৫৯ বর্ষ ৪৬ সংখ্যা / ১ জুলাই, ২০২২ / ১৬ আষাঢ়, ১৪২৯
অবাধ রিগিঙে উপনির্বাচনে জয়ের পর বিজেপি’র লাগামহীন সন্ত্রাস
সুকান্ত বসু
বিজেপি’র হামলায় আক্রান্ত পরিবারের সঙ্গে কথা বলছেন মানিক সরকার।
ছাপ্পা ভোটে ‘‘জয়ী’’ হলেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা। বিপ্লব দেবকে সরিয়ে মানিক সাহাকে মুখ্যমন্ত্রী করেছে বিজেপি। মানুষের ক্ষোভকে ঘুরিয়ে দিতে এই প্রসাধনী প্রলেপ দেওয়া হয়েছিল। সাম্প্রতিক চারটি কেন্দ্রে উপনির্বাচনে জয়ী হতে বিজেপি পেছনের সব দরজা কাজে লাগিয়েছে। বিরোধী দলের নেতা মানিক সরকার বলেছেন, ‘‘ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে যেতে দিল না। জাল ভোট করল, তারপরও আবার আক্রমণও করা হচ্ছে। হচ্ছেটা কী? সরকার কোথায়? মুখ্যমন্ত্রী জিতেছেন ছাপ্পা ভোটে।’’ এই বক্তব্য শুধু মানিক সরকারের নয়। রাজ্যের মানুষের মুখে মুখে ঘুরছে এই কথাগুলি।
শাসক বিজেপি জানে ওরা কিভাবে জিতেছে। একটি কেন্দ্রে বিজেপি ছেড়ে কংগ্রেসে যোগ দেওয়া প্রাক্তন বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মন জয়ী হয়েছেন। বামপন্থী প্রার্থীরা পরাজিত হলেও বিভিন্ন বুথে মানুষের মধ্যে প্রতিরোধ, প্রতিবাদের মেজাজ লক্ষ করা গেছে। এতে ক্ষিপ্ত বিজেপি মানুষকে দাবিয়ে রাখতে চার কেন্দ্র ছাড়াও রাজ্যের অন্যান্য প্রান্তে ফ্যাসিস্তসুলভ সন্ত্রাস নামিয়ে এনেছে। পৈশাচিক উল্লাস থেকে ৮০ বছরের প্রবীণ পর্যন্ত রেহাই পাননি। এইসব আক্রমণের বিরুদ্ধে ধিক্কার ধ্বনিত হচ্ছে। সিপিআই(এম) অবিলম্বে সন্ত্রাস বন্ধের দাবি জানিয়েছে।
পৈশাচিক উল্লাস
উপভোটে তিন কেন্দ্রের জয়ে বিজেপি আনন্দোল্লাস করছে সন্ত্রাসের নতুন মাত্রা এনে। সিপিআই(এম) সহ বিরোধী দলের নেতা, কর্মী ও সমর্থকদের উপর নামিয়ে আনা হচ্ছে নৃশংস অত্যাচার। বাড়িঘর, দোকান-পাটে ভাঙচুর চালিয়ে ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে আগুন। গেরুয়া সন্ত্রাসীদের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছেন না মা-বোনেরাও। আগরতলায় প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি বীরজিৎ সিনহা সহ বিরোধী দলের আরও বহু নেতা-কর্মী আক্রান্ত হন। পশ্চিম থানার সামনে সাংবাদিকসহ আরও নিরীহ মানুষের বাইক, স্কুটি ভাঙে দুর্বৃত্তরা। খোয়াইয়ে বিধায়ক বৃষকেতু দেববর্মা এবং এডিসি সদস্য বিদ্যুৎ দেববর্মার গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। আইপিএফটি ছেড়ে পদত্যাগপত্র দু’বার বিধানসভায় অধ্যক্ষের কাছে জমা দিয়েছেন বৃষকেতু দেববর্মা। কিন্তু শুনানির নামে তাঁর পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা হচ্ছে না কোনো অজ্ঞাত কারণে। তাঁর পদত্যাগপত্র গৃহীত হলে পাঁচ কেন্দ্রে উপনির্বাচন হতো। বিজেপি’র জোটসঙ্গী আইপিএফটি।
