৫৮ বর্ষ ৩৩ সংখ্যা / ২ এপ্রিল, ২০২১ / ১৯ চৈত্র, ১৪২৭
প্রথম দু’দফার নির্বাচনে নিজের ভোট নিজে দেবার প্রত্যয় স্পষ্ট হয়েছে
জলপাইগুড়ি শহরে সংযুক্ত মোর্চার প্রচার মিছিলে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু সহ নেতৃবৃন্দ।
নিজস্ব প্রতিনিধিঃ রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল-বিজেপি’র বিরুদ্ধে সংযুক্ত মোর্চার লড়াই এখন দ্বিমুখী লড়াইতে পরিণত হয়েছে। মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে তৃণমূল এবং বিজেপি-কে একসঙ্গে পরাস্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। তিনি বলেছেন, লড়াই এখন দ্বিমুখী, তৃণমূল এবং বিজেপি অর্থাৎ বিজেমূল বনাম সংযুক্ত মোর্চার লড়াই। রাজ্যকে বাঁচানোর জন্য, জীবন-জীবিকার স্বার্থে বিকল্প প্রতিষ্ঠার জন্য সংযুক্ত মোর্চার সরকার গড়তে হবে।
সিপিআই(এম) নেতা এবং রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এক বিবৃতিতে এবং অডিয়ো বার্তায় পশ্চিমবাংলায় গণতন্ত্র, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, শ্রমিক-কৃষক ও খেটে খাওয়া মানুষের জীবন-জীবিকার স্বার্থে রাজ্যের সমস্ত আসনে সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থীদের জয়ী করার আহ্বান জানিয়েছেন।
দ্বিতীয় দফার নির্বাচনের প্রাক্কালে রাজ্যজুড়ে কেন্দ্র ও রাজ্যের দুই শাসকদলের বিরুদ্ধে সংযুক্ত মোর্চার প্রচার জনমানসে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। এর বিপরীতে তৃণমূল এবং বিজেপি অর্থের প্রাচুর্যে, ক্ষমতার অপপ্রয়োগ করে রাজ্যের ক্ষমতা দখলে মত্ত হয়েছে। রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের অপশাসন, দুর্নীতি এবং সন্ত্রাসে বিক্ষুব্ধ মানুষ এবারে বিকল্প ভাবনা করছেন। মানুষের রুটি-রুজির সংস্থান, কর্মসংস্থান এবং রাজ্যে সুস্থ গণতান্ত্রিক পরিবেশ রক্ষার আবেদন জানিয়ে সংযুক্ত মোর্চার প্রচারে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সাড়া দিচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এতে শঙ্কিত তৃণমূল মরিয়া হয়ে নির্বাচনী পরিস্থিতিকে ব্যাহত করতে চাইছে। স্বয়ং তৃণমূল নেত্রী নানাভাবে এতে ইন্ধন জোগাচ্ছেন। তাঁর নানা অসংলগ্ন মন্তব্য এবং উসকানি পরিস্থিতিকে উত্তপ্ত করে তুলছে।
ক্ষমতা হারানোর আতঙ্কে সম্প্রতি তিনি যে স্বীকারোক্তি করেছেন, তাতে তাঁদের ঘৃণ্য চক্রান্ত-অপকীর্তি প্রকাশ্যে চলে এসেছে। তৃণমূল নেত্রী এক নির্বাচনী সভায় প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপি প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারীর উপর নন্দীগ্রামে তাদের সংঘটিত হিংসা-ষড়যন্ত্রের দায় চাপিয়ে দিতে বলেছেন, ২০০৭ সালের ১৪ মার্চ পুলিশের পোশাক ও হাওয়াই চটি পরে দুর্বৃত্তরা সেদিন ঢুকেছিল নন্দীগ্রামে। তিনি প্রকাশ্য সভায় বলেছেন, ‘‘এই বাপ-ব্যাটার পারমিশন ছাড়া সেদিন পুলিশ নন্দীগ্রামে ঢুকতে পারত না, আমি চ্যালেঞ্জ করে বলছি’’। তাঁর কথায় এখানে ‘বাপ-ব্যাটা’ মানে যে শিশির অধিকারী ও তাঁর ছেলে শুভেন্দু অধিকারী এটা সকলের কাছেই স্পষ্ট। সকলেরই জানা, তখন তৃণমূল নেত্রীর সমস্ত চক্রান্ত ও হিংসাত্মক কার্যকলাপের অন্যতম দোসর ছিলেন এই শিশির-শুভেন্দু। তৃণমূল নেত্রীর এই মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে শুভেন্দু বলেছেন, তিনি যা কিছু করেছেন সব নেত্রীর নির্দেশেই।
