৬০ বর্ষ ১৬ সংখ্যা / ২ ডিসেম্বর, ২০২২ / ১৫ অগ্রহায়ণ, ১৪২৯
আরটিআই আইন নিয়ে বিজেপি’র ভণ্ডামি
পলাশ দাশ
আরটিআই শব্দটি এখন আর গ্রাম, শহর কোথাও খুব অপরিচিত শব্দ নয়। পঞ্চায়েত, পৌরসভা, স্কুল, কলেজ থেকে সরকারি নানা অপব্যাপারে মানুষের নানান অভিযোগ, ক্ষোভ আছে। চোখের সামনে অন্যায়, দুর্নীতি, বঞ্চনা, ক্ষমতার ব্যবহার দেখে একটা বিহিত করতে চান অনেকেই। সত্যকে প্রকাশ্যে আনতে আরটিআই আইনের ব্যবহার বাড়ছে সর্বত্র। দুর্নীতি রোধ ও ক্ষমতার অপব্যবহার বন্ধ করা আরটিআই-র প্রধান লক্ষ্য। সাধারণ মানুষের কাছে এই আইন এক বিরাট অস্ত্র হিসেবেই উপস্থিত হয়। আইন প্রয়োগের শুরু থেকে ১৭ বছর অতিক্রান্ত। এই আইনটিকে ক্রমাগত দুর্বল থেকে দুর্বলতর করার প্রয়াস পরিকল্পিতভাবে চালানো হচ্ছে। কিন্তু করা এই আইনকে লঘু করছে? কারা ষড়যন্ত্রকারী?
তথ্যের অধিকার আইন
সংবিধানে বর্ণিত কথা বলার অধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতার মধ্যেই নিহিত আছে তথ্য জানার অধিকার। ভারতীয় সংসদ ২০০৫ সালে তথ্যের অধিকার আইন (আরটিআই) গ্রহণ ও প্রয়োগ শুরু করে। এটা একটি ল্যান্ড মার্ক আইন কেউবা বলেন ‘‘সানসাইন’’ আইন। সরকারি কাজে স্বচ্ছতা, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার রোধ করতে তথ্যের অধিকার আইন আনা হয়। মানুষের ক্ষমতায়ন ও গণতন্ত্রের প্রসারের ক্ষেত্রেও এই আইন উল্লেখযোগ্য। যে কোনো আবেদনকারী নির্দিষ্ট কোনো তথ্য, সরকারি দপ্তর সম্পর্কে বা কোনো সরকারি কর্মচারী, অফিসার, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির সম্পর্কে জানতে চাইতে পারেন। কেন্দ্রীয় বা রাজ্য তথ্য কমিশনার যদি বোঝেন এই তথ্যের সঙ্গে বৃহত্তর জনস্বার্থ যুক্ত তাহলে তিনি সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও সরকারি ব্যক্তিকে তথ্য জানাতে নির্দেশ দিতে পারেন। এমনকী তথ্য না জানালে জরিমানার ব্যবস্থাও আইনে আছে। এমন তথ্য যা উন্মোচিত হওয়া দেশের নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা বা দেশের স্বার্থের পক্ষে ক্ষতিকর তা বাদে, যে কোনো তথ্য জানার অধিকার এই আইনে মানুষকে দেওয়া হয়েছে। তথ্য কমিশনকে স্বাধীনতা ও যথেষ্ট ক্ষমতা না দিলে এই আইন কার্যকরী হতে পারে না। কেন্দ্রীয় তথ্য কমিশন একজন মুখ্য কমিশনারের নেতৃত্বে ১০ জন তথ্য কমিশনারকে নিয়ে গঠিত হয়। কমিশনাররা নিযুক্ত হন রাষ্ট্রপতির দ্বারা, নির্দিষ্ট ৫ বছরের মেয়াদের জন্য। মুখ্য নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারদের সমান বেতন কাঠামো নির্দিষ্ট করা হয় তথ্য কমিশনারদের জন্য। অচিরেই এই আইন জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। গরিব মানুষ মাত্র ১০ টাকায় তথ্য আইনে আবেদন করার সুযোগ পাওয়ায় পঞ্চায়েত, পৌরসভা সহ রাজ্য ও কেন্দ্র সরকারের নানা প্রকল্পে বঞ্চিত, হয়রান হওয়া মানুষ এবার সত্য জানতে চাওয়া শুরু করলেন। ১০০ দিনের কাজ, আবাস যোজনার অর্থ থেকে বার্ধক্য ভাতার তালিকা বা শূন্যপদ থেকে কী প্রক্রিয়ায় নিয়োগ হয়েছে, সরকারি কত টাকায় কী উন্নয়ন হয়েছে, কেন গ্রামের রাস্তা, শৌচালয় নির্মাণ হয় না, মিড ডে মিলের সুবিধে কেন যথাযথ নয় ইত্যাদি অসংখ্য বিষয়ে মানুষ সত্য জানতে আবেদন শুরু করলেন। দুর্নীতি প্রকাশিত হতে থাকল সরকারি দপ্তর থেকে পঞ্চায়েত, পৌরসভায় সর্বত্র। ভীমরুলের চাকে যেন ঢিল পড়ল। আইনটির বিরুদ্ধে শুরু হলো বহুমুখী আক্রমণ।
দুর্নীতির দরজা খুলতে - আইন সংশোধন
২০১৪ সালে বিজেপি-আরএসএস কেন্দ্রের ক্ষমতায় এসে দু’বারের চেষ্টার শেষে ২০১৯ সালে তথ্যের অধিকার আইন, ২০০৫ সংশোধন করে আইনটির নখ, দাঁত ভেঙে দুর্বল করে দেয়। কমিশনের স্বাধীনতা কেড়ে সরকারি নিয়ন্ত্রণে আনার ফলে সরকার যা চায় না তেমন কোনো পদক্ষেপ আর তথ্য কমিশন নিতে পারবে না। ২০১৯ সালে আইন সংশোধন করে তথ্য কমিশনারদের নিয়োগের সময়কাল এবং বেতন সহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নির্দিষ্ট করার ক্ষমতা দেওয়া হয় কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে। এর ফলে তথ্য কমিশন স্বাধীনতা, মর্যাদা, ও বিশেষ ক্ষমতা এক লহমায় হারিয়ে সরকারের অধীন একটি সংস্থায় পরিণত হলো। পার্লামেন্টে ব্যাপক বিরোধিতার জবাবে অত্যন্ত দুর্বল কিছু যুক্তির অবতারণা করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার - নির্বাচন কমিশন ও তথ্য কমিশনের কাজের গুরুত্ব এক নয়, তাড়াহুড়ো করে ইউপিএ সরকার আইন তৈরি করায় পুরনো আইনে অনেক অসঙ্গতি ছিল ইত্যাদি। তাই মোদি সরকার সেই আইনের অসঙ্গতি দূর করছে নাকি আইন সংশোধন করে। বিরোধীদের মতে এই সংশোধন গণতন্ত্রের ওপর একটি আক্রমণ এবং এর ফলে তথ্যের অধিকার আইনটি তার কার্যকারিতা হারাবে।
সম্প্রতি ডিজিটাল তথ্য সুরক্ষা বিলের প্রস্তাবিত খসড়ায় আরটিআই-এ ফের সংশোধনের প্রস্তাব করেছে সরকার, ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষার নামে। আরটিআই আইন অনুযায়ী কোনো সরকারি ব্যক্তি সম্পর্কে নির্দিষ্ট তথ্য প্রকাশ করা হবে কিনা তা বৃহত্তর জনস্বার্থে প্রয়োজনীয় কিনা তা বিবেচনা করে নির্দেশ দেওয়ার ক্ষমতা ছিল তথ্য কমিশনারের। প্রস্তাবিত সংশোধনে দেখা যাচ্ছে, কেন্দ্রীয় সরকার ব্যক্তিগত কোনো তথ্য প্রকাশ করতে স্পষ্টতই অসম্মত। খসড়া ডিজিটাল ডেটা প্রোটেকশন বিলের প্রস্তাবে