E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৬০ বর্ষ ১৬ সংখ্যা / ২ ডিসেম্বর, ২০২২ / ১৫ অগ্রহায়ণ, ১৪২৯

চার নম্বর পিলার

বরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়


‘দেশ নষ্ট কপটে, প্রজা মরে চপটে, কি কি করিবে রিপোর্টে?’ আজকের লেখা কাঙাল হরিনাথকে দিয়েই না হয় শুরু করা যাক। সেটাই বোধহয়... ওই কী যেন বলে? ঠিক বাঙলাটা মনে পড়ছে না কিছুতেই; অ্যাপ্রোপ্রিয়েট হবে। যার ‘গ্রামবার্তা প্রকাশিকা’ একটানা মোটামুটি পঁচিশ বছর গরিব খেটে খাওয়া মানুষের পক্ষে কথা বলেও মাত্র সাত টাকা দেনার দায়ে বন্ধ হয়ে গেছিল। ১৮৬৩ থেকে একটানা ১৮৮৪ প্রায়। প্রথমে মাসিক, পরে পাক্ষিক তারও পরে সাপ্তাহিক। সরকারের শোষণ, নীলকরদের শোষণ, জমিদারদের শোষণ, পুলিশি নিষ্ক্রিয়তা, মহাজনি শোষণ, শিক্ষাপ্রসার - গ্রাম থেকে প্রকাশিত পত্রিকা হলেও ব্যাপ্তি ছিল অনেকটাই। ১৮৭৮-এর মার্চ মাসে ভার্নাকুলার প্রেস অ্যাক্টের বিরোধিতা করে যিনি লেখেন - “সংবাদপত্র আমাদিগের ব্যবসা নহে। তবে প্রজা কাঁদে, সেই ক্রন্দন লইয়া রাজদ্বারে ক্রন্দন করি, ভাবি রাজপুরুষগণ শুনিলে, প্রজা আর কাঁদিবে না। তাহাদের কাঁদিবার কারণ দূর হইবে। এইজন্য প্রতি-বৎসর ক্ষতি স্বীকার করিয়াছি এবং উৎকট রোগের আধার হইয়া যন্ত্রণা ভোগ করিতেছি। যার জন্য, যার প্রজার জন্য কাঁদি তিনি তার বিলক্ষণ পুরষ্কার প্রদান করিলেন। অতএব আর কাঁদিব না।” যদিও গরিব মানুষের পক্ষে লেখার কারণে খ্যাতনামা ‘প্রভাবশালী’ ব্যক্তিদের ‘আদর’, ‘আপ্যায়ন’ হজম করতে করতে একসময় কপর্দকশূন্য হয়ে পড়া ‘কাঙাল’ হরিনাথ মজুমদার শেষ পর্যন্ত আর যুঝে উঠতে পারেননি। বন্ধ হয়ে যায় ‘গ্রামবার্তা প্রকাশিকা’। ১৩৮ বছর আগেকার এই যন্ত্রণা বোঝার ক্ষমতা সকলের থাকবেই এমন কোনো দাবি নেই। বিশেষ করে এই সময় দাঁড়িয়ে - যখন গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভতেও ভাগাভাগি। একদিকে আদানি, গোস্বামী, দে, ঘোষেদের রমরমা। আর অন্যদিকে কাপ্পান, দানিশ, বুদ্ধিনাথ ঝা, সমৃদ্ধি কে সাকুনিয়া, স্বর্ণ ঝা, বিনোদ দুয়া, শ্যাম মীরা সিং, কিশোরচন্দ্র ওয়াংখেমদের অসম লড়াই।

