E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৬০ বর্ষ ৪২ সংখ্যা / ২ জুন, ২০২৩ / ১৮ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০

পার্টির সাম্প্রতিক মতাদর্শগত দলিলে পরিবেশ রক্ষার প্রসঙ্গ

তপন মিশ্র


কমিউনিস্টরা দূরদর্শী হন। এই দূর-দর্শন বৈজ্ঞানিক তথ্য নির্ভর। কয়েকদিন আগে জোশীমঠের ভূস্খলন যে হিমালয়ের ভঙ্গুর বাস্তুতন্ত্রের উপর ছিল পরিকল্পিত সরকারি অত্যাচার, ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে সিপিআই(এম) তার পূর্বাভাস দেয়। ২০২২ সালে কান্নুরে ২৩তম পার্টি কংগ্রেসে বলা হয়ঃ “অবৈজ্ঞানিকভাবে তৈরি পরিকাঠামো-প্রকল্পের কারণে ভঙ্গুর হিমালয় অঞ্চলের ক্ষতি আরও জটিল সমস্যার তৈরি করছে।” (ধারা-২.৯৮)। আজ থেকে প্রায় দেড়শ বছর আগে মার্কস এবং এঙ্গেলস তাঁদের লেখা বিভিন্ন দলিলে একই ধরনের আশঙ্কা ব্যক্ত করেন। এই মতাদর্শকে সামনে রেখে সোভিয়েত সহ অন্যান্য সমাজতান্ত্রিক দেশগুলি উন্নয়নের সাথে পরিবেশ রক্ষার প্রসঙ্গটি সমান গুরুত্ব দেয়। পরিবেশ রক্ষার প্রসঙ্গ এক রাজনৈতিক প্রসঙ্গ। একারণে সিপিআই(এম) লাগাতারভাবে এই সংক্রান্ত আলোচনার দিকনির্দেশ করা এবং আন্দোলনের মতাদর্শগত ভিত্তি তৈরির চেষ্টা করে আসছে। পরিবেশ রক্ষার সঙ্গে প্রাকৃতিক সম্পদের আহরণ এবং সেই সম্পদের সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে আছে মানুষের অধিকারের প্রশ্ন, উৎপাদনের পদ্ধতির ব্যবহার, বর্জ্যের ব্যবস্থাপনা ইত্যদি। এই সমস্ত বিষয় রাষ্ট্রের রাজনৈতিক ইচ্ছা-অনিচ্ছার উপর নির্ভরশীল। কেবল দেশের অভ্যন্তরের নীতি পরিবেশ রক্ষার সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দিতে সক্ষম হয় না। এখানে অনেক আন্তর্জাতিক রাজনীতির প্রসঙ্গ আসতে বাধ্য।

মার্কসের চিন্তা এবং আধুনিককালের পরিবেশ সমস্যাকে সামনে রেখে পার্টির একবিংশতিতম কংগ্রেসের আহ্বান ছিলঃ “সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম, সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বায়নের দ্বারা আরোপিত নয়া-উদারনীতির বিরুদ্ধে বহুমুখী সংগ্রাম, পরিবেশ রক্ষার আন্দোলন এবং জলবায়ু ন্যায়বিচারের আন্দোলনকে একত্রিত করে একটি শক্তিশালী সাম্রাজ্যবাদবিরোধী আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।” (ধারা ১.৪২)

১৯৯২ সালে বসুন্ধরা সম্মেলনের কনভেনশন অন বায়োলজিক্যাল ডাইভারসিটি-তে তার হুবহু প্রতিফলন দেখতে পাওয়া যায়। এই প্রতিবেদনে বলা হয় “বায়ুমণ্ডলে কার্বনের জায়গা (carbon space) আস্তে আস্তে ফুরিয়ে আসছে। মানুষের প্রশ্বাসে ঘন বিষ ঢোকার আগে কার্বন নির্গমনের উপর রাস টানতে হবে। যেটুকু জায়গা বেঁচে আছে সেখানে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলির অধিকারের স্বীকৃতি দিতে হবে।”

