৫৯ বর্ষ ৪৬ সংখ্যা / ১ জুলাই, ২০২২ / ১৬ আষাঢ়, ১৪২৯
দাদা একটু পেছনের দিকে এগিয়ে যাবেন - একটি দেশ, এই সময়
বরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়
এই লেখাটা শুক্রবার যখন ছেপে বেরোবে ততক্ষণে সম্ভবত মহারাষ্ট্রে নতুন সরকার গঠিত হয়ে যাবে। হয়তো মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়ে নেবেন বিজেপি'র দেবেন্দ্র ফড়নবিশ। যিনি গত আড়াই বছর ধরে ওঁত পেতে বসেছিলেন এবং কলকাঠি নাড়ছিলেন শুধুমাত্র এই পদের দখলদারির জন্য। কর্ণাটক, মধ্যপ্রদেশের সফল ‘অপারেশন কমল’-এর পর এবার মহারাষ্ট্রেও নজরকাড়া সাফল্য। যদিও পুরো খেলাটাই বিজেপি খেলেছে আড়াল থেকে। অন্য দল ভেঙে নিজেদের সরকার গঠন করতে একদল শিবসেনা বিধায়ককে খাঁচাবন্দি করে প্রথমে বিজেপি শাসিত গুজরাট, তারপর বিজেপি-শাসিত গুয়াহাটি এবং তারপর বিজেপি-শাসিত গোয়ায় রাজার হালে খাতির যত্ন করে, ঘুরিয়ে সরকার ভাঙার পর ফের মহারাষ্ট্রে ফেরা। পরবর্তী লক্ষ্য সম্ভবত রাজস্থান। লাইনে আছে ছত্তিশগড়, ঝাড়খণ্ড। দেশজুড়ে বিরোধীশূন্য, একদলীয় শাসনব্যবস্থা কায়েমের দিকে আরও একধাপ এগিয়ে যাওয়া। মোদি-শাহ জুটির অনবদ্য পারফরমেন্স!
আসলে যা নিয়ে আজ লিখব ভেবে রেখেছিলাম, বৃহস্পতিবার সকালে উঠে দেখলাম সেটা আর মাথার মধ্যে নেই। বেমালুম ঘেঁটে গেছি। পারিপার্শ্বিক বিষয় প্রতিদিনই মগজ ছিন্নভিন্ন করছে। মহারাষ্ট্র, রাজস্থান, ক্যালিফোর্নিয়া, রাশিয়া-ইউক্রেন, বিশ্বজুড়ে চরম আর্থিক বৈষম্য, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, ডলারের অনুপাতে টাকার দামে সর্বাধিক পতন, ঘোড়া কেনাবেচা, নির্লজ্জ পালটি, নির্মম প্রতারণা, নির্জলা মিথ্যা - কোনও কিছুই ফেলে দেবার মতো নয়। প্রত্যেক বিষয় নিয়ে আলাদা আলাদা লেখা যেতে পারে। আজ যেমন প্রথমেই মনে হলো মহাপতনের মতো গুরু বিষয় এড়িয়ে যাওয়া ঠিক হবে না। তাই পরিস্থিতির চাপে মহাভারত লেখার আগেই একটা ছোটো হরিবংশ লিখে ফেলতে হলো।
২০০২ থেকে ২০২২। মাঝখানের কুড়ি বছরের ফেলে আসা সময়ে গুজরাট গণহত্যার স্মৃতি এখন অনেকের মনেই আবছা। কেউ কেউ বলতে পারেন গুজরাট দাঙ্গা। যদিও গুজরাটে দাঙ্গা হয়েছিল নাকি দাঙ্গার নামে গণহত্যা তা নিয়ে বিতর্ক আছে। এই বিষয়ে হর্ষ মান্দারের এক মন্তব্যে হয়তো বিষয়টা কিছুটা স্পষ্ট হতে পারে। ২০০২ সালের ৭ আগস্ট কলকাতায় ‘গুজরাট ২০০২ - বিপন্ন গণতন্ত্র’ শীর্ষক এক আলোচনাসভায় তিনি বলেছিলেন - “রাস্তায় দাঁড়িয়ে একটি মানুষ যদি অপর একজনকে খুন করে সেটা নিঃসন্দেহে গুরুতর অপরাধ। কিন্তু যদি একজন ডাক্তার সমস্ত জেনে শুনে বুঝে অপারেশন টেবিলে রোগীকে খুন করে তবে সেই অপরাধের গুরুত্ব নিশ্চই অনেকগুণ বেশি। গুজরাটের তৎকালীন নরেন্দ্র মোদি সরকার ঠিক এমন এক খুনে ডাক্তারের দায়িত্বই পালন করেছে সেখানকার সংখ্যালঘু জনগণের উদ্দেশ্যে।’ বিতর্ক সবসময়েই স্বাস্থ্যকর। আলোচনা চলতেই পারে। সিদ্ধান্ত ব্যক্তিগত বিষয়।