ইতিহাসের পাতা থেকে উঠে এলেন কাঙাল হরিনাথ। সেই ইতিহাসেই আছে ভার্নাকুলার প্রেস অ্যাক্ট। ১৮৭৮, ১৪ মার্চ। যে বছর লর্ড লিটন জারি করেছিলেন এই আইন। যে আইনের উদ্দেশ্য ছিল দেশীয় সংবাদপত্রে সরকারের বিরুদ্ধে পরিচালিত প্রচার বন্ধ করা। লিটনের ভাষায় দেশীয় সংবাদপত্র মানে ‘কুচক্রী বাজে লেখকদের প্রকাশ্য রাজদ্রোহী প্রচার’। তাঁর মতে, অধিকাংশ দেশীয় খবরের কাগজের সুস্পষ্ট উদ্দেশ্য হচ্ছে ব্রিটিশ রাজের পতন ঘটানো। যে আইনের আওতায় অনেক খবরের কাগজকে জরিমানা করা হয়। অনেক সম্পাদককে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। একাধিক পত্রিকাকে রাজদ্রোহমূলক আন্দোলনের দায়ে অভিযুক্ত করা হয়।

কাঙাল হরিনাথের এইসব প্রচেষ্টার প্রায় ১০০ বছর আগে ১৭৮০ সালের ২৯ জানুয়ারি প্রকাশিত হয়েছিল ‘বেঙ্গল গেজেট’। জেমস হিকির সেই কাগজেও সরকার বিরোধী বিভিন্ন খবরাখবর প্রকাশিত হতো। যার জেরে মাত্র দু’বছরের মধ্যে ১৭৮২ সালে মামলায় মামলায় জেরবার হয়ে বেঙ্গল গেজেট বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন জেমস হিকি। ওয়ারেন হেস্টিংসের বদান্যতায় বাজেয়াপ্ত করা হয় বেঙ্গল গেজেটের যাবতীয় সম্পত্তি। এর প্রায় পঞ্চাশ বছর পর ১৮২৩ সালের ৪ঠা এপ্রিল একইভাবে সংবাদপত্রে শাসকের সমালোচনা করে শাসকের রোষে পড়েন রামমোহন রায় এবং প্রতিবাদ স্বরূপ তিনি তাঁর কাগজ ‘মিরাতুল আখবার’-এর প্রকাশনা বন্ধ করে দেন। এই প্রসঙ্গে ভারতীয় সাংবাদিকতা জগতের খ্যাতনামা ব্যক্তিত্ব রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়ের একটা বক্তব্য ফিরে দেখা যেতে পারে। যিনি লিখেছেন, ‘একেবারে আদি হইতেই ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষগণ সংবাদপত্রের জগতকে সুনজরে দেখিতেন না। সম্পাদকগণকে ধমক দেওয়া হইত আর হেনস্তা করা হইত, আর তাহাদিগের কার্যক্রমে সৃষ্টি করা হইত সাংঘাতিক বাধার। যাঁহারা ক্ষমতায় আসীন ছিলেন তাঁহারা কোনো ধরনের বিরুদ্ধাচার বা ভিন্নমত সহ্য করিতে পারিতেন না। কখনও কখনও একান্ত নির্দোষ সংবাদ প্রকাশের কারণেও সম্পাদকদিগকে দণ্ড প্রদান করা হইত। ইংরেজি সন ১৭৯১ হইতে ১৭৯৯সন পর্যন্ত বেশ কয়েকজন সম্পাদককে কোনো প্রকার মামলা রুজু না করিয়াই জোরপূর্বক ইয়োরোপে পাঠাইয়া দেওয়া হইত। আরও অনেক অনেককে ভর্ৎসনা করিয়া ক্ষমা চাহিতে বাধ্য করা হইত।’

ইতিহাস ঘাঁটাঘাঁটি থেকে এবার বিরাম নেওয়া যেতে পারে। কারণ প্রাক্ স্বাধীনতা থেকে স্বাধীনতা-উত্তর - পরাধীন ভারত থেকে স্বাধীন ভারত- সুদূর অতীত থেকে বর্তমান - ছবি যে কিছুই বদলায়নি তার ভুরি ভুরি প্রমাণ আছে সাম্প্রতিক সময়ের বিভিন্ন ঘটনায়। শাসকের চরিত্র বদলায়নি কোনোকালেই।

