৫৮ বর্ষ ৩৩ সংখ্যা / ২ এপ্রিল, ২০২১ / ১৯ চৈত্র, ১৪২৭
লকডাউনের সালতামামি
অমিতাভ রায়
তালি বাজল। থালি পেটানো হলো। অকাল দেওয়ালি পালিত হলো। এমনকি আকাশ থেকে সারা দেশে ফুলের পাপড়ি ছড়ানো হলো। কিন্তু কিছুতেই কিছু হলো না। শেষ পর্যন্ত ২০২০’র ২৪ মার্চ আর ২৫ মার্চের সন্ধিক্ষণে অর্থাৎ ২৫ মার্চ রাত বারোটা থেকে ভারতে লকডাউন শুরু হয়ে গেল।
তিনি তো ২৪শে মার্চ, ২০২০ রাত আটটায় ঘোষণা করেই দায়মুক্ত। হাতে মাত্র সাড়ে তিন কী মেরেকেটে ঘণ্টা চারেক সময়। সারা দেশের মানুষের পাগল পাগল অবস্থা। দিনের শেষে বাড়ি ফিরতেই নিত্যযাত্রী নাকাল। আর যাঁরা ভিন রাজ্যে কাজের জন্য বসবাস করতে বাধ্য হয়েছেন তাঁদের নিজের গ্রামে-গঞ্জে ফিরে আসার কথা ভাববার সময় কারো নেই।
ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে ধারাবাহিক প্রচার। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন। মাস্ক অথবা মুখোশে সবসময়ই ঢেকে রাখতে হবে মুখ। ঘণ্টায় ঘণ্টায় স্যানিটাইজার দিয়ে ভালো করে হাত ধুয়ে ফেলুন। কী বিচিত্র তামাশা! যে দেশের বেশিরভাগ মানুষ মাসে একবার সাবানের ছোয়াঁ পেলে ধন্য হয়ে যায় তাঁদের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে ঘণ্টায় ঘণ্টায় ভালো করে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলার বার্তা। এক কলসি জল বয়ে আনতে কত পথ পাড়ি দিতে হয় তা সকলের জানা, তবুও প্রচারে ঘাটতি নেই। যে দেশের বেশিরভাগ মানুষের এক চিলতে ঘরে মাথা গোঁজাগুঁজি করে বসবাস তাঁদের জন্য সরাসরি নিদান - সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।
।। দুই ।।
করোনা বা কোভিড-১৯ নামের অপরিচিত এক ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিহত করতে পাঁচ দফায় একটানা ৭৫ দিনের লকডাউন ঘোষণা করেই দায়িত্ব পালন শুরু করেছিল ভারত সরকার। ২৫ মার্চ থেকে ৭ জুন পর্যন্ত অবরুদ্ধ ছিল সারা দেশ। অবরোধ শুরুর সময় সারা দেশে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ৬০৬ জন। আর বর্ষপূর্তির লগ্নে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ১৭ লক্ষ। এঁদের মধ্যে অনেকেই সুস্থ হয়েছেন। তবে এখনও কমবেশি ৩ লক্ষ ৪৫ হাজার আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন। এক বছরে কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১ লক্ষ ৬০ হাজারেরও বেশি ভারতীয় নাগরিক।
কোভিড-১৯ নামের ভাইরাস কীভাবে জন্মালো থেকে শুরু করে তার স্বভাব চরিত্রের কিছুই জানা নেই। চিকিৎসক বৈজ্ঞানিকরা দিশাহারা। ভাইরাসের গতি প্রকৃতির পরিচয় খুঁজে বের করার জন্য পৃথিবীজুড়ে তাঁরা দিবারাত্র অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছেন। কেউ কোথাও সামান্য সূত্রের সন্ধান পেলেই তাই নিয়ে চলছে নিরন্তর আলোচনা-পর্যালোচনা। কিন্তু ঠিক কোন্ ওষুধে সারতে পারে এই সংক্রমণ তা আজও অজ্ঞাত। তবুও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যা কম নয়। হাসপাতালের ওপর সাধারণ মানুষের আস্থাকে পুঁজি করে একচেটিয়াভাবে মানবিকতা বিসর্জন দিয়ে বাণিজ্য করে চলেছে দেশের প্রায় সমস্ত বেসরকারি হাসপাতাল।
