৫৮ বর্ষ ৩৩ সংখ্যা / ২ এপ্রিল, ২০২১ / ১৯ চৈত্র, ১৪২৭
দুর্যোগের অন্ধকার থেকে মুক্তি চায় বাংলা
সুপ্রতীপ রায়
ভূমিকা
গত ১০ বছর তৃণমূল রাজ্য চালাচ্ছে। তৃণমূল জমানায় প্রতিদিন গণতন্ত্র আক্রান্ত হয়েছে। আইনের শাসন নেই রাজ্যে। তৃণমূল সরকার-সমাজবিরোধী-পুলিশ সবাই মিলে গণতন্ত্রকে হত্যা করে চলেছে। তৃণমূল আমলে অপরাধীরা সবচেয়ে নিরাপদে আছে। গণতন্ত্রের উপর আক্রমণ প্রতিরোধে বিজেপি’র কোনো ভূমিকা ছিল না।
পুলিশকর্মীদের নিরাপত্তা নেই
তৃণমূলের রাজত্বে পুলিশ কর্মীদের নিরাপত্তা নেই। শাসকদলের নেতা, কর্মীদের হাতে পুলিশকর্মীরা বারেবারে আক্রান্ত হয়েছেন, অপদস্ত হয়েছেন।
২০১৩ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি গার্ডেনরিচে হরিমোহন ঘোষ কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচন চলাকালীন কর্তব্যরত এসআই তাপস চৌধুরিকে গুলি করে খুন করে তৃণমূলী গুণ্ডাবাহিনী। এই ঘটনায় প্রধান অভিযুক্তের নাম তৃণমূল নেতা মহম্মদ ইকবাল (মুন্না)।
২০১৪ সালের ২৮ জুলাই দুবরাজপুরে (বীরভূম) তৃণমূলী সমাজবিরোধীদের ছোঁড়া বোমায় মারাত্মকভাবে জখম হন দুবরাজপুর থানার এসআই অমিত চক্রবর্তী। শেষ পর্যন্ত আহত অমিত চক্রবর্তী মারা যান। ২০১৫ সালের ১০ নভেম্বর কোচবিহার জেলার কোতোয়ালি থানার এএসআই রঞ্জিত পাল জুয়ার ঠেকে তল্লাশি চালাতে গেলে তৃণমূলের গুণ্ডাবাহিনী তাঁকে আক্রমণ করে। রঞ্জিত পালকে নির্মমভাবে খুন করা হয়।
২০১৬ সালের ৮ জানুয়ারি মহিষাদল থানার পুলিশকর্মী নবকুমার হাইতকে দুষ্কৃতীরা গুলি করে খুন করে। কলকাতার হরিদেবপুরের সোদপুর দক্ষিণ পাড়ার হোমগার্ড রাজু গোয়ালার সার্ভিস রিভলবার কেড়ে গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয়।
অস্ত্র কারখানা, বোমা তৈরির কারখানা বেড়ে চলেছে
রাজ্যজুড়ে অস্ত্র কারখানা, বোমা তৈরির কারখানা চলছে। বারুদের স্তূপে বাংলা। গত দশ বছরে পশ্চিমবাংলার বিভিন্ন জেলায় বোমা তৈরির কারখানায় বিস্ফোরণে প্রচুর মানুষ নিহত ও আহত হয়েছেন। খাগড়াগড় বা পিংলায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের পর খোদ মুখ্যমন্ত্রী দু’টি ঘটনাকেই খাটো করে দেখেছিলেন। তৃণমূলের মদতেই রাজ্যে চলছে বন্দুক, বোমার কারখানা। বিগত বছরগুলিতে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গাতে অস্ত্র ভাণ্ডার গড়ে উঠেছে।
নিরাপদে তোলাবাজরা
তৃণমূলের আমলে তোলাবাজি শিল্পের পর্যায়ে পৌঁছেছে। শিল্পাঞ্চলে তোলাবাজরা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। তৃণমূলী তোলাবাজদের জুলুমে প্রচুর শিল্প বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তোলাবাজদের দাপটে একাধিক চটকল বন্ধ হয়ে গিয়েছে। আসানসোল-দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চল, হলদিয়া শিল্পাঞ্চলে তোলাবাজির জেরে বিভিন্ন কারখানা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বারাকপুর শিল্পাঞ্চলেও একই অবস্থা। তোলাবাজির মুখে কাজ হারাচ্ছেন শ্রমিকরা। তৃণমূলকে তোলা না দিলে কাজ থেকে বিদায় দেওয়া হচ্ছে।