২৬ নভেম্বর, ২০২২। এনডিটিভি চ্যানেল কেনার পর এক বেসরকারি সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে গৌতম আদানি জানিয়েছেন, মিডিয়ার বড়ো কাজ হলো সরকারের কাজ তুলে ধরা। সরকার প্রতিদিন যে সঠিক কাজ করে চলেছে তা সরাসরি বলার মতো মিডিয়ার সাহস চাই। আপনাকে প্রতিদিন সেই কাজের কথা বলতেই হবে। তিনি আরও জানিয়েছেন, ভারতে আন্তর্জাতিক মানের কোনো মিডিয়া নেই। আমি সেই লক্ষ্যেই নেমেছি। এনডিটিভি তো ব্যবসা করার জন্য কিনিনি, দায়িত্ব পালনের জন্য কিনেছি। অর্থাৎ দেশের বৃহত্তম করপোরেট গোষ্ঠীর হাতে পড়ে আগামী দিনে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম কী হতে চলেছে তার একটা ছবি ইতিমধ্যেই মোটামুটি স্পষ্ট করে দিয়েছেন আদানি। আর বুধবার, ৩০ তারিখ এই লেখা তৈরির সময় জানতে পারলাম এনডিটিভি-র পরিচালন গোষ্ঠীর অধিকর্তার পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন চ্যানেলের প্রতিষ্ঠাতা প্রণয় রায় এবং তাঁর স্ত্রী রাধিকা রায়। আদানি গ্রুপ এনডিটিভি'র ২৯.১৮ শতাংশ শেয়ার অধিগ্রহণ করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই চ্যানেলটির পরিচালন গোষ্ঠীর পদ থেকে ইস্তফা দেন প্রণয় রায় এবং রাধিকা রায়। সোমবারই খাতায় কলমে এনডিটিভি'র শেয়ার হস্তান্তর হয় আদানির হাতে। আর এর কয়েক ঘণ্টা পরই RRPRH-এর ডিরেক্টর পদ থেকে ইস্তফা। ২৫ জুন, ২০২২। জাকিয়া জাফরি মামলায় শীর্ষ আদালতের রায়ের পর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেন, ‘বিজেপি'র রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী, রাজনৈতিকভাবে অনুপ্রাণিত সাংবাদিক এবং কিছু এনজিও গুজরাট দাঙ্গা নিয়ে মিথ্যা প্রচার করে। তাদের একটি শক্তিশালী ইকোসিস্টেম ছিল। তাই সবাই সেই মিথ্যাকে সত্য বলে বিশ্বাস করতে শুরু করে।’ ‘আমি তাড়াহুড়ো করে রায়টি পড়েছি। কিন্তু তাতে স্পষ্টভাবে তিস্তা শীতলাবাদের নাম উল্লেখ রয়েছে। তাঁর একটি এনজিও ছিল। সেটি সমস্ত থানায় বিজেপি কর্মীদের নাম জড়িয়ে আবেদন জমা দিয়েছিল। মিডিয়ার দ্বারা এত চাপ ছিল যে সব আবেদনগুলি সত্য বলে মেনে নেওয়া হয়েছিল।’ এই ঘটনার ঠিক একদিন পরে ২৬ জুন মুম্বাই থেকে গ্রেপ্তার করা হয় সাংবাদিক ও সমাজকর্মী তিস্তা শীতলাবাদকে। গুজরাট পুলিশের এটিএস তাঁকে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৬৮, ১৯৪, ২১১, ২১৮ এবং ১২০বি ধারা অনুসারে গ্রেপ্তার করে। সুপ্রিম কোর্ট জাকিয়া জাফরির আনা মামলা খারিজ করে দেবার পরের দিনেই গ্রেপ্তার হন তিস্তা।