ফ্রেডেরিক এঙ্গেলস লেখেন যে, প্রকৃতিকে আলাদা আলাদা অংশে ভাগ করা, প্রাকৃতিক প্রক্রিয়াসমূহকে এবং বস্তুকে বিভিন্ন গোষ্ঠীতে শ্রেণিবদ্ধ করা, একটি সংগঠিত দেহের অভ্যন্তরীণ শারীরস্থানকে আলাদা করে দেখার মতো। তিনি বিষয়টি অনুধাবন করেছিলেন আজ থেকে ১৪৩ বছর আগে (স্যোসিয়ালিজমঃ ইউটোপিয়ান অ্যান্ড সায়েন্টিফিক, ১৮৮০)। তিনি আরও লেখেন যে, গত ৪০০ বছর ধরে প্রকৃতির এই বিষয়গুলিকে আলাদা-করে পর্যবেক্ষণ করার অভ্যাস মানুষের মধ্যে তৈরি হয়েছে।

মার্কস এবং এঙ্গেলস যে সময়ে এই সমস্যার কথা বলছেন তখন ‘বিশ্ব উষ্ণায়ন’ বা ‘জলবায়ু পরিবর্তন’ সম্পর্কে কোনো ধারণাই বিজ্ঞান গবেষণায় প্রতফলিত হয়নি। এ কারণেই সিপিআই(এম) বিশ্বব্যাপী এই অভূতপূর্ব পরিবেশ সংকটকে বিভিন্ন সময়ে সামগ্রিকভাবে বিশ্লেষণ করেছে।

কিছু মতাদর্শগত প্রশ্ন

২০১২ সালে সিপিআই(এম) বিশতম পার্টি কংগ্রেসের মতাদর্শগত দলিলে ভারতে এবং আন্তর্জাতিক স্তরে পরিবেশ রক্ষার বেশকিছু বিষয় তুলে ধরে। বিশ্বের বিকাশমান সামাজিক দ্বন্দ্বগুলির ব্যাখ্যা করতে গিয়ে এই দলিলে বলা হয়েছে যে, সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, পুঁজিবাদের মৌলিক দ্বন্দ্ব, উৎপাদনের সামাজিক চরিত্র এবং ব্যক্তিমালিকরা প্রাকৃতিক সম্পদ গ্রাস করার প্রবণতার মধ্যদিয়ে মুনাফাকে সর্বাধিক করতে ব্যস্ত। ফলে বৈশ্বিক পরিবেশের অত্যন্ত গুরুতর অবক্ষয় ঘটছে। এই দলিলে আরও বলা হয় যে, বিশ্ব উষ্ণায়ন নিয়ন্ত্রণ এবং গ্রিন হাউস নির্গমন হ্রাস করার ভার উন্নয়নশীল দেশগুলির উপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। ১৯৯৭ সালে কিয়োটো চুক্তিতে সিদ্ধান্ত হয় যে, বিশ্ব উষ্ণায়নের সমস্যা সবার কিন্তু এই সমস্যা সমাধানে বেশি দায়িত্ব শিল্পোন্নত দেশগুলিকে নিতে হবে। কারণ ঐতিহাসিক নির্গমনজনিত দূষণ সর্বাধিক করার জন্য এবং বর্তমানেও প্রাকৃতিক সম্পদের লুণ্ঠন অব্যাহত রাখতে তারা সক্রিয়।

