E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৯ বর্ষ ৩৩ সংখ্যা / ১ এপ্রিল, ২০২২ / ১৭ চৈত্র, ১৪২৮

কৃষিকে ভাগ্যের উপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে

সুপ্রতীপ রায়


গত কয়েক বছরে ধারাবাহিক কৃষক আন্দোলনের ফলে কৃষি সমস্যা দেশের মানুষের নজরে এসেছে। বর্তমান সময়ে আমাদের কৃষিব্যবস্থা দ্বিবিধ সমস্যার মুখে - অর্থনৈতিক সমস্যা ও পরিবেশগত সমস্যা। ভারতের কৃষি পরিবেশগত সমস্যার মধ্যে আছে। এর সঙ্গে আছে জলসংকট। বেপরোয়া লাভের লালসায় পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। এর বিরূপ প্রভাব কৃষি‍‌ক্ষেত্রে আছে। মাটি, জল, জীববৈচিত্র্য ও অনুকূল পরিবেশ ব্যতীত চাষ হয় না। কৃষিকাজের জন্য অতিপ্রয়োজনীয় পরিবেশের উপাদানগুলির সংরক্ষণের ওপর বি‍‌শেষভাবে জোর আমাদের দেশের সরকার দেয় না। কৃষিকে ভাগ্যের উপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

তাৎক্ষণিক লাভের দিকে তাকিয়ে ভারতীয় কৃষিকে বিপদের মুখে ফেলে দেওয়া হয়েছে। মাটির উর্বরতা রক্ষার ব্যবস্থা না করে নিবিড় চাষ করার ফলে চাষের জমির ক্ষতি হয়ে চলেছে। নিকাশির ব্যবস্থা করে ক্রমাগত জলসেচ হওয়ার ফলে জমিতে ক্ষারের পরিমাণ বেড়ে চলেছে, অনেক জমি লবণাক্ত হয়ে পড়ছে। কীটনাশক, ছত্রাকনাশক, আগাছানাশকের যথেষ্ট ব্যবহারের ফলে পরিবে‍‌শের ভারসাম্য নষ্ট করে দিচ্ছে। অবৈজ্ঞানিকভাবে ক্রমাগত ভূগর্ভের জল নিষ্কাশন হওয়ার ফলে ভূগর্ভের জলস্তর নিচে নেমে চলেছে। সঞ্চিত জল যে কোনো সময়ে ফুরিয়ে যেতে পারে। বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে কৃষিকাজের বদলে অগ্রাধিকার পাচ্ছে কত বেশি লাভ করা যায়। ফলে কৃষিতে যে কোনো সময় বিপর্যয় নেমে আসতে পারে।

জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব কৃষিতে পড়ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে জলস্তর ও জলের মানের ক্রম অবনমন ঘটছে, কৃষি ও মৎস্যচাষে উৎপাদনশীলতা হ্রাস পাচ্ছে এবং জৈব পরিবেশের ক্ষয় হচ্ছে। জমির ভুল ব্যবহার ও জৈব অবক্ষয়ের ফলে কৃষিতে চরম বিপদ ঘনিয়ে আসছে। জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে বৃষ্টিপাতের ধরন, তীব্রতা, বর্ষার মেয়াদ - সবই পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে। কৃষি চরম বিপদের মুখে। জলের অভাবের পাশাপাশি প্রাপ্ত জলের মানের অবনমনের প্রভাব পড়ছে কৃষিতে। নদী, জমি, জলাভূমি, শস্যক্ষেত্র - যে কোনো ধরনের প্রাকৃতিক সম্পদকেই একটি প্রক্রিয়া হিসাবে বিবেচনা করা হয় না। সম্পদকে বিজ্ঞানসম্মত ধারণায় বোঝার বদলে উৎস হিসাবে বিবেচনা করা হয়। সুনির্দিষ্ট দায় চিহ্নিতকরণের ব্যবস্থা না থাকার ফলে কোনো পরিবেশ নীতিই কার্যকর সুফল দিতে সক্ষম হচ্ছে না। দায়বদ্ধতা নেই সরকারের, নজরদারি সংস্থা এবং নীতিনির্ধারকদের।

