৫৯ বর্ষ ৪৬ সংখ্যা / ১ জুলাই, ২০২২ / ১৬ আষাঢ়, ১৪২৯
উদ্বাস্তু মানুষদের দাবির প্রতি কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের অবহেলা-উপেক্ষার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার ডাক ইউসিআরসি’র রাজ্য ১৯তম সম্মেলনে
শংকর মুখার্জি
সম্মেলন উদ্বোধন করে বক্তব্য রাখছেন বিমান বসু।
উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসনের বকেয়া সমস্যাগুলির সমাধানের দাবিতে বৃহৎ আন্দোলন গড়ে তুলতে সংগঠনকে আরও মজবুত ও গতিশীল করার আহ্বান জানিয়ে শেষ হলো সম্মিলিত কেন্দ্রীয় বাস্তুহারা পরিষদ(ইউসিআরসি)-র উনিশতম রাজ্য সম্মেলন। হাওড়ার রামরাজাতলায় সংগ্রাম সমিতির হলে গত ২৫ ও ২৬ জুন এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সম্মেলনে বলা হয়েছেঃ উদ্বাস্তু সমস্যা জাতীয় সমস্যা। বর্তমান কেন্দ্র ও রাজ্য উভয় সরকারই সমস্ত উদ্বাস্তুর পুনর্বাসনের দাবিকে অবহেলা করেছে। সংকুচিত করেছে এই সম্পর্কিত দপ্তরকে। এখন চলছে রাজ্য সরকারের ভাঁওতা দলিল প্রদান। বহুবিধ সমস্যা বারবার তুলে ধরা হলেও তা উপেক্ষিত। উদ্বাস্তুদের দীর্ঘ লড়াইয়ে অর্জিত অধিকারগুলি কর্মহীন দপ্তরে মাথা খুটে মরছে। ইউসিআরসি সংগঠনের শক্তিবৃদ্ধি ও উদ্বাস্তু মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামকে জোরদার করতে উদ্বাস্তু মানুষের এবং গণতান্ত্রিক মানুষের ঐক্যকে আরও মজবুত করতে হবে। এই সম্মেলনের উদ্বোধন করেন বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু। সম্মেলন স্থলের নামকরণ করা হয় কমরেড হরিপদ দাস ও কমরেড পদ্মনিধি ধর নগর। সম্মেলন হয়েছে কমরেড রবি গাঙ্গুলি-কৃষ্ণ কুমার দাস-নিরঞ্জন মজুমদার মঞ্চে। সম্মেলন শেষে স্থানীয় বেলেপোল মোড়ে প্রকাশ্য সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সুজন চক্রবর্তী, সুমিত দে প্রমুখ। সম্মেলনে রাজ্যের ২০টি জেলা থেকে ২৫৪ জন প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।
● ● ●
সম্মেলন থেকে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে ১২ দফা এবং রাজ্য সরকারের কাছে ২৪ দফা দাবি উত্থাপন করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে করা দাবিগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলোঃ
(১) উদ্বাস্তু পুনর্বাসন জাতীয় সমস্যা হওয়ায় এর সমাধানের পুরো দায়িত্ব কেন্দ্রীয় সরকারের। পুনর্বাসনের বকেয়া কাজ সমাধা করার জন্য সাবেক বামফ্রন্ট সরকার প্রেরিত ৫০১০ কোটি ৬০ লক্ষ টাকার পুনঃমূল্যায়ন করে কেন্দ্রকে মঞ্জুর করতে হবে।
(২) বামফ্রন্ট সরকার স্বীকৃত ৯৯৮ এবং বিশেষ তালিকাভুক্ত ও অঅনুমোদিত কলোনিগুলিকে কেন্দ্রীয় সরকারকে স্বীকৃতি ও দলিল দিতে হবে।
