E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৯ বর্ষ ৮ সংখ্যা / ১ অক্টোবর, ২০২১ / ১৪ আশ্বিন, ১৪২৮

এসএফআই পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য ৩৭তম সম্মেলন - নতুন পথের দিশারি

সৃজন ভট্টাচার্য


এসএফআই’র রাজ্য সম্মেলনের প্রকাশ্য সমাবেশে বক্তব্য রাখছেন বিমান বসু।
মঞ্চে সুজন চক্রবর্তী সহ ছাত্র নেতৃবৃন্দ।

ভারতের ছাত্র ফেডারেশন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য ৩৭তম সম্মেলন সম্পন্ন হলো গত ২২ থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর, নদীয়া জেলার নবদ্বীপে। কোভিড-সময়ে অত্যন্ত কঠিন পরিস্থিতিতে আয়োজিত হয় এই সম্মেলন। সম্মেলনের নগর নামাঙ্কিত হয় বাম ছাত্র আন্দোলন তথা গণআন্দোলনের তিন সর্বজনশ্রদ্ধেয় নেতা কমরেড শ্যামল চক্রবর্তী, কমরেড সুদর্শন রায়চৌধুরী এবং কমরেড নিরুপম সেনের নামে। সম্মেলনের কক্ষ নামাঙ্কিত করা হয়েছিল প্রখ্যাত ফুটবলার এবং সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধিতার মুখ দিয়েগো মারাদোনার নামে, এবং মঞ্চ (চৈতন্য সংস্কৃতি মঞ্চ) নামাঙ্কিত হয় সকলের জন্য শিক্ষা ও কাজের দাবিতে নবান্ন অভিযানের শহিদ কমরেড মইদুল ইসলাম মিদ্দ্যার নামে। সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের সমস্ত জেলা থেকে ৩৮৪জন প্রতিনিধি ও দর্শক, এদের মধ্যে সম্পাদকীয় প্রতিবেদনের উপর আলোচনা করেন ৭৮জন প্রতিনিধি। ৩ দিনের সম্মেলন শেষে ৯৯ জনের রাজ্য কমিটি ও ২৭ জনের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী তৈরি হয়। সংগঠনের রাজ্য সভাপতি ও সম্পাদক হিসেবে পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন যথাক্রমে প্রতীক উর রহমান এবং সৃজন ভট্টাচার্য। ‘ছাত্র সংগ্রাম’ পত্রিকার সম্পাদক হয়েছেন দীপ্তজিৎ দাস। সম্মেলনে উপস্থিত প্রতিনিধিদের গড় বয়স ছিল ২২-২৪’এর মধ্যে। সম্মেলনের প্রথম দিনই প্রকাশ্য সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় নবদ্বীপে রাধাবাজার পার্কে। সেখানে ছাত্র নেতৃত্বের সাথে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এসএফআই-এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক বিমান বসু ও প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক সুজন চক্রবর্তী।

চৈতন্যের নবদ্বীপে সামাজিক ন্যায়ের লড়াইকে জোরদার করার বার্তা দিতে চেয়েছে ছাত্র আন্দোলনের কর্মীরা। ফ্যাসিবাদী আরএসএস’র নেতৃত্বে ভারতের খোলনলচে পালটে দিতে চাইছে দিল্লির বিজেপি সরকার। পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের মতো সুবিধাবাদী শক্তি মুখে বিজেপি-বিরোধিতা করলেও অনেক ক্ষেত্রেই এমন সব কাজকর্ম করছে যা দাঙ্গাবাজদের উত্থানের সুযোগ ঘটিয়ে দিচ্ছে। এমতাবস্থায় ছাত্র সম্মেলনের অন্যতম লক্ষ্য ছিল বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যের বার্তাকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরা। প্রচার আয়োজনে যেমন চৈতন্য, লালন ফকির, হরিচাঁদ-গুরুচাঁদ ঠাকুররা ফিরে ফিরে এসেছেন, সম্মেলন মঞ্চেও বারবার উত্থাপিত হয়েছে সামাজিক ন্যায় ও বিভিন্নতার মর্যাদার প্রশ্নটি। সাদরি, রাজবংশী, নেপালি বা সাঁওতালি ভাষায় প্রতিনিধিরা বলেছেন বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মধ্যে স্বাধীনতা গণতন্ত্র সমাজতন্ত্রের স্লোগানকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার আখ্যান। সম্মেলনে উঠে এসেছে প্রান্তিক লিঙ্গের প্রতিনিধিদের যন্ত্রণার কথাও। জাত-ধর্ম-ভাষা-লিঙ্গ নির্বিশেষে আরএসএস’ধর্মী আধিপত্যবাদের উলটোদিকে দাঁড়িয়ে বৈচিত্র্যকে উদ্‌যাপন করার বার্তাই দিয়েছে এই সম্মেলন।

