E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৯ বর্ষ ৩৩ সংখ্যা / ১ এপ্রিল, ২০২২ / ১৭ চৈত্র, ১৪২৮

সাধারণ ধর্মঘট

স্বতঃস্ফূর্ত অবরোধ বিক্ষোভ মিছিলে উত্তাল রাজ্য


দুর্গাপুরে জাতীয় সড়ক অবরোধ ধর্মঘটীদের।

নিজস্ব সংবাদদাতাঃ মানুষ মারা নীতির দুই ঠিকাদার - রাজ্যে তৃণমূল আর কেন্দ্রে বিজেপি দমাতে পারল না বাংলার প্রতিবাদী মননকে। ১২ দফা দাবিতে দেশব্যাপী ২৮-২৯ মার্চ সাধারণ ধর্মঘটে শামিল হয়ে ঐতিহ্যবাহী ভূমিকা পালন করলেন পশ্চিমবঙ্গের সাধারণ মানুষ। উত্তরের জলপাইগুড়ির চা বাগানের বনধ থেকে দক্ষিণের বাসন্তী হাইওয়ে এবং পূর্ব মেদিনীপুরের জাতীয় সড়ক অবরোধের মধ্যদিয়ে আরও একবার নীতি বদলে তৎপর হতে ঐক্যবদ্ধ হুঁশিয়ারি দিলেন তাঁরা দেশের শাসক শ্রেণিকে।

কৃষকদের ফসলের লাভজনক দর, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বেচে দেওয়া, কাজের দাবি বাতিলসহ একাধিক দাবিতে কেন্দ্রের মোদি সরকারের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী ৪৮ঘণ্টার ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশনসমূহ। শুরু থেকেই এই রাজ্যে সেই ধর্মঘট ভাঙতে সক্রিয় ছিল মমতা ব্যানার্জির পুলিশ। বিনা প্ররোচনাতেই অধিকাংশ জায়গায় ধর্মঘটীদের ওপর চড়াও হয় পুলিশ। এর আগেই নির্দেশিকা জারি করে ধর্মঘট বিরোধী অবস্থান স্পষ্ট করেছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। আরও একধাপ এগিয়ে এফআইআর করার জন্য প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। এমনকি তৃণমূল কর্মীরা পর্যন্ত দলীয় পতাকা নিয়ে মিছিল করে ধর্মঘটের বিরোধিতায় নামে। তবে ধর্মঘট আটকানো যায়নি সেটা মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়াতেই স্পষ্ট। তিনি ধর্মঘটের সাফল্যকে গুন্ডামি করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন। এছাড়াও তিনি বলেছেন, ইস্যুকে আমরা সমর্থন করি বনধকে সমর্থন করি না। মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য প্রসঙ্গে সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেন, ‘কেন্দ্রের যে আর্থিক নীতির বিরুদ্ধে মানুষের প্রতিবাদ মমতা ব্যানার্জি নিজেই তা অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলেন তাই এই নীতির বিরুদ্ধে কেউ কথা বললেই উনি ভাবেন এটা ওনার বিরুদ্ধে বলা হচ্ছে। ...’ মহম্মদ সেলিম আরও বলেন, ‘বনধ কেন’ উনি মিছিল করার বিরুদ্ধে। পোস্টার লাগানোর বিরুদ্ধে। বিরোধী দলের অফিস খোলার বিরুদ্ধে। আসলে উনি গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে। ধর্মঘট হচ্ছে শ্রমজীবী মানুষের হাতিয়ার।