(৩) কেন্দ্রীয় সরকারের জমিতে স্থাপিত কলোনিগুলিকে দলিল দেওয়ার স্বার্থে জমিগুলিকে বিনামূল্যে রাজ্য সরকারকে হস্তান্তর করতে হবে।
(৪) বিকল্প পুনর্বাসনের আগাম ব্যবস্থা না করে কোনো কলোনি থেকে উদ্বাস্তুদের উচ্ছেদ করা যাবে না।
(৫) কেন্দ্রের স্বীকৃতপ্রাপ্ত কলোনিগুলির বাকি থাকা জমি অধিগ্রহণের ও হস্তান্তরের কাজ দ্রুত শেষ করতে হবে।
(৬) ২০১৯ সালের নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন, এনআরসি এবং এনপিআর প্রক্রিয়া বাতিল করতে হবে।
(৭) ১৯৭১ সালের পরে নিরাপত্তার অভাবজনিত কারণে ভারতে আসা শরণার্থীদের পুনর্বাসন ও নাগরিকত্ব দিতে হবে।
(৮) বিভিন্ন রাজ্যে পাঠানো উদ্বাস্তুরা নিদারুণ যন্ত্রণার মধ্যে আছে। তাঁদের সার্বিক পুনর্বাসন, মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষাদানের সুযোগ, জাতিগত শংসাপত্র প্রদান ও সামাজিক সুরক্ষার ব্যবস্থা কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারকে করতে হবে।
রাজ্য সরকারের কাছে উত্থাপিত দাবিগুলির মধ্যে প্রধান হলোঃ
(১) স্বীকৃত কলোনিগুলির বকেয়া দলিল প্রদানের কাজ দ্রুত শেষ করতে হবে। পুনর্বাসন বিভাগে জমি হস্তান্তর দ্রুত করতে হবে।
(২) ৯৯৮ এবং অঅনুমোদিত গ্রুপের যে কলোনিগুলির জমি রাজ্য সরকারের, তার দলিল দ্রুত প্রদান করতে হবে।
(৩) দলিলপ্রাপ্তদের দলিলের সাথে পরচা দিতে হবে।
(৪) দখলী স্বত্বের দলিলের পরিবর্তে কায়েমিস্বত্বের দলিল দিতে হবে।
(৫) সংখ্যালঘুদের পরিত্যক্ত জমি/বাড়ি এবং ব্রিটিশ আমলে তৈরি ব্যারাকে বসবাসকারী উদ্বাস্তু পরিবারগুলিকে কায়েমি স্বত্বের দলিল দিতে হবে।
(৬) রাজ্য মন্ত্রীসভায় পূর্বের মতো স্বতন্ত্র উদ্বাস্তু ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রক রাখতে হবে। রিহ্যাবিলিটেশন ইন্ড্রাস্টিজ করপোরেশনকে পুনরায় চালু করতে হবে।
(৭) বায়াননামা কলোনি সহ কোনো কলোনি থেকে উচ্ছেদ করা চলবে না।
এছাড়াও আটদফা আন্দোলনগত কর্মসূচি এবং নয়দফা সাংগঠনিক কর্মসূচি এবং ১৩টি প্রস্তাবও গৃহীত হয়েছে সম্মেলনে। আন্দোলনগত কর্মসূচিতে বলা হয়েছেঃ ৯৯৮ এবং ৮১৩ গ্রুপের কলোনিগুলিতে কনভেনশন সংগঠিত করা। জেলাশাসকের দপ্তরে অবস্থান-বিক্ষোভ করে স্মারকলিপি প্রদান সহ ডেপুটেশন প্রদান। রাজ্য পুনর্বাসন দপ্তরে দাবিপত্র পেশ। উদ্বাস্তুদের দাবিগুলি নিয়ে অন্যান্য গণসংগঠন এবং নাগরিকদের যৌথ আন্দোলন গড়ে তোলা প্রভৃতি। সম্মেলনে সম্পাদকীয় প্রতিবেদন পেশ করেন বিদায়ী সম্পাদক মধু দত্ত।
