৫৮ বর্ষ ৮ম সংখ্যা / ২ অক্টোবর ২০২০ / ১৫ আশ্বিন ১৪২৭
যারে তুমি নিচে ফেল সে তোমারে বাঁধিবে যে নিচে
বরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়
ট্র্যাডিশনের ক্রোনোলজি খুঁজতে মাঝে মাঝে একটু ঘাঁটাঘাঁটি করা ভালো অভ্যাস। পেছনে, আর একটু পেছনে, আরও একটু পেছনে পেছোতে পেছোতে কোথাও গিয়ে যদি দাঁড়ানোর জায়গা পাওয়া যায়। তখন ক্রোনোলজির সূত্র খুঁজে পেতে সুবিধে হয়। সূত্রের সঙ্গে সূত্র জুড়ে ফেলতে পারলেই বিষয়টা বেশ জলবৎ তরল হয়ে ওঠে। ঠাওর হতে বিশেষ অসুবিধে হয়না।
ফ্ল্যাশব্যাক-১
বেগার খেটে কাঠ চিরতে গিয়ে দুখী নিজের জীবনটাকেও চিরে ফেলেছিল দু’ভাগে। দুখী ব্যাটা ছিল জাতে চামার। হলোই বা জাতে চামার। তাতে কি মেয়ের বিয়ে দিতে শখ জাগে না? দুখীরও জেগেছিল। বিয়ের দিনক্ষণ দেখে দিতে একটা ব্রাহ্মণ লাগবে। চামার দুখীও তাই মেয়ের বিয়ের শুভলগ্ন ঠিক করে দেবার আরজি নিয়ে গেছিল ঘাসীরাম পণ্ডিতের বাড়ি। সঙ্গে ভেট বড়ো এক গাঁটরি ঘাস। অবশ্য শুধু এক গাঁটরি ঘাসের বিনিময়ে শুভলগ্ন দেখে দেবার মতো এতবড়ো পরিশ্রমের কাজ করতে রাজি ছিলেন না পণ্ডিত। তাই বাড়ির দরজা ঝাঁট, বৈঠকখানা গোবর লেপা, খামার থেকে ভুষি আনা, কাঠ চেরাই - একগুচ্ছ বেগার খাটানো দিয়েই পণ্ডিত পরিশ্রমের দাম তুলে নিতে চেয়েছিল। সারাদিন বিনা খাবার, বিনা জলে খেটে শেষপর্যন্ত দুখী চামারের শরীরটা আর দেয়নি। মেয়ের বিয়ের শুভলগ্ন দুখীর দেখে যাওয়া হয়নি। হয়তো বা ব্রাহ্মণের উঠোনে বেগার খেটে মরণেই তাঁর ‘সদগতি’ হয়েছিল। ১৯৩১ সালে মানসরোবর-এ প্রকাশিত মুন্সী প্রেমচাঁদের ছোটোগল্পে চামারের লাশ নিয়ে ব্রাহ্মণ পণ্ডিত শেষ পর্যন্ত কী করেছিল তা তো আমাদের সকলেরই জানা। কাজেই সেকথা নাহয় থাক।
ফ্ল্যাশব্যাক-২
কাঙ্গালীর মা ছিল ছোটোজাত। দুলে ঘরের বউ। ব্রাহ্মণদের থেকে সাত হাত দূরে থাকাই রেওয়াজ ছিল। এ হেন ছোটোজাত, দুলে, কাঙ্গালীর মায়ের ঠাকুরদাস মুখুজ্জের বৌয়ের চিতা দেখে শখ জেগেছিল সেও যেন মরার পর ছেলে কাঙ্গালীর হাতের আগুনটুকু পায়। ‘সগ্যে’ যেতে পারে। মুখুজ্জে গিন্নির চিতার ধোঁয়াতে দুলে বউ স্বর্গের রথও দেখতে পেয়েছিল। দুপুরে শুয়ে শুয়ে ছেলে কাঙ্গালীকে সে কথা বলেও ফেলল অভাগী। ‘তোর হাতের আগুন যদি পাই বাবা, বামুন-মার মতো আমিও সগ্যে যেতে পাবো।’ অবশেষে মুখুজ্জে গিন্নির মতো ‘সগ্যে’ যাওয়া আর ‘ক্যাঙলার হাতের আগুনের লোভে’ অভাগী প্রাণ দিল। রাখালের মা বলল - ‘এমন সতীলক্ষ্মী বামুন-কায়েতের ঘরে না জন্মে, ও আমাদের দুলের ঘরে জন্মালো কেন!’ যদিও গোমস্তা অধর রায় বা ঠাকুরদাস মুখুজ্জের কড়া নজর এড়িয়ে ১৩২৯-এর মাঘ মাসে বঙ্গবাণীতে প্রকাশিত ছোটো গল্পে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ও কাঙ্গালীর মা অভাগীর জন্য ‘সগ্যে’ যাবার চিতার কাঠের বন্দোবস্ত করতে পারেননি।
ফ্ল্যাশব্যাক-৩
এতক্ষণ গল্পে ছিলাম। তবে সবকিছু তো গল্প দিয়ে হয় না। ক্রোনোলজি বুঝতে ইতিহাসও লাগে। যদিও ইদানিং এই বিষয়ে মাঝে মাঝে খুব ধাঁধায় পড়ে যাই। এক মহাকাব্যের নায়কের জন্মস্থান নিয়ে যে কাণ্ড ঘটেছে, ঘটে চলেছে তাতে কোন্টা পুরাণ, কোন্টা গল্প আর কোন্টা ইতিহাস সেই বোধ গুলিয়ে যেতে বাধ্য। আমারও যায়। যাক সেকথা। বেশ কিছুটা পেছনে ফিরে যাই। ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকের কথা। ইতিহাস যাকে জানে চান্নার বিদ্রোহ বলে।
বিভিন্ন সূত্র থেকে যা জানা যায় তা অনেকটা এরকম। কেরালার ত্রিবাঙ্কুর সরকারের এক অদ্ভুত নিয়ম ছিল। অস্পৃশ্য এবং নিচু জাতের নাদার, ইজাভা মহিলাদের ওপর উচ্চবর্ণের নাইয়াররা কর বসিয়েছিল। স্তন কর। মুলাক্কারম বা মুলাকরম। নাদার বা ইজাভা মহিলারা তাঁদের বুক ঢাকা দিতে চাইলে স্তনের আকার অনুসারে এই কর দিতে হতো। রাজকর্মচারীরা রীতিমতো বাড়ি বাড়ি ঘুরে সেই কর আদায় করতেন। এর বিরুদ্ধে ১৮২০ সালে বিদ্রোহ শুরু হয়। চলে ১৮৫৯ পর্যন্ত। ১৮৫৯ সালের জানুয়ারি মাসে দুই নাদার মহিলাকে স্তনকর না দিয়ে স্তন ঢাকা দেবার অপরাধে প্রকাশ্যে বিবস্ত্র করে হত্যা করা হয়। এরপরই টানা পাঁচ মাস স্তনকরের বিরুদ্ধে লড়াই চলার পর জুলাই মাসে উচ্চবর্ণের রাজা নিম্নবর্ণের মহিলাদের ওপর থেকে স্তনকর তুলে নেন এবং নিম্নবর্ণের মহিলারা স্তন ঢেকে রাখার অধিকার আদায় করে নেন।
এই প্রসঙ্গেই শোনা যায় মুলাচিপারাম্বুর নাঙ্গেলির নাম। যে মহিলা স্তন ঢেকে রাখতেন। কিন্তু স্তনকর দিতে অস্বীকার করেছিলেন। শাস্তিস্বরূপ তাঁর স্তন কেটে নেওয়া হয়। সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। অবশ্য এই বিষয়ে কিছু দ্বিমতও আছে এবং এই ঘটনার ঐতিহাসিক সত্যতা নিয়েও অনেকেই সন্দিহান। তবে কেউ কেউ বলেন, নাঙ্গেলি নিজেই নিজের স্তন কেটে কলাপাতায় করে রাজকর্মচারীদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন। অবশ্য রামায়ণেও তো নাকি রক্ষ দেশের অধিবাসী শূর্পনখার নাক, মতান্তরে স্তন কেটে নিয়েই শাস্তি দিয়েছিলেন রামের ভাই লক্ষ্মণ। কাজেই এটা ট্র্যাডিশনের মধ্যেই পড়ে বলে ধরে নেওয়া যায়।
