E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৯ বর্ষ ৮ সংখ্যা / ১ অক্টোবর, ২০২১ / ১৪ আশ্বিন, ১৪২৮

কমরেড ভবেশ মৈত্রের জীবনাবসান


বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও রাজ্যের শিক্ষা আন্দোলনের নেতা কমরেড ভবেশ মৈত্রের জীবনাবসান হয়েছে। ২৫ সেপ্টেম্বর, শনিবার সন্ধ্যায় শিবপুর বোটানিক্যাল গার্ডেন অঞ্চলের রজনীকান্ত রায়চৌধুরী লেনের অনন্যা আবাসনে ভাগ্নির বাড়িতে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বয়স হয়েছিল ৯১ বছর। কয়েকদিন আগেই তিনি অসুস্থতার কারণে একটি নার্সিংহোমে চিকিৎসাধীন ছিলেন এবং সেখান থেকে ছাড়াও পেয়েছিলেন। কিন্তু এদিন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি প্রয়াত হয়েছেন।

২৬ সেপ্টেম্বর প্রয়াত শিক্ষাবিদ কমরেড ভবেশ মৈত্রকে ফুল-মালা, শ্রদ্ধায় শেষ বিদায় জানিয়েছেন রাজ্যের বামপন্থী আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ এবং শিক্ষা ও সংস্কৃতি জগতের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। তাঁর মরদেহ পিস ওয়ার্ল্ডে রাখা হয়েছিল। এদিন দুপুর সাড়ে বারোটায় তাঁর মরদেহ নিয়ে আসা হয় সিপিআই(এম)’র রাজ্য দপ্তর মুজফ্‌ফর আহ্‌মদ ভবনে। সেখানে সিপিআই(এম) নেতৃবৃন্দ ও শিক্ষা সংস্কৃতি জগতের বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।

মুজফ্‌ফর আহ্‌মদ ভবনে তাঁর মরদেহ নিয়ে আসা হলে তার ওপরে লাল পতাকা দেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু, সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক সূর্য মিশ্র, পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মৃদুল দে, মিনতি ঘোষ, শ্রীদীপ ভট্টাচার্য, রবীন দেব, মদন ঘোষ সহ সিপিআই(এম) নেতৃবৃন্দ ফুলমালায় শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেন। এবিটিএ’র পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানান কৃষ্ণপ্রসন্ন ভট্টাচার্য, এবিপিটিএ’র পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানান পিনাক রায় এবং মীরা ঘোষ। ওয়েবকুটা’র তরফে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেন কেশব ভট্টাচার্য এবং বিদ্যাসাগর ফাউন্ডেশনের তরফে শ্রদ্ধা জানান শ্যামল সেনগুপ্ত। এছাড়াও কমরেড ভবেশ মৈত্রের মরদেহে মাল্যদান করেন পশ্চিমবঙ্গ গণতান্ত্রিক লেখক শিল্পী সঙ্ঘের সাধারণ সম্পাদক রজত বন্দ্যোপাধ্যায়, আইনজীবী তাজ মহম্মদ, অধ্যাপক তীর্থঙ্কর চট্টোপাধ্যায়, অধ্যাপক জ্যোর্তিভূষণ দত্ত সহ শিক্ষাজগতের বহু বিশিষ্ট ব্যক্তি ও কমরেড ভবেশ মৈত্রের বহু অনুরাগী। কমরেড মৈত্রের পরিবারের তরফেও তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা অর্পণ করা হয়। মুজফ্‌ফর আহ্‌মদ ভবন থেকে কমরেড ভবেশ মৈত্র’র মরদেহ কেওড়াতলা মহাশ্মশানে নিয়ে যাওয়া হয় ও সেখানেই তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।