উদ্বোধনী ভাষণে বিমান বসু বলেন, বহু আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্যদিয়ে সম্মিলিত কেন্দ্রীয় বাস্তুহারা পরিষদ (ইউসিআরসি) গড়ে উঠেছে। বহু মানুষ শহিদ হয়েছেন। এক রক্তস্নাত ইতিহাসের অধিকারী এই সংগঠন। সেই গৌরবজনক উত্তরাধিকারকেই বহন করে নিয়ে যাওয়ার গুরুদায়িত্ব পড়েছে সংগঠনের এই প্রজন্মের সংগঠকদের ওপর। দেশভাগের পর তৎকালীন পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান থেকে উদ্বাস্তুরা যথাক্রমে বাংলায় ও পাঞ্জাবে আসেন। বাংলায় উদ্বাস্তুর সংখ্যা ব্যাপক। পাঞ্জাবে উদ্বাস্তু সমস্যার সমাধান হয়েছে। বাংলায় করা হয়নি। পাঞ্জাবে উদ্বাস্তু সমস্যার সমাধান হওয়ার পরই কেন্দ্রীয় উদ্বাস্তু দপ্তরটি ছোটো করা শুরু হয়। পরে তুলে দেওয়া হলো। উদ্বাস্তু সম্পর্কিত বিষয়গুলিকে অন্য দপ্তরে ঠেলে দেওয়া হলো। বিমান বসু বলেন, ইউসিআরসি-কে উদ্বাস্তু মানুষের অধিকার আদায়ের লড়াইয়ের সাথেই শিক্ষা, শিক্ষান্তে চাকরি, শিল্প এবং বিশেষ করে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে নিবিড় প্রচার আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
● ● ●
পূর্ববঙ্গ থেকে আসা বাঙালি উদ্বাস্তুদের প্রতি কংগ্রেস সরকারের নীতি ছিল ‘উপেক্ষা, বঞ্চনা, বৈষম্য ও প্রত্যাখ্যানের নীতি’। এই প্রসঙ্গে কয়েকটি বিষয়ের অবতারণা করা যায়। যেমন, ১৯৪৭ সালে নেহরু বিবৃতি দিয়েছিলেনঃ পূর্ববঙ্গে যারা বিপন্ন হবে তাদের প্রতি আমাদের কর্তব্য হবে, তাদের নিজেদের দেশেই তাদের রক্ষার ব্যবস্থা করা। আর যদি উপায় না থাকে এবং বিশেষ প্রয়োজন পড়ে তাহলে আমাদের দেশে আশ্রয় দেওয়া হবে। ১৯৪৮ সালেই নেহরু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে বললেনঃ “পূর্ব বাংলার হিন্দুরা যাতে পশ্চিমবঙ্গে না আসে সেজন্য গোড়া থেকেই সমস্ত ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল।” এরই ভিত্তিতে রাজ্যের কংগ্রেস সরকার বিজ্ঞপ্তি জারি করলঃ ১৯৪৮ সালের ২৫ জুনের পর আসা কাউকে উদ্বাস্তু হিসেবে গণ্য করা হবে না। তৎকালীন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায়ও নেহরুকে এক চিঠিতে মন্তব্য করেছিলেনঃ “ভারত সরকার পূর্ব পাকিস্তান থেকে আসা উদ্বাস্তুদের স্বীকৃতি দিতে চাইছে না। এবং তাদের পুনর্বাসনের দায়িত্ব গ্রহণেও অনিচ্ছুক।” ১৯৫০ সালে নেহরু-লিয়াকৎ চুক্তির মূল প্রতিপাদ্যই ছিল, পূর্ব পাকিস্তান থেকে আসা উদ্বাস্তুরা দেশে ফিরে যাবে। এদেশে তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে না।
১৯৫০ সালে বরিশাল ও খুলনায় ভয়াবহ দাঙ্গার ফলে ১২ লক্ষ বাঙালি উদ্বাস্তু পশ্চিমবঙ্গে আশ্রয় নিল। তৎকালীন কেন্দ্রের পুনর্বাসন মন্ত্রী মোহনলাল সাক্সেনা এক অমানবিক ঘোষণা করেন। তাঁর ঘোষণা ছিলঃ “নতুন উদ্বাস্তুদের সম্পর্কে আমাদের দায়িত্ব শুধু ত্রাণকার্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে।তাদের পুনর্বাসনের জন্য কোনো ব্যবস্থা করা হবে না।” লক্ষ লক্ষ শরণার্থী বাধ্য হয়েই বাঁচার তাগিদে পতিত জলা জায়গায় জবরদখল কলোনি তৈরি করে থাকতে বাধ্য হয়।
