E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৬০ বর্ষ ১৬ সংখ্যা / ২ ডিসেম্বর, ২০২২ / ১৫ অগ্রহায়ণ, ১৪২৯

গ্রাম জাগিয়ে, চোর তাড়িয়ে অধিকার বুঝে নেবার দৃপ্ত মিছিলে আলোড়িত বাংলার গ্রামীণ জনপদ


নিজস্ব সংবাদদাতাঃ ‘‘গ্রাম জাগাও, চোর তাড়াও, বাংলা বাঁচাও’’ - স্লোগানে মুখরিত গ্রামবাংলার পথ-প্রান্তর। তৃণমূলী শাসনে লুঠ, দুর্নীতি আর কাটমানির পঞ্চায়েত দূর করে মানুষের পঞ্চায়েত গড়ার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে এখন রাজ্যের গ্রামীণ এলাকার সর্বত্র চলছে শ্রমজীবী গরিব মানুষের পদযাত্রা। সারা ভারত কৃষক সভা, সিআইটিইউ এবং সারা ভারত খেতমজুর ইউনিয়নের আহ্বানে এই পদযাত্রায় মানুষ যেমন পঞ্চায়েতকে লুঠের আখড়া বানানোর তৃণমূলী অপকীর্তির বিরুদ্ধে সরব হচ্ছেন, তেমনি স্তব্ধ হয়ে যাওয়া পঞ্চায়েতের উন্নয়নকে সচল করা, একশো দিনের কাজ এবং বকেয়া মজুরির দাবি, ফসলের ন্যায্য মূল্য, বিধবাভাতা-বার্ধক্যভাতা-ইন্দিরা আবাস যোজনার মতো সহায়তা প্রকল্পের দুর্নীতি বন্ধ করে সেগুলির যথাযথ রূপায়ণ, গ্রামীণ যুবক-যুবতীর কর্মসংস্থান সহ গ্রামের সার্বিক উন্নয়নের দাবি সোচ্চারে তুলে ধরছেন।

গোটা নভেম্বর মাস ধরে চলছে এই পদযাত্রা। বর্তমানে এই কর্মসূচির অন্তিমলগ্নে রাজ্যজুড়ে পদযাত্রা, মিছিল, সভাকে ঘিরে মানুষের উৎসাহ-উদ্দীপনা ও অংশগ্রহণ ব্যাপকতা পেয়েছে। বিভিন্ন জেলায় পুরুষদের পাশাপাশি মহিলাদের অংশগ্রহণও লক্ষণীয়ভাবে চোখে পড়ছে। বিশেষ করে আদিবাসী ও জনজাতি অধ্যুষিত অঞ্চলে মহিলারা তাঁদের চিরাচরিত সাজে মাথায় কলসি নিয়ে এবং পুরুষরা ধামসা-মাদল-নাকাড়া ইত্যাদি নিয়ে পদযাত্রায় পা মিলিয়েছেন। বিভিন্নস্থানে এই পদযাত্রাকে কেন্দ্র করে নানা আকৃতির সভা-সমাবেশে যোগ দিয়েছেন বিপুল অং‍‌শের মানুষ। সবমিলিয়ে মানুষের প্রতিবাদ আর অধিকার আদায়ের দাবিতে মিছিল, পদযাত্রার মধ্য দিয়ে গ্রামাঞ্চল আলোড়িত হচ্ছে, সৃষ্টি হয়েছে উৎসবের আবহ।