এক জলজ্যান্ত ঘটনা
২০ বছরের তরুণীর নাম জানি না। নাম যাই হোক। গত ১৪ সেপ্টেম্বর উত্তরপ্রদেশের হাথরস অঞ্চলের এক গ্রামে দলিত ওই তরুণী তাঁর মায়ের সঙ্গে মাঠে ঘাস কাটতে গেছিল। ওইসময় মাঠেরই পেছন দিক থেকে এসে চার উচ্চবর্ণের যুবক ওই তরুণীকে ওড়না গলায় পেঁচিয়ে টানতে টানতে নিয়ে যায়। এরপর সেখানেই তাঁকে গণধর্ষণ করা হয়। গুরুতর আহত গণধর্ষণের শিকার ওই তরুণী গত ২৯ সেপ্টেম্বর দিল্লির এক হাসপাতালে মারা যায়। অবশ্য এটা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। সাম্প্রতিক সময়ে উত্তরপ্রদেশে দলিত মহিলাদের ওপর ধর্ষণের একাধিক ঘটনা ঘটেছে। আগস্ট মাসের ১৪, ১৭, ২৬ তারিখেও একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে। সারা দেশের কথা বললে ২০১৯ সালে দেশে মহিলাদের ওপর অত্যাচার বেড়েছে ৭.৩ শতাংশ। প্রতি ২৪ ঘণ্টায় ৮৭টা ধর্ষণ। লিখতে বসলে এরকম হাজারো ঘটনার কথা এক নিঃশ্বাসে লিখে ফেলা যায়। তখন হাথরস থেকে কামদুনি-মধ্যমগ্রাম এক আসনে বসে যাবে।
গল্প, ইতিহাস, বর্তমানের খিচুড়িতে এতক্ষণে ক্রোনোলজিটা মোটামুটি সকলের সামনে এসে গেছে। এই ক্রোনোলজিকে আরও স্পষ্ট করে বোঝার জন্য একটা ছোট্ট ঘটনা জানা দরকার। একটু আগেই যে চান্নার বিদ্রোহের কথা বলেছি, সেই ইতিহাস অন্তর্ভুক্ত ছিল পাঠ্যপুস্তকে। গত ২০১৯-এর মার্চ মাসে এনসিইআরটি ক্লাস নাইনের ইতিহাস বই থেকে এই অধ্যায় বেমালুম বাদ দিয়ে দিয়েছে। এই প্রসঙ্গে নাদার গোষ্ঠীর এ নীলা লোহিতাদাসন নাদার জানিয়েছেনঃ “জাতিভেদ প্রথার বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিবাদ ছিল এই লড়াই। এই লড়াই শুধু আমাদের কাছে নয়, সমস্ত জাতিভেদ-বিরোধী আন্দোলনে গর্বের ইতিহাস। কিন্তু হিন্দুত্ববাদীরা বর্তমান প্রজন্মকে জাতিভেদ প্রথার এই ভয়ঙ্কর দিক সম্পর্কে জানাতে চায় না। তাই সরকার এই অধ্যায় পাঠ্যবই থেকে বাদ দিয়েছে।” ঐতিহাসিক জে দেবিকা এ প্রসঙ্গে জানিয়েছেন - আমাদের সবসময়েই শেখানো হয় উচ্চবর্ণের মানুষরাই নিম্নবর্ণের মানুষের জীবনে পরিবর্তন এনেছেন। কিন্তু চান্নার বিদ্রোহ সম্পূর্ণ অন্য কথা বলে। এখানে নিম্নবর্ণের মহিলাদের বিদ্রোহে উচ্চবর্ণের মানুষরা নত হতে বাধ্য হয় (স্ক্রল.ইন, ২২ মার্চ, ২০১৯)। অবশ্য কেরালা বোর্ডে সপ্তম শ্রেণি থেকে থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত এই অধ্যায় পড়ানো হয়। সেই পাঠ্যপুস্তক থেকে এই অধ্যায় বাদ দেওয়া হয়নি।