প্রতিটি ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা ছিল আগের মতোই নিন্দনীয়। আগরতলা শহরতলি এলাকার বিভিন্ন স্থানে ২৬ জুন দুপুরের পর থেকে নতুন করে সন্ত্রাস নামিয়ে আনে বিজেপি। পোষা দুর্বৃত্ত বাহিনী দিয়ে সিপিআই(এম) নেতা-কর্মীসহ সমর্থকদের বাড়ি-ঘর ভাঙচুর, লুটপাট শুরু করেছে শাসকদল। যোগেন্দ্রনগরের আদর্শ কলোনিতে সিপিআই(এম) অঞ্চল কমিটির সদস্যা সবিতা চক্রবর্তীর বাড়ি আক্রমণ করে বিজেপি’র বাইকবাহিনী। তাঁর বাড়ির গেট, ঘরের দরজা ভাঙচুর করে। সমস্ত আসবাবপত্র তছনছ করে দেয়। সবিতা চক্রবর্তীকে প্রাণনাশের হুমকি দেয় এবং তাঁর সারা শরীরে ফিনাইল ঢেলে দেয়। অরুন্ধতীনগরের সূর্য পাড়ায় সিপিআই(এম) অঞ্চল কমিটির সদস্য অজয় দে’র বাড়িতেও হামলা চালায় শাসকদলের সশস্ত্র দুর্বৃত্তবাহিনী। গেট, দরজা, আসবাবপত্র ভাঙচুরের পাশাপাশি মূল্যবান সামগ্রী লুট করে নিয়ে যায়। ওই সময় বাড়ির শিশু ও মহিলারা বাড়ি থেকে পালিয়ে প্রাণ রক্ষা করে। দীর্ঘসময় ধরে চলে হামলা। ধর্মনগরের যুবরাজনগর বিধানসভা কেন্দ্রের বিভিন্ন স্থানে সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরি করেছে বিজেপি। ভোট গণনা শেষে কেন্দ্র থেকে বেড়িয়ে যাওয়ার সময় বামফ্রন্ট প্রার্থী এবং কাউটিং এজেন্টদের উপর হুজ্জতি করার চেষ্টা করে। সিপিআই (এম) হাফলং অঞ্চল অফিস ভাঙচুর করে। দরজা ভেঙে অফিসের ভেতরে ঢুকে আসবাবপত্র এবং সমস্ত কাগজপত্র নষ্ট করে। বামফ্রন্ট প্রার্থী শৈলেন্দ্র চন্দ্র নাথের ইলেকশন এজেন্ট রূপেন্দ্র নারায়ণ চৌধুরীর বাড়ি ভাঙচুর করে। সিপিআই(এম) নেতৃত্ব নির্মল চক্রবর্তী, মাখনলাল পাল, মইনুল হক, শাহিরউদ্দিন (রাবু)-র বাড়িতে আক্রমণ চালায় দুর্বৃত্তরা। বিভিন্ন স্থানে সিপিআই(এম) নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের বাড়িতে গিয়েও হুমকি দিচ্ছে।
বিলোনিয়ায় টিইসিসি (এইচ বি রোড)-র অফিস পুড়িয়ে তিন কেন্দ্রের উপনির্বাচনে জয়ের উল্লাস করেছে। বিজেপি ২৬ জুন বিকালে দুর্বৃত্তদের লাগানো আগুনে পুড়ল ওই সংগঠনের বিলোনিয়া বিভাগীয় অফিস। আক্রান্ত হয় এক সিপিআই(এম) কর্মীর বাড়ি। উপনির্বাচনের ফল ঘোষণা হতেই থমথমে হয়ে উঠে বিলোনিয়ার পরিস্থিতি। উল্লাসের নামে শাসকদলের একদল দুর্বৃত্ত প্রথমে টিইসিসি (এইচ বি রোড)-র বিলোনিয়া বিভাগীয় অফিসের দরজা ভাঙে। লাগিয়ে দেয় আগুন। অফিসের সমস্ত আসবাবপত্রসহ প্রয়োজনীয় কাগজ পুড়ে যায়। বিলোনিয়া শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত এই অফিসটি। এর পাশেই রয়েছে ইউবিআই, ইউকো ব্যাঙ্কের শাখাসহ প্রচুর বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান