৫৮ বর্ষ ৪৬ সংখ্যা / ২ জুলাই, ২০২১ / ১৭ আষাঢ়, ১৪২৮
জাগ্রত নির্মল নতুন প্রাণেরা
বনবাণী ভট্টাচার্য
ইয়াসে বোধহয় বাতাসের দাপটের থেকেও জলের প্রমত্ততা ছিল বেশি। সে দাপট মেলাতে না মেলাতেই নিম্নচাপের ভ্রূকুটি। প্রায় সমস্ত দিন-রাত ‘ঝরঝর ঝরিছে বারিধারা’। কখন বসন্ত গেল বলে যে হাহাকার থাকে সাধারণত, এবার যেন বেদনার্ত খোঁজটা অন্যরকম - কখন পার হয়ে গেল আষাঢ়স্য প্রথম দিবস - কবে এলো দিন তারিখ মেলানো মনসুন? এতো বৃষ্টি আর বৃষ্টি সাতদিন ধরে।
প্রকৃতির কাজ প্রকৃতি করেছে - জলোচ্ছ্বাসে গরিবের শেষ সম্বলটুকু ভাসিয়ে নিয়ে গেছে প্রিয়জন থেকে শ্যামলী ধবলি পর্যন্ত সব। সমুদ্র উপকূলবাসী থেকে নদীপাড়ের মানুষের দুর্দশা অবর্ণনীয়। কিন্তু শহর কলকাতা লন্ডনের বদলে ভেনিস নগরী হয়ে উঠলো যে! জলমগ্ন বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন কলকাতা এবং মফস্সল শহরগুলিতে এই দুর্বহ জীবন কার অনুপ্রেরণায়? প্রকৃতি তার তাণ্ডব করেছে, তা বলে মানুষ তো ধ্বংসাত্মক হয়ে উঠতে পারে না - সেটা তো মানুষকে শোভা পায় না, সে কথা জানে সকলে। অথচ পাঁচ-ছয়দিন পার হয়ে গেল, জলমগ্ন এলাকায় পুনরুজ্জীবনের কোনো লক্ষণই ছিলনা। ঘরের শুকনো খাবার শেষ, ফ্রিজ স্বাভাবিকভাবেই চলে না, ঘরে আলো জ্বলে না, বিদ্যুৎ সংযোগ তখনও আসেনি। শিশু-বৃদ্ধদের নিয়ে কি অসম্ভব দুর্ভাবনার মধ্যে গৃহবাসীকে দিনপাত করতে হয়েছে, তা ভুক্তভোগী ছাড়া অন্যের কল্পনার বাইরে। বেশ সময় গেলেও জল নিষ্কাশন বা বিদ্যুৎ সংযোগের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলির পক্ষ থেকে কোনো মানুষ খোঁজ নিতে আসেনি বা কাউকে কোনো উদ্যোগ নিতে দেখাও যায়নি।
বজ্র-বিদ্যুতের সময় বড়োরা ছোটোদের শিখিয়েছেন, আলো দেখলে, গর্জন শুনে আর ভয় পেও না। শব্দের চেয়ে আলো দ্রুতগামী। বর্তমানে প্রশাসনিক বিবৃতি বা ক্ষমতাসীনদের বক্তৃতা যতটা দ্রুতগামী, ততটাই কাজের গতি শ্লথ। অথচ, বাম আমলে টিএমসি নেতৃত্ব আগুন লাগা থেকে ঝড়-তুফান মোকাবিলার প্রশ্নে সব সময়েই অগ্নিশর্মা এবং নেত্রী, বাম সরকার ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট জানে না বলে অহরহ ধিক্কার দিয়েছেন। বর্তমানের ম্যানেজমেন্ট জানা সরকারের, মানুষের জল-দুর্গতি থেকে মুক্তি ঘটাবার চেষ্টাটাই তো শূন্য। ম্যানেজমেন্ট জানলো বা না জানলো তাতে কি এসে যায় ওই দুর্গত মানুষগুলোর। আর এইসব কাজ করতে না পারার দায়ের জন্য সব সময়েই তো পূর্বতন বামফ্রন্ট সরকার নামের এক নন্দঘোষ আছে। আর এখন তো কেন্দ্রের সাম্প্রদায়িক বিজেপি সরকার হাতের কাছে,যাদের প্রতি রাজ্যবাসী রাশিকৃত ঘৃণা উগরে দিয়েছে। যা না, সেটাও হ্যাঁ - রাজ্য সরকার দুর্গত মানুষের পাশে আছে সর্বশক্তি নিয়ে, দুয়ারে সরকার, দুয়ারে রেশন, দুয়ারে ত্রাণ, দুয়ারের তো পাল্লা খোলাই দায়! তবে, নিরাশ্রয় মানুষের সংখ্যা এত বেশি যে প্রশাসন দুয়ারই দেখতে পায় না বোধহয়!