ধর্মঘটে উত্তরবঙ্গে ডুয়ার্সের বানারহাট থানার ২৪ টি চা বাগানের মধ্যে বানারহাট বিন্নাগুড়ি, কলাবাড়ি, তোতাপাড়া, মোগলকাটা সহ ১৮ টি ছিল পুরোপুরি বন্ধ। বাকি ৬টি বাগানে পুলিশ কিছু শ্রমিককে চাপ দিয়ে কাজে যোগ দিতে বাধ্য করে। চা শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি, জমির পাট্টা সহ আরও কিছু দাবি ধর্মঘটের মূল দাবিগুলির সঙ্গে যুক্ত করে প্রচার হয় ধর্মঘট ঘোষণার প্রাথমিক পর্ব থেকেই। ২৮ তারিখ বিন্নাগুড়ি থেকে হাজারো শ্রমিকের মিছিল যায় হলদিবাড়ি মোড়ে মালিকদের সংগঠনের অফিসে। অফিস ঘেরাও করে বিক্ষোভ চলে। তরাই এর ৪৫টি চা বাগানের ১৫টিতে ধর্মঘট সফল হয়েছে ১০০ শতাংশ। আলিপুরদুয়ার জেলার ২১টি চা বাগানের মধ্যে আটটি বাগান পুরোপুরি বন্ধ ছিল। অন্যত্র শ্রমিকদের উপস্থিতি ছিল ৫০ শতাংশের মতো। তৃণমূল এবং বিজেপি শ্রমিকদের মধ্যে ন্যূনতম মজুরি স্থির করার গুজব ছড়িয়ে পুলিশকে কাজে লাগিয়ে কয়েকটি বাগান চালু রাখে। মেটেলি ব্লক এর সোনাগাছি চা-বাগানে লাল ঝান্ডা হাতে দিয়ে শ্রমিকরা কাজ বন্ধ করে বাগানের বাইরে এসে রেললাইন অবরোধ করেন। মেটেলি বাজারের ট্যাক্সি স্ট্যান্ড পিকেটিং করায় তিনজন শ্রমিককে পুলিশ গ্রেপ্তার করে।

ধর্মঘটে অংশ নিতে বারাকপুর শিল্পাঞ্চলে চটকল মহল্লায় ভোর থেকেই শ্রমিকদের কারখানার ভেতরে ঢোকানোর চেষ্টা চালায় পুলিশ তৃণমূল যৌথ বাহিনী। এমনকি কোথাও কোথাও শ্রমিকদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে আসে কাজে যোগ দেওয়ার জন্য। কিন্তু নৈহাটি জুট মিলের গেটের সামনে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লাল ঝান্ডা নিয়ে শ্রমিকরা ধর্মঘটের সমর্থনে হাজির ছিলেন। প্রশাসন এবং মিল কর্তৃপক্ষ তৃণমূলের সঙ্গে মিলে ২৭ মার্চ রাতের শিফটে কাজ করা শ্রমিকদের একাংশকে মিলের ভেতরে আটকে রাখেন, তাদের দিয়ে ডবল শিফটে কাজ করিয়ে মিল চালু রাখতে চেষ্টা করেন। কিন্তু এত চেষ্টা সত্ত্বেও নৈহাটি জুট মিলে ওইদিন মাত্র ৩০শতাংশ শ্রমিক কাজে যোগ দিয়েছেন। জগদ্দলের জেজেআই জুট মিলে এদিন স্পিনিং বিভাগ থেকে প্যাকেজিং বিভাগ সর্বসাকুল্যে মাত্র কুড়ি শতাংশ শ্রমিককে জোর করে কাজ করতে বাধ্য করে তৃণমূল। কিন্তু সকাল এগারোটার শিফটে শ্রমিক না ঢোকায় মিল বন্ধ করে দেওয়া হয়। কাঁকিনাড়া নফর চাঁদ জুট মিল সকাল থেকেই পুরোপুরি বন্ধ ছিল।

জুট মিলের পাশাপাশি শিল্পাঞ্চলে ধর্মঘটের পক্ষে রাস্তায় থাকা পার্টি নেতা ও কর্মীদের পিকেটিং করার অপরাধে গ্রেফতার করার চেষ্টা করে পুলিশ। বারাকপুর থেকে ভাটপাড়া অবধি এবং বারাকপুর কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ে সহ প্রায় ৭ জায়গায় রাস্তা অবরোধ হয়। শ্যামনগরে রেল অবরোধ হয়। পুলিশ দিয়ে ধর্মঘট ভাঙার চেষ্টা সফল হয়নি।