আসলে বৈষম্য, তা সে বর্ণগত হোক, সামাজিক বা জাতিগত হোক কিংবা অর্থনৈতিক - এর শিকড় অনেকটাই গভীরে। ইতিহাসটাও কিছু নব্য নয়। বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যই যেমন ভারতের বাঁচার একমাত্র পথ, তেমনই বৈষম্যের মধ্যে ঐক্য, বৈষম্যের শিকার মানুষের মধ্যে ঐক্য গড়ে না তুললেও বাঁচা যাবেনা। বৈষম্য তো সব ক্ষেত্রেই। স্তরে স্তরে। জাতিগত বৈষম্যের গায়ে গা লাগিয়েই তো দাঁড়িয়ে আছে অর্থনৈতিক বৈষম্য।
রূপকথার গল্প
আলাদীনের আশ্চর্য প্রদীপের সাহায্যে প্রচুর ধন সম্পত্তির মালিক হয়ে ওঠার মতোই দেশে কোভিডজনিত এই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিতেও ৮২৮ জন ভারতীয় ১০০০ কোটি বা তার বেশি টাকার সম্পদের মালিক হয়েছেন বলে জানা গেছে। যার মধ্যে ৬২৭ জন তাদের সম্পদ বাড়িয়েছেন এবং ১৬২ জন এই তালিকায় নতুন সংযোজন। সম্প্রতি আইআইএফএল ওয়েলথ হুরুন ইন্ডিয়া রিচ লিস্ট ২০২০ প্রকাশ করেছে। যে তালিকা অনুসারে শীর্ষে মুকেশ আম্বানি। যার মোট সম্পদের পরিমাণ ৬ লক্ষ ৫৮ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। সাম্প্রতিক সময়ে যার সম্পদ বেড়েছে ৭৩ শতাংশ। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদন অনুসারে মার্চ মাস থেকে দেশে যখন লকডাউন, কাজ হারিয়ে, রোজগার হারিয়ে মানুষ যখন দিশেহারা, পরিযায়ী শ্রমিকরা বাড়ি ফিরতে চেয়ে রাস্তায় দিন কাটাচ্ছেন, সেইসময় প্রতি ঘণ্টায় মুকেশ আম্বানির রোজগার ৯০ কোটি টাকা।
আইআইএফএল ওয়েলথ হুরুন ইন্ডিয়া রিচ লিস্ট ২০২০ অনুসারে দ্বিতীয় ধনীর তালিকায় আছে হিন্দুজা গোষ্ঠী। যাঁদের মোট সম্পদের পরিমাণ ১,৪৩,৭০০ কোটি টাকা। যদিও এই সময়ে তাঁর সম্পদ কমেছে ২৩ শতাংশ।
তালিকায় তৃতীয় স্থানে আছেন এইচসিএল-এর শিব নাদার এবং তার পরিবার। যাদের মোট সম্পত্তির পরিমাণ ১,৪১,৭০০ কোটি টাকা। সম্পদ বৃদ্ধির পরিমাণ ৩৪ শতাংশ।
এই তালিকায় নাম আছে আদানি গোষ্ঠীর গৌতম আদানির। সাম্প্রতিক সময়ে যার সম্পদ বেড়েছে ৪৮ শতাংশ। তিনি এই তালিকায় দুই ধাপ টপকে চার নম্বরে উঠে এসেছেন। তার মোট সম্পদের পরিমাণ ১,৪০,২০০ কোটি টাকা।