আমরা স্লোগান দিয়েছিলাম - সংগঠকদের সংগঠন নয়, ছাত্রসমাজের ব্যাপকভিত্তিক সংগঠন হতে হবে এসএফআই-কে। এ লক্ষ্যে পৌঁছাতেই আমাদের নির্দিষ্ট অভিমুখ ছিল, ফিরতে হবে ক্যাম্পাসে। ক্যাম্পাসে ফিরতে হবেই, নতুবা ব্যাপকসংখ্যক ছাত্রকে নিয়ে আন্দোলন গড়ে তোলার কাজ অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। অঞ্চলভিত্তিক সংগঠনের প্রসারের ক্ষেত্রেও আমাদের প্রাথমিক স্লোগান ছিল - সামাজিক মানুষ হও। ফ্রি কোচিং ক্যাম্প, কেরিয়ার কাউন্সেলিং ক্যাম্প, হেলথ চেক আপ, বিভিন্ন ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক আয়োজন; সবের মাধ্যমে আসলে সামাজিক ঐক্য বা সামাজিক সংহতির দর্শনকে তুলে ধরার কথাই বলতে চেয়েছিলাম আমরা। যে সময়ে দাঁড়িয়ে বিশেষত তরুণ প্রজন্মকে প্রত্যহ আরও বেশি করে আত্মসর্বস্ব, স্বার্থপর ও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে থাকা মানবিক মূল্যবোধ ব্যতীত মানুষ বানানোর চেষ্টা চালাচ্ছে শাসকশ্রেণি - সে সময়ে দাঁড়িয়ে সামাজিক দূরত্ব নয়, সামাজিক সংহতির বার্তাকেই জোরালো করার আহ্বান জানিয়েছে এই সম্মেলন। শাসকশ্রেণি আমাদের কেবল জাত বা ধর্মের নামেই ভাঙতে চায় না - সমস্তরকম ‘সমগ্র’র ধারণাকে তারা ডরাচ্ছে; এ কারণেই স্কুল-কলেজ খোলায় এত অনীহা, কথা উঠে এসেছে প্রতিনিধিদের মধ্য থেকেই। ‘চাই ক্লাসঘর, চাই শিক্ষার অধিকার’ - সম্মেলনের স্লোগান ছিল ছাত্রসমাজের মধ্যে সমগ্রের বোধকে সঞ্চারিত করার উদ্দেশেই। প্রতিনিধিদের আলোচনায় শাসকের চক্রান্ত ব্যর্থ করে ঐক্যবদ্ধ হবার পরিসর বাড়ানোর লড়াই গড়ে তোলার কথা এসেছে বারবার।