২৮-২৯ মার্চ দুদিনই হাওড়া জেলার সর্বত্র সকাল থেকেই ধর্মঘট সর্মথকরা রাস্তায় মিছিল অবরোধ ও পিকেটিং শুরু করেন। জেলার গ্রাম অঞ্চল ও শহরাঞ্চলে অনেকাংশেই যান চলাচল বন্ধ ছিল। পুলিশ এবং শাসকদলের কর্মীরা জোর করে বাস চালাতে গেলে বচসা বাধে। তবে যানবাহনগুলিতে সামগ্রিকভাবেই কম ছিল যাত্রী সংখ্যা। শ্যামপুর বাগনান উলুবেরিয়া আমতা ডোমজুড় লিলুয়া বালি শিবপুর কোনা এক্সপ্রেসওয়ে ও হাই রোড অবরোধ করা হয়। অবরোধকারীদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তির পর ১৫ জনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। আবার হাওড়া জেলার উলুবেড়িয়ায় কুলগাছিয়া স্টেশনের কাছে আন্দোলনরত ধর্মঘটীদের উপর দিয়েই রেল চালিয়ে দেবার মতো ঘটনা ঘটে। ডাউন মেচেদা শালিমার লোকাল অবরোধ সত্ত্বেও না থেমে চালিয়ে দেওয়া হলে আহত হন কয়েক জন। জেলার জুটমিলগুলির কয়েকটিতে ধর্মঘটের প্রভাব পড়েছে। নর্থ মিল নিউ মিল সহ জালাল কমপ্লেক্স এবং উলুবেড়িয়া গ্রুপ সেন্টারের কারখানাগুলোর বেশিরভাগ ছিল বন্ধ। বিআইসি, এইচডিএস, এজি কাস্ট, ভারত রোল সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল। ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশন এর মৌড়িগ্রামে লোডিং সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ব্রিজ অ্যান্ড রুফ কারখানায় কয়েকজন শ্রমিক মাত্র কাজে যোগ দিয়েছেন। জেলার কয়েকটি স্টেট ব্যাংকের শাখা ছাড়া সমস্ত ব্যাংকের শাখা বন্ধ ছিল। সর্বত্রই পোস্ট অফিস বন্ধ থেকেছে। স্কুল কলেজ খোলা থাকলেও ছাত্র-ছাত্রীদের সংখ্যা ছিল কম। হাওড়া আমতা এলাকার সারদা গ্রামে আনিস খানের হত্যার ন্যায়বিচারের দাবিতে মিছিলে পা মিলিয়েছেন খুন হওয়া ছাত্রনেতার দাদা সাবির খান।

হুগলিতে দিল্লি রোডের দু’ধারে অধিকাংশ কলকারখানায় বন্ধ ছিল। জুটমিলগুলিতে তৃণমূলীরা বেশ কয়েকটি জায়গায় শ্রমিকদের কাজে যোগ দিতে বাধ্য করে। ব্যাংক-বিমা পোস্ট অফিস অধিকাংশ জায়গাতেই বন্ধ ছিল। যান চলাচল স্বতঃস্ফূর্ত ছিল না। আরামবাগ হুগলি ডানকুনি হাজিগড় বিভিন্ন জায়গায় অবরোধ চলাকালে পুলিশ ধর্মঘট কারীদের হেনস্থা করে। পান্ডুয়া, শ্রীরামপুর এবং কোন্নগর স্টেশন এ অবরোধ হয়। আরামবাগে নেতাজি স্কোয়ার অবরোধ করে ধর্মঘটকারীরা। কাজ হয়নি আরামবাগ আদালতেও। এর পাশাপাশি ধনিয়াখালি গৌরব সিঙ্গুর বাজার প্রভৃতি জায়গায় পথ অবরোধ হয়। ব্যান্ডেলের রবীন্দ্রনগর বাজারে জিটি রোড অবরোধ হয়েছে চুঁচুড়ায় চন্দননগরে মিছিল হয়েছে এবং বাসস্ট্যান্ডে পিকেটিং হয়। সরকারি বাসে যাত্রী কম ছিল। আইসিডিএস সেন্টার গুলো নব্বইভাগ বন্ধ ছিল। ডানকুনিতে বন্ধ থেকেছে কল কারখানা। জাঙ্গিপাড়ায় রাজ্য সরকারি দপ্তর গুলিতে কর্মীদের হাজিরা কম ছিল।

পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার গ্রামীণ ও জঙ্গলমহল এলাকায় ধর্মঘটে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। এই জেলার তিনটি জাতীয় সড়কের ন’টি জায়গায় এবং রাজ্য সড়কগুলোর তেত্রিশটি জায়গায় অবরোধ বিক্ষোভ হয়। অবরোধকারীদের ওপর চড়াও হয় পুলিশ। নারায়ণগড়-এর সুপ্রিম কারখানার গেটে পিকেটিং, ১৬ নম্বর জাতীয় সড়ক এবং ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের বেশ কিছু জায়গায় অবরোধ করা হয়। মেদিনীপুর শহরের জেলা পরিষদ মার্কেট কমপ্লেক্সের ছোটো ব্যবসায়ীরা ধর্মঘটে শামিল হন এবং দোকান বন্ধ রাখেন। শহর জুড়ে গড়ে ওঠা বড়ো বড়ো মলগুলিও বন্ধ থাকে। অন্যান্য জেলার মতো এখানেও ব্যাংক পোস্ট অফিস বন্ধ থাকে। জেলার চারটি আদালতে ধর্মঘটে শামিল হন বহু আইনজীবী ও আদালত কর্মীরা। কোল্ডস্টোরেজ এবং ইটভাটা শ্রমিকরাও এখানে কাজে যোগ দেননি।