দেশের মানুষের মুখ মুখোশে ঢেকে রাখার সুবাদে বেআব্রু হয়ে পড়েছে দেশের স্বাস্থ্য পরিকাঠামো। স্বাস্থ্যখাতে সরকারি বিনিয়োগ ক্রমশ কমিয়ে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বেসরকারি হাসপাতালগুলিকে প্রশ্রয় দেওয়ার ফল এখন দিবালোকের মতো পরিষ্কার। আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেশি। সরকারি তো বটেই বেসরকারি হাসপাতালেও শয্যা সংখ্যা যথেষ্ট কম। এত কম যে স্টেডিয়ামে অস্থায়ী হাসপাতাল খুলতে হয়েছে। দেশের বিকাশ অথবা উন্নয়ন কোন্ পর্যায়ে পৌঁছেছে তা এখন জলের মতো পরিষ্কার।
।। তিন ।।
কাজছাড়া মানুষের সংখ্যা গত কয়েক বছর ধরে ক্রমশ বাড়ছিল। সংক্রমণের দৌলতে আরও অনেক বেশি মানুষ নতুন করে কাজহারা হলেন। সংখ্যাটা কত? কেউ বলতে পারছে না। সরকারের কাছে নথিভুক্ত বেকারের তালিকা নেই। যাঁদের কাজ চলে গেল তাঁরাও লজ্জায় হোক বা অন্য কোনো কারণে কাজ হারানোর কথা স্বীকার করছেন না। চূড়ান্ত বিচারে দেশের শ্রমের বাজারে ভয়ঙ্কর মন্দা।
কাজ না থাকায় মানুষের কাছে পয়সা নেই। সামান্য শতাংশের হাতে যেটুকু পয়সা আছে তাঁরা ভবিষ্যতের ভাবনায় খরচ কমিয়ে দিয়েছেন। সরকারের তরফে এমন কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি যার ফলে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বাড়তে পারে। সামগ্রিক ফলাফল - দেশের অর্থনীতি ডুবে গেছে।
কলকারখানায় বা পরিষেবা ক্ষেত্রে যে সব কর্মী প্রত্যক্ষভাবে উৎপাদন প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত নন তাঁদের বাড়িতে বসে অনলাইনে কাজ করতে বলা হয়েছে। দেশের ইন্টারনেট ব্যবস্থা দুর্বল। যার ফলে কর্মীদের বাড়িতে বসেই অনেক বেশি সময় ধরে কাজ করতে হচ্ছে। সময় মতো কাজ করতে না পারায় কর্মীদের প্রথম প্রথম কর্তৃপক্ষের কটু মন্তব্য শুনতে হচ্ছে। তারপর শাস্তিমূলোক ব্যবস্থা হিসেবে বেতন সংকোচন করা হচ্ছে। তাতেও কাজ না হলে সরাসরি বিদায়পত্র ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বাজারে কাজের লোকের অভাব নেই। নতুন কাউকে নিয়োগ করে নেওয়া যাবে। প্রয়োজনে কম পারিশ্রমিকেও পাওয়া যাবে। ইন্টারনেট ব্যবস্থা উন্নত করার বিষয়ে কারো মাথা ব্যথা নেই।
পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের অধিকাংশ বাড়ি থেকে বা পোশাকি নামে ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’-এ রপ্ত হয়ে যাওয়ার পর দপ্তরের স্থান অকারণে পড়ে রয়েছে দোহাই দিয়ে সংস্থার পরিসর সঙ্কোচন করা হচ্ছে। দিনের শেষে খরচ কমাতে হবে এটাই আসল কথা।
শিক্ষাক্ষেত্রেও একই অবস্থা। একটা অংশের শিক্ষায়তনে অনলাইনে লেখাপড়ার আয়োজন করা হয়েছে। ধরেই নেওয়া হয়েছে যে, সব শিক্ষক এবং পড়ুয়ার কাছে কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ট্যাব(লেট) নিদেনপক্ষে স্মার্টফোন রয়েছে। এবং সকলেই এইসব যন্ত্র ব্যবহারে পারদর্শী। সকাল থেকে বেশি রাত পর্যন্ত পড়ুয়া এবং শিক্ষক দুর্বল ইন্টারনেট সংযোগ নিয়ে ব্যতিব্যস্ত। প্র্যাকটিক্যাল ক্লাস কী করে অনলাইনে হবে তা নিয়ে কোনো চিন্তা-ভাবনার অবকাশ নেই। অথবা বলা যায় সেই কারণেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণিতে গণিত ও পদার্থবিজ্ঞান না পড়লেও ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে পারা যাবে।
যেসব পড়ুয়াদের অনলাইনে পড়ানো সম্ভব হচ্ছে না তাদের মাসে একবার ‘মিড ডে মিল’ দিলেই চলবে। কী বিচিত্র নিদান!