আর প্রশাসনের বিবৃতি অনুযায়ী কর্পোরেট-পোষিত মিডিয়ায় যত বেড, যত সেফ হোম, ওষুধ, পিপিই কিট এবং বর্তমানে ভ্যাকসিনেশনের প্রক্রিয়া দেখা যায়, শোনা যায়, ততটা মানুষের অভিজ্ঞতায় নেই। অন্যদিকে অক্সিজেন সিলিন্ডার আর ওষুধের কালোবাজারি রমরমা, কিন্তু হাসপাতালে হাহাকার। প্রশাসনের নাকের ডগায় এসব যত চলে, ততই রাজ্য প্রশাসনের সিংহ বিক্রমে করোনা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার আষাঢ়ে গল্প লম্বা হয়। সরকারগুলোর উদাসীনতা ও অবহেলার এই হননকালে, মানবতার প্রদীপ জ্বেলে চলেছে রেডভলান্টিয়াররা।
করোনা আবহে, আমফান-ইয়াসের মতো দুর্যোগে, যেমন ত্রাণের বিজ্ঞাপনমূলক কাজ আছে, শঠতা আছে, তেমনি অসহায় মানুষের সহায় হয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াবার লোকের সংখ্যাটাও কম নয়। বহু এনজিও, পাড়ার ক্লাব, সাংস্কৃতিক সঙ্ঘ, বিভিন্ন গণসংগঠন থেকে শুরু করে, ব্যক্তি উদ্যোগ - দুর্গত এই মানুষের জন্য ভরসা এবং সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে না দিলে, তাদের দুরবস্থার কোনো সীমা-পরিসীমা থাকত না। প্রকৃতির বিরূপতা, সরকারি অবহেলা ও অপদার্থতার সাথে দারিদ্র্যের মিশেল জীবনকে আরও নরক করে তুলত, যদি মানুষের এই স্বাভাবিক প্রবণতা এই দুর্যোগের মুহূর্তে প্রবল না হয়ে উঠত।
এই চরম অসহায়তার সময়ে, সমাজের যে শক্তি যতটুকুই এগিয়ে এসেছে, তা সবসময়েই মহতের পরিচয় বহন করে। কিন্তু রেডভলান্টিয়ার্সের কাজ, জনসেবার ইতিহাসে এক রক্তিম নক্ষত্র। কাজে নামার আগে এরা বিশেষ কোনো সংগঠিত শক্তি নয়, অথচ আজ এই মুহূর্তে পাহাড় থেকে সাগর, রাজ্যজুড়ে রেডভলান্টিয়ার্সের সাবলীল পদচারণা। ব্যক্তিগতভাবে এই স্বেচ্ছাসেবীরা, হয়তো এসএফআই, ডিওয়াইএফআই বা অন্য কোনো বামছাত্র-যুব সংগঠনের কর্মী-সংগঠক; চ্যালেঞ্জের সাহসটা বুক ঠুকে বিপদের মোকাবিলা করার অভ্যেস থেকেই তারা পেয়েছে। কিন্তু আজ যে রেডভলান্টিয়ার্স একটা বাহিনীর মর্যাদায় নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছে তার একটা মূল মন্ত্র তো অবশ্যই আছে।
যে অসংযত আত্মসুখের পথে সারা বিশ্বকে উদার অর্থনীতি নিয়ে চলেছে, সেই বিশ্বে আদর্শবোধের কথাটা খুবই বেমানান। ‘বীর ভোগ্যা বসুন্ধরায়’ টিকে থাকার যুদ্ধটা বেয়ারা রকমের বাস্তব। টিকে থাকার প্রশ্নে, কেউ কনুইয়ের গুঁতোয় অপরকে ঠেলে দেয়, কেউ ক্ষমতার বলে অন্যকে পায়ে পিষে মারে, কেউ অর্থের বলে মাথা কেনে। কিন্তু ‘মনুষ্যত্ব’ টাকা দিয়ে কেনা যায় না। রেডভলান্টিয়ার্স, তাদের