সিপিআই(এম)’র ২১ এবং ২২তম কংগ্রেসে

২০১৫ সালের এপ্রিল মাসে অনুষ্ঠিত সিপিআই(এম)’র ২১তম কংগ্রেসে পরিবেশ রক্ষার আন্দোলনকে বাম এবং গণতান্ত্রিক শক্তির একটি অন্যতম কর্মসূচি হিসাবে গ্রহণ করা হয়। ওই কর্মসূচিতে বলা হয়ঃ “প্রতিটি উৎপাদন ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে কার্যকর নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমন কমাতে পদক্ষেপ গ্রহণ, সকল ক্ষেত্রে শক্তি ব্যবহারে দক্ষতা বৃদ্ধি, পুনর্নবিকরণযোগ্য শক্তির অধিক ব্যবহার, শক্তি ব্যবহারে বৈষম্য হ্রাস, নদী ও অন্যান্য জলাশয়ের দূষণ নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদির উপর গুরুত্ব দেওয়া হবে। কোনভাবেই জল-সম্পদের বেসরকারিকরণ করা যাবে না।” এই কংগ্রেস যখন অনুষ্ঠিত হচ্ছে তখনও প্যারিস চুক্তি (কনফারেন্স অব পার্টিস-২১ - সিওপি-২১) হয়নি এবং দেশগুলি তাদের ন্যাশনালি ডিটারমাইন্ড কন্ট্রিবিউশন জমা দেয়নি। ২১তম কংগ্রেসের প্রতিবেদনে পার্টি উল্লেখ করছে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য উন্নত দেশগুলির প্রতিশ্রুতি না মানা পৃথিবীকে ৩-৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বৃদ্ধির দিকে নিয়ে যেতে পারে। পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমাবদ্ধ না রাখতে পারলে সারা বিশ্ব ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাবে।

২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত ২২তম পার্টি কংগ্রেস তৎকালীন বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক পরিবেশ রাজনৈতিক প্রসঙ্গে আলোকপাত করে। ২০১৫ সালের জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত সিওপি-তে বায়ুমণ্ডলে গ্রিন হাউস গ্যাস কমানোর যে সিদ্ধান্ত হয় আমেরিকা তার বিরোধিতা করে। এই কংগ্রেসের দলিলে উল্লেখিত হয়ঃ “মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্যারিস চুক্তিকে সমর্থন করবে না এই ঘোষণার কারণে বছরের পর বছর ধরে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের জন্য পরিবেশগত ক্ষতির প্রবণতা ফিরিয়ে আনার বিরুদ্ধে লড়াই আবারও স্থবির হয়ে পড়েছে।” (১.৪২)

কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্ত

২০২১ সালের আগস্ট মাসে সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় ভারত সরকারকে বলা হয় যে, জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত আন্তঃসরকারি প্যানেল (আইপিসিসি)-এর সর্বশেষ প্রতিবেদনঃ ‘জলবায়ু পরিবর্তন ২০২১: ভৌতবিজ্ঞানের ভিত্তি’-তে বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রবণতা নিয়ে আসন্ন বিপদ সম্পর্কে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশকেও সতর্ক করা হয়েছে। এতে আরও বলা হয়েছে যে, ভারত মহাসাগর অন্যগুলির তুলনায় দ্রুত উষ্ণ হচ্ছে যার ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, ঘন ঘন এবং তীব্র উপকূলীয় বন্যা হচ্ছে। ভারতের উপকূলরেখার ২৮.৬ মিলিয়ন মানুষ মারাত্মক বন্যা এবং ঘন ঘন ঘূর্ণিঝড়ের সম্মুখীন হতে যাচ্ছে।

২৩তম কংগ্রেসে

২৩তম কংগ্রেসে বিশ্ব পরিবেশ সংকট সম্পর্কে আরও বিশদ আলোচনা সংগঠিত হয়। এই দলিলের ১.৬৩ এবং ১.৬৪ ধারায় আইপিসিসি-র ৬ষ্ঠ প্রতিবেদনের তিনটি রিপোর্ট অধ্যয়ন করে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয় যে, বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা ইতিমধ্যে প্রাক্-শিল্পবিপ্লব যুগের তুলনায় প্রায় ১.১ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড বেশি হয়ে গেছে। তাই সিওপি-২৬-এ নির্ধারিত ১.৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা বৃদ্ধির সীমায় পৌঁছানোর জন্য খুব কম সময়ের ব্যবধান রয়েছে। এই সংকটের চরম অভিঘাত পড়ছে মূলত বিষুবমণ্ডলীয় উন্নয়নশীল দেশগুলির উপর।

