্টি’ এবং ‘বাংলার কথা’ কাগজে দায়িত্ব সহকারে কাজ করেন।

মোহিত মৈত্র ১৯২৬ সালে ভারতীয় সাংবাদিক সংঘের সহ-সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৩৭ সালে ‘অমৃতবাজার’ পত্রিকায় যোগ দেন। ১৯৪৯ সালে তিনি শরৎচন্দ্র বসুর ‘দ্য নেশন’ পত্রিকায় যোগ দেন এবং কিছুদিন পর ঐ পত্রিকার সম্পাদক হন। ১৯৫৩ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৫৬ সালে বঙ্গ-বিহার সংযুক্তি বিরোধী আন্দোলনে যোগ দিয়ে কারারুদ্ধ হন। ১৯৫৬ সালেই লোকসভা উপনির্বাচনে কংগ্রেসের প্রার্থী অশোক সেনকে পরাজিত করে বামপন্থী সমর্থিত প্রার্থী হিসাবে জয়ী হন। ১৯৫৭ সালে তিনি কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যপদ অর্জন করেন। ঐ বছরই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষক নিযুক্ত হন। ১৯৬৩ সালের আগস্ট মাসে তাঁরই সম্পাদনায় ‘দেশহিতৈষী’ প্রকাশিত হয়।

১৯৬৪ সালে কমরেড মোহিত মৈত্র সিপিআই(এম) রাজ্য কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। তারপরেই তাঁকে ভারতরক্ষা আইনে কারারুদ্ধ করা হয়। ১৯৬৬ সালে খাদ্য আন্দোলনের সময় তিনি আবার বিনা বিচারে আটক হন।

তিনি ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। অসুস্থ অবস্থাতেই 'History of Indian Journalism' গ্রন্থটি রচনা করেন। ১৯৬৬ সালের ১৮ই নভেম্বর তাঁর জীবনাবসান ঘটে।



কমরেড সুধাংশু দাশগুপ্ত


সম্পাদক- ১৯৬৬ সালের ১৯শে নভেম্বর থেকে ২০০২ সালের ১৭ই মে পর্যন্ত।

জন্ম ১৯১২ সালের ৩০শে জানুয়ারী বরিশালে। কিশোর বয়সে স্কুল ছাত্র জীবনেই স্বাধীনতার জন্য দীক্ষিত হয়েছিলেন বিপ্লবী মন্ত্রে। নিরঞ্জন সেন, সতীশ পাকড়াশী প্রমুখ সশস্ত্র বিপ্লবীদের নেতৃত্বে যোগ দিয়েছিলেন রিভোল্ট গ্রুপে। কৃতিত্বের সাথে আইএসসি পরীক্ষায় পাশ করার পর কলকাতায় আসেন ডাক্তারী পড়তে। ভর্তি হন তৎকালীন কারমাইকেল মেডিক্যাল কলেজে (এখনকার আর. জি. কর হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজ)। ঐ বছরই গ্রেপ্তার হন কলাবাগান বস্তিতে বোমা পৌঁছতে গিয়ে। মেছুয়াবাজার বোমা মামলায় নিরঞ্জন সেন, সতীশ পাকড়াশী ও সুধাংশু দাশগুপ্ত অন্যতম আসামী হিসাবে অভিযুক্ত হন। ১৯৩০ সালে আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে বন্দী থাকার সময় কমিউনিস্ট নেতা আবদুল হালিমের সাথে পরিচিত হন। সেখানেই সুধাংশু দাশগুপ্ত ‘কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো’ পাঠ করেন এবং নতুন আদর্শে উদ্বুদ্ধ হন। ১৯৩২ সালে সুধাংশু দাশগুপ্ত আন্দামানে নির্বাসিত হন। সেখানে কমিউনিস্ট কনসলিডেশনে যোগ দেন এবং মার্কসবাদী হয়ে ওঠেন।

১৯৩৪ সালে তাঁকে আন্দামান থেকে কলকাতার আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে নিয়ে আসা হয়। কিছুদিন পর মুক্তি পেয়ে বরিশালে ফিরে যান। সেখানে বিএম কলেজ থেকে বিএ পাশ করে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাসে এমএ পড়েন। ১৯৩৬ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় কমরেড পি. সি. যোশীর সুপারিশে তিনি কমিউনিস্ট পার্টির সভ্যপদ অর্জন করেন। এমএ পাশ করার পর তিনি ট্রেড ইউনিয়ন ফ্রন্টে কাজ শুরু করেন। ১৯৪০ সালে তিনি পার্টির পত্র-পত্রিকার সাথে যুক্ত হন।