২০২০’র জুন মাসের প্রথম দিন থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ধাপে ধাপে পাঁচ দফায় ১৪৬ দিন ধরে লকডাউন সংক্রান্ত অবরোধ তুলে নিয়ে ‘আনলক’ প্রক্রিয়া চালু করলেও বেশিরভাগ শিক্ষায়তনের দ্বার আজও অবরুদ্ধ। সবমিলিয়ে কর্মসংস্থানের মতোই শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙেচুরে একাকার।
লকডাউন যখন রমরমিয়ে চলছে সেই সময় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য গণ-পরিবহণ ব্যবস্থা ব্যাহত, সেই সময়ই হঠাৎ খেয়াল হলো জীবন বাঁচাতে জীবিকা বিপর্যস্ত। অর্থনীতির দুরবস্থার কথা নিয়ে সকলে সোচ্চার। তড়িঘড়ি অর্থনীতির হাল ফেরানোর জন্য নিজের রাজ্যে ফিরে যাওয়া শ্রমিকদের আবার কর্মক্ষেত্রে ফিরিয়ে আনার বন্দোবস্ত করা হলো। সংক্রমণ সংক্রান্ত সতর্কতা অন্তর্হিত। কতজন ফিরে এসেছিলেন তারও নথি ছিলো না। ঘরে ফেরার পথে রাস্তায় কতজন প্রাণ হারিয়েছিলেন সে খবরও কেউ রাখেনি। আর কতজন নতুন করে ভিন রাজ্যে পাড়ি দিলেন তা-ও নথিভুক্ত হয়নি।
।। চার ।।
লকডাউন সামাজিক সমন্বয়কে বিঘ্নিত করে দিয়েছে। সংক্রমণ রোধের জন্য মুখের উপর মাস্ক চাপানোর যুক্তিসঙ্গত কারণ আছে। সংক্রমণ প্রতিরোধ করার জন্য দরকার ‘পারস্পরিক বা শারীরিক দূরত্ব’। কিন্তু লকডাউন শুরু হওয়ার আগে থেকেই সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার ধারাবাহিক প্রচার শুরু হয়েছে। কুষ্ঠ, পক্স, যক্ষ্মা ইত্যাদি রোগ সংক্রমণ বন্ধ করার জন্য পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রেখে চলতে হয়। এটাই চিকিৎসাশাস্ত্রের পরামর্শ। কিন্তু কোভিড-১৯-এর সংক্রমণ প্রতিহত করার জন্য শুরু থেকেই সামাজিক দূরত্বের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ফলে তৈরি হয়েছে মানসিক ও সামাজিক সন্ত্রাস। এই সন্ত্রাস এমনভাবেই ছড়িয়ে পড়েছে যে, পাড়া-প্রতিবেশী আত্মীয়-পরিজন এমনকি বন্ধুবান্ধব-সহকর্মীকেও এখন সন্দেহের চোখে দেখা হয়। সকলেরই মনে হয় যার সঙ্গে কথা বলবো তার থেকে যদি সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। মানুষের প্রতি মানুষের সন্দেহ তৈরি হলে সামাজিক বন্ধন ভেঙে পড়ে। এবং সেটাই হচ্ছে। পাশের বাড়ির দরজায় অ্যাম্বুলেন্স এলে আমি-আপনি সন্ত্রস্ত চোখে তাকিয়ে দেখি। মনে মনে প্রশ্ন করি - কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হওয়ার জন্যই কি দুয়ারে অ্যাম্বুলেন্স। অসুস্থ প্রতিবেশীর জন্য সহানুভূতির দৃষ্টি হারিয়ে গেছে।
একটানা পনেরো-বিশ দিন হাসপাতালের ডিউটি শেষে ডাক্তার-নার্স নিজের বাসস্থানে ফিরে আসার সময় সামাজিক সন্ত্রাসের শিকার হয়েছেন। পাড়া-পড়শি এমন ব্যবহার করছেন যেন ডাক্তার-নার্সরা হাসপাতাল থেকে ভাইরাস বয়ে নিয়ে এসেছেন। তখনই খুলে যায় মাস্ক পরিহিত সমাজের সত্যিকারের মুখ। সামাজিক দূরত্ব সংক্রান্ত নিরন্তর প্রচারে উৎকটভাবে প্রকাশিত হয়ে যাচ্ছে আত্মসর্বস্ব ব্যক্তিগত স্বার্থকেন্দ্রীক মানসিকতা।