সবরং ইন্ডিয়ার তিস্তা শীতলাবাদের কথা শুনলাম। এবার শোনা যাক অলটো নিউজের সহ প্রতিষ্ঠাতা মহম্মদ জুবেইরের কথা। ভুয়ো খবরের বিরুদ্ধে সত্যতা যাচাইয়ের ক্ষেত্রে অলটো নিউজ পরিচিত নাম। বিজেপি’র আইটি সেলের একাধিক ভুয়ো প্রচারের মুখোশ খুলে দিয়েছে অলটো নিউজ। এই বছরের জুন মাসে ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাতের অভিযোগে উত্তরপ্রদেশের সীতাপুর, লখিমপুর খেরি, গাজিয়াবাদ, মুজফফরনগর এবং হাথরাস থানায় এফআইআর দায়ের করা হয় জুবেইরের বিরুদ্ধে। দায়ের হয় ৬ টি মামলা। চার বছর আগের একটি পুরনো টুইটের প্রেক্ষিতে গত ২৭ জুন সাংবাদিক জুবেইরকে গ্রেফতার করে পুলিস। এই ঘটনা প্রসঙ্গে ১৬ জুলাই জয়পুরে এক অনুষ্ঠানে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এন ভি রমানা বলেন, ‘‘আমাদের সামনে বিশাল চ্যালেঞ্জ রয়েছে। আমাদের ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থায়, প্রক্রিয়াটি শাস্তি স্বরূপ। তড়িঘড়ি ও নির্বিচারে গ্রেফতার থেকে শুরু করে জামিন পেতে অসুবিধা, বিচারাধীন ব্যক্তিদের দীর্ঘ সময় জেলবন্দি করে রাখা - এই সমস্ত কিছুর দিকে জরুরি ভিত্তিতে মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন।’’ ওই অনুষ্ঠানেই তিনি আরও বলেন, ‘‘রাজনৈতিক বিরোধিতাকে শত্রুতায় রূপান্তরিত করা উচিত নয়, দুঃখজনকভাবে যা আমরা আজকাল প্রায়ই প্রত্যক্ষ করছি। এগুলো সুস্থ গণতন্ত্রের লক্ষণ নয়। আগে সরকার ও বিরোধীদের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ছিল। দুর্ভাগ্যবশত, বর্তমানে বিরোধীদের জায়গা কমে যাচ্ছে। দেশে আইন প্রণয়নের মানেরও পতন ঘটছে।’’

তিস্তা শীতলাবাদ অথবা মহম্মদ জুবেইর জামিন পেলেও এখনও জামিন পাননি সাংবাদিক সিদ্দিক কাপ্পান। যদিও একটু ভুল হলো। গত সেপ্টেম্বর মাসে সুপ্রিম কোর্টে জামিন পেলেও এখনও মুক্তি পাননি তিনি। সিদ্দিক কাপ্পান একজন দিল্লি-ভিত্তিক মালয়ালি সাংবাদিক। ২০২০ সালের অক্টোবর মাসে উত্তরপ্রদেশের হাথরাসে উচ্চবর্ণের ব্যক্তিদের দ্বারা এক দলিত নাবালিকার ধর্ষণ ও হত্যার খবর করতে যাওয়ার সময় কাপ্পানকে গ্রেপ্তার করে সে রাজ্যের পুলিশ। কাপ্পানের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়, তিনি মুসলিম সংগঠন পি এফ আই-এর সদস্য। তাঁকে ৪৫,০০০ টাকা দেওয়া হয়েছিল হাথরাসে গিয়ে সন্ত্রাসী কর্যাকলাপ করার উদ্দেশ্যে।