এই জনকল্যাণের অভিযানে এই মনুষ্যত্ব, যাকে আজকের শাসক সম্প্রদায় নানা দয়া-দাক্ষিণ্যে, অনুদানে-অনুগ্রহে টুঁটি টিপে মেরে ফেলতে উদ্যত, জৈবজীবন ও মননকে আত্মপরতার গরলে বিষাক্ত করে তুলছে, ওই মনুষ্যত্বকেই চৈতন্যের অন্তঃপুরে পাহারা দিয়ে রেখে, মানুষের সমাজে কাজে নামার আদর্শটাকেই বীজমন্ত্রের মতো তাদের ছোট্ট অপরিণত নতুন জীবনে সুরক্ষিত করে চলেছে।
একটা সময় ছিল ‘‘দেশ যথার্থভাবে আত্মরক্ষা করে এসেছে, সমাজের মিলিত শক্তিতে। সমাজই বিদ্যার ব্যবস্থা করেছে, তৃষিতকে জল দিয়েছে, ক্ষুধিতকে অন্ন দিয়েছে, পূজার্থীকে মন্দির, অপরাধীকে দণ্ড, শ্রদ্ধেয়কে শ্রদ্ধা, গ্রামে গ্রামে দেশের চরিত্রকে রক্ষিত এবং তার শ্রীকে প্রতিষ্ঠিত করেছে।’’ সমাজে একদল বিত্তবান তো বরাবরই ছিল - কিন্তু অর্থের সম্মান তখন এতবড়ো ছিল না, যা আজকে তার জুটেছে। তবে ধনী তার ধনের দায়িত্ব স্বীকার করত। ‘‘ধন তখন অসামাজিক ছিল না, তখন প্রত্যেকের ধনে সমাজ ধনী হয়ে উঠত।’’ কিন্তু আজ তো ‘বিত্ত’ চরম অসামাজিক, যার ফলে প্রাকৃতিক বিপর্যয় বাদ দিয়েও, দৈনন্দিন জীবনেও তার সমাজবিরোধী তৎপরতায় মানুষ ভয়ানক বিপন্ন। আর সেই বিপন্নতা অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে আরও অস্বাভাবিক মূর্তি ধরে।
কিন্তু মানুষের মধ্যে সাধারণভাবে এক ধরনের শুভবোধ থাকে। আর সেই শুভবোধ চিরকালই যৌবনকে উদ্বেলিত করেছে। মানুষের সম্পদে-বিপদে তারাই তাদের সর্বস্ব পণ করে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে - অন্যায়ের বিরুদ্ধে মানুষের প্রতিবাদের ভাষাও তো তাদেরই। আজ যে বিরল কেশ, রুক্ষ-শীর্ণ বৃদ্ধের ছবি বর্ণপরিচয়ের পাতায় ভেসে ওঠে, যাঁর জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ কর্ম যে ‘বিধবা বিবাহ’ প্রচলন, সেই ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এই আন্দোলন সফল করেন তাঁর ৩৬ বছর বয়সে। তারও আগে, ভারত পথিক রামমোহন রায় সতীদাহ প্রথা নিবারণে সাফল্য অর্জন করেছেন মধ্য চল্লিশে। ভ্লাদিমির ইলিচ লেনিন, ১৯১৭-র রুশ বিপ্লবের মহড়ার মতো, ১৯০৫ সালের বিপ্লবে অবতীর্ণ হয়েছিলেন যখন, তখন তাঁর বয়স ৩৫। ১৮৪৮ সালে দুনিয়া কাঁপানো কমিউনিস্ট ইস্তাহার প্রকাশকালে কার্ল মার্কস-ফ্রেডরিক এঙ্গেলস তখনও তিরিশ বছরে। ১৭ বছরের ক্ষুদিরাম, তরুণ বিনয়-বাদল-দীনেশের স্মৃতিতে আজও তারুণ্য দামাল হয়ে ওঠে। আর নেতাজি সুভাষ, বিবেকানন্দের দুরন্ত যৌবন এখনও যুবশক্তিকে আবেগ-থরোথরো করে তোলে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শুরুর