৬০ বর্ষ ১৬ সংখ্যা / ২ ডিসেম্বর, ২০২২ / ১৫ অগ্রহায়ণ, ১৪২৯
শতবর্ষান্তে জগদীশচন্দ্রের ‘অব্যক্ত’ প্রবন্ধ সংকলন
তপন মিশ্র
বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদ থেকে প্রকাশিত ‘অব্যক্ত’র প্রথম প্রচ্ছদ। (বামদিকে)
পরবর্তীকালে বসু বিজ্ঞান মন্দির থেকে প্রকাশিত ‘অব্যক্ত’র প্রচ্ছদ। (ডানদিকে)
১৯২১ সালে আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু (১৮৫৮-১৯৩৭)-র বিভিন্ন সময়ে লেখা ২০টি প্রবন্ধ নিয়ে একটি সংকলন ‘অব্যক্ত’ প্রকাশিত হয়। তৎকালীন ‘বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদ’ এই প্রবন্ধ সংকলনটি প্রকাশ করে। আচার্য সত্যেন্দ্রনাথ বসু ১৯৪৮ সালের ২৫ জানুয়ারি বর্তমানের ‘বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদ’ প্রতিষ্ঠার আগে এলাহাবাদে ‘বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদ’ নামে একটি সংস্থা তৈরি হয়। অনেক পরে বইটি সম্পর্কে এক মনোজ্ঞ ভূমিকা লেখেন আব্দুল হক খন্দকার যা প্রকাশিত হয় বাংলাদেশের একটি সংস্থা বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের দ্বারা। বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র একটি সামাজিক সংগঠন যার মূল লক্ষ্য কিশোর ও যুব সমাজকে আলোকিত মানুষ হিসাবে গড়ে তোলা। আলোচনার সূত্রপাত করতে গিয়ে বিজ্ঞান লেখক আব্দুল হক খন্দকার একটি ছত্রে বলছেন যে, ‘‘জগদীশচন্দ্র ছিলেন একাধারে কবি, দেশপ্রেমিক, দার্শনিক ও বিজ্ঞানী।’’ বিশিষ্ট সাহিত্যিক এবং চিত্র পরিচালক প্রেমেন্দ্র মিত্র ‘অব্যক্ত’ সম্পর্কে বলতে গিয়ে উল্লেখ করেন, “বিজ্ঞান ভিত্তিক সাহিত্য রচনাতেও তিনি অনন্য অগ্রপথিক।” উল্লেখ্য, যে মনীষীরা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ডাকাতের দল’ কিংবা ‘খামখেয়ালী সভা’য় অংশগ্রহণ করতেন, তাঁদের মধ্যে জগদীশচন্দ্র বসু ছিলেন অন্যতম।
জগদীশচন্দ্র বসুর প্রবন্ধগুলি মূলত তাঁর পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও অভিজ্ঞতা নিয়েই রচিত হয়েছে। এই প্রবন্ধ সংকলনের মধ্যে বেশ কয়েকটি প্রবন্ধ মুকুল, দাসী, প্রবাসী ইত্যাদি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। তিনি বইটিতে একটি বৈজ্ঞানিক রহস্য গল্প ও একটি ঐতিহাসিক গল্পও অন্তর্ভুক্ত করেন। এই সংকলনে উদ্ভিদেহের বিভিন্ন জৈবনিক ক্রিয়া সম্পর্কে ৫টি প্রবন্ধ লেখেন। আচার্য জগদীশচন্দ্রের এই প্রবন্ধগুলি পড়লে অধিকাংশের একটি ভুল ধারণার নিরসন অবশ্যই ঘটবে। ধারণাটি হলো উদ্ভিদের যে প্রাণ আছে তার আবিষ্কর্তা হলেন আচার্য বসু।
বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান চর্চা
প্রবন্ধ সংকলনটি শুরু করতে গিয়ে উপক্রমণিকায় অর্থাৎ ‘প্রথম কথা’-তে আচার্য লিখছেন, “ভিতর ও বাহিরের উত্তেজনায় জীব কখনও কলরব কখনও আর্ত্তনাদ করিয়া থাকে। মানুষ মাতৃক্রোড়ে যে ভাষা শিক্ষা করে সে ভাষাতেই সে আপনার সুখ-দুঃখ জ্ঞাপন করে। প্রায় ত্রিশ বৎসর পূর্ব্বে আমার বৈজ্ঞানিক ও অন্যান্য কয়েকটি প্রবন্ধ মাতৃভাষাতেই লিখিত হইয়াছিল। তাহার পর বিদ্যুৎ-তরঙ্গ ও জীবন সম্বন্ধে অনুসন্ধান আরম্ভ করিয়াছিলাম এবং সেই উপলক্ষ্যে বিবিধ মামলা-মোকদ্দমায় জড়িত হইয়াছি। এ বিষয়ের আদালত বিদেশে; সেখানে বাদ প্রতিবাদ কেবল ইয়োরোপীয় ভাষাতেই গৃহীত হইয়া থাকে। এদেশেও প্রিভি-কাউন্সিলের রায় না পাওয়া পর্য্যন্ত কোন মোকদ্দমার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয় না।”
শুরুর এই কথাগুলিতে তাঁর বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ভাবনা ব্যক্ত হয়েছে।প্রথমত, তিনি যা বলেছেন তা হলো বিজ্ঞান শিক্ষায় মাতৃভাষার কোনো বিকল্প নেই। আমাদের দুঃখ, বেদনা, আনন্দ এই সমস্ত অনুভূতি প্রকাশ করার ভাষা হলো মাতৃভাষা। সেই কারণে বিভিন্ন সময়ে তাঁর এই প্রবন্ধ রচনা। দ্বিতীয়ত, তিনি বলছেন যে, বিদেশে বিভিন্ন ‘মামলা মোকদ্দমায়’ তিনি জড়িত। আদপে এই মামলা মোকদ্দমা হলো বিশ্বের দরবারে তাঁর গবেষণাকে প্রতিষ্ঠিত করার প্রয়াস। বিভিন্ন মামলা-মোকদ্দমা করতে গেলে যে যেভাবে যুক্তি সাজাতে হয় ‘বিদ্যুৎ-তরঙ্গ ও জীবন’ সম্পর্কে তাঁর গবেষণালব্ধ ফলগুলিকে বিজ্ঞানীদের দরবারে প্রতিষ্ঠিত করতে সেভাবেই তাঁকে যুক্তি সাজাতে হয়েছে, অর্থাৎ প্রস্তুত হতে হয়েছে।বিজ্ঞানের পদ্ধতি হলো যুক্তি নির্ভর। কোনো অনুমান এখানে অচল।
যুক্তিবাদী মননই গোড়ার কথা
‘বিজ্ঞানে সাহিত্য’ প্রবন্ধের একটি অধ্যায় হলো ‘ভারতে অনুসন্ধানের বাধা’। এই অধ্যায়ে আচার্য বলছেন, যদিও একথা সত্য যে, ভারতে বিজ্ঞান গবেষণায় বাধা অনেক তবুও গবেষণার অনেক সুযোগ আমাদের দেশে তৈরি করা যায়। ব্রিটিশ আমলে আমাদের দেশে বিজ্ঞান গবেষণার তেমন কোনো সুযোগ ছিল না। তবু তিনি বলছেন, “আমরা অনেক সময় ভুলিয়া যাই যে, প্রকৃত পরীক্ষাগার আমাদের অন্তরে।” একই ছত্রে তিনি আরও বলছেন, “...সত্যকে যাহারা যাথার্থ চায়,উপকরণের অভাব তাহাদের প্রধান বাধা নহে।”
