৬০ বর্ষ ১৬ সংখ্যা / ২ ডিসেম্বর, ২০২২ / ১৫ অগ্রহায়ণ, ১৪২৯
সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য ২৯তম সম্মেলন সমাপ্ত
শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়
সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির রাজ্য সম্মেলনের প্রকাশ্য সমাবেশে বক্তব্য রাখছেন বৃন্দা কারাত।
সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য ২৯তম সম্মেলন হুগলি জেলার চন্দননগরে ২৯ নভেম্বর থেকে ১ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয়।এই সম্মেলন থেকে কেন্দ্রের বিজেপি-আরএসএস এবং রাজ্যের তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের গণতন্ত্র বিরোধী, স্বৈরাচারী নীতির বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান ধ্বনিত হয়েছে। সম্মেলন আহ্বান জানিয়েছে, উগ্র ধর্মীয় মৌলবাদ, জাতপাত, কুসংস্কার ও ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে এবং নারী নিরাপত্তার দাবিতে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলার ডাক দিয়েছে এই সম্মেলন। এছাড়াও সম্মেলন মঞ্চ থেকে আহ্বান জানানো হয়েছে, জনবিরোধী প্রতিক্রিয়াশীল স্বৈরাচারী এবং সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে বামপন্থী গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ চেতনাসম্পন্ন মহিলাদের নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। একইসঙ্গে মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে ও খাদ্য সুরক্ষার দাবিতে আন্দোলন গড়ে তোলার কথাও গুরুত্বের সঙ্গে উল্লেখ করেছে এই সম্মেলন।কর্মসংস্থানের দাবিতে আন্দোলনকে তীব্র করারও ডাক দিয়েছে এই সম্মেলন।
সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির রাজ্য ২৯তম সম্মেলন থেকে আগামীদিনে সংগঠনের কাজ ও আন্দোলন-সংগ্রাম পরিচালনার জন্য ১১৯ জনের রাজ্য কমিটি সর্বসম্মতিতে নির্বাচিত হয়েছে।রাজ্য সম্পাদিকামণ্ডলী গড়া হয়েছে ৩২ জনকে নিয়ে।সংগঠনের রাজ্য সভানেত্রী পদে সর্বসম্মতিক্রমে নির্বাচিতা হয়েছেন জাহানারা খান, সম্পাদিকা হিসেবে পুনর্নির্বাচিতা হয়েছেন কনীনিকা ঘোষ এবং কোষাধ্যক্ষা হয়েছেন স্বপ্না ভট্টাচার্য।
সম্মেলনে মোট ২৫টি প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে।
২৯ নভেম্বর প্রকাশ্য সমাবেশের মধ্যদিয়ে সম্মেলনের সূচনা হয়।
সম্মেলনের শুরুতে পতাকা উত্তোলন করেন সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির বিদায়ী রাজ্য সভানেত্রী অঞ্জু কর। এরপর শহিদ বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান নেত্রীবৃন্দ। প্রকাশ্য সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বৃন্দা কারাত, সংগঠনের সাধারণ সম্পাদিকা মরিয়ম ধাওয়ালে, সভানেত্রী মালিনী ভট্টাচার্য, দেবলীনা হেমব্রম, আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য, সংগঠনের রাজ্য সম্পাদিক কনীনিকা ঘোষ, মহিলা আন্দোলনের নেত্রী দীপ্তি চ্যাটার্জি প্রমুখ। সভা পরিচালনা করেন অঞ্জু কর। উপস্থিত ছিলেন রেখা গোস্বামী, মিনতি ঘোষ, মিতালী কুমার সহ অন্যান্য নেত্রীবৃন্দ।
চন্দননগরের ভবানী মুখার্জি স্মৃতি ক্রীড়াঙ্গনে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে নেত্রীবৃন্দ বলেন, দেশের কোথাও মেয়েরা ভালো নেই। নারীরা ভালো না থাকলে গণতন্ত্র কখনো ভালো থেকেনা। বিপন্ন হচ্ছে দেশের সংবিধান। হিন্দু, মুসলমান, দলিত, আদিবাসী, ঠাকুর পরিচয়ের ভিত্তিতে মানুষকে ভাগ করার চেষ্টা চলছে। দীর্ঘ লড়াই করে অর্জিত অধিকার ছিনিয়ে নেবার ষড়যন্ত্রকে রুখতে হবে। গড়ে তুলতে হবে প্রতিরোধ।
এই সম্মেলনে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মোট ৪৬০ জন প্রতিনিধি যোগ দেন। প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে রবীন্দ্র ভবনে। সম্মেলনকে কেন্দ্র করে চন্দননগরের নামকরণ করা হয়েছিল বিভা ঘোষগোস্বামী নগর এবং সম্মেলন মঞ্চ নামাঙ্কিত হয়েছিল সংগঠনের প্রয়াত নেত্রী সাধনা মল্লিকের নামে। সম্মেলন উদ্বোধন করেন সংগঠনের সর্বভারতীয় সম্পাদিকা মরিয়ম ধাওয়ালে।
সম্মেলনকে অভিনন্দন জানিয়ে বক্তব্য রেখেছেন অগ্রগামী মহিলা সমিতির পক্ষে ডলি রায়, নিখিলবঙ্গ মহিলা সমিতির নেত্রী ছায়া রায়, পশ্চিমবঙ্গ মহিলা সমিতির নেত্রী শ্যামশ্রী দাস। এছাড়াও বিভিন্ন ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের পক্ষে অভিনন্দন সূচক বক্তব্য রাখেন সিআইটিইউ’র রাজ্য সভাপতি সুভাষ মুখোপাধ্যায়, এসএফআই’র রাজ্য সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্য প্রমুখ।
উদ্বোধনী পর্বের পর বিদায়ী রাজ্য সম্পাদিকা কনীনিকা ঘোষ খসড়া রাজনৈতিক-সাংগঠনিক প্রতিবেদন পেশ করেন।
এছাড়া সম্মেলনে বিভিন্ন বিষয়ের ওপর ৬টি কমিশন পেপার উত্থাপিত হয়। সম্মেলনে উপস্থিত প্রতিনিধিরা রাজনৈতিক-সাংগঠনিক প্রতিবেদন ও কমিশন পেপারের বিষয়ের উপর আলোচনায় অংশ নেন।
(সম্মেলনের বিস্তারিত প্রতিবেদন আগামী সংখ্যায়।)