আগে, ছাত্র ফেডারেশন জন্মলাভ করে, ১৯৪৩ সালের মন্বন্তরে, সেদিন যারা মানুষের ত্রাণে সমস্ত বিপদ-বাধা ঠেলে মানুষের মুখে একটু ভাত, একটা পরনের কাপড় জোগাড়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরেছে, তারা এদেশেরই যুবশক্তি। তারাই ‘বিদেশি’ ইংরেজ শাসককে বাধ্য করেছিল কন্ট্রোলের দোকান খুলতে, যাতে অসহায়-পীড়িত মানুষকে বাঁচার একটু সুযোগ করে দেওয়া যায়। ১২৯২ (বাংলা) সালে, দুর্ভিক্ষপীড়িত বাঁকুড়া, বীরভূম জেলার আর্ত মানুষের ত্রাণে যিনি নিজে ৫০০ টাকা এবং আরও ৯৭০ টাকা সংগ্রহ করে দিয়েছিলেন, তিনি চব্বিশ বছরের তরুণ, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
তাঁর বহুমাত্রিক প্রতিভার বিস্তার ঘটেছে নানান সৃষ্টিশীলতায়। তারই একটি মুখ ১৯২২ সালে প্রতিষ্ঠিত শ্রীনিকেতন। জমিদার রবীন্দ্রনাথ পল্লি উন্নয়নে তাঁর জমিদারিভুক্ত গ্রামাঞ্চলে - ১) স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সংক্রান্ত কাজ ২) প্রাথমিক শিক্ষা ৩) গ্রামের জন্য রাস্তা তৈরি ও মেরামত, কূপখনন, জঙ্গল পরিষ্কার ৪) মহাজনি রাহুগ্রাস থেকে কৃষকদের মুক্ত করা ৫) কৃষি ও শিল্পের সুষ্ঠু ব্যবস্থা এবং ৬) সালিশি বিচারের ব্যবস্থার মতো ছ’ধরনের কাজ করেছেন। শ্রীনিকেতনে এত কাজের পরিসর ছিল না - কিন্তু বাইরের পৃথিবীতে, এসবের অভাবে গ্রামজীবন যে বন্ধ্যাত্বের মধ্যে আছে, তার থেকে গ্রামকে মুক্ত করার ইচ্ছের জন্মটা শ্রীনিকেতনে ছাত্রদের মধ্যে দেবার নিরন্তর প্রয়াস তিনি করেছেন। শ্রীনিকেতনের শিক্ষাসত্রের শিক্ষা ধারা এমনই, ছাত্ররা পারিবারিক পেশা গ্রহণে অনীহা প্রকাশ না করে সাগ্রহে যুক্ত হয়ে পড়তে পেরেছে পাঠ-শেষে। ১৯০১ সালে শান্তিনিকেতন ব্রহ্ম বিদ্যালয়েও ভগ্নদশা গ্রামোন্নয়নের লক্ষ্যে ছাত্রদের ‘সহায়ক’ দল গঠন করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। পরে শ্রীনিকেতনে পল্লি সংস্কারের কাজ শুরু হতে, নিজের সমাজ ও গ্রামের উন্নয়নে, ছাত্ররা সহায়ক নয় নিজের তাগিদে ব্রতী হয়ে উঠুক, এই অভিলাষে সহায়কদলের নতুন নামকরণ করলেন ‘ব্রতীদল’ বলে। ১৯৩০ সালে ব্রতীদলের বার্ষিক প্রতিবেদনে গ্রামে স্বাস্থ্যের কাজের হিসাবে দেখা যায় বীরভূমের ভুবনডাঙা বাহাদুরপুর সহ পাঁচটি গ্রামে ৫০৫৯২ গ্রেন কুইনাইন, ১১৯টি ডোবাতে ৫৪ পাউন্ড লিটার কেরোসিন ছেটানো হয় এবং ৫৮টি ডোবা বুজিয়ে দেয় ব্রতী দল। ১৯২৪ সালে বঙ্গচক্র গ্রামে ১০৭টি বাড়ি আগুনে ভস্মীভূত হয়। ব্রতীদল ১৪ মন চাল, ৩ সের ডাল ও নুন বিতরণ করে আশ্রয়হীন মানুষের পাশে দাঁড়ায়। ব্রতীদল, রবীন্দ্রনাথের কাছে ছিল স্বদেশের প্রতীক। রাজার দ্বারে নয়, মাতৃভূমির দ্বারেই তিনি প্রার্থনা করেছিলেন দেশ কল্যাণ ও আর্তের ত্রাণে তাঁর যে রূপকল্পনা, তাঁর যে কর্মমন্দির গড়ে তোলা, তার স্বার্থক রূপায়ণে ব্রতীদল যেন অবিচল থাকে।