সমস্যাহীন ‘আচ্ছে দিন’-এর দিকে ক্রোনোলজি মেনে এগিয়ে চলা দেশে একটা একটা করে সমস্যা মিটিয়ে ফেলা হচ্ছে। বুঝে হোক, বা না বুঝে, সত্যি থাকুক বা না থাকুক, একটা বড়ো অংশের ভারতবাসীই বিশ্বাস করতে শুরু করেছেন ‘মোদি হ্যায় তো মুমকিন হ্যায়’। পরিকল্পিত প্রচারে তেমনটাই বিশ্বাস করানো হয়েছে। হচ্ছে। সেখানে ধর্ম অথবা সম্প্রদায়গত যে কোনও ইস্যুর সামনে বাকি সবকিছুই শিশু। এবং এটাই সত্যি যে একটা বড়ো অংশের মানুষকেই বেশ নির্লিপ্ত করে দেওয়া গেছে। বিগত কয়েক বছরে মানুষের শুভবুদ্ধিতে তালাচাবি লাগিয়ে দেওয়া গেছে। আপাতত নির্বিকল্প সমাধি লগ্ন। এ লগন হিংসা ছড়াবার। কাকে বোঝানো যাবে যে - ‘সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার মূল কারণ সম্পূর্ণ আর্থিক।’ এটা তো আমার কথা নয়। ভগত সিং-এর কথা।
যে প্রসঙ্গে ছিলাম। গুজরাট। মাটির নিচে চাপা পড়ে যাওয়া এ কঙ্কাল হয়তো নতুন করে ঠেলে বেরোতো না, যদি না সম্প্রতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গুজরাট কাণ্ডে ‘ক্লিনচিট’ পেতেন। ঘাড়ে তো সকলের একটাই মাথা। যদিও ক্লিনচিট তাঁকে আগেই দেওয়া হয়েছিলো। এবার তাতে শীর্ষ আদালতের সিলমোহর পড়েছে এই যা। হয়তো আগামী দিনে কখনো বলা হবে গুজরাটে কোনও গণহত্যাই হয়নি। হাজার হাজার মানুষের হত্যা হয়নি। গুলবার্গ সোসাইটিতে এহসান জাফরিকে হত্যা করা হয়নি। কারণ এহসান জাফরির স্ত্রী যে ঘটনার জন্য গুজরাট প্রশাসন এবং রাজ্যের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে আংশিক দায়ী করেছিলেন সেই দাবি সুপ্রিম কোর্ট নিয়োজিত সিট বাতিল করে দেয় ২০০৮ সালে। রিভিউ পিটিশনে ক্লিনচিট পান নরেন্দ্র মোদি। আর শেষ পর্যবেক্ষণে শীর্ষ আদালত জানিয়ে দিয়েছে, ‘নো লার্জার কনস্পিরেসি বিহাইন্ড গুজরাট রায়টস’ এবং আদালত আরও জানিয়েছে, ‘দি পিটিশন ইস ডিভয়েড অফ এনি মেরিট’। অর্থাৎ গুজরাট দাঙ্গার পেছনে কোনও বৃহত্তর ষড়যন্ত্র ছিল না এবং ‘পিটিশনটি যোগ্যতা বর্জিত’। মহাভারতের কথা সবসময়েই যেহেতু অমৃত সমান, অতএব ‘পহলে আগ লাগায়া কিসনে?’ প্রশ্ন তুলেছিলেন দেশের প্রধানমন্ত্রী। বিজেপি'র জাতীয় কমিটির গোয়া অধিবেশন। তখন প্রধানমন্ত্রী মাননীয় শ্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী। যিনি জানিয়েছিলেন, ‘যে আগুনে গুজরাট আজ জ্বলছে তা প্রথমে লাগিয়েছিল কে? গোধরাকাণ্ড যদি না ঘটতো তাহলে পরবর্তী পর্যায়ে গুজরাটে যা ঘটেছে তা ঘটতো না।’ তিনি কার বাড়িতে মালপোয়া খেতে এসেছিলেন বা গোধরা পরবর্তী নির্বাচনে জয়লাভের পর কে নরেন্দ্র মোদিকে পুস্পস্তবক পাঠিয়েছিলেন তা আমাদের আলোচ্য বিষয় নয় এবং আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করিনা এইসব লঘু বিষয়ে আলোচনা করে একটা গুরুতর বিষয়কে গুরুত্বহীন করে তোলা উচিত। তাই সে প্রসঙ্গ বাদ দিলাম।