‘বিজ্ঞান সাহিত্য’ প্রবন্ধের ‘কবিতা ও বিজ্ঞান’ প্রসঙ্গে তিনি বিজ্ঞানীদের সম্পর্কে লিখছেন, “দৃষ্টির আলোক যেখানে শেষ হইয়া যায় সেখানেও তিনি আলোকের অনুসরণ করিতে থাকেন, শ্রুতির শক্তি যেখানে সুরের শেষ সীমায় পৌঁছায় সেখান হইতেও তিনি কম্পমান বাণী আহরণ করিয়া আনেন। প্রকাশের অতীত যে রহস্য প্রকাশের আড়ালে বসিয়া দিনরাত্রি কাজ করিতেছে, বৈজ্ঞানিক তাহাকেই প্রশ্ন করিয়া দুর্ব্বোধ উত্তর বাহির করিতেছেন এবং সেই উত্তরকেই মানব-ভাষায় যথাযথ করিয়া ব্যক্ত করিতে নিযুক্ত আছেন।”প্রকৃতিকে জানা এবং যুক্তি দিয়ে তার সমস্ত কর্মপদ্ধতি বোঝার চেষ্টা বিজ্ঞানীদের একমাত্র লক্ষ্য। এই লক্ষ্যের কথা আচার্য আমাদের মনে করিয়ে দিয়েছেন।
আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু (১৮৫৮-১৯৩৭)
আধুনিক কল্প-বিজ্ঞানের জনক
আধুনিক বিজ্ঞানের একজন সফল গবেষক হয়েও ১৮৯৬ সালে বাংলা ভাষায় কল্পবিজ্ঞানের কাহিনি লেখেন আচার্য বসু। ছোটোদের মধ্যে বিজ্ঞান জিজ্ঞাসাকে বাড়িয়ে দিতে তিনি লেখেন ‘নিরুদ্দেশের কাহিনী’ নামে এক কল্পকাহিনি। এটাই পরবর্তীকালে ‘পলাতক তুফান’ হিসাবে অব্যক্ত’তে প্রকাশিত হয়। কুন্তল কেশরী নামে একটি ছোট্ট শিশু তেলের বোতলে এক ভয়ঙ্কর তুফানকে আটকে রাখার গল্প হলো পলাতক তুফান। অবশ্য এর অনেক আগে আগে ১৮৮২ সালে ‘রহস্য’ নামে তিনি এক কল্পকাহিনি লেখেন। পরবর্তীকালে অর্থাৎ ১৮৯৬-এর মধ্যে বেশ কয়েকটি কল্পবিজ্ঞানের কাহিনিও লেখা হয়। কিন্তু কল্পবিজ্ঞানের মধ্য দিয়ে একজন বিজ্ঞানীর অনুভূতি আচার্য বসু যে ভাবে প্রকাশ করেছেন তার স্বাদ আগে পাওয়া যায়নি। একারণে আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু বাংলা সাহিত্যে কল্পবিজ্ঞানের জনক।কল্পবিজ্ঞান তখনই সফল হয় যখন কল্পনা আর যুক্তির মিশেল ঘটানো যায়। অবশ্য পরবর্তীকালে সত্যজিৎ রায় সহ আরও কয়েকজন সফল কল্পবিজ্ঞানের লেখক হিসাবে পাঠকদের মন জয় করেছেন।
২০২০ সালে নেদারল্যান্ডের একজন গবেষক ক্রিস্টিন হোয়েন, লিখছেন যে, একটি প্রসাধনী কোম্পানির দ্বারা সংগঠিত একটি প্রবন্ধ প্রতিযোগিতার জন্য ‘পলাতক তুফান’গল্পটি আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু লেখেন (Hoene, C.,2020, Jagadish Chandra Bose and the anticolonial politics of science fiction. The Journal of Commonwealth Literature)।এই প্রতিযোগিতায় তিনি জয়ীও হন। এই প্রবন্ধে হোয়েন আরও বলছেন, “ভিন্নভাবে বললে, গল্পের ম্যাজিকাল রিয়ালিজমের উপাদানগুলো পশ্চিমী বিজ্ঞানের ঔপনিবেশিক রাজনীতিকে এই কল্পবিজ্ঞানের গল্পের মধ্যে দেখানো হয়েছে।”
তৎকালীন সমাজের কথা