এই দলিলের ১.৬৫ ধারায় বলা হয় যে, উপরোক্ত আলোচনা থেকে জানা যায় - কার্বন নির্গমনের হার যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে ২০৩০ সাল নাগাদ নির্গমন ৫০ শতাংশ হ্রাস পাওয়ার বদলে ১৬ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। ১.৬৬ ধারায় বলা হয় - ২০০৯ সালে কোপেনহেগেন জলবায়ু সম্মেলনে আমেরিকা সহ উন্নত দেশগুলি বার্ষিক ১০,০০০ কোটি ডলার শিল্পে অনুন্নত দেশগুলিকে বিকল্প শক্তির ব্যবহার বৃদ্ধিতে সাহায্য করার জন্য প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু তা পালিত হয়নি।

১.৬৭ এবং ১.৭৮ ধারায় ঘোষণা করা হয় যে, বৈশ্বিক স্তরে সিপিআই(এম) নয়া-উদারনীতির বিরুদ্ধে, বিশ্বের পরিবেশের বিপজ্জনক অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে এবং সর্বজনীন জলবায়ু ন্যায়বিচারের জন্য লড়াই করে যাবে। ২.৯৮ ধারায় বিগত কয়েক বছরে আমাদের দেশে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রত্যক্ষ প্রভাবের কারণে অধিক বৃষ্টিপাত, বন্যা, উপকূলীয় ভাঙন, সমুদ্রতলের বৃদ্ধি প্রভৃতি কৃষক এবং মৎস্যজীবীদের জীবনে অকথ্য যন্ত্রণা নামিয়ে এনেছে।

ধারা ২.৯৯ আবার বলা হয় যে, ভারত সরকার জলবায়ু পরিবর্তনের বিভিন্ন ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে কোনো ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি বরং আমাদের দেশের পরিবেশ রক্ষা সম্পর্কিত পূর্বের সমস্ত আইনকে লঘু করেছে। সরকার এনভায়রনমেন্টাল ইমপ্যাক্ট অ্যাসেসমেন্ট আইন, অরণ্য আইন, খনি ও খনিজ সম্পদ সম্পর্কিত আইনসমূহের পরিবর্তন করে অরণ্য সম্পদের বাণিজ্যিকীকরণের দিকে এগোচ্ছে। পৃথিবীর শতাধিক দেশের ২০৩০ সালের মধ্যে অরণ্য ধ্বংস বন্ধ করার যে সিদ্ধান্ত তাতে আমাদের সরকার যুক্ত হতে চাইছে না।