এ কারণেই এই সম্মেলনে আলোচনার অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু হয়ে থেকেছে ডিজিটাল ডিভাইড। করোনাকালে শাসকের ভ্রান্ত নীতির ফলে লক্ষ লক্ষ ছাত্র বাদ পড়ে যাচ্ছে লেখাপড়া থেকে। অনলাইন ক্লাস করতে গেলে হাতে স্মার্টফোন থাকতে হয়, ডেটাপ্যাকের খরচ বহনের ক্ষমতা থাকতে হয়, এলাকায় নেটওয়ার্ক কানেক্টিভিটি থাকতে হয়। এগুলির কোনো একটি না থাকলেই আর লেখাপড়া করতে পারছে না অসংখ্য ছাত্র। বিশেষত ছাত্রী, সংখ্যালঘু ও অনগ্রসর অংশের দরিদ্র পরিবারগুলিতে এই সংকট ব্যাপক আকার নিয়েছে। অবিলম্বে স্কুল কলেজ না খুললে ডিজিটাল ডিভাইড বাড়বে, আবার কোনোরকম পরিকাঠামোগত পরিকল্পনা ছাড়া হঠাৎ স্কুল-কলেজ খুলে দেওয়ার আগে ভাবা দরকার, গত দেড় বছরে লেখাপড়ায় যে ফাঁক তৈরি হয়েছে সেটা বোজাতে হবে - এমন সব কথাই উঠে এসেছে প্রতিনিধিদের আলোচনায়। কমরেডরা শিক্ষাবিষয়ক বিভিন্ন ইস্যুতে সরব হয়েছেন অন্যান্যবারের থেকে বেশি। সিবিসিএস থেকে স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড - আলোচনায় উঠে এসেছে সবটাই। তফশিলি জাতি-উপজাতি, সংখ্যালঘু ও ছাত্রীদের মধ্যে লেখাপড়ার চিত্র খারাপ হয়ে এসেছে লকডাউনে, এই আশঙ্কা ব্যক্ত হয়েছে উত্তরের চা-বাগান থেকে দক্ষিণে সুন্দরবন, সকল এলাকা থেকে উঠে আসা প্রতিনিধিদের গলায়। লকডাউনের সুযোগ নিয়ে জোর করে চাপিয়ে দেওয়া জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০ - তার সর্বনেশে অভিঘাত সম্বন্ধে আলোচনা-চর্চা হয়েছে দীর্ঘ সময় ধরে। সম্মেলনের উদ্বোধক এসএফআই’র সর্বভারতীয় সভাপতি ভি পি সানু, উচ্চতর কমিটির পক্ষে পর্যবেক্ষক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ময়ূখ বিশ্বাস বা বিশেষ শিক্ষাবিষয়ক অধিবেশনের প্রধান বক্তা সংগঠনের সর্বভারতীয় যুগ্ম সম্পাদক দীপ্সিতা ধর - সকলের কথাতেই বারংবার উঠে এসেছে নয়া জাতীয় শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে লড়াইকেই আগামী আন্দোলনের বর্শাফলক হিসেবে চিহ্নিত করার কথা। আরএসএস’র শিক্ষানীতি শুধু সাম্প্রদায়িকীকরণ নয়, ব্যাপক কেন্দ্রীকরণ ও বেসরকারিকরণের দিকেও নিয়ে যাবে ভারতের শিক্ষাক্ষেত্রকে, এ নিয়ে তীব্র প্রতিবাদ ধ্বনিত হওয়ার প্রয়োজন অনুভব করেছে এই সম্মেলন।

আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিষ্কার - গড়ে তুলতে হবে ব্যাপকভিত্তিক ছাত্রসংগঠন। বিশ্ব পুঁজিবাদের সংকট থেকে রেহাই পেতে নির্লজ্জ ধান্দার ধনতন্ত্রে ভর করেছে দুনিয়ার বড়োলোকেরা। করোনার সময়ও নগ্ন হয়ে উঠেছে শাসকের চক্রান্ত, বিরাট আকারে বৈষম্য বেড়েছে, বেড়েছে ধনী ও দরিদ্রের ফারাক। দরিদ্র মানুষ তো বটেই, মধ্যবিত্তেরও বিশাল অংশের মধ্যে অসন্তোষ ক্রমবর্ধমান। শিক্ষাক্ষেত্রে এই আক্রমণের ধরন বহুমুখী। ডিজিটাল ডিভাইড, লাগামছাড়া ফি বৃদ্ধি, সংবিধান প্রদত্ত সংরক্ষণের অধিকার হ্রাস পাওয়া, ক্যাম্পাসগুলিতে গণতন্ত্র ও বহুস্বরের পরিসর কমে আসা, সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অপ্রতুল কাঠামো, অনিয়মিত শিক্ষক নিয়োগ ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ - সব মিলিয়ে শিক্ষাব্যবস্থার নিদারুণ হালত ক্ষতিগ্রস্ত করছে বিপুল সংখ্যক ছাত্রকে। আমরা বলেছি - গরিব ও ক্ষতিগ্রস্ত ছাত্রের কাছে যাও। সকলের শিক্ষার অধিকার নিয়ে লড়াই করাটাই এই মুহূর্তের আশু কাজ। এসএফআই শ্রেণিসংগঠন নয়, হওয়া উচিতও নয় - এসএফআই কাজ করুক ছাত্রসমাজের ব্যাপকভিত্তিক মঞ্চ হয়ে ওঠার দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে, এবং এই ‘ব্যাপকভিত্তিক’ হয়ে ওঠার প্রাথমিক প্রাক্‌শর্ত হলো, যে বিশাল সংখ্যক ছাত্র শাসকের নীতির ফলে বিপদে পড়ছে তাদের দাবিদাওয়া নিয়ে লড়াই করতে নামা। আমরা স্পষ্ট বলেছি, ইউনিট কমিটি গড়ে থেমে যাওয়া আমাদের কাজ নয়, আমাদের কাজ ছাত্র আন্দোলন গড়ে তোলা। একে একে নয়, ঝাঁকে ঝাঁকে ছাত্র যেখানে আছে, তেমন কাজের ক্ষেত্রে প্রসারিত করতে হবে সংগঠন গড়ে তোলার সম্ভাবনা। এই কারণেই ক্যাম্পাসে সংগঠন গড়ে তোলার গুরুত্ব অপরিসীম। যেভাবেই হোক, প্রায়োরিটি ক্যাম্পাস ধরে পরিকল্পনা করে শক্তিশালী সংগঠন গড়ে তুলতে হবে রাজ্যজুড়ে।

আরেকটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা এই সম্মেলনের আলোচনায় এসেছে তা হলো - এডুকেশন টেকনোলজি (সংক্ষেপে এডটেক) ইন্ডাস্ট্রির লাগামছাড়া প্রসার। উৎপাদন প্রক্রিয়ার পরিবর্তনগুলির সাথে সাযুজ্য রেখেই ধীরে ধীরে ‘ভার্চুয়াল’ হচ্ছে শিক্ষাক্ষেত্রও। অনলাইন ক্লাসে ফুলে ফেঁপে উঠছে বাইজুস আর আনঅ্যাকাডেমি, ইউজিসি ঘোষণা করছে, কোভিড থাক বা না থাক, শিক্ষায় ‘ব্লেন্ডেড মোড’ তারা লাগু করবেই, অর্থাৎ ৪০শতাংশ সিলেবাস অনলাইনেই সম্পন্ন করতে হবে। হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগে তৈরি হচ্ছে আরটিফিশিয়াল ক্লাসরুম আর শিক্ষক। এমতাবস্থায় মুখোমুখি ক্লাসরুম ব্যবস্থা, এবং ছাত্র রাজনীতির চিরপরিচিত পরিসরের চেহারা পরিবর্তিত হয়ে ঠিক কী দাঁড়াবে আগামীদিনে? আমরা সবটা জানি না। কিন্তু এ বিষয়ে আলোচনাটা সংগঠনের অভ্যন্তরে শুরু করাতে চেয়েছি আমরা। অগণতান্ত্রিক নিয়মকানুন করে দেশ তথা রাজ্যের ক্যাম্পাসগুলোতে ছাত্র রাজনীতির সুযোগ কমিয়ে আনা হয়েছে ব্যাপকভাবে। বিড়লা-আম্বানি রিপোর্ট থেকে লিংডো কমিশন, সবেরই হাত রয়েছে এর পিছনে। এখন শুধু ছাত্র রাজনীতি না, সামগ্রিকভাবে ‘ছাত্র’দের সামাজিক মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠার যে উপায়গুলি, সেগুলোতেও আঘাত হানতে চাইছে সরকার। এর ফলেই বাড়ছে ড্রপ আউট, তৈরি হচ্ছে ডিজিটাল ডিভাইড - এর ফলে বাড়ছে তরুণ প্রজন্মের সমাজবিচ্ছিন্ন একক ব্যক্তি হয়ে বেড়ে ওঠার প্রবণতা। আমাদের কাজ শুধুমাত্র অন্ধ বিরোধিতা নয়, পাল্টাতে থাকা প্রযুক্তির সাথে ছাত্রদের কাছে পৌঁছানোর নতুন পদ্ধতি বার করাটাও আমাদের কাজ। ভার্চুয়াল স্পেসেই কীভাবে ছাত্রদের কাছে আমাদের কথা নিয়ে পৌঁছনো যায়, ‘পোস্ট-ট্রুথের’ মায়াজাল টপকে বাস্তবতার সাথে কীভাবে সম্পৃক্ত করানো যায় ছাত্রসমাজকে, তার রাস্তা বার করতে হবে আমাদেরই। এই চ্যালেঞ্জ সংগঠনের কাছে নতুন - মোকাবিলার প্রস্তুতি শুরু করল ৩৭তম রাজ্য সম্মেলন।

