E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৬০ বর্ষ ৪২ সংখ্যা / ২ জুন, ২০২৩ / ১৮ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০

লালঝান্ডাই মানুষকে ভরসা জোগাতে পারে

সুজন চক্রবর্তী


অস্থির সময় এটা। দেশজুড়েই। রাজ্যজুড়েও বটে। নী‍‌তি-নৈতিকতা-মূল্যবোধ সবকিছুকেই হারিয়ে দেবার একটা প্রবল প্রচেষ্টা। দেশের স্বাধীনতায় যাদের কোনো ভূমিকা ছিল না, তারাই আজ দেশ চালাচ্ছে। স্বাধীনতার স্বপ্ন কিংবা সাংবিধানিক মূল মন্ত্রগুলোকেই ক্রমশ তছনছ করে দিচ্ছে দেশের সরকার এবং শাসকদল। নতুন সংসদ ভবন তৈরি এবং উদ্বোধনের নামে যা করা হলো, তা এক কথায় অপ্রয়োজনীয়, চূড়ান্ত সংবিধান বিরোধী এবং মধ্যযুগীয়। নাগপুর-ওয়ালারা আইনসভা কিংবা বিচারব্যবস্থাকে ক্রমশ খাটো করে প্রশাসনকেই সর্বময় কর্তৃত্বের আধারে পরিণত করতে চায়। পূর্বতন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ তফশিলি সম্প্রদায়ের মানুষ বলে বিজেপি প্রচারের সুবিধা নেবার চেষ্টা করেছে, কিন্তু নতুন সংসদ ভবনের শিলান্যাসে তিনি ব্রাত্য। কিংবা একইভাবে উদ্বোধনে রাষ্ট্রপতি, যিনি আদিবাসী সমাজের মানুষ, তাঁকে আমন্ত্রণ করা পর্যন্ত হয়নি। সবই নরেন্দ্র মোদিময়। প্রশাসন কেন্দ্রিক। যা চূড়ান্তভাবেই বেআইনি, শিষ্টাচার বিরোধী এবং অসাংবিধানিক। দেশের বিরোধী দলগুলোর ঐক্যবদ্ধ প্রতিবাদ তাই স্বাভাবিক এবং সঙ্গত।

প্রায় সমতুল হালচাল এ রাজ্যের। দুর্নীতি, অনৈতিকতা, জবরদস্তি, দাপট, অগণতন্ত্র - তৃণমূলের আমলে এসব এখন রাজ্যের নিত্যসঙ্গী। আইনের শাসন নেই। বিরোধীশূন্য রাজনীতির নিদান। নাগরিক অধিকার ক্রমশই কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। শিক্ষা-কাজ-নারীর মর্যাদা প্রতিটি ক্ষেত্রেই আক্রমণ। নাগরিক না, মানুষ যেন প্রজা! কেনা গোলাম! রানিমার শাসন! যেন রাজতন্ত্র চলছে - এমনই একটা হাবভাব। মানুষ যেন হাঁপিয়ে উঠছে। শাসকের দল আর লুঠেরা যেন একাকার। প্রতিদিনই ধরা পড়ে যাচ্ছে মানুষের কাছে। রুখে দাঁড়াবার প্রস্তুতি রাজ্যজুড়ে।

