E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৬১ বর্ষ ৪ সংখ্যা / ১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ / ১৪ ভাদ্র, ১৪৩০

‘স্বপ্ন’ খুনের বিচার এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে রাগিং মুক্ত ও গণতান্ত্রিক পরিবেশের দাবিতে

যাদবপুরে বিশাল ছাত্র সমাবেশ

সৈনিক শূর


‘‘স্বপ্ন তুমি আমার ভাই, তোমার খুনের বিচার চাই...’’ ছাত্রদের এই দৃপ্ত স্লোগানে ফের উত্তাল হলো কলকাতার রাজপথ। শ্বেত পতাকায় কার্যত ভেসে থাকা যাদবপুরের ৮বি চত্বর বুঝিয়ে দিলো শিক্ষাঙ্গনে রাগিং সংস্কৃতির বিরুদ্ধে চোখে চোখ রেখে একমাত্র লড়তে পারে বামপন্থী ছাত্ররাই।

গত ২৯ আগস্ট, মঙ্গলবার ভারতের ছাত্র ফেডারেশন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটে যাওয়া রাগিংয়ের জেরে প্রথমবর্ষের ছাত্র স্বপ্নদীপ কুণ্ডুর খুনের বিচার চেয়ে এবং রাজ্য জুড়ে বহিরাগত গুন্ডা মুক্ত রাগিং বিরোধী ক্যাম্পাস গড়ার লক্ষ্যে যাদবপুরে ‘স্বপ্নের সমাবেশ’-এর ডাক দেয়।

এদিন বেলা বাড়তেই রাজ্যের নানা কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছাত্ররা জমায়েত হতে থাকে ঢাকুরিয়ার দক্ষিণাপনের সামনে, আবার কিছু জেলার ছাত্র জমায়েত যাদবপুর থানা চত্বরে ভিড় জমায়। বহু আগে কর্মসূচি ঘোষণা করা সত্ত্বেও যাদবপুর ৮বি-তে সমাবেশের জন্য পুলিশের অনুমতি মেলেনি। এর সপক্ষে পুলিশের তরফ থেকে কোনো স্পষ্ট যুক্তিও পাওয়া যায়নি। যানজটের প্রসঙ্গ আপাতভাবে সামনে নিয়ে এলেও বস্তুত দু’দিন আগেও ওই একই জায়গায় গোটা রাস্তা বন্ধ করে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ বহিরাগতদের নিয়ে ধরনা চালিয়েছিল, এই ক্ষেত্রে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। এই রাজনৈতিক দ্বিচারিতা যে কলকাতা পুলিশের তৃণমূলের হয়ে দলদাসবৃত্তির মানসিকতারই প্রতিফলন তা কার্যত স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

পুলিশের অনুমতির তোয়াক্কা না করেই এসএফআই নেতৃত্ব ওই জায়গাতেই সমাবেশ করার সিদ্ধান্তে অনড় থাকেন। এমন ঘটনায় ক্ষোভে ফুঁসতে থাকা ছাত্রসমাজ ব্যাপকতর জমায়েত সংগঠিত করে। বেলা দেড়টা নাগাদ ঢাকুরিয়া থেকে যাদবপুর ৮বি-এর সমাবেশ অভিমুখে এসএফআই কলকাতা জেলার মিছিল শুরু হয়। সুবিচারের দাবিতে দৃপ্ত এই মিছিল পুলিশি অসহযোগিতার বাধা চূর্ণ করে গোটা রাজপথের দখল নেয়। জমায়েতের জেরে সাময়িকভাবে অচল হয়ে যায় যান চলাচল। হুগলি জেলার মিছিল ঢোকে সব শেষে। ততক্ষণে সাদা-পতাকার বন্যায় কার্যত প্লাবিত যাদবপুরের ‘স্বপ্নের সমাবেশ’ চত্বর।

দীর্ঘদিন পর যাদবপুরের বুকে সংগঠিত এই ঐতিহাসিক ছাত্র সমাবেশ, নতুন দিনের ‘স্বপ্ন’ দেখা ছাত্রদের উজ্জীবিত করে, ভরসা জোগায়। এদিন সমাবেশ চত্বর জুড়ে ছেয়ে ছিল নানা পোস্টার, প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুন ইত্যাদি। সেগুলির মধ্যে কোনোটাতে লেখা ‘‘যদি হয় ‘স্বপ্ন’ ভরা চোখ, তবে ঘুরে দাঁড়ানোটা হোক’’।

এই ঘুরে দাঁড়ানোর বার্তা দিয়েই সমাবেশের অন্যতম প্রধান বক্তা ডিওয়াইএফআই’র প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক এবং সিপিআই(এম)-র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম এদিন এই ছাত্রহত্যার সুবিচারের দাবি জানানোর পাশাপাশি ইতিহাস প্রসিদ্ধ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়কে কলুষিত করে তৃণমূল-বিজেপি’র রাজনৈতিক ফায়দা তোলার অপচেষ্টার বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ করেন।

সমাবেশে বক্তব্য রাখেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী তথা এসএফআই’র প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক নীলোৎপল বসু। যাদবপুরে ‘স্বাধীন’ সংগঠনগুলোর ইতিহাস এবং তারা যেভাবে শুরুর দিন থেকেই দক্ষিণপন্থার হাত শক্ত করেছে তা স্পষ্ট হয় নীলোৎপল বসুর বক্তব্যে। কলেজ ক্যাম্পাসে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার দাবিতে সোচ্চার হন আরেক প্রাক্তনী এবং এসএফআই’র প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক সুজন চক্রবর্তীও। বর্তমান ছাত্র নেতৃত্বও তাঁদের বক্তব্যে ছাত্র সংসদ নির্বাচন অবিলম্বে ঘোষণার দাবিতে সোচ্চার হন। এসএফআই’র রাজ্য সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্য, সভাপতি প্রতীক উর রহমান, সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ময়ূখ বিশ্বাস সহ অন্যান্য ছাত্র নেতৃত্বের বক্তব্যে রাগিং- মুক্ত ক্যাম্পাস গড়ে তুলতে লাগাতার লড়াইয়ের ডাক দেওয়া হয়। সমাবেশ দৃপ্ত কণ্ঠে ‘স্বপ্ন’ খুনের বিচারের দাবিতে এবং ক্যাম্পাসে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার লড়াইয়ের শপথ নেয় হাজার হাজার প্রত্যয়ী যৌবনের হার না মানা মেজাজে। মুখ্যমন্ত্রীর প্রকৃত সত্যকে ও দোষীদের আড়াল করার চেষ্টায় সিপিআই(এম) এবং এসএফআই-কে মিথ্যা অপবাদ ও আক্রমণের বিরুদ্ধে গর্জে উঠে এবং ছাত্র খুনের বিচার চেয়ে লড়াইয়ের বার্তায় ‘স্বপ্ন’ ভরা চোখে ঘুরে দাঁড়ানোর স্লোগানে মাতোয়ারা হয় লেনিনের মূর্তি সংলগ্ন গোটা যাদবপুরের ‘প্রজন্ম চত্বর’...