তৃণমূল নেত্রীর এই ভয়ঙ্কর বক্তব্যের মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হয়ে যায় যে, জমির আন্দোলনের নামে কীভাবে হিংসাশ্রয়ী আন্দোলন চালিয়ে রাজ্যের শিল্প সম্ভাবনাকে গুঁড়িয়ে দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল তৃণমূল কংগ্রেস। সেই সঙ্গে তাদের দশ বছরের শাসনে রাজ্যকে কীভাবে সর্বনাশের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েছে সেটাও জীবনের অভিজ্ঞতায় বুঝেছেন মানুষ। এদেরই দুর্নীতি-অপশাসনের সুযোগ নিয়ে সাম্প্রদায়িক শক্তি আরএসএস-বিজেপি রাজ্যে তৎপরতা বাড়িয়েছে। এবারের নির্বাচনে এসবেরই জবাব চাইছেন মানুষ। সেজন্যই সংযুক্ত মোর্চার বিভিন্ন প্রচার কর্মসূচিতে বিভিন্ন অংশের মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন ক্রমশ জোরালো হচ্ছে।
২৭ মার্চ রাজ্যে বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার মোট ৩০টি কেন্দ্রে নির্বাচন হয়েছে। প্রথম দফার নির্বাচনে যে দিকগুলি স্পষ্ট হয়েছে তা হলো - সংযুক্ত মোর্চা - তৃণমূল এবং বিজেপি’র দু’পক্ষেরই শত্রু। এছাড়া অনেক জায়গাতেই বোঝা গেছে মোদী-মমতা বাহিনীর মধ্যে বোঝাপড়া কতটুকু। এই পর্বের নির্বাচনে ৮০ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছে বলে জানা গেছে। এই পর্বের নির্বাচনে লক্ষণীয় দিক হলো, সর্বত্র সংযুক্ত মোর্চার এজেন্ট ও কর্মীরা দৃঢ়তার সঙ্গে লড়ে গেছেন। বিভিন্ন জায়গায় তৃণমূল-বিজেপি’র এজেন্ট ও কর্মীরা একজোট হয়ে সংযুক্ত মোর্চার কর্মী ও এজেন্টদের বাধা দিতে চেষ্টা চালিয়েছিল। ওদের সেই অপচেষ্টাকে রুখে দিয়েছেন সংযুক্ত মোর্চার কর্মীরা।
এছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, বিগত দশ বছরে এই প্রথমবার মানুষ কিছুটা স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ভোট দিয়েছেন। শালবনীতে একটি বুথে ভোট লুট করতে ব্যর্থ হয়ে রাগে-ক্ষোভে তৃণমূলীরা সাংবাদিকদের সামনেই সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থী সুশান্ত ঘোষের গাড়ি ভাঙচুর করে। শালবনী ছাড়াও গড়বেতা, দাঁতন, কেশিয়ারি প্রভৃতি নানা জায়গায় তৃণমূল-বিজেপি’র হামলাকে রুখে দিয়ে ভোট শেষ না হওয়া পর্যন্ত বুথ আঁকড়ে লড়াই চালিয়েছেন সংযুক্ত মোর্চার কর্মীরা।
এই প্রতিবেদন লেখার সময়ে পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার ৩০টি আসনে নির্বাচন চলছে। এই পর্বেই রয়েছে সংবাদ শিরোনামে আসা নন্দীগ্রাম কেন্দ্রের ভোট। এই কেন্দ্রে তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জি।