এমন অবস্থা রাজ্যের যে, স্বাভাবিক, সাবলীল মনোভাব ব্যক্ত করাটাও যেন বিড়ম্বনা। বাংলা অভিধানের নানান শব্দ নিয়েও গোল বেঁধেছে। ‘চোর’ বললেই যেন তৃণমূল। তৃণমূল ছাড়া অন্য আরও কেউ যে চোর হতে পারে তৃণমূলের লোকেরাই তা মানতে চাইছে না। চোর বললেই ক্ষিপ্ত হয়ে যাচ্ছে। কি সুন্দর, সুমধুর আবেগযুক্ত সম্পর্কগুলোও কি ব্রাত্য হতে বসেছে? ‘ভাইপো’ ডাকলেই তোলাবাজ বলে মনে হচ্ছে কেন? মুখ্যমন্ত্রী শিলং-এ গিয়ে কাক্কু-উ-উ বলে সুর করে ডেকে দেবার পর ‘কালীঘাটের কাকু’ এখন বিখ্যাত। একে কালীঘাট, তায় বিশটা সম্পত্তি এবং ‘লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস’ সহ তিনটে কোম্পানির কাকু। ‘বস’ ভাইপো’র কর্মচারী। ‘কাকু’ ডাকটাও কি উঠে যাবে? তারপর পিসি! ভাবাই যায় না, তৃণমূল সরকারে না আসলে নানান সম্পর্কগুলোকে গালাগালির পর্যায়ে নিয়ে আসার যোগ্যতা কি কারও হতো?

‘সবান্ধবে’ অথবা ‘সপরিবারে’ শব্দবন্ধ দুটোই এরাজ্যের মানুষের কাছে ভালোবাসার আমন্ত্রণ হিসাবেই বরাবর চিহ্নিত হয়ে এসেছে। কিন্তু সবান্ধবে অ-পা’র প্রেসিডেন্সি জেল, সপরিবারে তৃণমূল বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্যর প্রেসিডেন্সি কিংবা বীর কেষ্টার তিহাড় জেল, শব্দ দুটোকে দুর্নীতি আর অপরাধের সঙ্গে যুক্ত করে দিয়েছে যে। কাকুর সাথে সাথে ভাইপো এবং পিসি সহযোগে ‘সপরিবারে’ একই পরিণতি দেখার অপেক্ষায় মানুষ। এবং সেটাই স্বাভাবিক। রাজ্যজুড়ে ভয়াবহ দুর্নীতি, প্রতিটি ক্ষেত্রেই। চাকরি বিক্রি কার্যত গোটা যুবসমাজের বিরুদ্ধেই রাজ্যের সরকারের চাপিয়ে দেওয়া একটা যুদ্ধ। কাজের অভাবে রাজ্য ছেড়ে ভিন্ন রাজ্যে কাজের সন্ধানে মানুষ। চূড়ান্ত সংকটে যুবসমাজ। মনরেগার কাজের টাকা, আবাস যোজনা, পঞ্চায়েত, পৌরসভা-সরকারের যে কোনো কাজের ক্ষেত্র সর্বত্রই লুঠ এবং দুর্নীতি। কয়লা-বালি-গোরু পাচার। সোনা পাচার। জমির রেকর্ড কেটে মালিকানা বদল। লুঠ, তোলাবাজি, চুরি, দুর্নীতি, জবরদস্তি - জেরবার হয়ে যাচ্ছে মানুষ।