ঝাড়গ্রাম জেলার জঙ্গলমহলে এলাকায় ধর্মঘটে শামিল হন আদিবাসীরা। ধর্মঘটে ব্যাহত হয় বেসরকারি যানচলাচল, হাট-বাজার, পঞ্চায়েতের কাজকর্ম। পথ অবরোধ হয় ঝারগ্রাম শিলদা বেলপাহাড়ি রামগড় লালগড় বল্লভপুর প্রভৃতি এলাকায়। শ্রমিক নেতা তারিনি মাহাতো বিকাশ মাহাতো সহ ২২ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

উত্তর ২৪ পরগনার প্রায় সর্বত্রই সকালে মিছিল হয়, জাতীয় সড়ক অবরোধ করা হয়। রেল অবরোধ হয় শ্যামনগর, বেলঘড়িয়া, বামনগাছি স্টেশনে। পথ অবরোধ করা হয় নৈহাটি সাহেব কলোনি মোড়, শ্যামনগর চৌরঙ্গী মোড়, ইছাপুরের বাদামতলা অশোকনগর রাইফেল ফ্যাক্টরি, বিটি রোড, বরানগর, পানিহাটি ভিআইপি রোড বাগুইআটি কেষ্টপুর যশোর রোডের কালিন্দী, লেকটাউন, বাঙ্গুর, নাগেরবাজার সহ অন্যান্য জায়গায়। ধর্মঘটের সমর্থনে মিছিল হয়েছে জেলার বারাসাত, বনগাঁ, দক্ষিণ দমদম, দমদম রোড অন্যত্র। সেক্টর ফাইভে কর্মীদের উপস্থিতিও অন্যদিনের তুলনায় কম ছিল ধর্মঘটের দিনগুলিতে।

দক্ষিণ ২৪ পরগনার সর্বত্র সকাল থেকেই ধর্মঘটের সমর্থনে বামপন্থী কর্মী ও সমর্থকরা রাস্তায় নেমেছেন। শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখার যাদবপুর ধামুয়া দক্ষিণ বারাসাত মথুরাপুর সন্তোষপুর স্টেশন ট্রেন অবরোধ হয়। জেলায় সরকারি পরিবহণ চললেও তাতে যাত্রী তেমন ছিল না। বজবজ জুটমিল বেলাপুর জুট মিলের প্রায় ৮ হাজার শ্রমিক ধর্মঘটকে সমর্থন করে সম্পূর্ণ বন্ধ থাকে মিল। বিষ্ণুপুরের অস্টিন সেঞ্চুরি প্লাইউড কারখানাসহ বন্ধ থাকে অধিকাংশ কারখানা। ব্যাংক পোস্ট অফিস অধিকাংশই বন্ধ ছিল। সরকারি ফতোয়ার জেরে শিক্ষকদের স্কুলে হাজির হতে হয়।

কলকাতায় মুটিয়া মজদুরদের মিছিল।

কলকাতার বেশ কিছু জায়গায় ধর্মঘটকে বানচাল করতে তৎপর ছিল এ রাজ্যের পুলিশ প্রশাসন। বেশ কিছু জায়গায় ধর্মঘট সমর্থনকারীদের ওপর আক্রমণ নামিয়ে আনে কলকাতা পুলিশ এবং গ্রেপ্তার করা হয় অনেককেই। ধর্মঘটের প্রথমদিন যাদবপুর ৮বি এলাকা থেকে মিছিল হয় তারপর দীর্ঘক্ষণ যাদবপুর রেল অবরোধ করে রাখেন আন্দোলনকারীরা। রাজা বাজারের মোড়ে ধর্মঘটের সমর্থনে মিছিল ও পথ অবরোধ রুখতে আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশ চড়াও হয়। এর পাশাপাশি গোলপার্ক সার্দান অ্যাভিনিউ প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন চত্বরে রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে ধর্মঘটের সমর্থনে স্লোগান তোলা হয়। বড় বাজারের পোস্তা এলাকায় শ্রমিকদের ধর্মঘট প্রথম দিনের ধর্মঘটকে নতুন মাত্রা দেয়। এর পাশাপাশি প্যাটর্ন ট্যাংক কোম্পানি ভারত কার মাল কারখানা এবং ইন্ডিয়ান অয়েলে ধর্মঘটে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। হোসিয়ারি শিল্পের ৬৫ শতাংশ কর্মী ধর্মঘটকে সমর্থন জানিয়েছেন।