বিভিন্ন সময় তিনি জনযুদ্ধ, দৈনিক স্বাধীনতা, নিউ এজ, ক্রশ রোড ইত্যাদি পার্টি পত্রিকায় দায়িত্বপূর্ণ পদে কাজ করেন। ১৯৫৪ সাল থেকে ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত কমিউনিস্ট আন্দোলনে সংশোধনবাদের বিরুদ্ধে যে মতাদর্শগত বিতর্ক ও সংগ্রাম চলে সুধাংশু দাশগুপ্ত তাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৬৩ সালে সংশোধনবাদী নেতৃত্ব কর্তৃক তিনি ‘স্বাধীনতা’ থেকে বরখাস্ত এবং পার্টি থেকে বিতাড়িত হন। কমরেড প্রমোদ দাশগুপ্তের নেতৃত্বে পার্টির মার্কসবাদী নেতৃত্ব জেল থেকে ছাড়া পেয়েই সুধাংশু দাশগুপ্তকে তাঁর পার্টি সদস্যপদ ফিরিয়ে দেন।

১৯৬৩ সালের ১৬ই আগস্ট ‘দেশহিতৈষী’ প্রকাশিত হলে তিনি সম্পাদকমন্ডলীর অন্যতম সদস্য নির্বাচিত হন। নেতৃত্বের পক্ষ থেকে ‘দেশহিতৈষী’ পরিচালনার দায়িত্ব তাঁকেই দেওয়া হয়। সুধাংশু দাশগুপ্তের পরিচালনায় ‘দেশহিতৈষী’ সংশোধনবাদ এবং সঙ্কীর্ণতাবাদের বিরুদ্ধে মতাদর্শগত সংগ্রামে ইতিহাস হয়ে আছে। ১৯৬৪ সালে সুধাংশু দাশগুপ্ত পার্টির রাজ্য কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন এবং পার্টি কংগ্রেসের পরেই ভারতরক্ষা আইনে গ্রেপ্তার হন। ১৯৬৬ সালের ৫ই মে মুক্তি পান।

১৯৬৬ সালের ১৮ই নভেম্বর মোহিত মৈত্র প্রয়াত হলে সুধাংশু দাশগুপ্ত দেশহিতৈষীর সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৭২ থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত তিনি পার্টির রাজ্য সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য এবং পার্টির শিক্ষা সাব-কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন। ২০০২ সালের মে মাসের তিনি শারীরিক অসুস্থতার জন্য সম্পাদকের দায়িত্ব ত্যাগ করেন। মার্কসবাদ-লেনিনবাদ চর্চার বহু পুস্তকের তিনি রচয়িতা। ২০০৩ সালের ১০ই মে সুধাংশু দাশগুপ্তর জীবনাবসান ঘটে।



কমরেড মনোরঞ্জন বড়াল


১৯১৯ সালের নভেম্বর মাসে তৎকালীন ফরিদপুর এবং বরিশাল জেলার সীমান্তবর্তী এক গ্রামে তপসিলী জাতিভুক্ত দরিদ্র দিন মজুর পরিবারে মনোরঞ্জন বড়াল জন্মগ্রহণ করেন। প্রচন্ড দারিদ্র্যের মধ্যে তাঁর শৈশব, বাল্য এবং কৈশোর অতিবাহিত হয়। দারিদ্র্যের মধ্যেই নিজের অধ্যাবসায়ে তিনি ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় বাংলা ভাষায় লেটারসহ কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হন। বরিশালের ব্রজমোহন কলেজে উচ্চশিক্ষার জন্য ভর্তি হন। কিন্তু প্রচন্ড দারিদ্র্যের কারণে কলেজ শিক্ষা বন্ধ হয়ে যায়। কলেজে পড়ার সময়েই তিনি ছাত্র ফেডারেশনের সভ্য হন। ১৯৪০ সালে জীবিকার সন্ধানে মনোরঞ্জন বড়াল কলকাতায় চলে আসেন। গৃহশিক্ষকতা করেই তিনি জীবনযাপন করতে থাকেন। এই সময়ে ফ্যাসিবাদবিরোধী প্রচার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তিনি হীরেন মুখার্জি, গোপাল হালদার, রাধারমণ মিত্র, নীরেন রায় প্রমুখের সংস্পর্শে আসেন। ১৯৪২ সালে কমিউনিস্ট পার্টির সভ্য হন। ১৯৪৫ সালে ‘স্বাধীনতা’ পত্রিকায় যোগ দেন। ১৯৪৮ সালে পার্টি নিষিদ্ধ ঘোষিত হলে ‘স্বাধীনতা’ প্রকাশ বন্ধ হয়ে যায়। মনোরঞ্জন বড়াল তখন পার্টি কমিশনার্স অফিসে লাইব্রেরিয়ান পদে কাজে যোগ দেন। ১৯৫১ সালে ‘স্বাধীনতা’ পুনঃপ্রকাশিত হলে তিনি আবার সেখানে ফিরে আসেন। ১৯৬২ সালের শেষ দিকে তিনি ‘স্বাধীনতা’ পরিত্যাগ করেন।