১৯৫১ সালে বিধানচন্দ্র রায় সরকার উদ্বাস্তুদের উচ্ছেদ করার জন্য ‘উচ্ছেদ আইন’ প্রণয়নে উদ্যোগী হন। ইউসিআরসি’র নেতৃত্বে উদ্বাস্তুরা বামপন্থী সহ অন্যান্য গণতান্ত্রিক শক্তির সাহায্যে দুর্বার আন্দোলন করে ওই আইন পাল্টাতে বিধানচন্দ্র রায়কে বাধ্য করে। ইউসিআরসি’র আন্দোলনের চাপে পুনর্বাসন নীতি কিছুটা পরিবর্তিত হয়। ১৯৫৮ সালে হঠাৎই পুনর্বাসন মন্ত্রী মেহের চাঁদ খান্না ঘোষণা করলেন, পশ্চিমবঙ্গে আর পুনর্বাসনের জায়গা নেই। অর্থাৎ ক্যাম্পের উদ্বাস্তু এবং নবাগত সবাইকে দণ্ডাকারণ্যে যেতে হবে। না গেলে চার মাসের মধ্যে ডোল দিয়ে ক্যাম্প বন্ধ করে দেওয়া হবে। সরকারের আর কোনো দায়িত্ব থাকবে না। এই পরিস্থিতিতে ১৯৬০ সালে সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হলো, পশ্চিমবঙ্গে পুনর্বাসনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। পরবর্তী সময় আরও ঘোষণা করা হলোঃ ১৯৫৮-৬৩ এবং ১৯৬৫-৭১ সালের মধ্যে আাসা উদ্বাস্তুদের আর পশ্চিমবঙ্গে পুনর্বাসন হবে না। কেন্দ্রীয় সরকার বলে, পূর্ববঙ্গের সংখ্যালঘুদের সম্পর্কে যে প্রতিশ্রুতি ও দায়িত্ব গ্রহণের আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল তা অনির্দিষ্টকালের জন্য বহন করা যাবে না। এই সময় ইউসিআরসি প্রশ্ন তোলেঃ পাঞ্জাবে লোক বিনিময় করে ভবিষ্যতে উদ্বাস্তু হওয়ার পথ বন্ধ করা হয়েছিল। পূর্ববঙ্গের ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক ব্যবস্থায় ভবিষ্যতে উদ্বাস্তু হওয়ার পথ বন্ধ না করে কেন্দ্রীয় সরকারের এরকম সিদ্ধান্ত গ্রহণ কখনই যুক্তিযুক্ত নয়। এবং শেষে ১৯৮৪ সালে কেন্দ্রীয় সরকার ত্রাণ ও পুনর্বাসন দপ্তর তুলে দেয়।
● ● ●
সম্মেলনকে অভিনন্দন জানিয়ে সুজন চক্রবর্তী বলেন, রাজ্যের গণআন্দোলনে উদ্বাস্তু আন্দোলনের বিরাট অবদান আছে। যৌথ আন্দোলনের সংস্কৃতি উদ্বাস্তু আন্দোলনের মধ্যদিয়েই গড়ে উঠেছিল। আন্দোলনের মধ্যদিয়ে যে জনবিরোধী আইন পাল্টানো যায় তা উদ্বাস্তু আন্দোলনই প্রথম করে দেখায়। আন্দোলনের চাপেই ‘উচ্ছেদ আইন’ বিধান রায় সরকার ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হয়। উদ্বাস্তু আন্দোলনের ফলেই শর্তাধীন দলিলের পরিবর্তে নিঃশর্ত দলিল প্রদান শুরু হয়। উদ্বাস্তু মানুষদের উদ্যোগে বহু কলোনিতে স্কুল তৈরি হয়েছিল। প্রতিটা কলোনিতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের এক রেওয়াজ গড়ে ওঠে। উদ্বাস্তু আন্দোলনের এই গৌরবজনক ইতিহাস ইউসিআরসি-কে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে।