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০০২ থেকে গুজরাটে যে হিংসা শুরু হয়েছিল তাতে শুধু আহমেদাবাদ শহরে ৫৪টি জায়গায় সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় স্থানে ভাঙচুর চালানো হয়। একইভাবে ভারুচ শহর ও জেলায় ১০টি জায়গায়, দাওদ শহর ও জেলায় ১৩টি জায়গায়, গোধরায় ১৯টি জায়গায়, গান্ধীনগরে ৫টি জায়গায়, খেদা শহরে ১৪টি জায়গায়, জুনাগড়ে ১৮টি জায়গায়, সুরাটে ১৩টি জায়গায়, ভাদোদরায় ২২টি জায়গায়, আনন্দ শহর ও জেলায় ৫৩টি জায়গায় সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় স্থানে ভাঙচুর চালানো হয়। গুজরাটের ঘটনার পরেই এডিটরস গিল্ডের পক্ষ থেকে যে ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং টিম ঘটনার তদন্তে গেছিল তাদের হাতেও উঠে এসেছিল একাধিক চাঞ্চল্যকর তথ্য। এডিটরস গিল্ড-এর ওই রিপোর্ট অনুসারে, তাদের হাতে একটি লিফলেট এসেছিল। যে লিফলেটে লেখা ছিল, ‘বিষাক্ত সাপকে দুধ কলা দিয়ে পুষবেন না। মুসলমানদের সর্বতোভাবে পরিহার করুন। একঘরে করে রাখুন।’ ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন রিপোর্ট (FFMR) অনুসারে - ‘গুজরাটের দাঙ্গাই সম্ভবত প্রথম - যেখানে ডিজিট্যাল মাধ্যম এত ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়।’ গুজব ছড়ানো হয়েছিল দুধের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ২৪ মার্চ ২০০২-এ টাইমস অফ ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল - ‘যে সব আইপিএস অফিসার সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা প্রশমিত করতে পেরেছিলেন, যাঁরা উল্লেখযোগ্য কাজ করেছেন, দাঙ্গাবাজদের গ্রেপ্তার করেছেন, তাদের গুরুত্বহীন পদে বদলি করে দেওয়া হয়েছে। আরও একটা তথ্য দেওয়া বোধহয় অপ্রাসঙ্গিক হবে না। অধ্যাপক ডঃ নন্দিনী মঞ্জরেকর জানিয়েছিলেন, গুজরাটই প্রথম রাজ্য, যারা ইউজিসি-কে বৈদিক জ্যোতিষশাস্ত্র পড়ানোর ব্যবস্থার জন্য অর্থ চেয়ে অনুরোধ পাঠায়। ২০০২ সালের ২৬ জানুয়ারি রাজ্যের শিক্ষাদপ্তর সমস্ত বিদ্যালয়ে নোটিশ পাঠিয়ে দিনটিকে ‘ধরতি পূজা’ পালন করার নির্দেশ পাঠায়। সুতরাং, কোনো কারণ ছাড়াই হঠাৎ করে গুজরাটের ঘটনা ঘটে গেছিলো তা মনে করার কোনও কারণ নেই। ঠিক যেমন, বিনা কারণে একের পর এক রাজ্যে ‘অপারেশন কমল’ বা গোরু ছাগলের মতো বিধায়ক কেনাবেচা করে গণতন্ত্র ধ্বংস করা হচ্ছে, নির্বাচিত সরকারের পতন ঘটানো হচ্ছে সেটা ভেবে নেওয়ারও কোনও কারণ নেই। দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তো কবেই বলে দিয়েছেন, আপ ক্রোনোলজি সমঝিয়ে। ঠিক যেমন গুজরাট দাঙ্গার পর মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মুখে উঠে এসেছিল নিউটনের তত্ত্বের কথা। আমরা যদি না বুঝতে পারি, অশনি সংকেত-এর উপলব্ধি যদি আমাদের না হয়, সে দোষ তো বিজেপি, আরএসএস বা বিশ্ব হিন্দু পরিষদের নয়!
