৬১ বর্ষ ১৬ সংখ্যা / ১ ডিসেম্বর, ২০২৩ / ১৪ অগ্রহায়ণ, ১৪৩০
আক্রান্ত ধর্মনিরপেক্ষতা
সুপ্রতীপ রায়
২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদি প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হন। ২০১৯ সালে তিনি দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। মোদি রাজত্বে আমাদের দেশের সংবিধানের মূল নীতিগুলি আক্রান্ত। সংবিধানের অন্যতম স্তম্ভ ধর্মনিরপেক্ষতা। এই স্তম্ভটির উপর আক্রমণ নামিয়ে আনা হয়েছে। সংবিধান প্রণেতারা চেয়েছিলেন সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক ভারত। আরএসএস এর বিরুদ্ধে। ওদের লক্ষ্য জঙ্গী হিন্দু রাষ্ট্র।
মোদি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকেই ধর্মনিরপেক্ষ নীতির ওপর হামলা চলছে। বিজেপি কেন্দ্রে আসীন হওয়ার পর থেকে আরএসএস তার কর্মসূচিকে দ্রুততার সঙ্গে কার্যকর করে চলেছে। সংবিধানের উপর প্রকাশ্যে হামলা নামিয়ে এনেছে। মোদি মন্ত্রীসভার একাধিক সদস্য ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধান বদলের কথা প্রকাশ্যে বলে চলেছেন।
রাষ্ট্র সংঘবাহিনীকে প্রকাশ্যে মদত দিচ্ছে। ফলে সংঘের নেতৃত্বে একাধিক রাজ্যে বর্ণবাদী-সাম্প্রদায়িক নীতিকে বলবৎ করতে চলছে গণপ্রহার, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে চলছে ঘৃণা প্রচার। মোদি সরকার ভারতের সংবিধানের মূল বনিয়াদকে ধ্বংস করতে চাইছে। আক্রান্ত আমাদের ধর্মনিরপেক্ষতার ঐতিহ্য।
আমাদের দেশের সংবিধানের অন্যতম স্তম্ভ ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শ। এই আদর্শ আরএসএস'র পছন্দ নয়। বিজেপি সরকার চরম হিন্দুত্ববাদী ফ্যাসিস্ত শক্তি আরএসএস দ্বারা পরিচালিত। ভারতকে ধর্মনিরপেক্ষ নীতি পরিত্যাগ করে হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্র হিসাবে গড়ে তুলতে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আরএসএস চায় ভারতে অহিন্দু জনগণকে বিশেষত মুসলিম ও খ্রিস্টানদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসাবে থাকতে হবে।
সিপিআই(এম)’র কর্মসূচির ৫.৭ ধারাতে সঠিকভাবে বলা হয়েছে, “সাম্প্রদায়িক ও ফ্যাসিস্ত ধাঁচের আরএসএস পরিচালিত জোটের শক্তি বৃদ্ধি (বাজপেয়ী-আদবানি সরকারের সময়কার কথা, বর্তমানে মোদি সরকারেরর সময়ে ধর্মনিরপেক্ষ নীতির ওপর আক্রমণ আরও ব্যাপক হয়েছে।) ও কেন্দ্রে তাদের ক্ষমতা দখলের ফলে ধর্মনিরপেক্ষতার ভিত্তির বিপদ গুরুতর হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
ধর্মনিরপেক্ষতার উপর আক্রমণের প্রথম সফল পদক্ষেপ ছিল বাবরি মসজিদ ধ্বংস। বাবরি ধ্বংসের পরিণতিতে দেশব্যাপী দাঙ্গায় কয়েক হাজার মানুষ খুন হন। পরবর্তীতে গুজরাটে পরিকল্পিতভাবে দাঙ্গা লাগানো হয়। তখন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন নরেন্দ্র মোদি। আসলে এটা দাঙ্গা ছিল না, এটা ছিল পরিকল্পিত সংগঠিত গণহত্যা। স্বভাবতই মোদির হাতে কখনই ধর্মনিরপেক্ষ ভারত সুরক্ষিত নয়।