এসবের বিরুদ্ধে কোনো ভূমিকা আছে সরকারের? রাজ্য বা কেন্দ্র যেই হোক না কেন, নিশ্চুপ, বরং ধামাচাপা দেবার প্রচেষ্টা। সম্প্রতি দুর্নীতির নানা খবর, তথ্যপ্রকাশ, তদন্ত, জিজ্ঞাসাবাদ, গ্রেফতার কোনো ক্ষেত্রেই রাজ্য বা কেন্দ্রীয় সরকারের কোনো সদর্থক ভূমিকা নেই। কোর্টের নির্দেশে এই প্রতিটি তদন্ত। বরং কোর্টের নির্দেশের বিরুদ্ধে অপরাধীদের পক্ষ নিয়ে রাজ্য সরকার কোটি কোটি টাকা খরচ করে তদন্ত বাধা দিতে আদালতে গেছে। উলটোদিকে কোর্টের নির্দেশ সত্ত্বেও সারদা, কিংবা নারদ মামলায় ছয়-আট বছরের মধ্যেও চার্জশিট দেওয়াবার কোনো ব্যবস্থা করতে পারল না কেন্দ্রীয় সরকার। এই দুই সরকারের ভূমিকা যদি ইতিবাচক হতো, তাহলে তদন্ত অনেকদূর এগোতে পারত। তৃণমূল-বিজেপি’র লড়াইটা দুর্নীতির বিরুদ্ধে নয়, বরং কে বেশি দুর্নীতি-চুরিতে যুক্ত এদের লড়াই তাই নিয়ে। যেন দুর্নীতিটাই স্বাভাবিক। দু’দলের নেতারাই যুক্ত। তৃণমূলের যত বড়ো নেতা, তত বড়ো চোর আর বেআইনি সম্পদ। নীতি, নৈতিকতার লেশমাত্র নেই এদের। পশ্চিমবাংলা এসব দেখতে অভ্যস্ত ছিল না। মানুষ বেশ বুঝতে পারছে। ক্রমশই বেশি বেশি করে মুখ খুলছে। সাম্প্রতিক ছোটোখাটো বিভিন্ন নির্বাচনে অথবা কর্মসূচিতে তার প্রতিফলন ঘটছে। ক’মাস আগে সাগরদিঘির উপনির্বাচনে মানুষ স্পষ্ট রায় দিল তৃণমূল এবং বিজেপি’র বিরুদ্ধে। তার আগেই শান্তিপুর এবং বালিগঞ্জের উপনির্বাচনে বামফ্রন্টের সিপিআই(এম) প্রার্থীর ভোট বাড়ল যথাক্রমে ১৫ এবং ৩০ শতাংশ, যদিও জিতেছে তৃণমূল। কিন্তু সাগরদিঘিতে হারল। বাম-কংগ্রেসের সাগরদিঘিতে জিতে যাওয়াটা বিজেপি-তৃণমূল কেউই হজম করতে পারল না। বিজেপি যেমন বলেছিল, তেমনই দলত্যাগ ঘটাল তৃণমূল। কিন্তু এটা কীসের ইঙ্গিত? স্পষ্ট হলো যে, বিজেপি থাকলেও, বাম-কংগ্রেসকে ভেঙে দেওয়াটাই তৃণমূলের লক্ষ্য। আসলে বিজেপি’রই এটা লক্ষ্য। সেটাই কার্যকর করছে তৃণমূল। এটা তৃণমূলের সাফল্য নয়, বরং দুর্বলতাকেই স্পষ্ট করে। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল জিতেছে ২১৫টি আসনে। তারপরেও অন্য দল থেকে ভাঙিয়ে আনতে হচ্ছে তৃণমূলে কীসের ভয়ে? ২৯৪-তে ২১৫। তাতেও নি‍‌শ্চিন্ত নয় তৃণমূল? একজন মাত্র কংগ্রেস। তাকেও ভাঙাতে হবে। এত ভয় কেন? ভয় পাচ্ছে বলেই তৃণমূল অন্য দল ভাঙাচ্ছে। তথ্যভিজ্ঞ মহল বলছে, এই ২১৫-তে কতজন দুর্নীতির দায়ে জেলে যাবে - সেটা একটা বড়ো প্রশ্ন। এছাড়াও অন্যদিকে পা বাড়িয়ে রেখেছে সেটাও বেশ কয়েকজন। আয়ারাম-গয়ারামের রাজনীতি এ বাংলা আগে দেখেনি। তৃণমূল আমলেই দেখছে। স্বভাবতই ২১৫ আসনেও তৃণমূল ভরসা পাচ্ছে না। এছাড়া বিজেপি’র জুতোতেই পা গলিয়ে তৃণমূল। বিরোধীশূন্য রাজনীতি চায়। তৃণমূল-বিজেপি ছাড়া আর কেউ যাতে না থাকে, উভয় দলই গণতন্ত্র-বিরোধী সেই মনোভাবেই চলে। কিন্তু এতে মানুষের রাগ যে বাড়ছে সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ থাকতে পারে না। গোটা দেশ পশ্চিমবাংলার রাজনীতির বিভিন্ন ধারাকে সাধারণ কতগুলো মর্যাদার চোখে দেখত। গোটা দেশে বহুক্ষেত্রেই বিকল্পের সন্ধান দিয়েছে বামপন্থীরা। নীতি-মূল্যবোধের রাজনীতি করেছে। গোটা দেশ সেই চোখেই এ রাজ্যকে দেখে এসেছে। কিন্তু এখন কী হচ্ছে? ভিন রাজ্যের কাছে নানা ক্ষেত্রেই ধিক্কৃত হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ।