এবং ঘনবসতিপূর্ণ সাধারণ মানুষের বসবাস। স্থানীয় মানুষের তৎপরতা ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের চেষ্টায় নিয়ন্ত্রণে আসে আগুন। বড়ো ধরনের বিপদের হাত থেকে রক্ষা পায় গোটা এলাকা। বিলোনিয়া শহরের সাতমুড়ায় সিপিআই(এম) কর্মী বাবুল সাহার বাড়িতে আক্রমণ করে, বাড়িঘর ভাঙচুর করে। পুড়িয়ে দেয় স্কুটি। ত্রিপুরা বাজারে আক্রান্ত হন সুকুমার দে নামে এক ব্যক্তি। কলেজ স্কোয়ারে দিলীপ দত্তের বাড়িতেও হামলা চালায়। শান্তিরবাজার বাজারে সিপিআই(এম) কর্মী লিটন দাসের উপর আক্রমণ চালায় বিজেপি দুর্বৃত্তরা। তাঁর ছোটো মুদির দোকানটি ভেঙে তছনছ করে দেয়। শান্তিরবাজার হাসপাতালে চিকিৎসার পরিবেশ না থাকায় তাঁর চিকিৎসা করা যায়নি। শান্তিরবাজার মহকুমার বিভিন্ন এলাকায় আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করেছে বিজেপি দুর্বৃত্তরা।
বিজয়োচ্ছ্বাসের আড়ালে আগরতলার রামনগরে বিজেপি দুর্বৃত্তরা রক্তাক্ত করেছে কর্মচ্যুত ১০৩২৩ শিক্ষক রাজীব দাসকে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তিনি। প্রতিটি ঘটনায় কোথাও মানুষ কোনো সহায়তা পাচ্ছেন না পুলিশের কাছ থেকে। উদয়পুর মহকুমার বাগমায় করইমুড়া বণিক্য চৌমুহনিতে পুড়িয়ে দেওয়া হয় সিপিআই(এম) অঞ্চল সদস্য অপন দে’র মোটরসাইকেল। বগাবাসায় আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় দ্বিজেন্দ্র দেবনাথের খড়ের গাদায়। পূর্ব-বাড়ভাইয়া এলাকায় রোসিয়া বিবিকে মেরে হাত ভেঙে দেওয়া হয়। ওই এলাকারই অজিত নন্দীর বাড়িতে আক্রমণ করা হয়। মারধর করা হয় গ্রামেরই জয়দেব বণিককে। কাকড়াবনের নেতাজি চৌমুহনিতে গভীর রাতে বিমল বিশ্বাস, নিত্যগোপাল সাহা ও সুশান্ত সাহার দোকানে ভাঙচুর চালানো হয়। বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতীরা বাইরে ছুঁড়ে দেয় ৩টি দোকানের সমস্ত জিনিসপত্র। লুট করে নিয়ে যায় টাকা। কাকড়াবন থানা থেকে ৫০-৬০ মিটার দূরত্বের মধ্যেই ঘটে এই ঘটনা। পুলিশের দেখা মেলেনি। এই এলাকার ননীগোপাল দেবনাথও আক্রান্ত হন। ধ্বজনগর ছাতারিয়ার দেবেন্দ্র সরকার ও গোকুলনগরের বাদল দেবনাথের বাড়িতে ঢুকেও নির্বিচারে ভাঙচুর চালায় দুষ্কৃতীরা। মাতাবাড়ি এলাকার অজিত ঘোষের বাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয়। শালগড়ায় শম্ভু দেবনাথের বাড়ির গেট ভেঙে ফেলা হয়। মাতাবাড়ির পেঁড়া ব্যবসায়ী রাজু বক্সি, বিক্রম দে’র দোকানের ব্যাপক ক্ষতি করা হয়। বিজেপি দুষ্কৃতীদের হাতে বাগমা এলাকায় আক্রান্ত হন গোপাল দেবনাথ ও বিকাশ দেবনাথ। ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় টিটন পালের গাড়ি। উদয়পুর ছনবন এলাকা জুড়েও চলে দুষ্কৃতীদের তাণ্ডব। কোনো স্থানেই পুলিশের দেখা মেলেনি। মহকুমার সাধারণ মানুষ ভয়ে তটস্থ অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। ২৬ জুন রাতে খোয়াইয়ের বারবিল এলাকায় এক মহিলাকে মাটিতে ফেলে পিটিয়ে মারাত্মক জখম করে বীরত্ব দেখায় বিজেপি’র দুষ্কৃতীরা। সিপিআই(এম) সমর্থক পেশায় দিনমজুর নীতেন্দ্র গোপের বাড়িতে মাঝরাত পেরিয়ে আক্রমণ চালায় দুষ্কৃতীরা। শাবল দিয়ে দরজা ভেঙে তাঁর ঘরে ঢোকার চেষ্টা হয়। ভয়াবহ পরিণতির আঁচ করতে পেরে পেছনের দরজা খুলে জঙ্গলে আশ্রয় নেন নীতেন্দ্র গোপ। এরই মধ্যে দরজা ভেঙে হুড়মুড়িয়ে ঘরে ঢুকে পড়ে সন্ত্রাসীরা। গৃহকর্তাকে না পেয়ে সংঘবদ্ধ হামলা চালিয়ে বসে তাঁর স্ত্রী দীপা সূত্রধর (গোপ) (৩১)-এর উপর। প্রত্যেকেরই মুখ ছিল কালো কাপড়ে বাঁধা। চুলের মুঠি ধরে মাটিতে ফেলে লাঠি, রড দিয়ে পেটানো হয় ওই মহিলাকে। সঙ্গে শাসানো হয় আর কোনোদিন পরিবারের কেউ সিপিআই(এম)-র মিছিল, মিটিং-এ অংশ যাতে না নেয়। একটা সময়ে দীপা সূত্রধরকে মৃত ভেবে পালিয়ে যায় দুষ্কৃতীরা। পরবর্তীতে নীতেন্দ্র গোপ বাড়ি ফিরে ডেকে পাড়ার লোকজনদের জড়ো করেন।
আক্রান্তদের পাশে নেতৃবৃন্দ
আশপাশে ছড়িয়ে রয়েছে ধ্বংসের চিহ্ন। বাড়িঘর, দোকানপাটে বিজেপি’র বীভৎস সন্ত্রাসের চিহ্ন দগদগে। উপভোট পরবর্তী সন্ত্রাসে আক্রান্ত বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সেই ধ্বংস চিহ্নই প্রত্যক্ষ করলেন সিপিআই(এম) নেতৃবৃন্দ। আগরতলা পুর নিগম এলাকার শ্যামলীবাজার, অরুন্ধতীনগর, বিটারবন, যোগেন্দ্রনগর ছাড়াও সূর্যমণিনগর, কাঞ্চনমালায় দুটি দলে যান নেতৃবৃন্দ। সফরকারী দলে ছিলেন সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো সদস্য মানিক সরকার, রাজ্য কমিটির সম্পাদক জীতেন্দ্র চৌধুরী, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য তপন চক্রবর্তী, নারায়ণ কর প্রমুখ। আক্রান্ত পরিবারগুলির সাথে কথা বলেন নেতৃবৃন্দ। প্রত্যক্ষ করেন গেরুয়া সন্ত্রাসের ধ্বংসলীলার চিহ্নগুলি। শোনেন তাঁদের দুর্দশার কথা। কাঞ্চনমালায় আক্রান্ত প্রবীণ সুনীল দেবনাথ নেতৃবৃন্দের কাছে অভিযোগ করেন, ‘‘নামধাম দিয়ে থানায় মামলা করতে গেলে এফআইআর থেকে অভিযুক্তদের নাম বাদ দিতে চাপ দেয় পুলিশ। এগুলি আর চলতে দেওয়া যায় না।’’
২৭ জুন সকালে খোয়াইয়ে আক্রান্তদের হাসপাতালে দেখতে যান বিধায়ক নির্মল বিশ্বাস। চিকিৎসার খোঁজখবর নেন আক্রান্ত দীপা সূত্রধরের। পরে সিপিআই(এম) খোয়াই মহকুমা কমিটির এক প্রতিনিধিদল আক্রান্তের বাড়িতে যান। পরিবারের সবাই হাসপাতালে থাকায় নেতৃত্বকে দেখে এগিয়ে আসেন গ্রামবাসীরা। সকলেই ঘটনার নিন্দা জানান। বিধায়ক নির্মল বিশ্বাস ছাড়াও প্রতিনিধিদলে ছিলেন সিপিআই (এম) মহকুমা সম্পাদক পদ্মকুমার দেববর্মা সহ নেতৃবৃন্দ।