তখনকার সমাজ ছিল অত্যন্ত পিছিয়ে-পড়া। পরাধীন দেশের গ্রামের জীবন ছিল বিভিন্নভাবে বঞ্চিত। অবশ্য স্বাধীনতার ৭৫ বছরের পর আমরা যে অনেক উন্নত হয়ে গেছি তা কেউ মনে করেন না। একজন বিজ্ঞানী কেবল গবেষণাগারে আবদ্ধ থেকে সমাজ বিচ্ছিন্ন থাকতে পারেন না। আচার্য বসু ছিলেন গভীরভাবে সমাজ সচেতন। ‘বোধন’ প্রবন্ধে তিনি তখনকার সমাজের সমস্যাগুলি সম্পর্কে লিখছেন, “বিবিধ সংক্রামক রোগ যেন দেশকে একেবারে বিধ্বস্ত করিতে চলিল। এই সব বিপদ একেবারে অনিবার্য্য নয়, কিন্তু এ আমাদের অজ্ঞতা ও চেষ্টাহীনতারই বিষময় ফল। যে পুকুর হইতে পানীয় জল গৃহীত হয় তাহার অপব্যবহার সভ্যতার পরিচায়ক নহে। কী করিয়া এই সব অজ্ঞতা দূর হইতে পারে? স্কুল বৃদ্ধি অতি মন্থর গতিতে হইতেছে; আর কোন কি উপায় নাই যাহা দ্বারা অত্যাবশ্যক জ্ঞাতব্য বিষয় সহজে প্রচারিত হইতে পারে? আমাদের সর্ব্বসাধারণে শিক্ষাবিস্তারের চিরন্তন প্রথা কথকতা দ্বারা। তাহা ছাড়া চক্ষে দেখিলে একটা বিষয়ে সহজেই ধারণা হয়। আমার বিবেচনায় স্বাস্থ্যরক্ষার উপায় গৃহ ও পল্লী পরিষ্কার, বিশুদ্ধ জল ও বায়ুর ব্যবস্থা নির্দ্ধারণ।”
পরাধীন ভারতে নেটিভরা যে বিজ্ঞান গবেষণায় বিশ্বকে আলোকিত করতে পারে ইয়োরোপীয়রা তা মনে করত না। আচার্য জগদীশচন্দ্রকে এবিষয়ে অনেক গঞ্জনা শুনতে হয়েছে। অব্যক্ত’র ‘হাজির’ প্রবন্ধে আচার্য বসু তাঁর এই তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা লিখছেন এবং সঙ্গে সঙ্গেই তার প্রতিবাদ তিনি জানিয়েছেন।তিনি লিখছেন,“অল্পদিনের মধ্যেই এ বিষয়ে অনেক সুখ্যাতি হইল এবং বিলাতের সম্বর্দ্ধনা সভায় নিমন্ত্রিত হইলাম। বিখ্যাত বৈজ্ঞানিক উইলিয়াম রাম্সে বহু সাধুবাদ করিলেন; পরে বলিলেন, “কাহারও কাহারও মনে হইতে পারে যে, এখন হইতে ভারতে নূতন জ্ঞান-যুগ আরম্ভ হইল; কিন্তু একটি কোকিলের ধ্বনিতে বসন্তের আগমন মনে করা যুক্তিসঙ্গত নহে।” সেদিন বোধ হয় আমার উপর কুমতিরই প্রাদুর্ভাব হইয়া থাকিবে, কারণ স্পদ্ধার সহিতই উত্তর দিয়াছিলাম। বলিয়াছিলাম - ‘‘আপনাদের আশঙ্কা করিবার কোন কারণ নাই, আমি নিশ্চয়ই বলিতেছি, শীঘ্রই ভারতের বিজ্ঞানক্ষেত্রে শত কোকিল বসন্তের আবির্ভাব ঘোষণা করিবে। এখন সেদিন আসিয়াছে; যাহা কুমতি বলিয়া ভয় করিয়াছিলাম, এখন দেখিতেছি তাহাই সুমতি। তখনকার শুভ লগ্ন পাঁচ বৎসর পর্য্যন্ত অক্ষুণ্ণ ছিল। একদিনের পর আর একদিন অধিকতর উজ্জ্বল হইতে লাগিল এবং সম্মুখের সমস্ত পথগুলিই খুলিয়া গেল।”
জীবন দর্শন