রাজ্যজুড়ে গ্রামীণ এলাকায় খেটে-খাওয়া মানুষের প্রতিবাদ আর অধিকার রক্ষার দাবিতে মিছিলের অঙ্গ হিসাবে সম্প্রতি আসানসোলে গ্রাম থেকে শহরের প্রতিটি বুথে এ মিছিল পদযাত্রা হয়েছে। আসানসোল গির্জামোড় থেকে শুরু হওয়া বামপন্থী গণ-সংগঠনগুলির ডাকে ‘গ্রাম জাগাও, চোর তাড়াও ‘বাংলা বাঁচাও’ স্লোগানে মুখরিত মিছিল শেষ হয় পুরানো রামকৃষ্ণ মিশন নজরুল মূর্তির সামনে গিয়ে। এই মিছিলে পা মেলান সহস্রাধিক মানুষ। মিছিলে নেতৃত্ব দেন শ্রমিক আন্দোলনের নেতা গোরাঙ্গ চ্যাটার্জি, আভাস রায়চৌধুরী, পার্থ মুখার্জি, জাহানারা খান, জিকে শ্রীবাস্তব প্রমুখ। এর আগে রানিগঞ্জের চাপুই, রতিবাটি এলাকায় কয়লাখনি বাঁচানোর দাবিতে এবং তৃণমূলের লুট, দুর্নীতির বিরুদ্ধে মিছিল সংগঠিত হয়েছে।

সম্প্রতি বাঁকুড়া জেলার বড়জোড়া ব্লকের বাঁকাদহ, জোড়া, বিষ্ণুপুর ব্লকের বাঁকুড়া ১ নম্বর ব্লকের কালপাথার সহ বিভিন্ন গ্রামে ‘কাজ চাই, মজুরি চাই’ ‘দুর্নীতিমুক্ত পঞ্চায়েত চাই’ দাবি তুলে মিছিল সংগঠিত হয়েছে।

গত ২৭ নভেম্বর সন্ত্রাস কবলিত হাওড়ার ডোমজুড়ের বাঁকড়ায় দীর্ঘ কয়েক বছর পর লালঝান্ডার দৃপ্ত মিছিল সংগঠিত হয়েছে। পদযাত্রা চলাকালীন এলাকার মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে এসে সংবর্ধিত করেন পদযাত্রীদের। এই পদযাত্রায় নেতৃত্ব দেন মহম্মদ সেলিম, শ্রীদীপ ভট্টাচার্য, দিলীপ ঘোষ, পরেশ পাল, আইনজীবী সব্যসাচী চ্যাটার্জি, ইমতিয়াজ আহমেদ প্রমুখ গণ-আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ। এদিন পদযাত্রা হয়েছে বাঁকড়ার পাশাপাশি আমতার চন্দ্রপুরেও।

সম্প্রতি পূর্ব মেদিনীপুর জেলার এগরা, রামনগর ও পটাশপুরের গ্রামে গ্রামে সহায়ক মূল্যে ধান কেনা, জমি থেকে বর্গাদার, পাট্টাদার উচ্ছেদ বন্ধ করা সহ তৃণমূলের লুঠপাটের বিরুদ্ধে সোচ্চার পদযাত্রা সংগঠিত হয়েছে।

৩০ নভেম্বর গড়বেতার খড়কুশমা, করঙ্গা, ধোবাগেড়িয়া সহ ৮টি বুথের ১৩টি আদিবাসী প্রধান গ্রামে লাল ঝান্ডার সারা জাগানো মিছিল হয়। মিছিলে নেতৃত্ব দেন কৃষক আন্দোলনের নেতা সুশান্ত ঘোষ।

এভাবেই রাজ্যের উত্তর থেকে দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে লালঝান্ডার দৃপ্ত মিছিল-পদযাত্রায়‌ মুখরিত হয়েছে গ্রামীণ জনপদ। চোর তাড়াও, বাংলা বাঁচানোর আহ্বান ও অধিকার বুঝে নেবার দৃঢ় মনোভাব নিয়ে সুদীর্ঘ পথ পরিক্রমা করছেন গ্রামবাংলার মানুষ। তাঁদের এই অকুতোভয় লড়াইকে কুর্ণিশ জানিয়ে কলকাতা মহানগরীর বুকে বর্ণময় পদযাত্রা সংগঠিত হয়েছে। গত ২৭ নভেম্বর যাদবপুরে লালঝান্ডার এমনই এক বর্ণময় পদযাত্রায় পা মেলান হাজারো মানুষ। মিছিল হয়েছে বেহালা সহ অন্যত্রও। মিছিল হয়েছে হাও‌ড়ার শহরাঞ্চলেও।