লেনিনের মূর্তিতে আঘাত
তেলিয়ামুড়ায় ভেঙে দেওয়া হয় ভি আই লেনিনের মূর্তি। ২৫ জুন রাতে নেতাজিনগরে বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন স্থানে লেনিনের পূর্ণাবয়ব মূর্তিটি ভাঙচুর করা হয়। বিজেপি ক্ষমতায় আসার পরই বিলোনিয়ায় ক্রেন দিয়ে বিশ্বের প্রথম সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা ভি আই লেনিনের মূর্তি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। এবার তেলিয়ামুড়ায়ও একই ঘটনা ঘটল। ২৫ জুন রাতের আঁধারে নেতাজীনগরে বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন স্থানে লেনিনের পূর্ণাবয়ব মূর্তিটি বহু আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত করেছে সমাজদ্রোহীরা। বিশ্ব বরেণ্য কমিউনিস্ট নেতা লেনিনের মূর্তির মাথা, হাত ও পায়ের বহু অংশ ভেঙে দেওয়া হয়েছে। ২০০২ সালে তেলিয়ামুড়া মহকুমার শ্রমিকসহ সমস্ত অংশের মানুষের ঐকান্তিক ইচ্ছা ও ভাবাবেগকে সম্মান জানিয়ে বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন স্থানে রাশিয়ার বিপ্লবের অগ্রণী নেতৃত্ব তথা বিশ্ববরেণ্য শ্রমিক নেতা ভি আই লেনিনের এই পূর্ণাবয়ব মূর্তি স্থাপিত হয়েছিল।
বামফ্রন্টের বক্তব্য
ত্রিপুরা বামফ্রন্ট কমিটির পক্ষ থেকে ২৬ জুন এক বিবৃতিতে বলা হয়েছেঃ ‘‘ত্রিপুরার বুকে গত ৫১ মাস যাবত যে পরিস্থিতি চলছে তার প্রেক্ষাপটে সদ্য অনুষ্ঠিত চারটি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনের ফল প্রত্যাশিত নয়। বিজেপি শাসন ক্ষমতা কাজে লাগিয়েছে। অর্থশক্তি, বাহুবলী, এবং নানাভাবে প্রশাসনিক শক্তিকে ব্যবহার করেছে।
শাসকদলের সৃষ্ট সন্ত্রাস এবং আক্রমণ ও হুমকির কারণে বহু এলাকাতেই ভোটাররা শঙ্কাহীন থাকতে না পারার জন্য স্বাধীন মতামত ব্যক্ত করতে পারেননি। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রকৃত ভোটারকে ভোটদানে বাধা সৃষ্টি করেছে। স্থানে স্থানে প্রকৃত ভোটারদের ভোটদানের অধিকার কেড়ে নিয়ে বাহুবলীরা শাসকদলের পক্ষে তাদের ভোটকে ব্যবহার করেছে। এতসব বহুমুখী ষড়যন্ত্র এবং প্রতিকূলতার মধ্যে যাঁরা সাহসী ভূমিকা নিয়ে নিজেদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করেছেন তাঁদের শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।
এই উপনির্বাচনের ঘটনাবলি থেকে শিক্ষা নিয়ে গণতান্ত্রিক ও স্বাধীন মতামত ব্যক্ত করার প্রকৃত অধিকার পুনঃস্থাপনে গণতান্ত্রিক জনগণ ব্যাপক ঐক্য গড়ে তোলার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাবেন বলেই আমাদের দৃঢ়বিশ্বাস।’’