৫৯ বর্ষ ৪৬ সংখ্যা / ১ জুলাই, ২০২২ / ১৬ আষাঢ়, ১৪২৯
ভূমি অধিকার আন্দোলন মঞ্চের ডাকে ছত্তিশগড় রাজ্য কনভেনশন
কনভেনশনে বলছেন কৃষক নেতা হান্নান মোল্লা।
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ দেশের বিভিন্ন রাজ্যের এবং কেন্দ্রের সরকার নাগরিকদের মৌলিক অধিকারের চেয়ে করপোরেট স্বার্থকে প্রাধান্য দিচ্ছে, এই কারণে করপোরেট মুনাফার জন্য প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে দেশের জল, বন, জমি, পরিবেশ। তাই সবাইকে রাজপথে একত্রিত হয়ে করপোরেট লুটের বিরুদ্ধে শক্তিশালী জমি আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। ছত্তিশগড়ে ২৮ জুন ভূমি অধিকার আন্দোলন মঞ্চের ডাকে অনুষ্ঠিত রাজ্য কনভেনশন থেকে এই আহ্বান জানানো হয়। কনভেনশনের উদ্বোধন করেন প্রবীণ কৃষক নেতা, সারা ভারত কৃষক সভার সাধারণ সম্পাদক হান্নান মোল্লা।
ছত্তিশগড় বাঁচাও আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত বহু সংগঠনের প্রতিনিধিরা ঐক্যবদ্ধভাবে উপস্থিত থেকে করপোরেট জমি লুট, আদিবাসীদের নির্মম দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে এই কনভেনশনের প্রতি সংহতি জানান এদিন। রাজ্যস্তরের এই একদিনের কনভেনশনে ছত্তিশগড়ের বহু আদিবাসী, কৃষক এবং সামাজিক সংগঠন রায়পুরে জড়ো হয়েছিল। প্রতিনিধিরা জল, বন, ভূমি, খনিজ সম্পদ ও অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা এবং গণতন্ত্র রক্ষায় জারি আন্দোলনসমূহের প্রতি সংহতি জানিয়ে নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন।
কনভেনশনের উদ্বোধন করে হান্নান মোল্লা বলেন, ভূমি অধিকার আন্দোলন গড়ে তোলার এই মঞ্চের মাধ্যমে সরকারের করপোরেটপন্থী নীতির বিরুদ্ধে নতুন করে প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তোলা হচ্ছে। মোদি-আদানি মডেল- জল, বন, ভূমি ও গণতন্ত্র ধ্বংস করছে। প্রাকৃতিক সম্পদ লুট করার মোদি-আদানি মডেল কোনো কাজ করবে না। তিনি বলেন, এসব প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর সমাজের অধিকার রয়েছে, কিন্তু আজ পুঁজির জোরে ও ক্ষমতার প্রশ্রয়ে তা হস্তগত করার অপচেষ্টা চলছে।
অলক শুক্লার সঞ্চালনায় কনভেনশনে হাসদেব অরণ্য বাঁচাও সংগ্রাম সমিতির মুনেশ্বর পরতে, রাওঘাট সংগ্রাম সমিতির নরসিংহ মান্ডবী, দলিত আদিবাসী মঞ্চের রাজিম কেতবাস, বেচাঘাট আন্দোলনের সরজু টেকম, নয়া রায়পুর কিষান আন্দোলনের রূপন চন্দ্রকার, আদিবাসী মহাসভার মণীষ কুঞ্জাম, হাটের আদিবাসী মহাসভার কুঞ্জা, ছত্তিশগড় মুক্তি মোর্চার জনকলাল ঠাকুর, ছত্তিশগড় কিষান সভার ঋষি গুপ্ত, সর্ব আদিবাসী সমাজের প্রাক্তন সাংসদ অরবিন্দ নেতাম এবং যশপুর, কোরবা, ধামতরি এবং অন্যান্য স্থানের প্রতিনিধিরা বক্তব্য রাখেন।
