৫৮ বর্ষ ২০শ সংখ্যা / ১ জানুয়ারি ২০২১ / ১৬ পৌষ ১৪২৭
কমরেড কমলেন্দু সান্যালের জীবনাবসান
বামফ্রন্ট সরকারের প্রাক্তন মন্ত্রী এবং সিপিআই(এম)’র নদীয়া জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর প্রাক্তন সদস্য কমরেড কমলেন্দু সান্যাল ২৭ ডিসেম্বর, রবিবার রাত দুটো কুড়ি মিনিটে কৃষ্ণনগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮১ বছর। বার্ধক্যজনিত কারণে কিছুদিন ধরেই তিনি চিকিৎসাধীন ছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু, সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক সূর্য মিশ্র, পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মৃদুল দে, রবীন দেব, পার্টির নদীয়া জেলা কমিটির সম্পাদক সুমিত দে ও বামপন্থী আন্দোনের বহু নেতৃবৃন্দ।
এদিন সকালে হাসপাতাল থেকে কমরেড কমলেন্দু সান্যালের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় সিপিআই(এম)’র জেলা কার্যালয়ে। সকাল সাড়ে ৯টা থেকে সোয়া ১০টা পর্যন্ত পার্টির জেলা কার্যালয় কৃষ্ণনগরে নিশি চক্রবর্তী ভবনে তাঁর মরদেহ রাখা হয়। সেখানে পার্টির পক্ষ থেকে জেলা সম্পাদক তথা বামফ্রন্টের জেলা আহ্বায়ক সুমিত দে, সিপিআই(এম) নেতা অশোক ব্যানার্জি, এস এম সাদী, সুকুমার চক্রবর্তী সহ পার্টি নেতৃবৃন্দ ও বিভিন্ন গণসংগঠনের নেতৃবৃন্দ মাল্যদান করে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। এরপর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় বেতাইয়ে তাঁর বাসভবনে। দুপুর পর্যন্ত মরদেহ শায়িত রাখা হয় বাসভবনে। পার্টির বিভিন্ন স্তরের নেতা কর্মী, কবি, সাহিত্যিক, বহুবিধ ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেছেন। এরপর হাজার হাজার মানুষের শোক মিছিলে মধ্যে দিয়ে তাঁর মরদেহ আনা হয় তেহট্ট উচ্চ বিদ্যালয়ে। কর্মজীবনে এই স্কুলে চার দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনি শিক্ষকতা করেছেন। স্কুলের উন্নয়নেও তাঁর ছাপ স্পষ্ট। স্কুল হয়ে পলাশীপাড়া পার্টি কার্যালয়ে শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের পর এক বিরাট শোক মিছিল গোটা বাজার এলাকা প্রদক্ষিণ করে। পরে এদিনই পলাশীঘাটে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে এদিন জেলার সর্বত্র পার্টির পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয় এবং স্থগিত রাখা হয় পার্টির সমস্ত কর্মসূচি।
প্রয়াত কমরেড কমলেন্দু সান্যালের জন্ম বাংলাদেশের মেহেরপুরে। মুর্শিদাবাদ জেলার জিয়াগঞ্জ শ্রীপত সিং কলেজে বাংলা সাহিত্যে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। ১৯৬৪ সালে সিপিআই(এম)’র সদস্যপদ অর্জন করেন। এরাজ্যের ৬০ ও ৭০ দশকের আধা ফ্যাসিস্ত সন্ত্রাস এবং জরুরি অবস্থার দিনগুলোতে দুর্বার কৃষক আন্দোলনের পাশে থেকে গ্রামাঞ্চলে যুব সংগঠন গড়ে তোলার ক্ষেত্রে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল। তিনি ছিলেন ডিওয়াইএফআই’র নদীয়া জেলা কমিটির সভাপতি। পলাশীপাড়া বিধানসভা কেন্দ্র থেকে সিপিআই(এম)’র হয়ে তিনবারের (১৯৯১-২০০৬) বিধায়ক নির্বাচিত হন তিনি। পার্টির জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যও ছিলেন তিনি। বর্তমানে তিনি ছিলেন পার্টির তেহট্ট দক্ষিণ এরিয়া কমিটির সদস্য। বামফ্রন্ট সরকারের পঞ্চায়েত দপ্তরের রাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বও সামলেছেন নিষ্ঠার সঙ্গে। এলাকার সর্বস্তরের বিশেষ করে গরিব অংশের মানুষের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ছিল নিবিড় ও গভীর। সাহিত্য অনুরাগী কমরেড সান্যালের জীবনের সরলতা ছিল অলঙ্কারসম।
বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু তাঁর মৃত্যুতে শোকজ্ঞাপন করে বলেছেন, সততা, সহজ সরল জীবনযাপন, ও কমিউনিস্ট মূল্যবোধকে তিনি সারা জীবন লালন করেছেন যা অনুকরণীয়।