জলবায়ু পরিবর্তন, প্রাকৃতিক বিপর্যয়, রাসায়নিক ঝুঁকি মোকাবিলায় দায়বদ্ধ প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়নি। বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাবে আগামীদিনে জলবায়ুর ব্যাপক পরিবর্তন হবে। বিশ্ব উষ্ণায়ন কেবল জলবায়ুর পরিবর্তনই ঘটাচ্ছে না, কৃষিব্যবস্থাকেও বিপদের মধ্যে ফেলে দিচ্ছে।

আবহাওয়া পরিবর্তনের ফলে কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হবে। বেশ কিছু উদ্ভিদ আছে, যাদের সালোকসংশ্লেষের হার গরম বাড়লে কমে আসে, ফলে ফলন কমে। ধান, গম এই শ্রেণিভুক্ত। স্বভাবতই উষ্ণতা বাড়লে খাদ্যের অভাবও বাড়বে। কৃষি উৎপাদন ধাক্কা খাওয়ার আরও একটি কারণ আছে। গরম বৃদ্ধি পেলে পৃথিবীর সর্বত্র হিমবাহ গলবে, বৃদ্ধি পাবে সমুদ্রতলের উচ্চতা। এর পরিণতিতে সমুদ্রের জল চলে আসবে স্থল এলাকাতে। কৃষিজমি হয়ে উঠবে লবণাক্ত। এছাড়া সমুদ্রের জল নষ্ট করে দেবে মিষ্টি জলের উৎসগুলিকে। প্রভাব পড়বে চাষে।

আবহাওয়ার পরিবর্তনের ফলে গরম বাড়বে। পরিণতিতে জলের বাষ্পীভবনের হার বাড়বে। প্রথম দিকে এর ফলে অতিবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি থেকে বারংবার বন্যা দেখা যাবে। এরপর উষ্ণতার অত্যাধিক দাপটে খরা নেমে আসবে। কৃষি উৎপাদন বিপর্যস্ত হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিরাট ক্ষতির মুখে ভারতীয় কৃষি। কারণ ভারতীয় কৃষির প্রকৃতির উপর নির্ভরশীলতা অনেক বেশি। ভারতে সঠিক পরিমাণ বৃষ্টিপাত না হলে এমন কোনো জলসেচ ব্যবস্থা নেই যে কৃষিকাজ চালিয়ে নেওয়া যাবে। ফলে যে কোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের অভিঘাত সামলে ওঠা ভারতীয় কৃষির পক্ষে কঠিন।

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ভারতীয় কৃষির ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মুখে। বায়ুমণ্ডলে গ্রিন হাউস গ্যাসের মাত্রা বেড়ে চলেছে। গ্রিন হাউস গ্যাসগুলির মধ্যে প্রধান হলো কার্বন-ডাই-অক্সাইড। এছাড়া আছে মিথেন নাইট্রাস অক্সাইড, হোলোকার্বন। বায়ুমণ্ডলে এই সমস্ত গ্যাসের পরিমাণ বেড়েছে। কার্বন-ডাই-অক্সাইড-এর অতিরিক্ত নির্গমনের ফলে পৃথিবীর উষ্ণতা বাড়ছে, ভারতও তার বাইরে নয়। কিন্তু এই উষ্ণতা বৃদ্ধির জন্য দায়ী মানুষ। উষ্ণায়নের প্রভাব জলসম্পদের ওপর পড়বে। এর ফলে এক এক অঞ্চল জলে ভেসে যাবে, আবার বিভিন্ন অঞ্চল হয়ে পড়বে খরাপ্রবণ।

ভারতেও জলকষ্ট দেখা দেবে। রাজস্থান, কচ, সৌরাষ্ট্র প্রভৃতি অঞ্চলের অর্ধেক অংশে তীব্র জলাভাব দেখা দেবে। জলকষ্টের মুখোমুখি হবে মাহী, পেন্নার সাবরমতী ও তাপির নদী অববাহিকা অঞ্চল। জলের অভাব দেখা দেবে কাবেরী, গঙ্গা, নর্মদা, কৃষ্ণা অববাহিকাতে। আবার ব্রাহ্মণী, মহানদী, গোদাবরী অববাহিকা অঞ্চল বন্যায় ভেসে যেতে পারে। হিমালয়ের বরফ গলছে। বরফ গলতে থাকলে নদীগুলিতে জলের পরিমাণ বাড়বে। কিন্তু বরফ নিরবচ্ছিন্নভাবে গলার ফলে বরফের পরিমাণ কমে আসবে এবং বরফ জলে পুষ্ট নদীগুলিও শুকিয়ে আসবে। বলাবাহুল্য, গঙ্গাই ভারতের ৩৭ শতাংশ কৃষি জমিতে সেচের জলের জোগান দেয়। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন কৃষির সঙ্গে যুক্ত অনেক মানুষ।