আমাদের সংবিধান চেয়েছে কেবলমাত্র ধর্মীয় বিশ্বাসের স্বাধীনতা ও সব ধর্মের সমতা। আরএসএস-এর বিপরীত মেরুতে অবস্থান করে। আরএসএস ভারতীয় জাতিসত্তার বিরোধী। আরএসএস'র জাতিসত্তা হিন্দু ধর্মীয় পরিচিতির ভিত্তিতে। ২০১৪ সালে বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার তৈরি হবার পর আরএসএস'র আধিপত্য বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানের উপর আক্রমণ ক্রমবর্ধমান। ২০১৯-এ মোদি দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর এই আক্রমণ আরও তীব্র হয়েছে। মোদি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত ঘোষণা করেছিলেন - হিন্দুরাষ্ট্র গঠন আসন্ন। এটা কেবলমাত্র কথার কথা ছিল না। ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানের নির্দেশগুলিকে পদদলিত করে ‘লাভজিহাদ’, ‘ঘর ওয়াপসি’র নামে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর আক্রমণ নামিয়ে আনা হয়েছে।
আমাদের সমাজ বহুত্ববাদী। ধর্মীয় বৈচিত্র্য আছে। স্বাধীনতার পর আমাদের দেশে ধর্ম ও ধর্মীয় সম্প্রদায়ের স্থান কী হবে তা নিয়ে গণপরিষদে অনেক আলোচনা ও বিতর্ক হয়েছে। ভারতে কোনো বিশেষ ধর্মকে রাষ্ট্রধর্ম হিসাবে গণ্য করা হয় নি। গণ পরিষদের অধিকাংশ সদস্য মনে করেছিলেন কোনো বিশেষ ধর্মকে অগ্রাধিকার না দিয়ে সব ধর্মীয় সম্প্রদায়ের সমানাধিকারকে স্বীকার করে নিতে হবে। ভারতের সংবিধানে ধর্মীয় রীতিনীতি ও আচার-আচরণের স্বাধীনতা স্বীকৃত হয়েছে।
৪২ তম সংবিধান সংশোধন (১৯৭৬) করে মুখবন্ধ অংশে ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ শব্দটি যুক্ত করা হয়েছে। যদিও মূল সংবিধানের মুখবন্ধে ‘বিশ্বাস, ধর্ম ও উপাসনার ক্ষেত্রে স্বাধীনতা’র কথা বলা আছে ও তা বাস্তবায়িত করার জন্য ২৫-২৮ ধারায় ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকারকে একটি গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক অধিকার হিসাবে লেখা আছে। সমস্ত ব্যক্তি ও সমস্ত ধর্মীয় সম্প্রদায় এই অধিকার ভোগ করবে। ২৫(১), ১৫(১), ১৫(২), ১৬(১),(২), ৩০(২), ৩২৫, ৩২৬ ধারাতে ধর্মীয় স্বাধীনতার কথা বলা আছে। ২৭ ও ২৮ ধারা বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায় - ভারতে কোনো রাষ্ট্রীয় ধর্ম নেই। দেশকে রক্ষা করার জন্যই ধর্মনিরপেক্ষ নীতি গ্রহণ করেছে আমাদের সংবিধান।