আরও বিভিন্ন কথা উঠে এসেছে এই সম্মেলন মঞ্চ থেকে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, কর্মরত ছাত্র বা ওয়ার্কিং স্টুডেন্টদের দাবিদাওয়া নিয়ে লড়াইয়ের কথা। বা ধরা যাক ভাষাগত প্রতিবন্ধকতার কথা, যা অনেক সময়েই প্রান্তিক অংশের ছাত্রদের লেখাপড়ার তথাকথিত মূলস্রোতের সাথে সহজভাবে মিশতে দিচ্ছে না। গণতন্ত্রের প্রশ্নটি, এবং ফ্যাসিবাদ-বিরোধিতায় বৃহত্তম মঞ্চ গড়ে লড়াইয়ের প্রশ্নটিও জোরের সাথেই উত্থাপিত হয়েছে সম্মেলনে। আমরা স্লোগান দিয়েছি - Minimum Demand, Maximum Mobilisation.

সামগ্রিকভাবে শিক্ষাবিষয়ক ইস্যুতে হস্তক্ষেপ করার প্রবণতা বেড়েছে আমাদের। এখন কাজ একটাই, ছাত্রদের মধ্যে গণভিত্তির প্রসার। এলাকা সংগঠনকে তৈরি হতে হবে ‘ব্রড-বেসড’ সামাজিক মনন নিয়ে, আর সামগ্রিকভাবে সংগঠনের অভিমুখ হতে হবে ক্যাম্পাসের ভিতরে শক্তিসঞ্চয় করা। যে লাখো ছাত্র বিপদে আছে রাজ্য ও কেন্দ্রের দুই সরকারের নীতিসমূহের ফলে, তাদের জন্য কেবল লড়লেই হবে না, তাদের নিয়েই লড়তে হবে আমাদের। ফ্যাসিবাদ-সুবিধাবাদের বিরুদ্ধে লড়াইতে আমাদের কর্মীদের রাজনৈতিক চেতনার মান বাড়াতে হবে। বহুমুখী ডাইনামিক সংগঠন গড়তে হবে দ্রুত, যে সংগঠন যাবতীয় বৈচিত্র্য ও বিভিন্নতাকে বুকে টেনে নিয়ে সমাজ পাল্টানোর লড়াইতে শামিল করে ছাত্রসমাজকে।

সামনে অনেক কাজ। লক্ষ্য স্থির করে দিল এসএফআই রাজ্য ৩৭তম সম্মেলন। সবার জন্য শিক্ষা ও কাজের দাবিতে পথ হাঁটতে হবে বহুদূর। সময় কম, পা চালিয়েই হাঁটতে হবে আমাদের।