৫৯ বর্ষ ৪৬ সংখ্যা / ১ জুলাই, ২০২২ / ১৬ আষাঢ়, ১৪২৯
কমরেড বিদ্যুৎ গুছাইতের জীবনাবসান
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ কৃষক আন্দোলনের প্রবীণ নেতা কমরেড বিদ্যুৎ গুছাইতের জীবনাবসান হয়েছে। ২৮ জুন রাত ১১টা ৪০ মিনিটে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। গত ১৬ জুন অসুস্থতার জন্য কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভরতি হন। এদিন সকাল থেকে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে ভেন্টিলেশনে দেওয়া হয়। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৭।
কমরেড বিদ্যুৎ গুছাইত সিপিআই(এম)’র অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলা কমিটির সদস্য ছিলেন। জেলা ভাগ হওয়ার পর তিনি পূর্ব মেদিনীপুরে পার্টি সংগঠনে ভূমিকা পালন করেন। পার্টির পূর্ব মেদিনীপুর জেলার সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য হিসাবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর স্ত্রী মহিলা সংগঠনের নেত্রী। তাঁর দুই ছেলে, এক মেয়ে আছেন। তাঁর প্রয়াণে গভীর শোক জ্ঞাপন করে পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন পার্টির রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম, পার্টিনেত্রী মিনতি ঘোষ। ২৯ জুন সকালে হাসপাতালে গিয়ে কমরেড বিদ্যুৎ গুছাইতকে শ্রদ্ধা জানান পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রবীন দেব।
১৯৪৫ সালে বর্তমান চণ্ডীপুর ব্লকের ফুলনি গ্রামে কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন বিদ্যুৎ গুছাইত। গ্রামেরই প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা লাভের পর পোড়াচিংড়া গোবর্ধন আদর্শ বিদ্যাপীঠ থেকে স্কুল শিক্ষা লাভ করেন। পরে তমলুক কলেজ থেকে অর্থনীতি বিষয়ে স্নাতক হন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একই বিষয়ে এমএ পাশ করেন। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় ছাত্র ফেডারেশনের সক্রিয় কর্মী হিসাবে ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত হন। সেই সময় থেকেই বামপন্থী মতাদর্শে অনুপ্রাণিত হন। ছাত্র আন্দোলনের সময় থেকেই অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য হন তিনি। সেই সময় তেভাগা আন্দোলনের নেতা ভূপাল পন্ডার সান্নিধ্যে আসেন। পরবর্তীতে কমিউনিস্ট নেতা ও স্বাধীনতা সংগ্রামী সুকুমার সেনগুপ্ত, পুলক বেরা প্রমুখ নেতৃত্বের সান্নিধ্য পান। অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার তমলুক, কাঁথি অঞ্চলের সিপিআই(এম)-এ নেতৃত্বদানকারী কয়েকজন নেতার মধ্যে অন্যতম ছিলেন বিদ্যুৎ গুছাইত। একাধিক বিদ্যালয়ে স্বল্পসময়ের শিক্ষকতা করার পর খোদামবাড়ি ইউনিয়ন হাইস্কুলে অর্থনীতির শিক্ষক হিসাবে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৮১ সালে পার্টির অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলা কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। সেই সঙ্গে সারা ভারত কৃষক সভার রাজ্য কাউন্সিল সদস্য ও জেলা সভাপতি ছিলেন দীর্ঘদিন। শিক্ষকতার সুবাদে এবিটিএ’র সদস্য ছিলেন। ২০১৪ সালে পার্টির পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য নির্বাচিত হন। এলাকায় কৃষকদের সংগঠিত করে লড়াই আন্দোলনে তিনি ছিলেন অগ্রণী। রাজনীতির পাশাপাশি কৃষি আন্দোলন, সমবায়, ইতিহাস, অর্থনীতি সহ বিভিন্ন বিষয়ে একাধিক বই লিখেছেন। সেই সঙ্গে এলাকায় বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
২৯ জুন বিকাল ৩টা নাগাদ মরদেহ জেলা কেন্দ্রে এলে সেখানে জেলা সম্পাদক নিরঞ্জন সিহি, রাজ্য কমিটির সদস্য হিমাংশু দাস, ইব্রাহিম আলি, বর্ষীয়ান নেতা প্রশান্ত প্রধান পার্টির রক্ত পতাকা ও ফুলমালা দিয়ে শেষ শ্রদ্ধা জানান। এছাড়াও শেষ শ্রদ্ধা জানান পার্টির পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা কমিটির পক্ষে মেঘনাদ ভুঁইয়া, কৃষকসভার পক্ষে সুনীল অধিকারী, আরএসপি’র জেলা সম্পাদক অমৃত মাইতি, প্রয়াত কমরেডের পুত্র অলকেশ গুছাইত প্রমুখ। এদিনই ফুলনি গ্রামে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। তৃণমূল নেতা, প্রাক্তন বিধায়ক অমিয় ভট্টাচার্য শেষকৃত্যে উপস্থিত ছিলেন।