অব্যক্ত’র প্রবন্ধগুলিতে আচার্যের জীবন দর্শন বার বার প্রতিভাত হয়েছে। জগদীশচন্দ্র যে আস্তিক ছিলেন সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু বিজ্ঞানী হিসাবে তিনি বস্তুবাদী দর্শনের একজন পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। বস্তু অবিচ্ছিন্ন, প্রকৃতি জগতের প্রত্যেকটি ঘটনা একে অপরের সঙ্গে যুক্ত এই ধারণা তিনি আমাদের মধ্যে প্রবাহিত করার চেষ্টা করেছেন। তাঁর প্রবন্ধ ‘আকাশ-স্পন্দন ও আকাশ-সম্ভব জগৎ’-এ তিনি লিখছেন,“ যাহা বিচ্ছিন্ন মনে করিতাম, প্রকৃতপক্ষে তাহা বিচ্ছিন্ন নহে। শূন্যে বিক্ষিপ্ত কোটি কোটি জগৎ আকাশসূত্রে গ্রথিত।এক জগতের স্পন্দন আকাশ বাহিয়া অন্য জগতে সঞ্চালিত হইতেছে।”কেবল একজন বিজ্ঞানীর যুক্তিবাদী মনই এই ধারণাকে লালিত করতে পারে। আচার্য বসু ছিলেন জীব-পদার্থবিদ্যা (Biophysics)-র জনক। বস্তুর বিকাশের মধ্যদিয়ে জীবের সৃষ্টি তার বিশ্লেষণ ঘটে এই ধারার গবেষণার মধ্য দিয়ে।
‘নির্বাক জীবন’ প্রবন্ধে আচার্য লিখছেন, “গাছের প্রকৃত ইতিহাস সমুদ্ধার করিতে হইলে গাছের নিকটই যাইতে হইবে। সেই ইতিহাস অতি জটিল এবং বহু রহস্যপূর্ণ। সেই ইতিহাস উদ্ধার করিতে হইলে বৃক্ষ ও যন্ত্রের সাহায্যে জন্ম হইতে মৃত্যু পর্যন্ত মুহূর্তে মুহূর্তে তাহার ক্রিয়াকলাপ লিপিবদ্ধ করিতে হইবে। এই লিপি বৃক্ষের স্বলিখিত এবং স্বাক্ষরিত হওয়া চাই।” জীবন অজ্ঞেয় নয়, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির মধ্যদিয়ে প্রকৃতি ও জীবনকে বোঝা সম্ভব।
কবিগুরু রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯০১ সালে বঙ্গদর্শন-এর আষাঢ় সংখ্যায় লিখেছিলেন ‘আচার্য জগদীশের জয়বার্তা’ নামে একটি প্রবন্ধ। শ্রাবণ সংখ্যায় জগদীশচন্দ্রের কাজের ওপর ভিত্তি করে রচনা করেন আরও একটি প্রবন্ধ ‘জড় কি সজীব?’ এই প্রবন্ধটি প্রসঙ্গে তিনি জগদীশচন্দ্র বসুকে লিখলেন - “তোমার নব আবিষ্কার সম্বন্ধে আমি একটি প্রবন্ধ লিখিয়াছি, ...ভুলচুক থাকিবার সম্ভাবনা আছে - দেখিয়া তুমি মনে মনে হাসিবে।” এর উত্তরে জগদীশচন্দ্র লিখলেন, “ তুমি যে গত মাসে আমার কার্যের আভাস বঙ্গদর্শনে লিখিয়াছিলে তাহা অতি সুন্দর হইয়াছে। তুমি যে এত সহজে বৈজ্ঞানিক সত্য স্থির রাখিয়া লিখিতে পার, ইহাতে আমি আশ্চর্য হইয়াছি।”
১০০ বছর পর আচার্য বসুর ‘অব্যক্ত’ আমাদের প্রকৃতি জগতের অজানা অনেক কিছু সম্পর্কে ভাবতে শেখায়। বস্তু জগৎ থেকে জীব জগৎকে বিচ্ছিন্নভাবে না দেখার যে পরম্পরা তিনি শুরু করেন সেটাই যে বিজ্ঞান গবেষণার মূলভিত্তি তা বললে অত্যুক্তি হবে না।