E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৮ বর্ষ ৮ম সংখ্যা / ২ অক্টোবর ২০২০ / ১৫ আশ্বিন ১৪২৭

কৃষকবিরোধী আইনের প্রতিবাদে দেশ তোলপাড়

বনধ, অবরোধ, কুশপুতুল দাহ প্রতিবাদের আগুন দি‍কে দিকে

আন্দোলন তীব্র করার ডাক সারা ভারত কৃষক সভার


বিক্ষোভ ভাতিন্দায়।

দানবীয় কৃষক বিলের বিরুদ্ধে দেশের অন্নদাতাদের পক্ষে দাঁড়িয়ে আসমুদ্র হিমাচলের সমস্ত বর্গের মানুষের প্রতিটি প্রান্ত থেকে প্রান্তরে প্রতিবাদে ফুঁসে ওঠা অবাধ্যতার ঢেউকে অভিনন্দন জানালো সারা ভারত কৃষক সভা (এআইকেএস)। এক লিখিত বার্তায় এআইকেএস কুর্নিশ জানিয়েছে কৃষকদের সহমর্মী জনতাকে।

সংগঠনের সভাপতি অশোক ধাওয়ালে এবং সম্পাদক হান্নান মোল্লা স্বাক্ষরিত ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে বিজেপি সরকারের আনা কৃষক বিরোধী বিলের বিরুদ্ধে সারা ভারত কিষান সংঘর্ষ কোঅর্ডিনেশন কমিটি (এআইকেএসসিসি)-র ডাকে ২৫ সেপ্টেম্বর প্রতিবাদ দিবসে অভূতপূর্ব সাড়া মিলেছে। এটা একটি ঐতিহাসিক প্রতিরোধ, যেখানে দেশ জুড়ে লাখো মানুষ শামিল হয়েছেন। কৃষকদের সমর্থনে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সক্রিয়ভাবে এগিয়ে এসেছে কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নসমূহ, শ্রমিকদের বিভিন্ন সংগঠন, ছাত্র-যুব-মহিলা সহ দলিত এবং আদিবাসী মানুষ। করোনার মত অতিমারী, বিধি-নিষেধ, নিপীড়ন, বহু রাজ্যে বৃষ্টি সত্ত্বেও প্রতিবাদ কর্মসূচিতে মানুষের অংশগ্রহণ ছিল অভূতপূর্ব।

বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে কৃষি বিলের বিরুদ্ধে স্বতঃস্ফূর্ত পাঞ্জাব এবং হরিয়ানার সর্বাত্মক বনধের। বলা হয়েছে, কৃষকবিরোধীদের বিরুদ্ধে এআইকেএসসিসি’র ডাকে ঐতিহাসিক সাড়া পাওয়া গেছে। পাঞ্জাব ও হরিয়ানায় সার্বিক বনধ ব্যাপক চেহারা নিয়েছে। সংগঠিত হয়েছে জাতীয় এবং রাজ্য সড়ক অবরোধ, রেল অবরোধ। বহু রাজ্যে পুড়েছে মোদীর কুশপুতুল। কৃষকদের সমর্থনে শ্রমিকসহ বিভিন্ন অংশের মানুষ ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনের কর্মসূচিকে সফল করেছেন। হরিয়ানা এবং পাঞ্জাবে ডাকা বনধ সার্বিক। উত্তর প্রদেশ এবং কর্নাটকের ব্যাপক অংশে সফল হয়েছে কর্মসূচি। বিভিন্ন রাজ্যে নেতৃবৃন্দ গ্রেপ্তার হয়েছেন। রাজস্থানে এদিনের প্রতিবাদ দিবস পালন সম্পর্কে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ওই রাজ্যের অধিকাংশ জেলাতে ব্যাপক প্রতিবাদ সংঘটিত হয় এবং তা বনধের আকার নেয়।

পশ্চিমবঙ্গের সম্পর্কে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গের জাতীয়সড়ক সমূহের ৯২টি জায়গায় এবং রাজ্য মহাসড়কের ৮৯টি জায়গায় অবরোধ সংঘটিত হয়। শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গে ৬ লক্ষেরও বেশি কৃষক এবং শ্রমিক এই অবরোধ ও প্রতিবাদ বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন।

আম্বালায় কৃষক বিক্ষোভে পুলিশের জলকামান।

দানবীয় কৃষক বিলের বিরুদ্ধে কেরালায় স্বতঃস্ফূর্ত বিক্ষোভের কথা রয়েছে বিবৃতিতে। প্রতিবাদ দিবসে ২৫০টি কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থার সামনে এবং রাজ্যের অন্যান্য অংশে ধরনা এবং প্রতিবাদ বিক্ষোভ সংঘটিত হয়েছে সেখানে। ত্রিবান্দ্রমে এআইকেএস'র সহ সভাপতি রামচন্দ্র পিল্লাই এই প্রতিবাদ কর্মসূচির সূচনা করেন। আবার ত্রিপুরায় পুলিশি নিপীড়ণ ও অত্যাচারের মোকাবিলা করেই ব্যাপক প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হয়।