বর্ধমানের বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্রগুলি সহ ইসিএল’র অন্যতম বৃহত্তম কয়লা খনি প্রকল্প তাজমহলে ১০০ শতাংশ সফল ধর্মঘট হয়েছে। অন্যদিকে রানীগঞ্জ কয়লা অঞ্চলে কর্তৃপক্ষ পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন ধর্মঘট বিরোধী অবস্থান নিলেও ধর্মঘটী শ্রমিক এবং সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ এবং বিক্ষোভের জেরে আটক কর্মীদের ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় পুলিশ। একইসঙ্গে আসানসোল দুর্গাপুর রানীগঞ্জ জামুরিয়া বরাকর কুলটি সহ জেলার সর্বত্র গণপরিবহণ বন্ধ ছিল। কোলিয়ারি ডিভিশনের খনিতে ধর্মঘট সর্বাত্মক সফল হয়েছে। পিসিবিএল, এবিএল, এসপিএস প্রভৃতি ক্ষুদ্র মাঝারি লৌহ ইস্পাত কারখানায় ধর্মঘটের প্রভাব আংশিক। বাঁকুড়া মোড়ে পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে নরেন্দ্র মোদির কুশপুতুল পোড়ায় বিক্ষোভকারীরা। বর্ধমানের কৃষিপ্রধান কালনা মহাকুমার পঞ্চাশটি চিঁড়ে কলে কাজ হয়নি।

যাদবপুর স্টেশনে ধর্মঘটীদের রেল অবরোধ।

২৯ মার্চ মধ্য কলকাতায় ট্রেড ইউনিয়নগুলোর ডাকা একটি মিছিলে অংশ নিয়ে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু সাংবাদিকদের বলেছেন কেন্দ্র ও রাজ্যের সরকার মিলিতভাবে মানুষের কাজ কেড়ে নিচ্ছে। কর্মনাশ করছে তার প্রতিবাদ তো হবেই। এদিন মহম্মদ সেলিম বলেন, সাধারণ মানুষ যখন রাস্তায় নেমে সারাদেশে মোদি সরকারের অর্থনীতির বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছে তখন তাদের পক্ষে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী শৈলশহর এ বসে মোদি সরকারের দালালি করছেন।

পূর্ব মেদিনীপুরের হলদিয়া শিল্পাঞ্চল এর কারখানাগুলি খোলা থাকলেও আগের তুলনায় শ্রমিকের সংখ্যা ছিল হাতেগোনা। জেলার সবকটি পোস্ট অফিস ব্যাংক সম্পূর্ণ বন্ধ পাইকারি বাজার গুলোর অধিকাংশই বন্ধ ছিল। চন্ডিপুরে জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক নিরঞ্জন সিংহ কাঁথিতে হিমাংশু দাস এবং পাঁশকুড়াতে ইব্রাহিম আলীর নেতৃত্বে দীর্ঘক্ষণ অবরোধ হয়। খড়গপুর রেলওয়ে ওয়ার্কশপ-এর বেশিরভাগ শ্রমিক ধর্মঘটে শামিল হয়েছেন।

নদীয়া জেলার দক্ষিণপ্রান্ত করিমপুর পলাশীর প্রান্তর থেকে উত্তর প্রান্ত কল্যাণী হরিণঘাটা নবদ্বীপ - সর্বত্রই সড়কপথগুলিতে যানবাহন বিরল থেকেছে ধর্মঘটের দুদিন। কৃষ্ণনগর সহ জেলার প্রতিটি গঞ্জ এলাকার ছোটো বড়ো ব্যবসায়ীরা ধর্মঘটে যোগ দিয়েছেন। বন্ধ ছিল শপিং মল থেকে সিনেমা হল। তৃণমূলের চোখরাঙানিকে উপেক্ষা করে অটো চালকরা সর্বাত্মক করেছেন ধর্মঘট।

গ্রামীণ বাংলার কৃষক এবং খেতমজুর নেতৃত্ব জানিয়েছেন পুরুলিয়া বাঁকুড়া পূর্ব মেদিনীপুর পশ্চিম মেদিনীপুর হুগলি এবং পূর্ব বর্ধমান জেলায় ১৩১টির বেশি জায়গায় পথ অবরোধ, মিছিল মিটিং সংঘটিত হয়েছে। বাকি জেলাগুলিতেও একই উদ্যমে ধর্মঘট চালিয়ে যাওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে রাজ্যের ২৯০টিরও বেশি জায়গা থেকে মিছিল-মিটিং অবরোধের খবর এসেছে।