E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৮ বর্ষ ৮ম সংখ্যা / ২ অক্টোবর ২০২০ / ১৫ আশ্বিন ১৪২৭

বিরোধীদের অনুপস্থিতিতে রাজ্যসভায় পাশ হলো তিনটি শ্রম বিল


জনবিরোধী শ্রমবিলের বিরুদ্ধে দিল্লিতে শ্রমজীবীদের প্রতিবাদ সভা।

নিজস্ব সংবাদদাতাঃ বিরোধীদের অনুরোধে কর্ণপাত না করে সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিকভাবে রাজ্যসভায় পাশ করিয়ে নেওয়া হলো তিনটি বিল। একাজ করা হলো বিরোধীদের অনুপস্থিতিতেই। ২৩ সেপ্টেম্বর সকাল থেকেই রাজ্যসভায় ছিলেন না বিরোধীরা। সংসদের বাইরে কৃষি বিলের প্রতিবাদে শামিল ছিলেন তাঁরা। কৃষি বিলের বিরোধিতায় সংসদ বয়কট করেছে বিরোধীরা, সেই সুযোগে তিনটি শ্রমআইন সংস্কারের বিল কেন্দ্রের মোদী সরকার রাজ্যসভায় নজিরবিহীনভাবে পাশ করিয়ে নিল।

রাজ্যসভায় এদিন ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিলেশনস কোড ২০২০, অকুপেশনাল সেফটি, হেলথ অ্যান্ড ওয়ার্কিং কন্ডিশনস কোড ২০২০ এবং কোড অন সোশ্যাল সিকিউরিটি ২০২০ বিল তিনটি পাশ করানো হলো। এই বিল আইনে পরিণত হলে ৩০০ বা তার বেশি কর্মী কাজ করেন এমন সংস্থায় এখন থেকে সরকারের অনুমতি ছাড়াই ইচ্ছেমতো নিয়োগ ও ছাঁটাই করা যাবে। এই বিলের বিরোধিতা করেছে বাম-কংগ্রেস। প্রসঙ্গত, ৪৪টি শ্রমআইনকে চারটি কোডে মিশিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত গত বছর জুন মাসেই কেন্দ্রীয় সরকার নিয়েছিল। এর মধ্যে একটি বিল, কোড অফ ওয়েজ বিল পাস হয়েছে গত বছর। সংসদে ওই বিলের বিরোধিতা করেছিলেন একমাত্র বামপন্থীরা। সরকার সেই ওয়েজ বিলের খসড়া বিধি গত বছরই করলেও তা চূড়ান্ত করেনি এবং প্রয়োগ করেনি। শ্রম মন্ত্রকের বক্তব্য, চারটি কোড পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বলে এগুলি একইসঙ্গে প্রয়োগ করা হবে। শ্রমিক স্বার্থকে উপেক্ষা করে কর্পোরেটের জন্য ব্যবসায় স্বাচ্ছন্দ্য আনতে মরিয়া কেন্দ্র। এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই শ্রম কোড প্রয়োগ করা হবে বলে জানিয়েছেন শ্রমমন্ত্রী সন্তোষ গঙ্গোয়ার। একইসঙ্গে শেষ করা হবে শ্রমক্ষেত্রে সংস্কারের চূড়ান্ত পর্ব।