ক্রমবর্ধমান সিন্ডিকেটরাজ
পশ্চিমবাংলা জুড়ে রমরমা সিন্ডিকেট ব্যবসায়। তৃণমূলের সিন্ডিকেট কর্মীরা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই গুলির লড়াইয়ে অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ। উত্তপ্ত রাজারহাট-নিউটাউন। নতুন বাড়ি তৈরি করা থেকে বাড়ি সংস্কার কোনো কাজই তৃণমূলীদের পরিচালিত সিন্ডিকেট ছাড়া করা যাবে না। সিন্ডিকেট বিবাদে হরিদেবপুরের কবরডাঙা, রাজাবাজারের নারিকেলডাঙা নর্থ রোড, এন্টালি সহ বিভিন্ন জায়গায় রক্ত ঝরেছে। পুলিশ নীরব। শাসকদল-সিন্ডিকেট বোঝাপড়ায় আইনের শাসন বিদায়।
আইএসআই এজেন্ট তৃণমূলে
২০১৫’র নভেম্বর মাসে আইএসআই চর সন্দেহে গোয়েন্দাদের কাছে ধরা পড়ে তৃণমূলের তিন কর্মী। এরা হলেন এরশাদ হায়দার আনসারি, আশফাক আনসারি, মহম্মদ জাহাঙ্গির। এরশাদ আনসারি ও আশফাক আনসারির বিরুদ্ধে পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই এজেন্ট হিসাবে কাজ করার অভিযোগ ছিল।
গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে
দিনের পর দিন ছাত্র সংসদ নির্বাচন, স্কুল পরিচালন সমিতি, বিভিন্ন সমবায় নির্বাচন বন্ধ। পঞ্চায়েত নির্বাচন প্রহসনে পরিণত করা হয়েছে। ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনরত ছাত্রদের বিরুদ্ধে পুলিশ হামলা চালিয়েছে। আইন অমান্য আন্দোলন থেকে গ্রেপ্তারের পরে পুলিশি হেফাজতে মৃত্যু হয়েছে ছাত্রনেতা সুদীপ্ত গুপ্তের। মুখ্যমন্ত্রী এই ঘটনাকে বলেছিলেন ‘ছোট্ট ঘটনা’। রায়গঞ্জ কলেজের অধ্যক্ষকে তৃণমূল কর্মীরা নিগ্রহ করেছিল। আর এই ঘটনাকে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘ছোট ছেলেদের কাজ’। গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে ভাঙতে বিভিন্ন সময় গুলি চালিয়েছে পুলিশ।
গত এক দশকে কয়েক হাজার সিপিআই(এম) কর্মীকে আক্রমণ করে আজীবন পঙ্গু করে দেওয়া হয়েছে। রাজনৈতিক কারণে হাজার হাজার মানুষ ঘরছাড়া হয়েছেন। সিপিআই(এম) পার্টি অফিস, বিভিন্ন গণসংগঠনের অফিস দখল করা হয়েছে। বিপুল পরিমাণ টাকা জরিমানা হিসাবে আদায় করেছে তৃণমূল। হাজার হাজার সিপিআই(এম) কর্মীকে মিথ্যা মামলায় জড়ানো হয়েছে।
তৃণমূলী শাসনে বিপন্ন গ্রাম - বিপদে কৃষক
তৃণমূলের শাসনে গ্রামের মানুষের জীবনে নাভিশ্বাস উঠেছে। বিজেপি সরকারের নীতিতে চাষের খরচ বাড়ছে। পশ্চিমবাংলায় ফসলের দাম নেই। তার উপর ফড়ে দালালদের দাপটে কৃষক বিপদে। কৃষক আত্মহত্যা বাড়ছে। যদিও আত্মঘাতী কৃষক পরিবারগুলিকে এক পয়সাও সহায়তা দেয়নি রাজ্য সরকার। অবশ্য সরকারি অর্থে মোচ্ছব চলছে।
লুট আর লুট