ওপরের ঘটনাগুলো সম্পর্কে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয় তা হলো, দেশের অধিকাংশ প্রতিষ্ঠিত সংবাদমাধ্যমেই এই প্রসঙ্গে কোনো সম্পাদকীয় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়নি। অর্থাৎ একদিকে সংবাদমাধ্যমে অঘোষিত সরকারি নিয়ন্ত্রণ এবং অন্যদিকে করপোরেট নিয়ন্ত্রিত সংবাদমাধ্যম - এই দুয়ের অঘোষিত আঁতাতে আপাতত সংকটে গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ। বিগত সময়ে বিভিন্ন রকমের হেনস্তার শিকার হয়েছে ক্যারাভান, দ্য ওয়ার, নিউজক্লিক, দৈনিক ভাস্কর, ভারত সমাচার সহ একাধিক সংবাদ মাধ্যম। ২০১৪ থেকে ২০১৯-এর মধ্যে দেশে সাংবাদিকদের ওপর দু’শোটির বেশি আক্রমণ হয়েছে। এই সময় নিহত হয়েছেন ৪০-এর বেশি সাংবাদিক। ২০২১ সালে এক ওয়েবনারে দৈনিক ভাস্করের জাতীয় সম্পাদক ওম গৌর জানিয়েছিলেন, রাজ্য প্রশাসনের চরম অব্যবস্থার ছবি তুলে ধরার পর সরকারের তরফ থেকে আসা সবরকম বিজ্ঞাপন দেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এই উদাহরণ তো আমাদের রাজ্যেও আছে। দৈনিক সংবাদপত্র হওয়া সত্ত্বেও যেখানে কোনো কারণ না দেখিয়েই সরকারি বিজ্ঞাপন থেকে বঞ্চিত করা হয়।

২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পর এক সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জানিয়েছিলেন, “বাক্ ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে না পারলে গণতন্ত্র টিকে থাকবে না।” যদিও বিগত ৮ বছরে দেশে সবথেকে বেশি আক্রান্ত বাকস্বাধীনতা এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে এক প্রতিবেদনে বিবিসি জানিয়েছিল, ২০২১ সালে ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্সে দু’ধাপ নেমে ১৮০ দেশের মধ্যে ভারতের স্থান হয়েছে ১৪২। আর ২০২২ সালের মে মাসের ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্স-এর রিপোর্ট অনুসারে আরও কয়েক ধাপ নেমে ভারত এখন ১৮০ দেশের মধ্যে ১৫০ তম। এই প্রসঙ্গে ‘রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস’ নামক এক আন্তর্জাতিক সংস্থা তাদের ওয়েবসাইটে এক বিবৃতিতে জানায়, ‘‘ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম দিবসে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস এবং নয়টি অন্যান্য মানবাধিকার সংস্থার তরফ থেকে ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে সাংবাদিকদের টার্গেট করা বন্ধ করতে বলা হয়েছে। বিশেষ করে যেভাবে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদ বা দেশদ্রোহিতার মামলা দায়ের করা হচ্ছে, তা অবিলম্বে বন্ধ করা উচিত। অনলাইন, অফলাইন উভয়ক্ষেত্রে সরকারের সমালোচনাকারীদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তাঁরা হয়রানির স্বীকার হচ্ছেন। মত প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকারকে সম্মান করা উচিত ভারত সরকারের।’’

লেখাটা আরও বাড়ানো যেতে পারে। আরও তথ্য দেওয়া যেতে পারে। গৌরী লঙ্কেশ থেকে আরও অনেক নাম, ঘটনাবলি, খুঁটিনাটি যুক্ত করা যেতে পারে। সেসব না করে বরং ১৯৬২ সালের এক ঘটনার কথা উল্লেখ করে শেষ করা যাক। যখন এক মামলার রায়ে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছিল- সরকারের সমালোচনা করার জন্য বা সরকারের পদক্ষেপের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করার জন্য ব্যবহৃত কঠোর শব্দ দেশদ্রোহ নয়। যদিও আজকের ভারতে সংবাদমাধ্যমের ওপর প্রতিদিনকার আক্রমণ অন্য কথাই বলছে। একদিকে গদি মিডিয়ার রমরমা আর অন্যদিকে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ক্রমশ ক্রমশ স্বাধীনতার বদলে স্বাধীনতা হরণের ছলাকলায় আর সাঁড়াশি চাপে নাভিশ্বাস উঠেছে গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভের। যা ক্রমশ নড়বড়ে করে দিচ্ছে পুরো ব্যবস্থাকেই।