আরএসএস চায় হিন্দুরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে। এই কারণে সে ধর্মনিরপেক্ষতা ধ্বংস করতে চায়। বিজেপি আরএসএস'র প্রকাশ্য একটি রাজনৈতিক সংগঠন। বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর রাষ্ট্রক্ষমতা ও রাষ্ট্রযন্ত্রের বিভিন্ন সংস্থায় প্রবেশ করেছে আরএসএস। রাষ্ট্রের সহযোগিতায় অবাধে হিন্দুত্বের মতাদর্শ প্রচার করে চলছে। ফলে আক্রান্ত ধর্মনিরপেক্ষতার ঐতিহ্য, আরএসএস ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধান মানে না। ১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর ভারতের গণপরিষদে সংবিধান গৃহীত হওয়ার কিছুদিন পর ৩০ নভেম্বর আরএসএস'র মুখপত্র ‘অর্গানাইজার’ এর সম্পাদকীয়তে ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানের তীব্র বিরোধিতা করা হয়। আরএসএস'র বক্তব্য - ভারতের সাংবিধানিক কাঠামোর ভিত্তি হবে মনুস্মৃতি।
মোদি জামানায় অবাধে ধর্মান্তরণ চলছে। ২০১৫ সালের ১৪ ডিসেম্বর মুম্বাইতে একটি হিন্দু সম্মেলনে ভিএইচপি নেতা প্রবীণ তোগারিয়া বলেছেন - একটা সময়ে পৃথিবীর সব মানুষই ছিল হিন্দু। তাদের সংখ্যা ছিল ৭০০ কোটি। বর্তমানে তা কমতে কমতে ১০০ কোটিতে দাঁড়িয়েছে। সুতরাং তা বাড়াতে হবে, অতএব প্রতিটি হিন্দু রমনীকে চারটি করে সন্তানের জন্ম দিতে হবে। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ‘ধর্ম জাগরণ সমিতি’ ও ‘বজরং দলের’ ব্যবস্থাপনায় আগ্রায় ৩৫০ জন গরিব মুসলমান মানুষকে তথাকথিত শুদ্ধিকরণের মাধ্যমে হিন্দুধর্মে দীক্ষা দেওয়া হয়।
২০১৪ সালে বিজেপি ক্ষমতাসীন হওয়ার পর সংখ্যালঘু মুসলিম ও খ্রিস্টানদের উপর আক্রমণ বাড়তে থাকে। দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাড়ছে। ২০১৪ সালে উত্তরপ্রদেশের সাহারানপুরের দাঙ্গায় সরাসরি আরএসএস যুক্ত। তীব্র মুসলিম বিরোধী ঘৃণা ও হিংসা চালানো হচ্ছে। গো মাংস ভক্ষণের মনগড়া অভিযোগ বা ভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে বিবাহকে “লাভ জিহাদ” আখ্যা দিয়ে মুসলিমদের আক্রমণ করা হচ্ছে। মহম্মদ আকলাখকে বাড়ি থেকে বার করে মাঝরাতে খুন করা হয়েছে, ঝাড়খণ্ডে ইমতিয়াম ও মজলুমকে হত্যা করে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়, রাজস্থানে পেহলু খানকে ট্রাক থেকে বার করে প্রকাশ্য দিবালোকে হত্যা করা হয়। জুনেইদকে ট্রেনের কামরায় হত্যা করা হয়। মহম্মদ আফরাজুলকে কুপিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে নৃশংস ঘটনাটি ভিডিয়ো করে সোশ্যাল মিডিয়াতে পোস্ট করা হয় ‘লাভ জিহাদ’র সতর্ক বার্তা দিয়ে, সাজানো সংঘর্ষে মুসলিমদের খুন করার পর খুনের সপক্ষে যোগী আদিত্যনাথ সহ বিজেপি নেতারা নির্লজ্জ ওকালতি করে চলেছেন।
দলিতদের বিরুদ্ধেও হামলা চলছে। হায়দরাবাদ কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে তরুণ মেধাবী দলিত ছাত্র রোহিত ভেমুলার ঘটনা, গুজরাটের উনায় দলিত যুবকদের নির্মমভাবে চাবকানোর ভিডিয়ো সম্প্রচার, ভীম সেনার নেতা চন্দ্রশেখর আজাদকে ‘রাবন’-এর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ এনে গ্রেপ্তার, বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে দলিতদের উপর হামলা বেড়ে চলেছে।
সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষতাকে অস্বীকার করে ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্বের লক্ষ্যে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার পদক্ষেপ নিতে চাইছে। যা চরম সংবিধান বিরোধী। নাগরিকত্ব আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনীতে ভারতের নাগরিকত্ব নির্ধারণ ধর্মের বৈষম্যমূলক মানদণ্ড উপস্থিত করা হচ্ছে। সংবিধানের মর্মবস্তু আক্রান্ত। সিএএ-এনপিআর-এনআরসি হিন্দুত্ববাদীদের এমন এক কর্মসূচি যার শিকড় নিহিত রয়েছে আরএসএস'র কর্মসূচিতে। যুক্তিবাদের পক্ষে, ধর্মনিরপেক্ষতার সামাজিক ন্যায়ের পক্ষে যাঁরা কলম ধরছেন তাদের হত্যা করা হচ্ছে। নরেন্দ্র দাভোলকর, গোবিন্দ পানসারে, এমএম কালবুর্গি, গৌরি লঙ্কেশকে খুন করা হয়েছে।
৩৭০ ধারার বিলোপ আসলে ধর্মনিরপেক্ষতার উপর আঘাত। ৩৭০ ধারার রক্ষা কবচটি সরিয়ে নেওয়ার পদক্ষেপ সংবিধান রচয়িতাদের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে গুণগতভাবে পৃথক। ৩৭০ ধারা বাতিলের দাবি সংঘ পরিবার অনেকদিন থেকে করে আসছিল। কাশ্মীরে তীব্র রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস নামিয়ে আনা হয়েছে। আক্রান্ত সংখ্যালঘু মানুষেরা।
বিচার ব্যবস্থাতেও সাম্প্রদায়িক মনোভাব নানা ক্ষেত্রে প্রকাশিত হচ্ছে। বিভিন্ন রায়ে ধর্মনিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত হচ্ছে না। অযোধ্যা মামলার রায় হয়েছে কিন্তু ন্যায় কী হয়েছে? অযোধ্যা প্রশ্নে সর্বোচ্চ ন্যায়ালয়ের রায়ে প্রমাণ ও যুক্তির বদলে বিশ্বাসের প্রশ্ন গুরুত্ব পেয়েছে। ইতিহাসের তথ্যকে অস্বীকার করে পুরাণকে প্রতিষ্ঠা করতে সুপ্রিমকোর্ট সক্রিয় ছিল। ২০১৯ সালের ৯ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের রায়ে বাবরি মসজিদ ধ্বংসকে অবৈধ বলা হলেও সমগ্র জমি প্রস্তাবিত রাম মন্দির তৈরি করার জন্য সরকার মারফত ট্রাস্টি বডির হাতে তুলে দেওয়ায় নির্দেশ দেওয়া হয়।
বাবরি সমজিদ ধ্বংসের সঙ্গে যুক্তদের বেকসুর মুক্তি দেওয়া হয়েছে। ২০২০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর লক্ষ্ণৌর সিবিআই'র বিশেষ আদালত ১৯৯২ সালের বাবরি মসজিদ মামলায় অভিযুক্ত ৪৯ জনকে বেকসুর মুক্তি দেয়। বলা হয় বাবরি মসজিদ ধ্বংসের সঙ্গে এরা কেউ যুক্ত নন। তাহলে কারা যুক্ত ছিলেন?
হিন্দুত্ববাদীরা গর্হিত অপরাধ করলেও তাদের বিভিন্ন আদালত ছাড় দিচ্ছে। নীরজ বিষ্ণোই ও ওঙ্কারেম্বর ঠাকুরের প্রতি দিল্লির এক সেশনকোর্ট সহানুভূতিশীল ব্যবহার করেছে। দু’জনের জামিন - মঞ্জুর করা হয়েছে। এরা দুজনেই মুসলিম মহিলাদের অনলাইন ‘নিলামের’ উদ্দেশ্য অ্যাপ তৈরির অভিযোগে অভিযুক্ত। অনুরাগ ঠাকুর, পরবেশ বর্মা নির্বাচনী সমাবেশে “বিশ্বাসঘাতকদের গুলি করে মারো” বলে হুমকি দিলেও আদালত কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। নরসিংহানন্দ বারংবার মুসলিম গণহত্যার প্ররোচনা দিলেও জামিন পেয়ে যান। ১৯৮৭ সালের ২৮ মার্চ উত্তর প্রদেশের মীরাটের মালিয়ানায় গণহত্যার সঙ্গে যুক্ত হিন্দুত্ববাদীদের ২০২৩ সালের ১ এপ্রিল খালাস করে দেওয়া হয়েছে।