তৃণমূলী আমলে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয়েছে। দুর্যোগে ফসল নষ্ট হয়েছে। কিন্তু গ্রামের প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা সরকারি ক্ষতিপূরণ থেকে বঞ্চিত। স্থানীয় তৃণমূলী নেতারা ক্ষতিপূরণের টাকা লুটপাট করে নেয়। বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পেতে গেলে তৃণমূলীদের কাটমানি দিতে হয়। পঞ্চায়েতে কাজের নামে টাকা দেদার লুট হচ্ছে। দশ বছর ধরে সরকারের টাকা লুটে নিয়েছে তৃণমূলীরা। এই লুটেরার রাজত্বের অবসান চাই।
ধান কেনার সরকারি ব্যবস্থা বিপর্যস্ত
যেভাবে চাষের খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে তাতে ফসল বিক্রি করে লাভ থাকে না। ধানের দাম নেই। ফড়ে-মহাজনদের রাজত্ব চলছে। মুখ্যমন্ত্রী কৃষকদের জন্য নানা কথা বললেও কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনার সরকারি ব্যবস্থাই বিপর্যস্ত। এমনিতেই কৃষিকাজের সুযোগ কমছে। ফসলের দাম না পেয়ে জমির মালিকরা অনেকেই চাষবাস কমিয়ে দিয়েছেন। গরিব চাষির দিকে বর্তমান রাজ্য সরকারের কোনো নজর নেই। কৃষক-খেতমজুরদের অবস্থা গত ১০ বছরে খারাপ হয়েছে। ১০০ দিনের কাজও কমেছে।
সরকার বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রচার করে ‘ধান বিক্রির জন্য কৃষক মান্ডিতে যাও’। কিন্তু টোকেন না হলে ধান বিক্রি হয় না। পঞ্চায়েতে তৃণমূলী মাতব্বরেরা প্রকৃত চাষীদের টোকেন দেয় না। ধান বিক্রি নিয়ে কালোবাজারি বেড়েছে। আসল গরিব চাষিদের বঞ্চিত করে বড়ো বড়ো ধানচাষিদের ধান বিক্রির সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। ফসলের লাভজনক দাম নেই। রাজ্য সরকার কৃষকদের দেখে না। যদিও মুখে মা-মাটি-মানুষের স্লোগান।
কৃষক বিরোধী সরকার
গ্রামের অবস্থা শোচনীয়। কৃষক, খেতমজুর, ভাগচাষিদের অবস্থা সম্পর্কে রাজ্য সরকার উদাসীন। কৃষকদের সঙ্গে রাজ্য সরকার প্রহসন করছে। ধান কেনার নাম করে মিল মালিক আর তৃণমূলের নেতাদের অর্থ রোজগারের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। আলুচাষিরা বিপদে পড়লে মুখ্যমন্ত্রী নীরব থাকেন। আলুচাষিদের বাঁচাতে বামফ্রন্ট সরকার সরাসরি চাষির কাছ থেকে আলু কিনেছে। কৃষক অভিজ্ঞতায় বুঝছেন বামফ্রন্ট সরকার অনেক ভাল ছিল। চাষিরা বিপদে পড়লে বামফ্রন্ট সরকার পাশে দাঁড়াত। বাম আমলে কৃষকরা নির্ভয়ে তাঁদের সমস্যা প্রশাসনকে জানাতে পারতেন। কিন্তু তৃণমূল সরকারকে দুঃখের কথা জানানো যায় না। পুলিশ আর মস্তান দিয়ে হুমকি দেওয়া হয়। তৃণমূলের দালাল-ফড়েরাই সব নিয়ন্ত্রণ করে।
চাষির কাছ থেকে জমি কেড়ে নেওয়া হচ্ছে
গরিব চাষিরা যুগ যুগ ধরে যে জমিতে চাষ করে আসছেন তা কেড়ে নেওয়ার চক্রান্ত হয়েছে গত কয়েক বছরে। জমির পরচা থাকলেও জমি থেকে উচ্ছেদ করার ভুরি ভুরি নজির আছে। অন্যায়ভাবে অনেক কৃষককে উচ্ছেদ করার নোটিশ পাঠিয়েছে বিএলআরও। জমির দাবি যারা করছে তারা কেউ জমির মালিক নয়। জমি কেড়ে নেওয়ার চক্রান্তে লিপ্ত জমি মাফিয়ারা। এরাই স্থানীয় তৃণমূলের নেতা। ভালো নেই বাংলার কৃষকরা। ক্ষমতায় এসেই পাট্টার জমি কেড়ে নেওয়ার চক্রান্ত করেছিল তৃণমূলীরা।