বিবৃতিতে উল্লিখিত, দেশের অধিকাংশ রাজ্যের জাতীয় এবং রাজ্য পর্যায়ের মহাসড়কগুলিতে অবরোধ করা হয় এবং এমনকি বহু জায়গায় ট্রেন থামিয়ে রেল অবরোধ করা হয়। কর্পোরেটমুখী কৃষক বিলের বিরুদ্ধে মহারাষ্ট্র জুড়েও ব্যাপক প্রতিবাদ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হয়। সেখানে দাহানু এবং পালঘর সহ মুম্বাই-দিল্লি জাতীয়সড়ক অবরোধ করেন হাজারো কৃষক। এই কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেন এআইকেএস সভাপতি অশোক ধাওয়ালে। তামিলনাড়ু রাজ্য জুড়ে ১০০টি কেন্দ্রে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ সংগঠিত হয়। এখানে পুলিশি আক্রমণ নেমে আসে প্রতিবাদরত কৃষকদের উপর। বিহার এবং ঝাড়খণ্ডের কৃষকদের সঙ্গে শ্রমিকরাও ব্যাপক সংখ্যায় পথে নামেন। সড়ক অবরোধ এবং রেল রোকো কর্মসূচি পালিত হয় দু’টি রাজ্যের সমস্ত জেলা জুড়েই।

দেশের অন্যান্য রাজ্য সম্পর্কেও বিবৃতিতে কর্মসূচি পালনের উল্লেখ করা হয়েছে। ওডিশা, আসাম, উত্তরাখণ্ড, হিমাচল প্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ, জম্মু ও কাশ্মীর, গুজরাট, অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড় - এই সবক’টি রাজ্যেই কৃষক এবং শ্রমিকদের স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া লক্ষ্য করা গেছে। অসংখ্য স্থানে বিক্ষোভকারীরা নরেন্দ্র মোদীর কুশপুতুল পুড়িয়েছেন। দেশজোড়া নরেন্দ্র মোদীর সরকারবিরোধী এই বহুধা বিস্তৃত প্রতিবাদ এবং জনগণের সাড়া বেআব্রু করে দিয়েছে মোদী এবং কর্পোরেট মিডিয়ার সম্মিলিত কৃষক আন্দোলন বিরোধী ঢক্কানিনাদ নির্ভর প্রচার। সেখানে প্রচার করা হয় যে পাঞ্জাব এবং হরিয়ানার কয়েকটিমাত্র স্থানে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ সংঘটিত হয়েছে।

কৃষকবিরোধী বিলের প্রতিবাদে আয়োজিত বিক্ষোভ কর্মসূচিসমূহের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়ে দিল্লিতে আয়োজিত এক সভায় এদিন বক্তব্য রাখেন এআইকেএস’র সাধারণ সম্পাদক হান্নান মোল্লা, সিআইটিইউ’র সাধারণ সম্পাদক তপন সেন, এআইডিডব্লুএ’র সাধারণ সম্পাদক মরিয়ম ধাওয়ালে, রাজ্যসভার সাংসদ বিনয় বিশ্বম, এসএফআই’র সাধারণ সম্পাদক ময়ূখ বিশ্বাস, এআইকেএস’র যুগ্ম সম্পাদক বিজু কৃষ্ণান, সহ বামপন্থী দলগুলি এবং বিভিন্ন গণসংগঠন নাগরিক সংগঠন ছাত্র সংগঠনগুলির প্রতিনিধিরা। দিল্লির এই কর্মসূচিতে কৃষকদের আন্দোলনের প্রতি সহমর্মিতা জানাতে উপস্থিত ছিলেন সাংসদ বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য, কে কে রাগেশ, যাকে কৃষি বিলের প্রতিবাদে সংসদে বিক্ষোভ দেখানোর জন্য সাসপেন্ড করা হয়েছে। এই প্রতিবাদ আন্দোলন সম্পর্কে কর্পোরেট মিডিয়ার মিথ্যাচারকে পেছনে ফেলে সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রথম চারটি সর্বোচ্চ চর্চার তালিকায় সারাদিন ধরেই ছিল কৃষকবিরোধী বিলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের কথা।

ওই বিবৃতিতে প্রতিবাদ দিবসের যাবতীয় বিক্ষোভ আন্দোলনকে কেন্দ্র করে মোদী সরকারের দিকে সতর্কবাণী উচ্চারণ করে বলা হয়েছে, ২৫ সেপ্টেম্বরের প্রতিবাদ দিবসে গোটা দেশজুড়ে মানুষ দুর্বিনীত নরেন্দ্র মোদী এবং তাঁর নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে যেভাবে সতর্ক বাণী উচ্চারণ করলেন তা স্পষ্ট এবং পরিষ্কার। কৃষকের জীবনের বিনিময়ে কর্পোরেট লুট এবং মুনাফার লক্ষ্যে বিজেপি সরকার যে সহায়তা দিচ্ছে তা রুখতে কৃষক এবং শ্রমিকের বৃহত্তম ঐক্য গড়ে উঠছে। পরিশেষে এআইকেএস’র পক্ষ থেকে ওই বিবৃতিতে দেশজুড়ে কৃষকদের প্রতি সমর্থন এবং সহমর্মিতায় পাশে দাঁড়ানোয় সমাজের সমস্ত অংশের মানুষকে অভিনন্দন জানিয়ে আগামী সংগ্রামে শামিল হবার আহ্বান জানানো হয়েছে।