৫৯ বর্ষ ৪৬ সংখ্যা / ১ জুলাই, ২০২২ / ১৬ আষাঢ়, ১৪২৯
শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদ নির্বাচনের ফল
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদে পঞ্চায়েতের তিনটি স্তরেই সংখ্যাগরিষ্ঠতা তৃণমূলের। মহকুমা পরিষদে এককভাবে ৮টি আসনে জয়ী হয়েছে তৃণমূল। শুধুমাত্র মহকুমা পরিষদের ৫ নম্বর খড়িবাড়ি রানিগঞ্জ বিন্নাবাড়ি আসনে জয়ী হয়েছেন বিজেপি প্রার্থী। তৃণমূল প্রদত্ত ভোটের ৪৭.১৪ শতাংশ পেয়েছে। সিপিআই(এম)’র প্রাপ্ত ভোটের হার ১৪.৭২ শতাংশ। বিজেপি ৩০.৪৩ শতাংশ ভোট পেয়েছে। কংগ্রেস ৪.৫৩ শতাংশ ভোট পেয়েছে।
একই সঙ্গে পাহাড়ে জিটিএ’র ভোটে অনীত থাপার দল ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চা (বিজিপিএম) এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে। ৪৫টি আসনের মধ্যে অনীত থাপার দল ২৬টি আসন পেয়েছে। বিজিপিএম’র সঙ্গে জোট করেই পাহাড়ে তৃণমূলও সাতটি আসনে জয়ী হয়েছে। জিটিএ ভোট বয়কট করেছিল বিমল গুরুঙের গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। যদিও কয়েকটি জায়গায় গোপন বোঝাপড়ায় নির্দল প্রার্থীও দিয়েছিল।
পঞ্চায়েতের তিনটি স্তরেই বামফ্রন্টের পরাজয় হয়েছে। দেড় বছরেরও বেশি সময় পরে গত ২৬জুন মহকুমা পরিষদের তিন স্তরে ভোট হয়। চাপা সন্ত্রাস, হুমকির পরিবেশ ছিল। ভোটের দিন কয়েকটা জায়গায় হামলার ঘটনাও ঘটে। ২০১৫ সালে মহকুমা পরিষদের তিনটি স্তরেই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছিল বামফ্রন্ট। যদিও মেয়াদ শেষের মাঝপথেই গায়ের জোরে একাধিক পঞ্চায়েত সমিতি ও গ্রাম পঞ্চায়েত দখল করে শাসক তৃণমূল। তারপরেও দীর্ঘদিন ভোট করা হয়নি।
মহকুমা পরিষদের মোট ২২টি গ্রাম পঞ্চায়েত আসনের মধ্যে ১৯টিতে এককভাবে জয়ী হয়েছে তৃণমুল কংগ্রেস। তিনটি পঞ্চায়েত ত্রিশঙ্কু। সেগুলি হলো- ফাঁসিদেওয়া ব্লকের জালাস নিজামতারা, চটহাট বাঁশগাও এবং মাটিগাড়া ব্লকের পাথরঘাটা গ্রাম পঞ্চায়েত। এর মধ্যে পাথরঘাটা পঞ্চায়েতের ২৮টি আসনের মধ্যে তৃণমূল ১৪টি, বামফ্রন্ট ৪টি, বিজেপি ৮টি, কংগ্রেস একটি এবং নির্দল ১টি আসনে জয়ী হয়েছে। ২২টি গ্রাম পঞ্চায়েতে মোট আসন সংখ্যা ৪৬২টি। এর মধ্যে ভোটের আগেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তৃণমূল বেশ কয়েকটি আসন দখল করে। এদিন গণনা শেষে দেখা যায় গ্রাম পঞ্চায়েতে তৃণমূল ৩২০টি, ৮৬টি বিজেপি, ২১টি কংগ্রেস, সিপিআই(এম) ১৫টি ও নির্দল ২০টি আসন জয়ী হয়েছে। চারটি পঞ্চায়েত সমিতির চারটিই তৃণমূলের দখলে গেছে।
শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদ নির্বাচন প্রসঙ্গে সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য জীবেশ সরকার বলেন, আমাদের কাছে এটি বড়ো নির্বাচনী বিপর্যয়। আমরা এই বিপর্যয়ের কারণ অনুসন্ধান করে পরবর্তী সাংগঠনিক পদক্ষেপ গ্রহণ করব। তৃণমূল এবং বিজেপি বিভিন্নভাবে জাতি ধর্ম ভাষার মধ্যে দিয়ে মানুষের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করে ভোট প্রক্রিয়াকে বিভাজিত করেছে।
সিপিআই(এম) দার্জিলিঙ জেলা সম্পাদক সমন পাঠক বলেন, তৃণমূলীরা সরাসরি সন্ত্রাস না করেই মহকুমার গ্রামাঞ্চলে নীরব সন্ত্রাসের পরিবেশ কায়েম করেছিল। কোথাও দেদার অর্থ ছড়িয়ে দিয়ে আবার কোথাও জমি দালাল ও মাফিয়ারাজ কায়েম করেছিলো। প্রচারে দেখা না গেলেও বিজেপি’র এই ফলাফলও তাৎপর্যপূর্ণ। একইসঙ্গে আমরা মানুষের জীবনযন্ত্রণার ইস্যু, দুই সরকারের জনবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলনের রাস্তাতেই থাকব।
পাহাড়ের নির্বাচন প্রসঙ্গে সমন পাঠক বলেছেন, বিজেপি, জিএনএলএফ, সিপিআরএম এরা সব আসলে অনীত থাপাদের জোটের হাতে জিটিএ’কে তুলে দিতে সাহায্য করেছে। এই আশঙ্কা আমরা করেছিলাম। ফলে আবার সেই পাহাড়ে দুর্নীতি, রাজ্যের হস্তক্ষেপের সুযোগ বাড়ল।