আরএসএস ভারতের সংবিধানের উপর ভিত্তি করে যে ধর্মনিরপেক্ষ ভারত আছে তার স্থলে ‘হিন্দুত্ব রাষ্ট্র’ কায়েম করতে চায়। সেই উদ্দেশ্যে এনসিইআরটি পাঠ্যবইয়ের পরিবর্তন করা হয়েছে। পাঠক্রমের বদল, শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলির শীর্ষপদে সংঘ পরিবারের লোকজনকে বসানো হচ্ছে। যে রাজ্যগুলিতে বিজেপি সরকার পরিচালনা করছে সেখানে বিদ্যালয়ের সিলেবাসে গৈরিকীকরণ হচ্ছে, বিকৃত ইতিহাস লিখছে।
এনসিইআরটি ইতিহাস বইয়ের ‘ভারতীয় ইতিহাস’ পাঠ্যপুস্তকের “ভারতীয় ইতিহাসের বিষয়বস্তু-দ্বিতীয় অংশ” থেকে রাজা-বাদশা ও কালানুক্রমিক বৃত্তান্তর মোগল রাজদরবার (ষোড়শ ও দপ্তদশ শতক) বিষয়ক অধ্যায়কে বাদ দেওয়া হয়েছে। ‘প্রধান ঐস্লামিক দেশ সমূহ’, ‘সংস্কৃতিগুলির মধ্যে সংঘাত’ এবং ‘শিল্প-বিপ্লব’ এর অধ্যায়গুলোকেও একাদশ শ্রেণির পাঠ্যপুস্তক “বিশ্ব ইতিহাসের বিষয়বস্তু” থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির সমাজবিজ্ঞান পাঠ্যপুস্তক থেকে দলিত লেখক ওম প্রকাশ বাল্মীকিকে বাদ দেওয়া হয়েছে। দ্বাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান পাঠ্য বইয়ের শিরোনাম ‘পলিটিকস ইন ইন্ডিয়া সিনস ইনডিপেনডেন্স’। এই বইয়ের শেষ অধ্যায়ে গুজরাট দাঙ্গা বিষয়ক দু’টি পাতা বাদ দেওয়া হয়েছে। দ্বাদশ শ্রেণির ‘ইন্ডিয়ান সোসাইটি’ পাঠ্যবই থেকে গুজরাট দাঙ্গা প্রসঙ্গ বাদ দেওয়া হয়েছে। সংশোধিত বিদ্যালয় পাঠ্যবই থেকে জাতপাত, সংখ্যালঘুদের প্রশ্নে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি বাদ দেওয়া হয়েছে। পাঠ্যপুস্তক সংশোধনের নামে ছেঁটে ফেলা হয়েছে ভারতে ইসলামিক শাসকদের ইতিহাসের বিষয়গুলি।
২০২৩ সালের ২৮ মে নরেন্দ্র মোদি নতুন সংসদ ভবন উদ্বোধন করেছেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কি ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি মানা হয়েছে? এই অনুষ্ঠানে স্বয়ং রাষ্ট্রপতি আমন্ত্রণ পান নি। যদিও ভারতীয় সংবিধানের ৭৯ ধারা অনুযায়ী সংসদের উভয় কক্ষের অবিচ্ছেদ্য অংশ রাষ্ট্রপতি। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পূজাপাঠ করা হয়। উদ্বোধনের জন্য যে দিনটি বাছা হয়েছিল সেই দিনটি ছিল সাভারকরের ১০৪ তম জন্মদিন।
মোদি আমলে একাংশ রাজ্যপাল আরএসএস'র হয়ে কাজ করছেন। যাঁরা প্রকাশ্যে আরএসএস'র কর্মসূচিকে রূপায়ণ করছেন। এঁরা রাজ্যপালের পদমর্যাদার অপব্যবহার করে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ ঘটাচ্ছেন।
এক গভীর সংকটে আমাদের ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধান। ধর্মনিরপেক্ষ ঐতিহ্যকে ভেঙে ফেলার সুপরিকল্পিত চক্রান্ত চলছে।