পৃথিবী ক্রমশ গরম হয়ে উঠছে। এ‍‌ই উষ্ণায়নের ফলে বহুবিধ সমস্যার মুখোমুখি আমরা। ভারতের আবহাওয়াও পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে। এর ফলে ক্রান্তীয় ও উপক্রান্তীয় জলবায়ু না থাকার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। আমাদের নদীগুলি প্রথমে কুল ছাপিয়ে গেলেও একে একে সব শুকিয়ে যাবে। নদী ও বৃষ্টির উপর নির্ভরশীল আমাদের কৃষি। তা ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অনাবৃষ্টির ফলে বনভূমি শুকিয়ে শেষ হয়ে যাবে।

আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষই জীবিকার জন্য কৃষি, বনভূমি ও মৎস্যচাষের উপর নির্ভরশীল। এগুলি জলবায়ু নির্ভর। ফলে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে যদি তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় বা বৃষ্টিপাতের পরিমাণ হ্রাস পায় তাহলে ভারতীয় কৃষি মারাত্মক সংকটে পড়বে।

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে হিমালয় অঞ্চলের হিমবাহগুলির অস্তিত্বই আজ বিপন্ন। হিমবাহ গলে যাচ্ছে। ফলে মানুষের কাছে মিষ্টি জলের জোগান বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। গঙ্গোত্রী হিমবাহের বরফগলা জলে গঙ্গা নদী পুষ্ট। সেই হিমবাহের পশ্চাদপসরণ ঘটছে। জলের বিভিন্ন উৎস নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। একসময় নদীর জল কমে যাবে। তখন গঙ্গা ও তার শাখা নদীগুলি মরশুমি নদীতে পরিণত হয়ে যাবে। কেবলমাত্র একটি ঋতুতেই জল পাওয়া যাবে।

যে সমস্ত নদীর জলে হুগলী নদী পুষ্ট সেগুলির মধ্যে অনেকগুলি দ্রুত শুকিয়ে যাচ্ছে। সরকারের তরফে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়া হলে ময়ুরাক্ষী, অজয়, দামোদর, রূপনারায়ণ ও হলদি নদী শুকিয়ে যাবে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ভবিষ্যতে ভারতের খাদ্য নিরাপত্তা ব্যাহত হবে। আমাদের দেশের কৃষি প্রধানত বৃষ্টিপাতের উপর নির্ভরশীল। বৃষ্টিপাতের ধরন বদলে গেলে গাঙ্গেয় সমভূমিতে ধান উৎপাদন কমে যাবে।

২০৪০ সালের মধ্যে তাপমাত্রা গড়ে ১-২ সেন্টিগ্রেড বাড়লে সেচের সুবিধাবিহীন জমিতে ফলন মার খাবে। চলতি শতাব্দীর শেষ দিকে তাপমাত্রা যদি ৫.৪ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড পর্যন্ত বৃদ্ধি পায় তাহলে শস্যের ফলন কমে যাবে ২৫ শতাংশ। দেখা যাবে খাদ্যের সংকট।

এ প্রসঙ্গে ২৭/৪/২০০৭-এ ‘দ্য হিন্দু’ পত্রিকাতে একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘‘বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা এক থেকে দুই ডিগ্রি বাড়লেই উপকূলবর্তী অঞ্চলে হেক্টরপিছু ধানের ফলন প্রায় ০.৭৫ টন কমে যাবে। আবার শীতকালের তাপমাত্রা যদি ০.৫ ডিগ্রি বাড়ে তাহলে গম চাষের মরশুম কমে যাবে সাতদিন। সেই সঙ্গে প্রতি হেক্টরে ফলন কমে যাবে ০.৪৫ টন।’’ এই অবস্থার মোকাবিলার জন্য জলসম্পদ পরিচালনার উন্নততর ব্যবস্থাপনা, বিভিন্ন অঞ্চলে চাষবাসের জন্য নতুন নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার, সর্বোপরি উষ্ণ ও শুষ্ক পরিবেশে যে সমস্ত শস্যের চাষ সম্ভব সেগুলির দিকে অগ্রাধিকার দেওয়ার নীতি কেন্দ্রীয় সরকার গ্রহণ করেনি।