যে প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে বা যাকে নিয়ে বলব বলে এতগুলো কথা লিখে ফেলেছি তিনি তিস্তা শীতলাবাদ। যিনি প্রথম থেকে আরও অনেকের মতোই গুজরাট হিংসার বিষয়ে সরব। যিনি বিগত কয়েক বছর ধরে আক্রান্তদের পক্ষ নিয়ে ছুটে বেড়িয়েছেন আদালতের দরজায় দরজায়। ন্যায় বিচার চেয়ে। যদিও আপাতত তিনি কারান্তরালে। সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর মিথ্যা মামলার অভিযোগে তিস্তা শীতলাবাদকে ২৫ জুন, শনিবার গ্রেফতার করেছে গুজরাট এটিএস। পরে রাতের দিকেই তাঁকে আহমেদাবাদে নিয়ে যাওয়া হয়। পুলিশ তাঁর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছে। তিস্তা ছাড়াও গুজরাট পুলিশের প্রাক্তন ডিজি আর বি শ্রীকুমার এবং সাসপেন্ডেড আইপিএস সঞ্জীব ভাটের বিরুদ্ধেও এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁরা ২০০২ গুজরাট দাঙ্গা প্রসঙ্গিত তথ্য বিকৃত করেছেন। যার গ্রেপ্তারির আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, তিস্তা শীতলাবাদের এনজিও তাঁর নেতার বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলেছিল।
তিস্তার গ্রেপ্তারি প্রসঙ্গে মহম্মদ সেলিম জানিয়েছেন, আদালতের বিচারপতিরা না পারলে সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমেই ইনসাফ ছিনিয়ে আনবেন। ব্রিটিশরা ষড়যন্ত্র মামলা করেও ভারতবাসীকে দমন করতে পারেনি, বর্তমান শাসকরাও তা পারবে না। বিচারের নামে প্রহসন করেও গুজরাট গণহত্যার দাগ মোছা যাবেনা। কোনোভাবেই মোদি, অমিত শাহরা নিজেদের নির্দোষ প্রমাণ করতে পারবেন না। গর্দান নেবার ভয় দেখিয়ে সকলের শিরদাঁড়া নত করা যাবেনা। তিনি আরও বলেন, গুজরাট গণহত্যার পর সত্য প্রকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন তিস্তা। কীভাবে এহসান জাফরিকে পুড়িয়ে মারা হয়েছিল, সেনা পৌঁছানো সত্ত্বেও কেন তাদের ব্যবহার না করে বসিয়ে রাখা হয়েছিল সেই প্রশ্ন তুলেছিলেন তিস্তা। অনেক তথ্য সামনে এসেছিল। এই গণহত্যায় যারা যুক্ত তাদের অনেকেরই নাম এখন প্রকাশ্যে এসে গেছে।
তিস্তার গ্রেপ্তারি প্রসঙ্গে এক ট্যুইট বার্তায় সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, নাগরিক স্বাধীনতা এবং মানবাধিকারের পক্ষে নিরলস লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে যাঁরা তাঁদের নিপীড়ন এবং মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো বন্ধ করুন। তিস্তা শীতলাবাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ প্রত্যাহার করুন এবং তাঁকে মুক্তি দিন। এর ঠিক পরের দিন, রবিবার ২৬ জুন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাঁর ৯০ তম মন কী বাত-এর ভাষণ দেন। যেখানে তিনি দেশের জরুরি অবস্থার কথা তুলে ধরেন। যে প্রসঙ্গে সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, ‘তখনকার মতো এখনও আমরা একই জিনিস ঘটতে দেখব। আজকের অঘোষিত জরুরি অবস্থাও প্রথমটির মতো পরাস্ত হবে। সেই সময় মনে হয়েছিল এই পরিস্থিতি চলতেই থাকবে। কিন্তু গণতন্ত্রের ‘আচ্ছে দিন’ ফিরে আসবে। এই সংগ্রাম জারি আছে এবং পরে আরও তীব্র হবে’।
গুজরাটের হিংসা সম্পর্কে হর্ষ মান্দার কলকাতার ওই সভায় আরও কিছু কথা বলেছিলেন। তিনি জানিয়েছিলেন - ‘আহমেদাবাদ তথা গুজরাট ২০০২-এর সংগঠিত গণহত্যা বীভৎসতা এবং বর্বরতার দিক থেকে হেলায় অতীতের সমস্ত দাঙ্গাকে অতিক্রম করে গেছে। পাশবিকতা আর নিষ্ঠুরতার যেটুকু বাকি ছিল এবার সেটুকুও দেখে নিয়েছেন মানুষ। দেখে নিয়েছেন কী পৈশাচিক নিষ্ঠুরতায় নারী শিশুদের হত্যা করা হয়েছে, আগুনে পুড়িয়ে মারা হয়েছে।’
প্রতি লেখাতেই রবীন্দ্রনাথকে দিয়ে শেষ করতে ইচ্ছে না করলেও তাঁর আশ্রয়ে ফিরে যাওয়া ছাড়া কোনও উপায় থাকে না। ক’জনই বা তাঁর মতো করে বলতে পেরেছে ‘ধর্মের বেশে মোহ যারে এসে ধরে, অন্ধ সে জন মারে আর শুধু মরে’। কেউ তো দৃপ্ত লেখনীতে বলতে পারেনি - ‘অনেক যুগের লজ্জা ও লাঞ্ছনা, বর্বরতার বিকার বিড়ম্বনা ...প্রলয়ের ওই শুনি শৃঙ্গধ্বনি, মহাকাল আসে লয়ে সম্মার্জনী।’