৫৮ বর্ষ ৮ম সংখ্যা / ২ অক্টোবর ২০২০ / ১৫ আশ্বিন ১৪২৭
কৃষক বিরোধী আইনের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে প্রতিবাদ কর্মসূচি
নভেম্বরে দিল্লি অভিযান
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ কেন্দ্রের কৃষক বিরোধী নতুন আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আন্দোলনকে তীব্র করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সারাভারত কিষান সংঘর্ষ কো-অর্ডিনেশন কমিটি। ২৯ সেপ্টেম্বর সমিতির নেতৃবৃন্দ বৈঠকে বসে রাজ্যস্তরে আন্দোলনের পাশাপাশি সর্বভারতীয়স্তরে প্রতিবাদ আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। এই প্রতিবাদ আন্দোলনের শীর্ষে ২৬-২৭ নভেম্বর ‘দিল্লি চলো’ অভিযান হবে। এই কর্মসূচিতে সারা দেশের কৃষকরা উপস্থিত থাকবেন।
এদিনের বৈঠক শেষে জানানো হয়েছে, বিভিন্ন রাজ্যে আন্দোলন চলছে। গ্রাম ও ব্লকস্তরে সভা হবে। মান্ডিস্তরে সভা করে কৃষকদের কাছে কেন এই বিল সর্বনাশা, তা তুলে ধরা হবে। পাঞ্জাবে রেল রোকো আন্দোলন হবে। ৬ অক্টোবর হরিয়ানার উপ-মুখ্যমন্ত্রী দুষ্মন্ত চৌতালার পদত্যাগের দাবিতে তাঁর বাসভবনের সামনে কৃষক বিক্ষোভের ডাক দেওয়া হয়েছে। কর্ণাটকে ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় আইন এবং রাজ্যস্তরের আইনের বিরুদ্ধে ব্যাপক আন্দোলন শুরু হয়েছে। তা চালিয়ে যাওয়া হবে। ২ অক্টোবর সারা ভারতের কৃষকরা কৃষক বিরোধী আইনের যারা বিরোধিতা করেননি, সেই সমস্ত রাজনৈতিক দল ও নেতাদের সামাজিক বয়কটের শপথ নেবেন। গ্রামস্তরে এই আইনের বিরুদ্ধে প্রস্তাব নেওয়া হবে। ১৪ অক্টোবর পালিত হবে ন্যূনতম সংগ্রহ মূল্য অধিকার দিবস। কেন্দ্রীয় সরকার অসত্য প্রচার করছে যে, তারা স্বামীনাথন কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী ন্যূনতম সহায়ক মূল্য দিচ্ছে কৃষকদের। এই মিথ্যা প্রচারের প্রতিবাদ করা হবে। এই সমস্ত প্রতিবাদ কর্মসূচির শীর্ষে হবে ‘দিল্লি চলো’ অভিযান।
এদিন কৃষক সংঘর্ষ সমিতি বলেছে, কেন্দ্রীয় বিল পাশের পাঁচদিনের মাথায় কৃষকেরা সারা ভারতে ব্যাপক প্রতিবাদে শামিল হয়েছিলেন। ২৫ সেপ্টেম্বর ঐতিহাসিক কৃষক বিক্ষোভ হয়েছে। কোথাও অবরোধ, কোথাও চাক্কা জ্যাম, কোথাও বিলের কপি পুড়িয়ে প্রতিবাদ হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার দাবি করেছে প্রতিবাদ শুধু উত্তর ভারতে সীমাবদ্ধ। অথচ দেশজুড়ে প্রতিবাদ হয়েছে। তামিলনাডুতে বিজেপি-বান্ধব রাজ্য সরকার থাকা সত্ত্বেও হাজার হাজার কৃষক পথে নেমেছেন, গ্রেপ্তার হয়েছেন ১১ হাজার। কর্ণাটকে ২৮ সেপ্টেম্বর সফল বন্ধ পালিত হয়েছে, এই লড়াই লাগাতার চলবে।
কৃষক সংঘর্ষ সমিতি এদিন বলেছে, কৃষকদের বিক্ষোভকে মর্যাদা দিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের উচিত এই আইন রূপায়ণ থেকে বাইরে থাকা। বিরোধী দলগুলির পরিচালিত রাজ্যসরকারের কাছে আবেদন, রাজ্যে এই আইন প্রয়োগ না করার আইনি পথ অবলম্বন করুন। রাজ্য বিধানসভাকে এই আইনের বিরুদ্ধে প্রস্তাব নেবার আহ্বানও জানিয়েছে কমিটি।
এদিন এক সাংবাদিক সম্মেলনে সারা ভারত কৃষক সভার সাধারণ সম্পাদক হান্নান মোল্লা বলেন, মোদী সরকার জমি অধিগ্রহণের বিল পরিবর্তন করতে চেয়েছিল। তার প্রতিবাদে দেশজোড়া কৃষক বিক্ষোভ হয়। পুলিশের গুলিতে কৃষকেরা শহিদ হন। ২৫০টি সংগঠন নিয়ে কৃষক সংঘর্ষ সমিতি গড়ে ওঠে। আমাদের আন্দোলনের চাপে মোদী সরকার পিছু হটে। কৃষক সংঘর্ষ সমিতি স্বামীনাথন কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে এমএসপি নিয়ে, ঋণ মকুব নিয়ে খসড়া বিল তৈরি করে সাংসদদের মাধ্যমে তা পেশ করে। কিন্তু মোদী সরকার তা উপেক্ষা করেছে। এখন কৃষকদের দুষমন এই সরকার সবচেয়ে বড়ো আকারের বিশ্বাসঘাতকতা করেছে তিন আইন এনে।
তিনি বলেন, ৫ জুন রাতে হঠাৎ তিনটি অর্ডিন্যান্স আনা হয়। মহামারীর মধ্যে এই অডিন্যান্স আনার অর্থ কী, যদি না কোনো অসৎ উদ্দেশ্য থাকে? কারোর সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়নি। কৃষকদের সঙ্গে নয়, রাজ্য সরকারগুলির সঙ্গেও নয়। অর্ডিন্যান্স জারির দিনই আমরা বলেছিলাম, তা কৃষকদের মৃত্যু পরোয়ানা হবে। কৃষকদের ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে কর্পোরেটের হাতে কৃষিকে তুলে দেবার জন্য এই অর্ডিন্যান্স আনা হয়েছে। তখন থেকেই আমরা আন্দোলনে শামিল হয়েছি। ৯ আগস্ট দেশের ৫১ হাজার জায়গায় কৃষকদের বিক্ষোভ হয়েছে। ৫ সেপ্টেম্বর ১০ হাজার জায়গায় বিক্ষোভ হয়েছে। ১৪ সেপ্টেম্বর গ্রামে গঞ্জে বিপুল প্রতিবাদ হয়েছে। তারপরেও সংসদে জবরদস্তি বিল পাশ করিয়েছে সরকার। ২৫ সেপ্টেম্বর দেশজোড়া প্রতিবাদ হয়েছে। এই প্রতিবাদ আরও বড়ো আকার নেবে। ব্রিটিশরা নীল চাষের মাধ্যমে কৃষককে দাসে পরিণত করেছিল, ঠিক এই কাজই করতে চলেছে মোদী সরকার। কৃষকরা তা কিছুতেই মেনে নেবেন না।