কমরেড ভবেশ মৈত্রের প্রয়াণে গভীর শোকপ্রকাশ করেছেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু এবং সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক সূর্য মিশ্র। নিখিলবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে ভবেশ মৈত্রর প্রয়ানে শোকজ্ঞাপন করে বলা হয়েছে, শিক্ষাজগতের একটি নক্ষত্রপতন ঘটলো। তিনি পাঁচের দশকে জলপাইগুড়ি জেলায় প্রাথমিক শিক্ষকদের সংগঠিত করতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছিলেন এবং নিখিলবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সদস্যও ছিলেন। সংগঠনের মুখপত্রে নিয়মিত লিখতেন। সর্বদা পরামর্শ দিয়ে নানাভাবে সাহায্যও করতেন। শিক্ষকদের সভাসমাবেশে আন্দোলন-সংগ্রামেও সামনের সারিতে থাকতেন। তাঁর মৃত্যুতে শিক্ষাজগতের অপূরণীয় ক্ষতি হলো। নিখিলবঙ্গ শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে শোকজ্ঞাপন করে বলা হয়েছে, শিক্ষার অঙ্গন থেকে তাঁর কর্মজীবন শুরু। সারা জীবন শিক্ষায় নিবেদিত প্রাণ, আদর্শ শিক্ষক ও সফল শিক্ষা প্রশাসক হিসাবে তিনি অবদান রেখে গিয়েছেন। শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য এবিটিএ পরিচালিত বিএড কলেজের অধ্যাপক ও প্রিন্সিপাল পদে শিক্ষাহিতৈষী ভবেশ মৈত্রর ভূমিকা অম্লান হয়ে থাকবে। মধ্য শিক্ষা পর্ষদের প্রশাসক হিসাবেও তিনি অবদান রেখে গিয়েছেন। ভবেশ মৈত্রের প্রয়াণে শোকপ্রকাশ করেছেন পশ্চিমবঙ্গ গণতান্ত্রিক লেখক শিল্পী সঙ্ঘের সাধারণ সম্পাদক রজত বন্দ্যোপাধ্যায়ও।

১৯৩০ সালে রংপুরে কমরেড ভবেশ মৈত্রের জন্ম, পরে তিনি আলিপুরদুয়ারে চলে আসেন। ১৯৫৭ সালে তিনি কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যপদ অর্জন করেন। কর্মজীবনের শুরুতে প্রথমে তিনি আলিপুরদুয়ারে শিক্ষকতা করেন এবং তারপরে তিনি হাওড়ার অবর বিদ্যালয় পরিদর্শকের অফিসে কাজে যোগ দেন। কয়েক বছর পর হাওড়ার ডি আই অফিসে করণিকের পদে যোগ দেন। ১৯৬৭ সালে এবিটিএ পরিচালিত শিক্ষক শিক্ষণ কলেজের অধ্যাপক এবং তারপরে অধ্যক্ষ হন তিনি। শিক্ষক গড়ে তোলার কারিগর হিসাবে তিনি সকলের কাছে প্রশংসিত হয়েছিলেন। সত্যপ্রিয় রায়ের মৃত্যুর পরে তিনি মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতি পদে নিযুক্ত হয়েছিলেন এবং তারপরে ১৯৯১ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত তিনি পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। শিক্ষা প্রশাসক হিসাবে বামফ্রন্ট সরকারের শিক্ষানীতির রূপায়ণে, গণতান্ত্রিকভাবে শিক্ষা পরিকাঠামো গঠনে তিনি বিশেষ ভূমিকা পালন করেছিলেন। বিধাননগরে বাড়ি থাকলেও স্ত্রীর মৃত্যুর পরে হাওড়ায় তাঁর ভাগ্নে ও পরে ভাগ্নি সুচরিতা বাগচীর কাছে বসবাস করতেন। বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় ভুগছিলেন, ২৪ সেপ্টেম্বর সকালেই তিনি নার্সিংহোম থেকে বাড়িতে ফিরেছিলেন। কিন্তু পরদিনই তাঁর জীবনাবসান ঘটে।