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে জলতল বাড়বে। পরিণতিতে উপকূলবর্তী বিস্তীর্ণ অঞ্চল প্লাবিত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। ব্যাপক ভূমিক্ষয় ঘটবে। বাড়বে গড় তাপমাত্রা। ঘন ঘন খরার সম্মুখীন হতে হবে। সমুদ্রতলের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে বিপুল ক্ষতির সম্ভাবনা আছে এমন ২৭টি দেশের একটি তালিকা তৈরি করেছে ইউনাইটেড নেশনস এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রাম। এই তালিকাতে ভারতও আছে। ভারতের উপকূলবর্তী অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে উর্বর কৃষিজমি আছে। সমুদ্রতলের উচ্চতা বাড়লে নিচু অঞ্চল বিশেষত ওডিশা ও পশ্চিমবঙ্গের নিচুজমিতে প্লাবনের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাবে।

বিগত কয়েক দশকে বৃষ্টিপাতের খামখেয়ালিপনা বেড়েছে। নদীগর্ভ অগভীর হয়ে যাচ্ছে। অরণ্য ধ্বংসের কারণে অতিরিক্ত মৃত্তিকাক্ষয়ের ফলে নদীতে পলি জমে জমে তার জলধারণ ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। মাটির তলায় জলস্তর কমে যাচ্ছে। শীত ঋতুর সময়কালও কমে গেছে, ফলে শীতকালীন ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মৌসুমি বায়ুর খামখেয়ালিপনা বাড়ছে। ফলে অতিবর্ষণ, বন্যা বাড়ছে। অতীতের তুলনায় প্রাকৃতিক বিপর্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। খরা, ভূমিকম্প, ঘূর্ণিঝড়, সুপার সাইক্লোন সবই বেড়েছে। ফলে কৃষি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে গাছের তাড়াতাড়ি বৃদ্ধি ঘটে কিন্তু গাছের ফলন বাড়ে না। মাটির গঠনে উষ্ণতা বৃদ্ধির নেতিবাচক প্রভাব আছে। কার্বন ও নাইট্রোজেনের অনুপাতে পরিবর্তন ঘটে যাচ্ছে। আগাছা বাড়ছে। বাড়ছে রোগ সৃষ্টিকারী কীটপতঙ্গের অত্যাচার। এর ফলে ফসল রক্ষণাবেক্ষণের খরচও বাড়ছে। বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে ধান ও গমের ফলন কমে যাবে। বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে আমাদের উপমহাদেশ বিশেষত ভারত বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। প্রতি ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গমের ফলনও কমে যাবে।

তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে সাত রকমের উদ্ভিদ কুপ্রভাবের মুখে পড়বে। এগুলি হলো - (১) দানাশস্য - ধান, গম, ভুট্টা, যব। (২) ফল - কলা, তরমুজ, আপেল, আঙুর প্রভৃতি। (৩) তৈলবীজ - তিল, নারকেল, সরষে; (৪) মূল জাতীয় - আলু, পেঁয়াজ প্রভৃতি। (৫) ডালশস্য - মসুর, মুগ, ছোলা, মটর, প্রভৃতি। (৬) চিনির উপাদান - আখ, বিট। (৭) শাকসবজি - কপি, টমাটো, বেগুন, কুমড়ো।