বিজেপি’র সাংসদ অর্জুন সিং তৃণমূল নেতা। বিজেপি’র জেতা বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস তৃণমূলের বনগাঁর সভাপতি। এরকম অনেক। তৃণমূল ছাত্রকর্মী খুনে অভিযুক্ত মানস ভুঁইঞা কংগ্রেস থেকে তৃণমূলে যোগ দিলেই সাতখুন মাফ। তৃণমূলের বিধায়ক সত্যজিৎ বিশ্বাস খুনে অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা মুকুল রায় তখন বিজেপি-তে। বিজেপি’র জেতা বিধায়ক মুকুল রায় এখন আবার তৃণমূলে। অতএব সাতখুন মাফ। বিজেপি-তৃণমূলের আন্তঃসম্পর্কটা এরকমই। সবই নাগপুরে বাধা। কেউ ডায়রেক্টলি বিজেপি, তো কেউ ডায়রেক্টলি বিজেপি নয়, ইনডায়রেক্টলি। মুকুল রায়ের স্পষ্ট স্বীকারোক্তি, যা তৃণমূল-তাই বিজেপি।

অতএব নীতি, নৈতিকতা, মূল্যবোধ বিবর্জিত দু’টি দল। লুঠ-দুর্নীতি ভয়াবহ। চাইলে চিটফান্ড কেলেঙ্কারিতেই সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে সিবিআই তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে ঠিকমতো ব্যবস্থা নিতে পারত। কেন্দ্রের সরকার সেটা চায়নি। এখন নানাবিধ তদন্ত যা চলছে কোর্টের নির্দেশে, তাতে অপরাধীদের শাস্তির ব্যবস্থা করতেই হবে। সেটাই মানুষের দায়। সেটাই আমাদের সবার দায়িত্ব। বামপন্থীদের বিরুদ্ধে তৃণমূলের যাবতীয় রাগ কিংবা চক্রান্ত থাকবেই। মানুষকে সাথে নিয়ে বামপন্থীদেরই সেই লড়াইটা করতে হবে। তৃণমূল-বিজেপি পারস্পরিক বোঝাপড়া করেও তাকে ঠেকাতে পারবে না - ক্রমশই তা স্পষ্ট করতে হবে।