আরটিআই অ্যাক্টের 8.1(j) ধারাকে স্রেফ মুছে ফেলে তথ্য না জানানোর অধিকারকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। যে তথ্য বৃহত্তর জনস্বার্থে প্রকাশ্যে আনা জরুরি তাকে আড়াল করার অর্থ হলো, দুর্নীতিগ্রস্তদের সুরক্ষা দেওয়া, ক্ষমতার অপব্যবহারকে লাইসেন্স দেওয়া। দুর্নীতি আর স্বৈরাচার যাতে প্রকাশ্যে না আসে তার বন্দোবস্ত করা হলো আরটিআই’কে দুর্বল ও অকার্যকর করে তোলার মাধ্যমে। এভাবেই নির্বাচনী আইন সংশোধন করে মোদি সরকার এনেছিল ইলেকটোরাল বন্ড। কোন করপোরেট, কোনো অসাধু ব্যবসায়ী কোন পার্টিকে কত কোটি টাকা দিচ্ছে তা জানা যাবে না। ফলে দুর্নীতি এলো সরকারের নীতিতে, কাজে। গোপনে যাঁরা বিপুল অর্থ দিয়ে মোদি সরকার গঠন করেছেন, তাদের মুনাফা, ব্যবসা নিশ্চিত করতে সরকার দেশের সব সম্পদ, শিক্ষা থেকে স্বাস্থ্য, খনি থেকে জঙ্গল, রেল থেকে ব্যাঙ্ক - করপোরেটের চরণে সমর্পণ করছে। নোটবন্দির সময় যা যা বলা হয়েছিল তার কোনোটাই হয়নি। তাহলে কার লাভ হলো, কে নির্দেশ দিয়েছিলেন, কেনই বা নির্দেশ - এসব প্রশ্নের উত্তর আসেনি। পিএম কেয়ার ফান্ডের উপভোক্তা কারা মানুষ জানতে চাইতেই পারেন, কিন্তু তা জানা যায়নি। এই সব অপ্রীতিকর প্রশ্ন করার অধিকার এবার আইন করেই কেড়ে নেওয়া হলো।
নেপথ্য কাহিনি
আরটিআই’কে লঘু করতে সরকার কেন উঠেপড়ে লাগল! নোটবন্দি, ব্যাঙ্কের নন পারফরমিং অ্যাসেট, পিএম কেয়ার ফান্ড, প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত তথ্য ইত্যাদি সংক্রান্ত আবেদনের ভিত্তিতে তথ্য কমিশনার যথাযথ তথ্য জানানোর নির্দেশ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠালে সরকার বে-আব্রু হয়ে পড়ে। ২০১৭-র জানুয়ারিতে এক আরটিআই আবেদনের ভিত্তিতে তথ্য কমিশনার শ্রীধর আচার্যুলু দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়কে ১৯৭৮ সালে কারা বিএ পাশ করেছিল সেই তথ্য জানাতে বলেন। প্রসঙ্গত, সেই সালেই নাকি প্রধানমন্ত্রী ওখান থেকেই বিএ ডিগ্রি পেয়েছিলেন। মজার বিষয় হলো, ২০০৫ সালে যখন তথ্যের অধিকার আইনটি পার্লামেন্টারি কমিটিতে আলোচনার জন্য যায়, তখন সেই আলোচনায় অংশ নিয়েছিলেন বিজেপি সাংসদ রামনাথ কোবিন্দ, যিনি পরে রাষ্ট্রপতি হন এবং রাম জেঠমালানি তখনকার বিজেপি সাংসদ। বিলের যে পরিবর্তন পার্লামেন্টারি কমিটির সুপারিশে ছিল তার একটি হলো কমিশনারদের বেতন। আসল বিলে কমিশনারদের বেতন সেক্রেটারি স্তরের সমান ছিল, পার্লামেন্টারি কমিটির সুপারিশে তা নির্বাচন কমিশনারদের সমতুল্য হয়েছিল। আজ সেই বিজেপি-ই আইনকে বদলাচ্ছে।
আরটিআই আইনকে দুর্বল করার ষড়যন্ত্র