গরিব চাষিদের বঞ্চনা করা এখন স্বাভাবিক ঘটনা
তৃণমূল আমলে চাষিদের যে অবস্থা তৈরি হয়েছে তাতে বেঁচে থাকা কঠিন। ফসলের দাম নেই, সমস্ত কৃষিজ উপকরণের দাম দিন দিন বাড়ছে। চাষিদের চরম বঞ্চনার মুখোমুখি হতে হয়েছে তৃণমূলের আমলে। আলু চাষিদের বিপদে ফেলে আলু বন্ড আগে থেকে শাসকদলের নেতাদের নিয়ে নেওয়া স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। আদৌ যারা আলু চাষ করেনি তারাই বন্ড নিয়ে চড়া দামে বিক্রি করেছে। প্রকৃত ছোটো চাষি আলু রাখার জায়গা পায় না। দশ বছরে সেচের জন্য সরকার কিছু করেনি। কৃষি দপ্তর চাষির জন্য কিছুই করে না। সরকারিভাবে যেসব কৃষি সরঞ্জাম আসে তা শাসকদল ইচ্ছামতো বিলি করে। গরিব চাষিরা সব কিছু থেকে বঞ্চিত।
চাষে ধারাবাহিক লোকসান চলছে। সারের দাম বেড়েছে, দাম বেড়েছে জলের, হালের। শুধু দাম নেই ফসলের। বামফ্রন্ট আমলে বরোচাষ করে বিঘা প্রতি ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা লাভ হতো। এখন শুধুই লোকসান চলছে। উন্নত মানের বীজের দাম বেড়ে চলেছে। সরকারি মিনিকিট নিয়ে স্বজনপোষণ এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে। মিনিকিট কে কে পাবে তা আগেই ঠিক হয়ে থাকে। শাসকদলের কর্মীরাই সব পান।
কৃষকদের জন্য টাকা নেই
উৎসব, ক্লাবের দান খয়রাতিতে দেদার অর্থ বিলি হলেও কৃষকদের জন্য সরকারি সাহায্য নেই। গত ১০ বছরে যেভাবে সার-বীজের দাম বেড়েছে, সেই অনুপাতে কৃষক ফসলের দাম পান না। বাজারে প্রতিদিন জিনিসের দাম বেড়ে চলেছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত চাষি সাহায্য পান না। অবশ্য ক্লাবগুলিকে দেদার অর্থ সাহায্য চলছে। সরকারি সাহায্যের নামে যা আসে তার সবগুলিই তৃণমূলীরা নিয়ে নেয়। বামফ্রন্ট সরকারের আমলে কেপিএস-রা গ্রামে নিয়মিত আসতেন। তাদের সঙ্গে কৃষকরা কথা বলতে পারতেন। এখন কেপিএস-রা গ্রামে আসলেও কৃষকদের কথা বলার সুযোগ নেই। কেপিএস-রা শাসকদলের নেতাদের বাড়িতে বসে মিনিকিট, সরকারি সাহায্য নিয়ে তালিকা তৈরি করেন। বিজেপি সরকার কৃষির উপর সরকারি ভরতুকি তুলে দিচ্ছে, কর্পোরেটদের জন্য কর ছাড় দিচ্ছে, কিন্তু গরিব কৃষকদের বেলায় সাহায্য নেই। আসলে দুই সরকারই চাষিদের সঙ্গে প্রতারণা করছে।
দুর্নীতি আর দুর্নীতি
তৃণমূল আর দুর্নীতি সমার্থক শব্দে পরিণত হয়েছে। তৃণমূল নেত্রীকে জবাব দিতে হবে তাঁর ছবি কেন ১ কোটি ৮৬ লক্ষ টাকায় কিনেছিলেন সারদা কর্তা? কেন রাতের অন্ধকারে ডেলোতে বসে সভা করতে হয়েছে প্রতারক চিট ফান্ডের মালিকের সঙ্গে? গরিব মানুষের টাকা লুটের কেলেঙ্কারিতে যুক্ত তৃণমূলের নেতারা।
