৬১ বর্ষ ১৬ সংখ্যা / ১ ডিসেম্বর, ২০২৩ / ১৪ অগ্রহায়ণ, ১৪৩০
কেন্দ্রীয় শ্রমিক সংগঠন সহ সংযুক্ত মোর্চার ডাকে দেশজুড়ে পথে নেমে প্রতিবাদ শ্রমিক কৃষকদের

জম্মুতে প্রতিবাদ কর্মসূচিতে ইউসুফ তারিগামি।
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ শ্রমিক-কৃষকের নেতৃত্বে দেশজুড়ে ২৬, ২৭, ২৮ নভেম্বর জীবন-জীবিকার সঙ্গে যুক্ত একাধিক ইস্যুতে স্বতঃস্ফুর্তভাবে পালিত হয়েছে মহাপড়াও (গণধরনা) কর্মসূচি। করপোরেট-সাম্প্রদায়িক আঁতাতের জেরে সংসদে শ্রম আইন বদলে শ্রম কোড পাশ করিয়েছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। ন্যূনতম বেতন থেকে কাজের সুরক্ষার আইনি সংস্থান কেড়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সব কাজ হয়ে যাচ্ছে চুক্তিভিত্তিক। আরেক দিকে চলছে ঢালাও বেসরকারিকরণ। তাই শ্রম কোড বাতিল, ফসলের ন্যায্য দাম সহ অন্যান্য দাবিতে দেশের সমস্ত রাজ্য ও রাজধানীতে এই গণধরনায় অংশ নিয়েছেন শ্রমজীবী মানুষ। তিনদিনের এই সফল কর্মসূচির জন্য দেশের শ্রমজীবী জনগণকে অভিনন্দন জানিয়েছে কেন্দ্রীয় শ্রমিক সংগঠনসহ সংযুক্ত কিষান মোর্চা। সব কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন এবং সংযুক্ত কিষান মোর্চা যৌথভাবে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল গত ২৪আগস্ট, দিল্লির তালকাটোরায় জাতীয় স্তরের কনভেনশন থেকে।
২৬ নভেম্বর সিপিআই(এম)’র সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি আন্দোলনরত কৃষক এবং শ্রমিকদের এই প্রতিবাদ কর্মসূচির প্রতি সংহতি জানিয়েছেন।
কাশ্মীর থেকে কেরালা, গুজরাট থেকে গুয়াহাটি এই কর্মসুচি ব্যাপক উৎসাহের সঙ্গে পালিত হয়। যদিও উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, হরিয়ানা, গুজরাটের মতো বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলি এই আন্দোলন রুখতে পুলিশ ও প্রশাসনকে দিয়ে বাধা তৈরি করলেও সে বাধা অগ্রাহ্য করে রাজপথের দখল নিয়েছেন শ্রমজীবীরা। দিল্লির সিভিল লাইন ছাড়াও ত্রিপুরার আগরতলা, চণ্ডীগড়, পাঁচকুলা, শিমলা, দেরাদুন, শ্রীনগর, লক্ষ্ণৌ, পাটনা, রাঁচি, কলকাতা, গুয়াহাটি, ভুবনেশ্বর, বিজয়ওয়াদা, চেন্নাই, বেঙ্গালুরু, তিরুবনন্তপুরম সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত জুড়ে মহাপড়াও কর্মসূচি পালিত হয়। কেন্দ্রীয় শ্রমিক সংগঠন সিআইটিইউ, আইএনটিইউসি, এআইটিইউসি, এইচএমএস, এআইইউটিইউসি, টিইউসিসি, সেবা, এআইসিসিটিইউ, এলপিএফ, ইউটিইউসি এবং কেন্দ্রীয় ফেডারেশন ও অ্যাসোসিয়েশন সমূহ এবং সংযুক্ত কিষান মোর্চার ডাকে এই কর্মসূচি সংগঠিত হয়।
দিল্লির যন্তর মন্তরে ধরনা কর্মসূচিতে শামিল শ্রমিক-কৃষক-মহিলাসহ অন্যান্যরা।
তিন বছর আগে ২০২০ সালে ২৬ নভেম্বর সারাদেশে সাধারণ ধর্মঘট করেছিল কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন ও ফেডারেশনগুলি। ওই দিনটি থেকেই দিল্লির সীমান্ত বরাবর রাজপথে ঐতিহাসিক কৃষক আন্দোলন পরিচালনা করে সারা বিশ্বের নজর কেড়েছিল সংযুক্ত কিষান মোর্চা। এক বছরের আন্দোলনের চাপে সরাসরি নতিস্বীকার করে ২০২১ সালের ১৯ নভেম্বর করপোরেট স্বার্থবাহী তিন নতুন কৃষি আইন বাতিলে বাধ্য হয় মোদি সরকার।