আইনের সংশোধন ছাড়াও আরও নানা দিক থেকে এই আইনটিকে দুর্বল করে দেওয়া হচ্ছে। সরকারি বাজেট বরাদ্দ ধারাবাহিকভাবে কমেছে। ঝাড়খণ্ড ও ত্রিপুরায় তথ্য কমিশন সম্পূর্ণ অকেজো। পশ্চিমবঙ্গ, অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা, মণিপুর - ৪টি রাজ্যে তথ্য কমিশনের নেই কোনো মুখ্য কমিশনার। “সতর্ক নাগরিক সংগঠন” নামের একটি গোষ্ঠী সম্প্রতি এক রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। সেই রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, ভারতে বর্তমানে প্রায় ৬০ লক্ষ আবেদন প্রতি বছর জমা পড়ছে। মুখ্য ও তথ্য কমিশনার মিলিয়ে সারা দেশের ১৬৫টি পদের মধ্যে এক-চতুর্থাংশ অর্থাৎ ৪২টি পদ ফাঁকা পড়ে আছে। ৩০টি কমিশনের মধ্যে মাত্র ১৩টি কমিশনের অনলাইন পোর্টাল আছে। ২০২০-২০২১ সালের বার্ষিক রিপোর্ট ২৯টি কমিশনের মধ্যে ২০টি কমিশনই দেয়নি।
বকেয়া আবেদনের পাহাড় স্ফীত হচ্ছে। ২০২২ সালের জুন মাস পর্যন্ত কেন্দ্রীয় কমিশনের কাছে প্রায় ৩ লক্ষ ১৫ হাজার আবেদন জমা পড়ে আছে। শুধু গত বছরেই ১ লক্ষ আবেদন কেন্দ্রীয় কমিশনের কাছে জমা পড়েছে। ১১ জন কমিশনারের মধ্যে মহারাষ্ট্রে আছে ৫ জন আর পশ্চিমবঙ্গে মাত্র ২ জন। এই বিপুল সংখ্যক জমা পড়ে থাকা আবেদন ক্লিয়ার করতে মন্থর গতিতে চলা কমিশনের লাগবে প্রচুর সময়। মহারাষ্ট্র, ওডিশার ক্ষেত্রে লাগবে আগামী ৫ বছর আর পশ্চিমবঙ্গে জমা পড়া সব আবেদনের উত্তর পাঠাতে লাগবে ২৪ বছর ৩ মাস। এরপরেও প্রচার চলছে আরটিআই’র আবেদন মানেই তা ফেক আবেদন। আসলে মাত্র ৪ শতাংশ আবেদন ভিত্তিহীন।
তথ্য জানাতে অসম্মতি
যে আবেদনের তথ্য জানতে চেয়ে কমিশন সংশ্লিষ্ট দপ্তরে নির্দেশ পাঠাচ্ছেন, সেখান থেকে অধিকাংশ তথ্যই পাওয়া যাচ্ছে না। তথ্য দেওয়া যাবে না বলেও সরাসরি জানানো হচ্ছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু বিষয় হলো - নোটবন্দি, পিএম কেয়ার ফান্ডের উপভোক্তা, বিধায়ক তহবিলের খরচের হিসেব, জাল জাতিগত, শিক্ষাগত ইত্যাদি শংসাপত্র সংক্রান্ত, নিয়োগ সংক্রান্ত দুর্নীতি, দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পরেও সরকারি অফিসারের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ না করা, গুরুত্বপূর্ণ নথি, মিটিংয়ের কার্যবিবরণী ইত্যাদি সংক্রান্ত তথ্য। তথ্য না দেওয়ার কারণগুলোর মধ্যে সর্বাধিক হলো - ব্যক্তিগত তথ্য তাই দেওয়া যাবে না অথবা ফাইল পাওয়া যাচ্ছে না।
আরটিআই মুভমেন্ট
