৫৯ বর্ষ ৮ সংখ্যা / ১ অক্টোবর, ২০২১ / ১৪ আশ্বিন, ১৪২৮
প্রয়াত কমরেড রাধারমণ দাঁ
নিজস্ব প্রতিনিধিঃ পিপলস রিলিফ কমিটি (পিআরসি)-র যুগ্মসম্পাদক কমরেড রাধারমণ দাঁ’র জীবনাবসান হয়েছে। ২৯ সেপ্টেম্বর, বুধবার সকালে বেহালায় ওডিআরসি সরকারি আবাসনে নিজের বাড়িতেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর। সিপিআই(এম)-র রাজ্য দপ্তর মুজফ্ফর আহ্মদ ভবনে এবং দিলখুসা স্ট্রিটে পিআরসি’র জনস্বাস্থ্য কেন্দ্রে তাঁর মরদেহে শ্রদ্ধা জানানোর পরে এদিনই কেওড়াতলা শ্মশানে শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে।
বয়সের বাধা তুচ্ছ করে জীবনের শেষদিন পর্যন্ত পিআরসি’র জনস্বাস্থ্য আন্দোলনের প্রসারে উদ্যোগী ছিলেন কমরেড রাধারমন দাঁ। তাঁর প্রয়াণে সিপিআই(এম) নেতৃবৃন্দ এবং পিআরসি’র সংগঠক ও কর্মীরা গভীর শোকজ্ঞাপন করেছেন। এদিন সকালে তাঁর মৃত্যুসংবাদ পেয়ে তাঁর বাসভবনে উপস্থিত হন বহু বামপন্থী কর্মী ও নেতৃবৃন্দ। দুপুরে তাঁর মরদেহ নিয়ে আসা হয় সিপিআই(এম) রাজ্য দপ্তরে। সেখানে কমরেড রাধারমণ দাঁ’র মরদেহ রক্ত পতাকায় ঢেকে দেন পার্টির পলিটব্যুরো সদস্য বিমান বসু, পার্টির রাজ্য সম্পাদক সূর্য মিশ্র এবং পলিট ব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম, মালা দিয়ে শ্রদ্ধা জানান তাঁরা। রাজ্য দপ্তরে তাঁর দেহে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অমিয় পাত্র, শ্রীদীপ ভট্টাচার্য, মৃদুল দে, রবীন দেব, মিনতি ঘোষ, সুজন চক্রবর্তী, আভাস রায়চৌধুরী, পার্টির রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য কল্লোল মজুমদার, পলাশ দাশ, অনাদি সাহু সহ পার্টি নেতৃবৃন্দ। শ্রদ্ধা জানান পিআরসি’র সাধারণ সম্পাদক ডাঃ ফুয়াদ হালিম, প্রয়াত রাধারমণ দাঁ’র দুই পুত্র সহ অনেকে।
এরপর তাঁর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় পিআরসি’র জনস্বাস্থ্য কেন্দ্রে। সেখানে কমরেড রাধারমণ দাঁ’র মরদেহে মালা দিয়ে শ্রদ্ধা জানান পিআরসি’র সভাপতি ডাঃ দুলাল দলুই, সাধারণ সম্পাদক ডাঃ ফুয়াদ হালিম, ডাঃ বারীণ রায়চৌধুরী, ডাঃ প্রদ্যোৎ শূর, ডাঃ সত্যজিৎ চক্রবর্তী, সাংসদ বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য, আইনজীবী সামিম আহমেদ, জনস্বাস্থ্য কমিটির পক্ষে সমীর মৈত্র ও ডাঃ অমিতাভ ভট্টাচার্য এবং ডিওয়াইএফআই’র পক্ষে সৈনিক শূর। এছাড়াও পিআরসি’র কর্মী ও চিকিৎসকবৃন্দ শ্রদ্ধা জানান জনস্বাস্থ্য আন্দোলনের প্রয়াত সংগঠককে। এর আগে এদিন সকালে ওডিআরসি আবাসনে প্রয়াত কমরেড দাঁ’র মরদেহ রক্তপতাকা আচ্ছাদিত করে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন প্রবীণ পার্টিনেতা রঘুনাথ কুশারী। শ্রদ্ধা জানান আবাসন এবং স্থানীয় বস্তির বহু মানুষ। আবাসিক সমিতি এবং স্থানীয় ক্লাব সংগঠনের পক্ষ থেকেও তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয়। বেহালা পশ্চিম এরিয়া কমিটির সম্পাদক মহম্মদ সাবির সহ সিপিআই(এম) কর্মী ও সমর্থকরাও শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।
১৯৩৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর কমরেড রাধারমণ দাঁ’র জন্ম বর্তমান বাংলাদেশের কুষ্ঠিয়া শহরে। দেশভাগের পরে তিনি বর্ধমানের কালনায় চলে আসেন এবং অম্বিকা স্কুলে পড়াশোনা করেন। পরে কালনা কলেজে আইএসসি এবং পরে কলকাতার সিটি কলেজ থেকে স্নাতক হন। ছোটো বয়স থেকেই বামপন্থী রাজনীতিতে আকৃষ্ট হন তিনি এবং পরে কমরেড হরেকৃষ্ণ কোঙারের সংস্পর্শে আসেন। কালনা কলেজে ছাত্র সংসদের সহসাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। সাতের দশকে আধা ফ্যাসিস্ত সন্ত্রাসের সময়েই কালনায় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হন এবং সিপিআই(এম)’র সদস্যপদ অর্জন করেন। ১৯৭১ সালে রাজনৈতিক সন্ত্রাসে তিনি কালনা থেকে বিতাড়িত হয়েছিলেন। রাজ্যে বামফ্রন্ট সরকার গঠিত হওয়ার পরে তিনি মন্ত্রী কমরেড মনসুর হবিবুল্লা ও কমরেড মেহেবুব জাহেদির আপ্ত সহায়কের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। আপ্ত সহায়কের পদ থেকে অবসর নেওয়ার পর ১৯৯৩ সাল থেকে রাধারমণ দাঁ পিআরসি’র সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করেন। ১৯৯৭ সালে কলকাতায় দিলখুশা স্ট্রিটে পিআরসি’র জনস্বাস্থ্য কেন্দ্র গড়ে তোলার কাজে তাঁর উল্লেখযোগ্য অবদান ছিল। শেষদিন পর্যন্ত নিজের সমস্ত শ্রম, সময় ও উদ্যম তিনি পিআরসি’র কাজেই নিয়োজিত রেখেছিলেন। পিআরসি’র সহসম্পাদক ও যুগ্মসম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন কমরেড রাধারমণ দাঁ। তাঁর দুই পুত্র শমিত দাঁ এবং অমিত দাঁ চিকিৎসক।