বর্তমান জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির ওপর বিস্তারিত বক্তব্য রাখেন গণআন্দোলনের নেতা সুমিত দে এবং রেখা গোস্বামী। সুমিত দে বলেন, মতাদর্শ ও রাজনৈতিক চর্চায় দুর্বলতা তৈরি হলে সংগঠনে সমস্যা দেখা যায়। উদ্বাস্তু আন্দোলনের ক্ষেত্রেও তা সমানভাবে প্রযোজ্য। বর্তমান পরিস্থিতির মোকাবিলা ও পরিবর্তন করতে হলে সংগঠনকে উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে হবে। নিজেদেরও প্রস্তুত হতে হবে। তা নাহলে পরিস্থতির মধ্যে যতই ইতিবাচক উপাদান থাকুক না কেন তা আমরা কাজে লাগাতে পারব না।
সম্পাদকীয় প্রতিবেদনের ওপর আলোচনায় ২০টি জেলা থেকে ৩৫ জন প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন। উদ্বাস্তু মানুষের বসবাসের জমির দলিল ও পরচার দাবিতে বিভিন্ন জেলায় ইউসিআরসি’র নেতৃত্বে ডিএলআর দপ্তর ঘেরাও, ডেপুটেশন প্রদান প্রভৃতি যে কর্মসূচি পালিত হয়েছে তার বিবরণ দেন প্রতিনিধিরা। প্রতিনিধিরা জানান, এরাজ্যেও উদ্বাস্তু, ত্রাণ ও পুনর্বাসন দপ্তর গুটিয়ে ফেলে তা ভূমিরাজস্ব দপ্তরের সঙ্গে যুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। বহু জেলায় ভূমিরাজস্ব দপ্তরেও উদ্বাস্তু মানুষদের প্রয়োজনীয় কাজ করার মতো কর্মচারী নেই। আর দপ্তরগুলিও দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। কলকাতা জেলার প্রতিনিধি জানান, বিগত করপোরেশন নির্বাচনের ফলপ্রকাশের পর নেতাজি নগরে কেন্দ্রীয় বাস্তুহারা সমিতির দপ্তর তৃণমূলীরা দখল করে নিয়েছিল। এলাকার বামপন্থী ও গণতান্ত্রিক মানুষ একদিনের মধ্যেই সেই দপ্তর দখলমুক্ত করে। প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, রাজ্যের তৃণমূল সরকার উদ্বাস্তুদের জমির দলিল প্রদান নিয়ে ভাঁওতা দিচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকারের জমি রাজ্য সরকারের হাতে হস্তান্তর না হয়েই সেই জমির দলিল বেআইনিভাবে দেওয়া হচ্ছে। আড়াই কোটি টাকা খরচ করে সরকারি অনুষ্ঠানে মাত্র ১৫ জনকে দলিল প্রদান করা হয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের প্রতিনিধি জানিয়েছেন, বিভিন্ন সময়ে ইউসিআরসি-র ছ’জন তৃণমূলের দুর্বৃত্ত বাহিনীর হাতে শহিদ হয়েছেন। জবাবি ভাষণের পর সম্পাদকীয় প্রতিবেদনটি সর্বসম্মতি গৃহীত হয়েছে।
সম্মেলন থেকে সর্বসম্মতিতে ২১৬ জনের রাজ্য কাউন্সিল এবং ৯২ জনের কার্যকরী কমিটি গঠিত হয়। জীবনরঞ্জন ভট্টাচার্য সভাপতি, রেখা গোস্বামী কার্যকরী সভাপতি এবং মধু দত্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। সমগ্র সম্মেলন পরিচালনা করেন জীবনরঞ্জন ভট্টাচার্য, সত্যরঞ্জন দাস, বিমল সিংহ, নবনীতা মুখার্জি এবং অশোক চক্রবর্তীকে নিয়ে গঠিত সভাপতিমণ্ডলী। সম্মেলনের শুরুতে সংগঠনের পতাকা উত্তোলন করেন জীবনরঞ্জন ভট্টাচার্য। বিভিন্ন বামপন্থী ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের প্রতিনিধিরা সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।