তথ্য অধিকার আইনকে পরিকল্পনামাফিক দুর্বল করা এবং আইনের প্রচুর সংশোধন করা হলেও সরকার আরটিআই আন্দোলনকে স্তব্ধ করতে পারেনি। জনপ্রিয় দুটি স্লোগান - “হামারা পয়সা, হামারা হিসাব”, “হাম জানেঙ্গে, হাম জিয়েঙ্গে”। আরটিআই কর্মীরা দেশের কোণে কোণে ছড়িয়ে আছেন। তাঁদের ওপর আক্রমণ হচ্ছে, মিথ্যা মামলায় জড়ানো হচ্ছে, এমনকী তাঁদের খুন করা হচ্ছে একদিকে, অন্যদিকে এঁদের ব্ল্যাকমেইলার তকমাও দেওয়া হচ্ছে। কমনওয়েলথ হিউম্যান রাইটস নামক সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী গত ৬ বছরে আক্রমণ ৫৬ শতাংশ কমলেও ২০২০ থেকে ২০২১ সালে আরটিআই কর্মী খুনের সংখ্যা বেড়েছে। গড়ে প্রতি বছর ২৮ জন কর্মী হুমকি, দৈহিক আক্রমণ বা খুনের শিকার হচ্ছেন। এ পর্যন্ত ১০০ জন কর্মী খুন হয়েছেন, ১৮৮ জনকে হেনস্তা ও হুমকির শিকার হতে হয়েছে, ৭ জন আত্মহত্যা করেছেন। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ থাকলেও অধিকাংশ সময় আরটিআই কর্মীদের ওপর আক্রমণের ঘটনার এফআইআর পুলিশ নিতে চায় না, নিলেও প্রকৃত ষড়যন্ত্রকারীদের স্পর্শও করে না। ২০১৪ সালে “হুইসেল ব্লোয়ারস প্রোটেকশন অ্যাক্ট” গৃহীত হলেও তা আজও কার্যকর করা হয়নি। মধ্যপ্রদেশে বিজেপি সরকারের রাজত্বে হয়েছিল ব্যাপম কেলেঙ্কারি। এটা ছিল প্রবেশিকা পরীক্ষায় বিপুল দুর্নীতি, পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির মতো। প্রায় ১০০ জনকে খুন করা হয় ব্যাপম কেলেঙ্কারি ধামাচাপা দিতে। অথচ বিজেপি সরকার ২০১৪-র আইনটি আজও কার্যকর করল না। বিজেপি’র উদ্দেশ্য কী তা বুঝতে কি অসুবিধে হয়!
আপাদমস্তক দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারে মোড়া বি জে পি এরাজ্যে ঘোলা জলে মাছ ধরতে চাইছে সততার নামাবলি গায়ে চাপিয়ে।
তৃণমূল সরকারের মারাত্মক দুর্নীতি বামাল সমেত ধরা পড়লে, লাভ পেতে বিজেপি’র লম্ফঝম্প শুরু হয়েছে মিডিয়ায়। সব কৃতিত্ব যেন বিজেপি’র! এদিকে ‘সারদা’, ‘নারদে’র আসামিরা বহাল তবিয়তে ফুলে, মালায় শোভিত হচ্ছেন। কোর্টের নির্দেশে নানা মামলায় সিবিআই তদন্ত হচ্ছে আর মাঝে মধ্যেই সিবিআই’র আইনজীবীদের কোর্টে ভর্ৎসনা শুনতে হচ্ছে। কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থাগুলোকে কি নগ্ন ভাবে বিজেপি ব্যবহার করছে তার ভুরি ভুরি উদাহরণ মানুষ দেখছেন। আপাদমস্তক দুর্নীতিগ্রস্ত তৃণমূল সরকার এখনও টিকে আছে বিজেপি সরকারের বদান্যতায়। তৃণমূল মুখ্যমন্ত্রীকে মা সারদা, সিস্টার নিবেদিতা বানিয়েছে আর বিজেপি মোদিজিকে বিবেকানন্দের সমতুল্য অবতার বানিয়েছে। ভণ্ডদের অবতার সাজতেই হয়, ভক্তি ভাব দেখাতে হয়। তবে প্রবাদ আছে - অতি ভক্তি চোরের লক্ষণ।
তাই বিজেপি-আরএসএস-র এহেন সরকারের মুখোশ জনমানসে উন্মোচিত করতে হবে ও তার বিরুদ্ধে বহুমুখী লড়াইকে তীব্র করতে হবে, তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সঙ্গে সঙ্গে।