সময় যত যাচ্ছে মানুষের কাছে বাস্তব চিত্রটা ততই পরিষ্কার হচ্ছে। যারা মনে করেছিলেন বাম সরকারের অবসানে তৃণমূল সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে আরও অনেক ভালো হবে, তাদের একটা বড়ো অংশেরই বিশ্বাসভঙ্গ হয়েছে। মনে করছেন তৃণমূলের কথায় বিশ্বাস করে তারা ঠকে গেছেন। বিশেষত কংগ্রেস ঘরানার পুরনো মানুষ যারা জন্মলগ্ন থেকে তৃণমূল করছেন তারা ক্রমশই বুঝতে পারছেন। রাজনীতির দল না, এটা দুর্নীতি আর লুঠেরার দল। পুরনো এই কর্মীদের তৃণমূল দলের মধ্যেও কোনো মর্যাদা নেই, ব্রাত্য। সরে থাকছেন আর বিলাপ করছেন। মনে করছেন ঠকে গেছেন। অথবা তৃণমূলের কদর্য চেহারা দেখে যারা মনে করেছিলেন তৃণমূলকে ঠেকাতে হলে বি‍‌জেপি-কে চাই, বুঝতে পারছেন তারা আবারও ঠকেছেন। মুখে যাই বলুক তৃণমূলের বিরুদ্ধে বিজেপি কখনও শক্তিশালী ভূমিকা নেবেনা, অথবা মোদি সরকারের বিরুদ্ধে তৃণমূল কখনও সার্বিক বিরোধিতায় অংশ নেবে না। পরিত্রাণের পথ খুঁজছেন সেই মানুষও। অজস্র নতুন ছেলেমেয়ে, যুবক-যুবতী জীবনের অভিজ্ঞতায় পথ চিনতে চান। অজস্র পুরনো মানুষ, এমনকী তৃণমূলসহ বাম-বিরোধী নানান অংশের মানুষ ভরসাযোগ্য লড়াইয়ের পথ খুঁজছেন। ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের দিশা এই মানুষেরা আমাদের কাছে আশা করে। সময় যত যাচ্ছে ভয় চেপে বসছে শাসকদলের। পঞ্চায়েত নির্বাচন এখনও ঘোষণা করছে না। অক্টোবর, ডিসেম্বর, ফেব্রুয়ারি, এপ্রিল - চার বার সময় বদল করেছে। নবজোয়ারের নাম করে রাজ্যজুড়ে চলছে তিনশত কোটি টাকার প্রোজেক্ট। ভোট লুঠের অনুশীলন করতে গণখোঁয়াড়। ছ’দফা বাউন্সার আর দু’হাজার পুলিশ কর্মীর নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ভেদ করে তৃণমূল কর্মীদের বিক্ষোভ, মারামারি, সার্কাস, লুঠ ছিনতাই। কোটি টাকার নিরাপত্তাতেও ওরা স্থিরতা পাচ্ছে না। সময় যত যাচ্ছে, তত ভয় চেপে বসছে ওদের। গুলি, বোমা, বিস্ফোরণ। লুঠের বখরার লড়াইতে রোজই আক্রান্ত, খুন হচ্ছে তৃণমূল কর্মীরা। ভোটের সুনিশ্চিত অধিকার চায় মানুষ। আর তা হলেই তৃণমূল অথবা বিজেপি’র বিরুদ্ধে রায় স্পষ্ট করবে মানুষ। আতঙ্কের দোলাচলে শাসকেরা।