তালিকায় পঞ্চম স্থানে উইপ্রোর আজিম প্রেমজি। সাম্প্রতিক সময়ে ২ শতাংশ সম্পদ কমে যার মোট সম্পত্তির পরিমাণ ১,১৪,৪০০ কোটি টাকা। তিনি এই তালিকায় দুই ধাপ নীচে নেমেছেন।
সেরাম ইন্সটিটিউট অফ ইন্ডিয়ার সাইরাস এস পুনাওয়ালা ৬ শতাংশ সম্পদ বৃদ্ধি করে তালিকায় ৬ নম্বরে স্থান পেয়েছেন। তাঁর মোট সম্পদ ৯৪,৩০০ কোটি টাকার।
সম্পদের উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি হয়েছে অ্যাভিনিউ সুপারমার্কেট গোষ্ঠীর রাধাকিষান দামানি ও তাঁর পরিবারের। ৫৬ শতাংশ বেড়ে যাদের মোট সম্পদের পরিমাণ ৮৭,২০০ কোটি টাকা। তিনি তালিকায় এক লাফে ৬ ধাপ উঠে এসে ৭ নম্বরে স্থান পেয়েছেন।
কোটাক মাহিন্দ্রা ব্যাঙ্ক-এর উদয় কোটাকের সম্পদ কমেছে ৮ শতাংশ। ১ ধাপ নিচে নেমে তিনি স্থান পেয়েছেন ৮ নম্বরে। তাঁর মোট সম্পদ ৮৭,০০০ কোটি টাকা।
সান ফার্মাসিউটিক্যালস-এর দিলীপ সিংভি ১৭ শতাংশ সম্পদ বৃদ্ধি করে দু ধাপ উঠে স্থান পেয়েছেন ৯ নম্বরে। যার মোট সম্পদ ৮৪,০০০ কোটি টাকা।
এই তালিকার দশ নম্বরে আছেন সাপুরজি পালনজি গোষ্ঠীর সাইরাস পালনজি মিস্ত্রি এবং শাপুর পালনজি মিস্ত্রি। যাঁদের সম্পদ কমেছে ১ শতাংশ করে। এদের দু’জনের সম্পদের পরিমাণ ৭৬ হাজার কোটি টাকা।
কিছুদিন আগেই সূর্যকান্ত মিশ্র করোনা মহামারী প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে জানিয়েছিলেন — এই অতিমারীর কারণ হচ্ছে মহামন্দা। বিশ্বব্যাপী পুঁজিবাদী ব্যবস্থার সঙ্কট। সেই সঙ্কটের ফলে স্বাস্থ্য, বিজ্ঞান, গবেষণা, ওষুধ তৈরি, ভ্যাকসিন তৈরি যেগুলো থেকে সরকার হাত গুটিয়ে নিয়েছে। জনস্বাস্থ্য থেকে হাত গুটিয়ে নিয়েছে। যেহেতু সবকিছুই মুনাফাভিত্তিক হচ্ছে তাই দেখার দরকার নেই প্রাণীজগতের কী হচ্ছে। এই মহামারীকে ব্যবহার করেই লুটেরা পুঁজিবাদ আরও মুনাফা করতে চাইছে। আরও সম্পদ কেন্দ্রীভূত করতে চাইছে। কিছু মানুষ নিজেরা বেঁচে যেতে চাইছে।
দুখী চামারের মেয়ের বিয়ের শুভলগ্নের খোঁজ না পাওয়া, অভাগীর চিতার কাঠ না পাওয়া, নাঙ্গেলীর স্তন কেটে ফেলা অথবা হাথরসের তরুণীর নৃশংস গণধর্ষণ। গল্প, বাস্তব, ইতিহাস মিলে মিশে আলাদা আলাদা চরিত্র হলেও এঁরা সকলেই বোধহয় এক সূত্রে গাঁথা। মাঝখান দিয়ে প্রায় দুশো বছর পেরিয়ে এলেও একই অবস্থার শিকার। শিকড় যেহেতু গভীরে, শিকড় উপড়ে ফেলার লড়াইটাও তাই অনেক কঠিন। যদিও শিকড় উপড়ে ফেলবে মানুষই। হিটলারকেও মানুষই উপড়ে ফেলেছিল। যুগে যুগে মানুষকেই নতুন ইতিহাস লেখার দায়িত্ব নিতে হয়।