আবার অবরোধের দিনগুলিতেই গড়ে উঠেছে সামাজিক সমন্বয়। বিপন্ন মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন একঝাঁক নবীন কিশোর, যুবক, তরুণ-তরুণী। অসুস্থ, প্রবীণ বা একাকী মানুষের কাছে তারা প্রয়োজনের সময় পৌঁছে দিয়েছেন খাবার-দাবার থেকে ওষুধপত্র। প্রয়োজনে তাঁরা খুলেছেন সর্বজনীন রান্নাঘর। হাতে হাত লাগিয়ে নিজেরাই রান্না করছেন। রান্না করা খাবার বিতরণ নয়, স্বল্পমূল্যে বিক্রি করছেন। ক্রেতা যেন মনে না করেন যে, ভিক্ষান্ন দিয়ে তাঁর ক্ষুধা নিবৃত্তি হচ্ছে। সংক্রমণের ঝুঁকি নিয়ে শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা উপেক্ষা করে দিনের পর দিন তাঁরা নিঃস্বার্থভাবে পালন করে চলেছেন নতুন সামাজিক দায়িত্ব। বন্যা বা যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর যে সমস্ত ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান বিপর্যস্ত এলাকায় ছুটে যায় এবং সেই সংবাদ সর্বত্র সম্প্রচার করা হয় তাদের এই সামাজিক সঙ্কটের সময় দেখা যায়নি। দুয়ারে তালা ঝুলিয়ে সংক্রমণ এবং সামাজিক দায়িত্ব এড়িয়ে গেছেন। অর্থাৎ মাস্কের আড়ালে সেইসব তথাকথিত সমাজসেবীদের মুখোশহীন প্রকৃত মুখ বেরিয়ে এসেছে।
পাড়ায়-পাড়ায়, মহল্লায়-মহল্লায়, গ্রামে-গঞ্জে, শহরে-নগরে সামাজিক সঙ্কটের দিনে নবীন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা যেভাবে সামাজিক দায়িত্ব পালন করে চলেছেন তার থেকেই তৈরি হচ্ছে সমাজ-সভ্যতার নতুন ধারণা-ভাবনা। সামাজিক দূরত্বের নামে সামাজিক সন্ত্রাস তৈরি করে যে সামাজিক সঙ্কট সৃষ্টি করা হয়েছে তাকে ভেঙেচুরে খানখান করে নবীন প্রজন্ম প্রমাণ করে দিয়েছে সঙ্ঘবদ্ধ জীবনই সামাজিক নিরাপত্তা ও দায়বদ্ধতা পালন করতে পারে।
।। পাঁচ ।।
অবরোধের অন্তরালে যাবতীয় জনবিরোধী আইন প্রণয়ন করে সংসদের মোহর লাগিয়ে নেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্রীয় সম্পদ সৃষ্টি নয় বিক্রি করতে যা যা করণীয় তাই করা হয়েছে। তবে আইনের প্রয়োগ তেমন সহজ হয়নি। দেশের কৃষক রাজধানী দিল্লিকে ঘেরাও করে চার মাসের বেশি সময় ধরে শান্তিপূর্ণ অবস্থান আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। সরকার নির্বিকার। কৃষক কিন্তু দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁদের পরিষ্কার কথা নতুন তিন কৃষি আইন যা আদতে কৃষকের মৃত্যু পরোয়ানা, প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চলবে। হয়তো এই লড়াইয়ের মাধ্যমে রচিত হবে আধিপত্যের অবসানের রূপরেখা।
লকডাউনের বর্ষপূর্তির মুহূর্তে ক্ষয়ক্ষতির খতিয়ান কষতে গেলে অর্থনৈতিক থেকে সামাজিক ক্ষতির পাল্লা নিঃসন্দেহে অনেক বেশি ভারি দেখাবে। সামাজিক সন্ত্রাস এবং সঙ্কটের মাধ্যমে এতদিনের পরিচিত সমাজ যখন ছিন্নভিন্ন হয়ে একক মানুষকে সমাজবিচ্ছিন্ন প্রাণীতে রূপান্তরিত করতে চলেছে ঠিক তখনই নবীন প্রজন্মের উদ্যম-সাহস আবারও নতুন করে গড়ে তুলতে চলেছে সঙ্ঘবদ্ধ সমাজ। পাশাপাশি কৃষকদের সঙ্ঘবদ্ধ অবস্থান আন্দোলন দেখিয়ে দিচ্ছে মানুষের সম্মিলিত প্রয়াসেই এগিয়ে চলে সমাজ-সভ্যতা। সামাজিক দূরত্বের বার্তা উপেক্ষা করে শারীরিক দূরত্ব রক্ষা করেই পারস্পরিক সহযোগিতায় গড়ে ওঠে চিরকালীন মানব সমাজ।