শ্রমবিলের বিরুদ্ধে রাচিতে শ্রমিকদের বিক্ষোভ।

এদিকে আগেই বিরোধী শূন্য সংসদে কোনও বিল যাতে সরকার পাশ না করায় তার জন্য চেয়ারম্যানের কাছে আরজি জানিয়ে বিরোধীরা বলেছিলেন, সংসদে শুধুমাত্র সরকার পক্ষের সাংসদদের উপস্থিতিতে বিল পাশ করানো গণতন্ত্রের পরিপন্থী। সেই কারণে বিরত থাকুক সরকার। শোনেনি সরকার। শুধু শ্রম বিল নয়, বিরোধীদের দাবিকে আমল না দিয়ে সংসদে একের পর এক বিল পাশ করিয়েছে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে বিজেপি সরকার। কর্পোরেট লুটের ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করতে আবার ঘুরিয়ে সরকারের অগ্রাধিকারের কথা বলতে গিয়ে মাঝে মাঝেই প্রধানমন্ত্রী দাবি করেন ‘ন্যূনতম সরকার সর্বোচ্চ প্রশাসনের’ কথা। এই সরকারের এধরনের প্রায় বেনজির সংসদীয় আচরণ সেই লক্ষ্যে মরিয়া থাকার উজ্জ্বল উদাহরণ। শ্রমিকদের দাসত্বে বন্দি করে কর্পোরেটের জন্য তাঁর বার্তা, এই সমাজ সংস্কার সুনিশ্চিত করবে ব্যবসাকে নিরুদ্বেগ স্বাচ্ছন্দ্য করার কাজ। ব্যবসায় নিরুদ্বেগ স্বাচ্ছন্দ্য আনতে বিশ্বব্যাঙ্কের তালিকায় প্রথম ১০ দেশের মধ্যে থাকা এখন মোদী সরকারের লক্ষ্য। ব্যবসায় কর্পোরেটের স্বাচ্ছন্দ্য মানে শ্রমিকদের দাসত্ব। ২০১৪সালে মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার সময়ই বিশ্বব্যাঙ্কের এই সূচকে ভারতের স্থান ছিল ১৪২। তারপর প্রতিবছরই এক্ষেত্রে ভারতে এগিয়েছে, বেপরোয়া জনবিরোধী সংস্কার চালিয়ে পাঁচ বছরে এখন উঠে এসেছে একেবারে ৬৩-তে।

এদিন নির্দিষ্ট সময়ের আটদিন আগেই শেষ হয়ে যায় রাজ্যসভা। বাদল অধিবেশন শুরু হয় ১৪ সেপ্টেম্বর, শেষ হওয়ার কথা ছিল ১ অক্টোবর। কিন্তু করোনা সংক্রমণের কারণে ১৮ দিনের জায়গায় দশদিন চলল রাজ্যসভার অধিবেশন।

নিজাম প্যালেসে সিআইটিইউ-সহ অন্যান্য ট্রে্ড ইউনিয়নের বিক্ষোভ।

সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে শ্রমমন্ত্রী বলেছেন, এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে চারটি শ্রম কোড প্রয়োগের মধ্য দিয়ে শ্রম ও সংস্কারের কাজ শেষ করার জন্য সরকার তার সমস্ত রকম প্রয়াস চালাচ্ছে।... এখন এই আইনের অধীন বিধিগুলি অবিলম্বে প্রয়োগ করা হবে।

সংসদে এদিন বিল পাশ হওয়ার পরেই তা পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে রাষ্ট্রপতির সম্মতির জন্য। বিধিগুলি নিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারির পরেই আইন প্রয়োগ করা হবে। প্রাথমিকভাবে আইনের অধীন খসড়া বিধিগুলো নিয়ে প্রতিক্রিয়ার জন্য একটা নির্দিষ্ট সময় দেওয়া হবে। তারপর এই আইন প্রয়োগের জন্য বিধিগুলি চূড়ান্ত করা হবে খুব শীঘ্রই।

ঘটনা হলো, বিলগুলি সংসদে পাশ করানোর সময় লোকসভায় কিংবা রাজ্যসভায় কোথাও কোনো প্রতিক্রিয়া নেওয়ার কথা মনে করেনি সরকারপক্ষ। বস্তুত বিরোধীদের বয়কটকে সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করে একতরফাভাবে পাশ করিয়ে নিয়েছে। কৃষি বিল পাশের প্রতিবাদ করার অপরাধে রাজ্যসভার আট সদস্যকে চলতি অধিবেশন থেকে সাসপেন্ড করা হলে বিরোধীরা সংসদের দুই কক্ষই বয়কট করেন। বিলগুলি পাশ করিয়ে নেবার পরই অনির্দিষ্টকালের জন্য মুলতবি করে দেওয়া হয় রাজ্যসভা।