১৯৬৩ সালে আগস্ট মাসে ‘দেশহিতৈষী’ প্রকাশিত হলে তিনি সেখানে শুরু থেকেই যোগ দেন। আমৃত্যু তিনি দেশহিতৈষীতেই ছিলেন। দেশহিতৈষীতে নিজের নামে ছাড়াও ‘যদুনাথ বসু’, ‘শুক্লা সোম’ নামেও তিনি লিখে গেছেন। ‘ভাসমান’ নাম নিয়ে ‘প্রবহমান দুনিয়া’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক বিষয়ের লেখাগুলি মনোরঞ্জন বড়ালই লিখেছেন। ১৯৬৯ সালে মনোরঞ্জন বড়াল কলকাতার দক্ষিণ বেলেঘাটা কেন্দ্র থেকে বিধানসভায় নির্বাচিত হয়েছিলেন। ‘পথ সংকেত’ নামে একটি মাসিক পত্রিকারও তিনি প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। বেশ কিছু পুস্তকও তিনি রচনা করে গেছেন। ২০০০ সালের ২৯শে সেপ্টেম্বর মনোরঞ্জন বড়ালের জীবনাবসান ঘটে।



কমরেড শৈলেশ চৌধুরী


জন্ম ১৯২৫ সালের ২১শে নভেম্বর ঢাকার বিক্রমপুরের নবাবগঞ্জ থানা। স্কুল শিক্ষা জীবনের শেষে স্বাধীনতা আন্দোলনের সংস্পর্শে আসেন এবং স্বাধীনতা সংগ্রামের বিপ্লববাদী সংগঠন অনুশীলন সমিতির দ্বারা প্রভাবিত হন। ঢাকায় ঢাকেশ্বরী কটন মিলে কাজে যোগ দেন। সেখানে শ্রমিক আন্দোলনের সাথে যুক্ত হন। কমিউনিস্ট পার্টির সাথে যোগাযোগ গড়ে ওঠে। ১৯৪১ সালে ঢাকায় ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যপদ অর্জন করেন। ১৯৪২ সালে ঢাকায় ফ্যাসিবাদ বিরোধী মিছিলে অংশ নেন। দেশ ভাগের পর তিনি পশ্চিমবঙ্গে চলে আসেন। বিভিন্ন বেসরকারী সংস্থায় কিছুদিন চাকুরি করেন। ১৯৫১ সালে কমিউনিস্ট পার্টির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হলে দৈনিক ‘স্বাধীনতা’ পত্রিকা পুনঃপ্রকাশিত হয়। শৈলেশ চৌধুরী ‘স্বাধীনতা’-য় যোগ দেন। ১৯৬৩ সালে ‘স্বাধীনতা’ পার্টির সংশোধনবাদী নেতৃত্বের হাতে চলে গেলে তিনি ‘স্বাধীনতা’ ছেড়ে চলে আসেন।

১৯৬৩ সালের ১৬ই আগস্ট ‘দেশহিতৈষী’ প্রকাশিত হলে তিনি প্রথম থেকেই তাতে যোগদান করেন। ১৯৬৪ সালে পার্টি ভাগের পর তিনি সিপিআই(এম)-এ যোগ দেন। মৃত্যুর দিন পর্যন্ত তিনি দেশহিতৈষীর কাজের সাথে নিজেকে যুক্ত রেখে গেছেন। শ্রমিক-কৃষকের জীবন ও সংগ্রামের নানা কাহিনী তাঁর কলমে মূর্ত হয়ে দেশহিতৈষীর পাতায় ছড়িয়ে আছে। ২০০৯ সালের ১২ই জানুয়ারী শৈলেশ চৌধুরী প্রয়াত হন।