একুশ শতকে, অতিমারী-বিধ্বস্ত ভারতে, দ্বিতীয় ঢেউয়ের পর প্রধানমন্ত্রী করোনা মোকাবিলায় স্কিল ইন্ডিয়া তৈরি করবেন বলে ঘোষণা করেছেন। রবীন্দ্রনাথ তাঁর ব্রতীদলকে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের বিকাশের লক্ষ্যে নানাভাবে প্রশিক্ষিত করেছিলেন - তাঁর সময়ে সে ছিল এক দুঃসাহসিক পদক্ষেপ। কিন্তু আজকে দেশের শাসককুল ত্রাণ থেকে শুরু করে নানা বাহিনী সৃষ্টিতে যতটা বিজ্ঞাপনে এগিয়ে, ততটা মাটিতে নয়। এবং রাজ্যের সার্বিক নৈতিক অবক্ষয়ে, ত্রাণ বিতরণ কোথাও কোথাও বিজ্ঞাপনধর্মী যেমন, তেমনি উৎসবধর্মীও হয়ে উঠেছে। রেডভলান্টিয়ার্স প্রলোভনের এই দুর্গম পথ অতিক্রম করে চলেছে তাদের সাধ্যমতো, আর তাই এই ত্যাগ ও আন্তরিকতায় মানুষের অকুণ্ঠ সহযোগিতার হাত ক্রমশ প্রসারিত হচ্ছে তাদের দিকে, যারা শুধু স্বাধীনতা সংগ্রাম নয় বাংলার নবজাগরণের উত্তরাধিকারের ঐতিহ্য রক্ষায় দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ। ঝড়ে, বন্যায়, রোগে, শোকে,অতিমারীতে বুদ্ধদেব মানুষকে রোগ-শোক-জরা মৃত্যু থেকে মুক্তি দেবার সন্ধানে রাজপ্রাসাদ ছেড়ে, রাজপুত্রের জীবন ত্যাগ করে পথে নেমেছিলেন। তিনি সফল হয়েছিলেন, অথবা হননি, বিচার তার নয়। তিনি মানব কল্যাণে সর্বস্ব ত্যাগ করে কঠিন ব্রতে অটল থেকেছিলেন, সেটা সত্য। রবীন্দ্রনাথ ব্রতীবালকদের উদ্দেশ্যে বলেন - ‘‘দেশ জয়ের অর্থ, দেশের মধ্যে যাঁরা দুঃখে, বিপদে নিমজ্জিত, যাঁরা নিপীড়িত, নিষ্পেষিত তাদের হৃদয় জয় করা। পৃথিবীর সর্বত্র দেখা যায় যে যাঁরা নিচে পড়ে আছে তাঁদের দুঃখ দূর করার জন্য বেশি লোক নেই।’’ কবিকে আশ্বস্ত করা যায়, 'চল যাই কাজে, মানব সমাজে' বলে রেডভলান্টিয়ার্স দুর্জয় সাহস ও সংকল্পে এই দুর্গম পথের অভিযাত্রী, পিঠে যাদের অক্সিজেন সিলিন্ডার, অথবা মধ্যরাত্রে অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে করোনা আক্রান্তকে নিয়ে যারা হাসপাতালের পথে, টিফিন কেরিয়ার হাতে করোনা আক্রান্ত পরিবারে উপস্থিত এবং যারা শ্রমজীবী ক্যান্টিনের কারিগর, তারা আজ ইয়াস-বিধ্বস্ত গ্রাম-শহরের দুর্গত-উপোসি মানুষের কাছেও ত্রাণ আর একরাশ সংবেদনশীল মন নিয়ে দাঁড়িয়ে।