তাঁদের বক্তব্যে উঠে আসে বর্তমান সরকার সহ ছত্তিশগড়ের সরকার কীভাবে করপোরেট কোম্পানিগুলির জন্য আদিবাসীদের উপর যে বীভৎস নৃশংসতা চালায় তার কথা। তাঁরা বলেন, সরকারের যোগসাজশে উচ্ছেদ এবং গ্রেপ্তার, এমনকী ভুয়ো এনকাউন্টারের ঘটনা ঘটানো হয়েছে ছত্তিশগড়ে। সম্মেলনে বক্তারা সংগঠিত ঐক্যবদ্ধ গণআন্দোলনের প্রয়োজনীয়তা প্রসঙ্গে সহমত প্রকাশ করেন।
সম্মেলনে মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, গুজরাট, ওডিশা, কাশ্মীরসহ ১৫টি রাজ্যের প্রতিনিধি অংশ নেন। এই রাজ্যগুলির প্রতিনিধিরা বলেছেন যে, গোটা দেশের কৃষকরা ছত্তিশগড়ের কৃষকদের পাশে দাঁড়িয়েছে। বক্তব্য রাখেন কিষান সংগ্রাম সমিতির সুনীলাম, লোকসংঘর্ষ মোর্চার প্রতিভা শিন্ডে, লোকশক্তি অভিযানের প্রফুল্ল সামন্ত, সর্বহারা গণআন্দোলনের উলকা মহাজন, মধ্যপ্রদেশ কিষান সভার বাদল সরোজ প্রমুখ।
নর্মদা বাঁচাও আন্দোলন ও গণআন্দোলনের জাতীয় সমন্বয়ের মেধা পাটেকর বলেন, ছত্তিশগড়, ঝাড়খণ্ড ও ওডিশায় আদিবাসীদের প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর আক্রমণ তীব্র হয়েছে। বন ধ্বংস, বাঁধ তৈরি করে কৃষিজমি নিমজ্জিত করা, বাস্তুচ্যুতির মাধ্যমে জনগণকে উজাড় করে দেওয়া চলছে। আমরা যদি সবাই মিলে যুদ্ধ না করি, তাহলে আমরা বাঁচব না, সমাজও বাঁচবে না।
মহারাষ্ট্রের সর্বহারা জন আন্দোলনের উলকা মহাজন বলেছেন যে, হাসদেও অরণ্যের লড়াই কোনো একটি রাজ্য বা কোনো একটি সম্প্রদায়ের লড়াই নয়। এটি সমগ্র দেশের জলবায়ু ও পরিবেশ রক্ষার যুদ্ধ, যে কোনো মূল্যে জয়ী হতে হবে। আমাদের ঘোষণা করতে হবে যে, আমাদের বন, আমাদের জমি, আমাদের জল বিক্রির জন্য নয়। এর উপর আমাদের অস্তিত্ব টিকে আছে, তাই এটি লাভের পণ্য নয়। আমরা একে জীবিকা নির্বাহের মাধ্যম হিসেবে দেখি।
সম্মেলনের শুরুতে ছত্তিশগড় কিষান সভার সভাপতি সঞ্জয় পরাতে প্রতিনিধিদের স্বাগত জানিয়ে বলেন, আজ দেশের ক্ষমতাসীন দলগুলো একদিকে সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মীয় বৈষম্যের মতো ইস্যুতে নীরবতা পালন করছে, অন্যদিকে প্রতিনিয়ত করপোরেট লুটপাটের সুবিধার চেষ্টা করছে। এই প্রেক্ষিতে গণআন্দোলনের সহায়ক এই কনভেনশনের গুরুত্ব অনেক বেশি।
কনভেনশন থেকে প্রতিটি জেলায় একটি সম্মেলন আয়োজন করার এবং জমি, বাস্তুচ্যুতি, পুনর্বাসন এবং জীবিকার প্রশ্নে একটি রাজ্যব্যাপী আন্দোলন গড়ে তোলার প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়।