তাই আবার হুঙ্কার শুরু হয়েছে। খোদ মুখ্যমন্ত্রীর গলায় দুষ্কৃতী-ভাষণ। সুব্রত মুখার্জি মমতা ব্যানার্জির সম্পর্কে কী কী বলেছেন তা সবাই জানে। অথচ মৃত মানুষকে টেনে মিথ্যা বলে দুষ্কৃতী-হুমকি দিলেন বামপন্থী কর্মীদের। প্ররোচনা সৃষ্টি করলেন। বেআইনি কাজে দলীয় কর্মীদের উৎসাহ দিলেন। দু-একটা জায়গায় তার প্রতিফলন ঘটলেও, রাজ্যজুড়ে তৃণমূল কর্মীরা বরং নানান দোলাচল আর দুশ্চিন্তার মধ্যেই দিন কাটাচ্ছেন। ফোঁস করলেও ছোবল মারার ক্ষমতা ওদের নেই। প্রতিটি মানুষ শুনতে চায়, জানতে চায় ভবিতব্যটা কী। মিছিল সভা তো বটেই, প্রতিটা মানুষের দরজায় আমাদের হাজির হতে হবে। এটাই সময়। বুথ ভাগ করে প্রতিটি পাড়ায় প্রতিটি মানুষের কাছে যাবার এটাই সময়। বসা, গল্প করা, মনের কথার আদান-প্রদান। ভালোমন্দর খবর নেওয়া, দুঃখের-ক্ষোভের বা অভিমানের কথা শোনা। গ্রামের খবর, পঞ্চায়েতের কাজের খবর, ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া, কাজের খবর। মাটির কাছে কান পাতো। মানুষ কিছু বলতে চায়। একতরফা বলা না, ভালোভাবে শোনা। সঙ্গে সই সংগ্রহ। বুথের সব বাড়িতেই কি যাওয়া সম্ভব? সম্ভব। অন্তত ৭০-৮০ ভাগ তো বটেই। পরিবারের প্রত্যেকটি লোকের সঙ্গেই কথা বলতে হবে। সই নিতে হবে। ভোটের আগে যেমন স্ক্রুটিনি হয়, তেমনভাবে সবার মন বুঝে নেবার এটাই তো সুযোগ। যারা এতদিন ভয় দেখিয়েছে, তারা বরং এখন ভয় পাচ্ছে। বাকি সমস্ত মানুষকে টেনে নেবার চেষ্টার এটাই সময়। তৃণমূল এখন ভাজা পাপড়ের দশা। একটু চাপ পড়লেই ঝুর ঝুর করে ভেঙে পড়বে। যেভাবে বিজেপি দেশকে চালাতে চাইছে তা বিপজ্জনক। যেভাবে তৃণমূল এ রাজ্যে চলছে তার বিপদটাও স্পষ্ট। লুঠেরার শক্তি আর বিভাজনের শক্তি। এই দুয়ের বিরুদ্ধে সমস্ত মানুষের ঐক্যবদ্ধ লড়াই। ধ্বংসের দিকে নিয়ে যেতে চায় ওরা। ঠেকাতে হবে। সেই দায়িত্ব বামপন্থীদের বটেই।

গত কয়েক বছরে অনেক ধরনের নাটক এ রাজ্য দেখেছে। অনৈতিকতা, মূল্যবোধহীনতা আমাদের সমাজে গেড়ে বসাবার চেষ্টা করেছে। মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা, নীতির রাজনীতি, আইনের শাসন, গণতন্ত্র কোনো কিছুর তোয়াক্কা করেনি। সাংবিধানিক নীতি পদ্ধতি সব তছনছ করেছে। এসব মেনে নেওয়া যায় না।

দলবদলের খেলা চলেছে। উন্নয়নের জোয়ারে ভাসতে ভাসতে সব নাকি তৃণমূল। তারপর দম বন্ধ হয়ে তৃণমূল থেকে বিজেপি। এবার আবার দম কষ্টে বিজেপি ছেড়ে তৃণমূল। সবই ধরা পড়ে গেছে। দিল্লি-রাজ্যের শাসকের খেলা ধরা পড়ে গেছে। এখন তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি বা বিজেপি ছেড়ে তৃণমূল - কোনটারই দম নেই। অনেক ঠকানো হয়েছে মানুষকে। আর না। বরং ক্রমশই স্পষ্ট হয়েছে মানুষের মনোভাব। লাল ঝান্ডার পথেই ফিরতে চায় মানুষ। প্রতিটি জেলায় তারই প্রতিফলন ঘটছে। কম বয়স, মাঝ বয়স, পুরনো সমর্থক-কর্মী সবাই মিলে গ্রামের পথে বাম। বামের পথে মানুষ। মিছিলের আওয়াজ বাড়ছে। তেজ বাড়ছে। বিজেপি-তৃণমূলের উসকানিকে অগ্রাহ্য করে এগিয়ে চলার এটাই সময়। লুঠেরার শক্তি আর বিভাজনের শক্তির বিরুদ্ধে ঐক্য রচনার এটাই সময়। লাল ঝান্ডাই মানুষকে ভরসা জোগাতে পারে। মানুষের ভরসাতেই লাল ঝান্ডা এগোবে। এটাই সময়।