মার্কস এবং এঙ্গেলসের উদ্বেগ

কার্ল মার্কস তাঁর সময়কালে অর্থাৎ ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে পরিবেশ রক্ষার কয়েকটি গুরুত্বপুর্ণ বিষয়ে আলোচনা করেন। প্রথমটি হলো - জার্মানির রাইন উপত্যকায় ব্ল্যাক-ফরেস্ট থেকে বনবাসীদের কাষ্ঠ সম্পদ (বড়ো গাছ নয়) সংগ্রহের প্রসঙ্গ। অরণ্য ব্যক্তি মালিকানায় থাকায় সেখান থেকে শীতের সময় অরণ্যের নিচে পড়ে থাকা ডালপালা সংগ্রহে বনবাসীদের অধিকার প্রসঙ্গে মার্কসের কিছু স্পষ্ট বক্তব্য পাওয়া যায়। বন মালিকদের সন্তুষ্ট করতে অরণ্যে গাছ থেকে পড়ে যাওয়া ডালপালা সংগ্রহকে বেআইনি এবং বিচারযোগ্য অপরাধ বলে সরকার আইন করে। মার্কস এর সক্রিয় বিরোধিতা করে ১৮৪২ সালে ‘রেইনাস-জাইতুং’ পত্রিকায় লিখতে গিয়ে উল্লেখ করেন, “যেমন ধনীদের পক্ষে রাস্তায় বিতরণ করা ভিক্ষার দাবি করা উচিত নয়, তেমনই প্রকৃতির এই ভিক্ষার (বৃক্ষ থেকে পড়ে যাওয়া মৃত ডালপালা) ক্ষেত্রেও দাবিদার হওয়া অপরাধ।” মার্কস আরও লেখেন, অরণ্যের এই সম্পদ “দরিদ্রের প্রথাগত অধিকার”। পৃথিবীর সমস্ত দেশে আদিম যুগ থেকে দরিদ্র বনবাসীরা অরণ্যের রক্ষক, কারণ তারা বাস্তুতন্ত্র নির্ভর মানুষ, এবং তাদের দারিদ্র্য এখনও তাদের বাস্তুতন্ত্র নির্ভর থাকতে বাধ্য করছে। এই আইনের সমালোচনা করে মার্কসের আহ্বান ছিলঃ প্রাকৃতিক সম্পদের উপর দরিদ্র মানুষের পরম্পরাগত অধিকার (Universal customary rights of the poor) প্রতিষ্ঠা করতে হবে। (রেইনাস জাইতুং - Rheinische Zeitung, No. 298, Supplement, October 25, 1842)।

এই চিন্তার সঙ্গে সাযুজ্য রেখে ২০১৫ সালে ২১তম পার্টি কংগ্রেসের আহ্বান ছিলঃ “সরকার কয়লা জাতীয়করণ আইন সংশোধন করে খনির বেসরকারিকরণের জন্য আইন পাস করেছে যা এক্ষেত্রে বৈদেশিক বিনিয়োগকে উৎসাহিত করছে। ফলে বনাঞ্চলে খনন ও বিদ্যুতের বিপুল সংখ্যক প্রকল্পকে পরিবেশগত ছাড়পত্র দেওয়া হচ্ছে। এটি সেই অঞ্চলে পরম্পরাগতভাবে বসবাসকারী উপজাতি জনগণের অধিকার ও পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে।” (ধারা-২.৯)।

মার্কস তৎকালীন ব্রিটেনের শ্রমিকদের মহল্লায় দূষণ এবং বেঁচে থাকার ন্যূনতম চাহিদার অভাব সম্পর্কে লেখেন (ইকনোমিক অ্যান্ড ফিলোজফিক্যাল ম্যানুসক্রিপ্টস, ১৮৪৪) - শ্রমিকদের জন্য প্রয়োজনীয় বাতাসেরও অভাব ছিল শ্রমিক বসতিগুলিতে। ওরা কাজের পর যেন এক গুহাজীবী মানুষের মতো যে যার গুহায় ফিরে আসত। সে যেন ছিল সভ্যতার এক আদিম যুগের এক মহামারীর দূষিত নিঃশ্বাস। তাদের এই অবস্থা যেন ছিল মৃতদেহ রাখার স্থান, যার জন্য তাকে মূল্য দিতে হতো।

সিপিআই(এম)-এর বিভিন্ন সময়ের সিদ্ধান্ত আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, পরিবেশ রক্ষার প্রসঙ্গ একটি রাজনৈতিক বিষয়। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রথম আঘাত আসবে প্রান্তিক মানুষের উপর যাদের প্রাকৃতিক দুর্যোগের থেকে নিজেদের রক্ষা করার জন্য অভিযোজন ক্ষমতা নেই বললেই চলে। আন্তর্জাতিক, জাতীয় এবং নিজের এলাকায় পরিবেশ রক্ষার আন্দোলনকে রাজনৈতিক আন্দোলনের অ্যাজেন্ডা হিসাবে দেখা সেই কারণেই জরুরি এবং এই আন্দোলনের জন্য ব্যাপক মঞ্চ তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করা আবশ্যক।