তৃণমূলের সবস্তরের নেতাদের গত দশ বছরে আঙুল ফুলে কলা গাছ। এবারের নির্বাচনে নন্দীগ্রাম - একটি নজরকাড়া কেন্দ্র। সংবাদমাধ্যম বলছে ‘হাইভোল্টেজ’ কেন্দ্র। নন্দীগ্রামে তৃণমূলের সৈনিক শেখ সুফিয়ান। তৃণমূলের নন্দীগ্রাম দখলের কয়েক বছরের মধ্যেই সুফিয়ানের বাড়ি রাজপ্রাসাদে পরিণত হয়। মুখ্যমন্ত্রী এ নিয়ে নীরব।
সারদা, ত্রিফলা, এসজেডিএ কেলেঙ্কারি থেকে গম বীজ কেলেঙ্কারি, প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষায় কেলেঙ্কারি, সবুজ সাথী প্রকল্পের বিনা টেন্ডারে লক্ষ লক্ষ সাইকেল কেনা হয়েছে। দুর্নীতি আর তৃণমূল সমার্থক। বাংলার মানুষের নিশ্চয় মনে আছে খোদ কলকাতা শহরে ‘আমরা সবাই চোর’ লেখা প্ল্যাকার্ড ঝুলিয়ে মিছিল করেছিলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী। আসলে তৃণমূল দলটাই চোরেদের দল। চোরেদের অনেকে আজ রাজ্য বিজেপি’র মুখ। ‘‘চুরি হয়েছে কোটি কোটি, সব খেয়েছে হাওয়াই চটি’’ - এটাই বাস্তব।
‘লোকায়ুক্ত’র অপমৃত্যু
বামফ্রন্ট সরকার লোকায়ুক্ত গঠন করেছিল। ২০০৬ সালে ১ ফেব্রুয়ারি বামফ্রন্ট সরকারের আমলে কাজ শুরু করেছিল এই সংস্থা। লোকায়ুক্তের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হয়েছিলেন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি সমরেশ ব্যানার্জি। ২০১২ সালে তাঁর মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। কিন্তু তারপর রাজ্য সরকার লোকায়ুক্তের কোনো চেয়ারম্যান নিয়োগ করেনি।
খোদ মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে লোকায়ুক্তে অভিযোগ জানানোর সুযোগ ছিল। লোকায়ুক্তের আওতায় কর্পোরেশনগুলির মেয়র, ডেপুটি মেয়র সহ কাউন্সিলর, পুরসভাগুলির চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান সহ নির্বাচিত প্রতিনিধিরা, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, সহসভাপতি সহ নির্বাচিত সদস্য, গ্রাম প্রধান, উপ-প্রধান সহ নির্বাচিত সদস্যরা ছিলেন। সমবায় সমিতির সদস্য, বিশ্ববিদ্যালয়গুলির পরিচালন সমিতির সদস্যরাও এর আওতায় ছিলেন।
লোকায়ুক্তে রাজ্যের যে কোনো মানুষই সরাসরি অভিযোগ জানাতে পারতেন। বামফ্রন্ট সরকারের আমলে ভবানী ভবনের তিন তলায় লোকায়ুক্তের কার্যালয়ও তৈরি হয়েছিল। লোকায়ুক্ত আইনে স্পষ্ট জানানো হয়েছিল - নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে লোকায়ুক্ত নিজে স্বাধীন তদন্ত করবে, রিপোর্ট পেশ করবে।
কথা-শেষের কথা
আসলে তৃণমূল কংগ্রেসের নির্বাচিত সদস্যরা তোলা বাবদ টাকা নেন, ঘুষ বাবদ টাকা নেন। খোদ পুলিশই তৃণমূলকে ভয় পায়। আবার নব্য-বিজেপি নেতারা দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত। দুর্নীতির সঙ্গে মুকুল রায়ের যুক্ত থাকার একাধিক অভিযোগ আছে। অভিযোগ নেই বামফ্রন্ট নেতৃত্বের বিরুদ্ধে।
দুর্যোগের অন্ধকার বাংলায় নেমে এসেছে। দুর্যোগের অন্ধকার থেকে মুক্তি চাইছে বাংলা। সংযুক্ত মোর্চা সরকারই পারবে বাংলাকে অন্ধকার থেকে আলোয় নিয়ে যেতে।