দিতে হবে। দিল্লিতে এক বছর ধরে কৃষক আন্দোলনের জেরে প্রতিশ্রুতি মতো ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে ফসল বিক্রির আইনি নিশ্চয়তা আইনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নিজে। কিন্তু কাজ এগোয়নি। সারা ভারত কৃষকসভার সভাপতি অশোক ধাওয়ালে বলেছেন, ‘শ্রমজীবীর এই জমায়েত, শ্রমিকদের মজুরি থেকে কৃষকদের ফসলের দামের দাবি, সারা দেশের জনতার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। দেশ বাঁচানোর লড়াইয়ে শামিল শ্রমজীবী।’
মোদি সরকারের নির্লজ্জ প্রতারণা বিরুদ্ধে ২৬ নভেম্বর সকাল থেকেই হাজার হাজার মানুষ আন্দোলনে নামেন। পাঞ্জাব ও হরিয়ানায় কৃষক ও শ্রমিক পরিবারের প্রচুর ট্রাক্টর ও গাড়ি নিয়ে চণ্ডীগড়ের পথে রওনা হন। কিন্তু বহু জায়গাতেই চণ্ডীগড়মুখী রাস্তা ও সীমান্ত বন্ধ করে দেয় প্রশাসন। কিন্তু অনড় মানুষ ধরনায় যোগ দিতে চণ্ডীগড়ে পৌঁছে গেছেন। মোহালিতে গণজমায়েতে অন্যান্যদের মধ্যে ভাষণ দেন সারা ভারত কৃষক সভার সভাপতি ডাঃ অশোক ধাওয়ালে।
লক্ষ্ণৌয়ে মহাপড়াও কর্মসূচিতে শামিল শ্রমিক কৃষকরা।
জম্মু ও কাশ্মীরের শ্রীনগরের প্রেসিডেন্ট এনক্লেভ প্রাঙ্গণে ২৭ নভেম্বর যৌথ প্রতিবাদী জমায়েত করে এবং জম্মু কাশ্মীরের আপেল চাষি ফেডারেশন। জম্মু-কাশ্মীরের সিআইটিইউ সভাপতি তথা সিপিআই(এম) নেতা ইউসুফ তারিগামি সমাবেশে বলেন, কেন্দ্রীয় নীতির কারণে এখানকার আপেল চাষিরা বিপুল লোকসানের মুখে পড়েছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইরান থেকে আপেল আমদানি বন্ধ করার দাবি তোলেন তিনি।
দেশজুড়ে প্রতিদিনই ধরনায় বিপুল সংখ্যক মানুষ যোগ দিয়েছেন। বেড়েছে সমাবেশের আয়তন,আকার। উত্তরপ্রদেশের লক্ষ্ণৌ, বিহারের পাটনা, ওডিশা’র ভুবনেশ্বর, কর্নাটকের বেঙ্গালুরু, তামিলনাড়ুর চেন্নাই তে সাফল্যের সঙ্গে পালিত হয় গণধরনা কর্মসূচি।
কলকাতায় এই তিনদিন ব্যাপী কর্মসূচি পালিত হয়েছে এসপ্ল্যানেড চত্বরে।
কৃষক শ্রমিকের বকেয়া দাবিগুলির মধ্যে রয়েছে স্বামীনাথন কমিশনের সূত্র অনুযায়ী সি ২ + ৫০ শতাংশ নীতির ভিত্তিতে সব ফসলের এমএসপি ও ফসল সংগ্রহের আইনি স্বীকৃতি, প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের সব কৃষক পরিবারকে ঋণ জাল থেকে মুক্তি, বিদ্যুৎ বিল ২০২২ বাতিল, ৪ শ্রম কোড প্রত্যাহার, প্রতি মাসে ২৬ হাজার টাকা ন্যূনতম মজুরি, বেকারত্ব নির্মূল করে কাজের অধিকারকে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি, প্রতি বছর ২০০ দিনের কাজ ও দৈনিক ৬০০ টাকা মজুরি চালুর মাধ্যমে রেগা প্রকল্পকে জোরদার করা, রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্রে বেসরকারিকরণ বন্ধ করা জিনিসের দাম কমানো ইত্যাদি।
পাটনায় বক্তব্য রাখছেন শ্রমিক নেত্রী আর. সিন্ধু।

ভুবনেশ্বরে ধরনা চলছে।