আমাদের দেশে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলাফল অপরিসীম। এম এস স্বামীনাথনের মতে তাপমাত্রার ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধির ফলে গমের ক্ষতির পরিমাণ বার্ষিক ৬ মিলিয়ন টন। জলবায়ু পরিবর্তনের সমস্যা দূরীকরণের ক্ষেত্রে পঞ্চায়েত কার্যকর ভূমিকা নিতে পারে। এ প্রসঙ্গে স্বামীনাথনের বক্তব্যঃ ‘‘প্রতিটি পঞ্চায়েতে একজন করে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পুরুষ ও মহিলাকে ‘ক্লাইমেট রিস্ক ম্যানেজার’ (‘Climate Risk Manager’) রূপে নিযুক্ত করা উচিত, যারা এই বিষয়ে মানুষকে সচেতন করতে পারবে।’’ আমাদের কেন্দ্রীয় সরকার এ সুপারিশ গ্রহণ করেনি।

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে কৃষিক্ষেত্রের সম্ভাব্য ক্ষতি এড়ানোর জন্য ন্যাশনাল অ্যাকশন প্ল্যান অন ক্লাইমেট চেঞ্জ-এর অধীন ন্যাশনাল মিশন ফর সাসটেইনেবল এগ্রিকালচার বেশ কয়েকটি সুপারিশ করেছিল। সুপারিশগুলি হলোঃ (১) বৃক্ষপালন প্রযুক্তির উপর স্বল্পমেয়াদি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা ও মহিলা পালকের সংখ্যা বৃদ্ধি করা। (২) কৃষি হেরিটেজ স্থান তৈরি ও সংরক্ষণে মহিলাদের যুক্ত করা। (৩) জল বিভাজিকা প্রকল্পে মহিলা গোষ্ঠীকে যুক্ত করা। (৪) কিষান ক্রেডিট কার্ড প্রকল্পে আরও বেশি করে মহিলা কৃষককে যুক্ত করা। (৫) কৃষি বিমা প্রকল্পে মহিলা কৃষকদের বেশি করে যুক্ত করা। (৬) মহিলা কৃষিবিদের সংখ্যা বৃদ্ধি করা। (৭) স্বনির্ভর গোষ্ঠী - ব্যাঙ্ক সংযোগ কর্মসূচি শক্তিশালী করে ব্যাঙ্কের ঋণ সহজলভ্য করে মহিলাদের অ-কৃষিকাজের সুযোগ বৃদ্ধি করা। বলা বাহুল্য এসব সুপারিশ ভারত সরকার কার্যকর করেনি।

ভারত কৃষিপ্রধান দেশ। এখনও আমাদের অর্থনীতি কৃষিনির্ভর। আর আমাদরে কৃষি এখনও বর্ষা নির্ভর। কিন্তু দেশের অধিকাংশ অঞ্চলে সেচের সুবিধা নেই। জলবায়ুর উপরই নির্ভর করে আমাদের দেশের কৃষি উৎপাদন। কিন্তু বিশ্ব উষ্ণায়নের সঙ্গে সঙ্গে জলবায়ুর বিষয়টি জটিল ও উদ্বেগজনক হয়ে উঠেছে। পালটে যাচ্ছে আবহাওয়ার পরিচিত ধারা। এর মূল প্রভাব পড়ছে কৃষিতে।

বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে আবহাওয়ার চরিত্র বদলে চলেছে। বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে কৃষিক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব পড়তে বাধ্য। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে আমাদের দেশে জলবায়ু, আবহাওয়ার পরিবর্তন দেখা দিচ্ছে। কখনও খরা, কখনও অতি বৃষ্টি কৃষি ও কৃষকের সর্বনাশ সৃষ্টি করছে। বাড়ছে কুয়াশা, আর্দ্রতা, জলসংকট। ভারতে এখনও চাষ এলাকায় ৫৬ শতাংশ এলাকার কৃষিকাজ বৃষ্টিপাতের উপর নির্ভরশীল। ভূগর্ভের জলে সেচকার্য এখনও দেশের নিট সেচ এলাকার প্রায় ৬১.০৪ শতাংশ।

আবহাওয়াবিদরা সন্দেহ প্রকাশ করেছেন, ভারতের প্রায় ৭,৬০০ কিলোমিটার উপকূলভাগ আবহাওয়ার খেয়ালিপনায় বিপর্যস্ত হতে পারে। ভারতের কৃষি ও কৃষককে রক্ষা করতে, খাদ্য সুরক্ষা জোরদার করতে বিকল্প ভাবনা সরকারের তরফে নেই। ভারতীয় কৃষিকে ভাগ্যের উপর ছেড়ে দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।