E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৬০ বর্ষ ৪ সংখ্যা / ২ সেপ্টেম্বর, ২০২২ / ১৬ ভাদ্র, ১৪২৯

অভিজিৎ সেনের জীবনাবসান


নিজস্ব প্রতিনিধিঃ বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ সেনের জীবনাবসান হয়েছে। গ্রাম ও কৃষি অর্থনীতির অগ্রণী বিশেষজ্ঞ সেন ২৯ আগস্ট রাতে হঠাৎই হৃদরোগে আক্রান্ত হন। পরিবারের সদস্যরা তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে গেলেও তাঁর আগেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বয়স হয়েছিল ৭২। তাঁর প্রয়াণের সংবাদে অর্থনীতি, বুদ্ধিবৃত্তি এবং প্রগতিশীল রাজনৈতিক মহলে গভীর শোকের আবহ।

অধ্যাপক অভিজিৎ সেন রেখে গেছেন তাঁর স্ত্রী বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ জয়তী ঘোষ ও কন্যা সাংবাদিক জাহ্নবীকে। তাঁর ভাই প্রণব সেন দেশের মুখ্য পরিসংখ্যানবিদ ছিলেন।

কৃষিপণ্যের মূল্য নির্ধারণ, সর্বজনীন গণবণ্টনের মতো নীতি প্রণয়নে অভিজিৎ সেনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। যোজনা কমিশনের সদস্য হিসাবে দশ বছর কাজ করার সময়ে তিনি কৃষি অর্থনীতির পরিকল্পনায় কৃষককে কেন্দ্রে রেখে অভিমুখ রচনা করেছিলেন। ১৯৯৭ সালে তিনি কৃষিপণ্য মূল্য নির্ধারণ কমিটির চেয়ারম্যান হন। ২০০০-র জুলাইয়ে দীর্ঘমেয়াদি শস্য নীতিতে তিনি ন্যূনতম সহায়ক মূল্য নির্ধারণের জন্য ইদানীং বহু আলোচিত ‘সি-২’ সূত্র পেশ করেন। কৃষির জন্য সমস্ত খরচ ছাড়াও পারিবারিক শ্রমের মূল্য, স্থায়ী মূলধনী সম্পদের হিসাব তাতে যুক্ত হয়। এই সূত্রের ভিত্তিতেই পরবর্তীকালে স্বামীনাথন কমিশনের সূত্র তৈরি হয় যেখানে কৃষি উৎপাদনের খরচের থেকে অন্তত ৫০ শতাংশ বেশি দাম দিয়ে এমএসপি নির্ধারণের কথা বলা হয়।

১৯৫০-এ সেনের জন্ম জামশেদপুরে। তাঁর বাবাও বিশ্ব ব্যাঙ্কের অর্থনীতিবিদ ছিলেন। স্কুল শেষ করে তিনি সেন্ট স্টিফেন্স কলেজে পদার্থবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা করেন। তারপর ক্ষেত্র বদলে চলে যান অর্থনীতিতে। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে পিএইচডি করার পরে সাসেক্স, অক্সফোর্ড, কেমব্রিজ, এসেক্স বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন। ১৯৮৫ সালে তিনি জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর ইকনমিক স্টাডিজ অ্যান্ড প্ল্যানিংয়ে যোগ দেন। কৃষ্ণা ভরদ্বাজ, প্রভাত পট্টনায়েক, উৎসা পট্টনায়েক, সি পি চন্দ্রশেখর, জয়তী ঘোষ, অমিত ভাদুড়ির মতো অর্থনীতিবিদদের সমাহারে ওই কেন্দ্রটি হয়ে ওঠে দেশের অর্থনীতি চর্চার অন্যতম সেরা জায়গা। বামপন্থী উদারনৈতিক ধারার চর্চায় অগ্রণী।

নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে সেন ছিলেন সক্রিয়। ২০০৪ সালে তিনি যোজনা কমিশনের সদস্য হন। দশ বছর তিনি সদস্য ছিলেন। সর্বজনীন গণবণ্টনের ধারণাকে তিনি প্রতিষ্ঠিত করেন। তদানীন্তন মনমোহন সিংয়ের সরকারের ঘোষিত নীতির বাইরে গিয়েও তিনি সর্বজনীন গণবণ্টনের সুপারিশ করেছিলেন। এপিএল-বিপিএল বিভাজনের বিরুদ্ধে তাঁর সওয়াল ছিল নজরকাড়া।

অধ্যাপক সেন বামফ্রন্ট সরকারের সময়ে পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরায় যোজনা পর্ষদেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন।

অধ্যাপক সেনের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে সিপিআই(এম)। পার্টি বলেছে, নীতি নির্ধারণের সময়ে শ্রমজীবী গরিব মানুষের কথাই কেন্দ্রে রাখতেন তিনি। পার্টির সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি বলেছেন, তাঁর মস্তিষ্ক এবং হৃদয় ঠিক জায়গায় থাকত। তাঁর কাজ ও নীতি নির্ধারণের হস্তক্ষেপ বহু মানুষের জীবনকে উপকৃত করেছে। এখনও অনেক কিছু দেবার ছিল তাঁর। এই সময়ে এই মৃত্যু বড়ো ক্ষতি। সারা ভারত কৃষক সভা শোক প্রকাশ করে বলেছে, কৃষকদের স্বার্থে তিনি বরাবরই অবস্থান নিয়েছেন। কৃষক সভাকে নীতি নির্ধারণ করতে অনেক সময়েই পরামর্শ দিয়েছেন। তাঁর জীবনাবসানের খবর পেয়ে বাড়িতে যান প্রকাশ কারাত, বৃন্দা কারাত।

৩০ আগস্ট মঙ্গলবারই তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। পরিবারের সদস্যরা ছাড়াও অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সীতারাম ইয়েচুরি, বৃন্দা কারাত, হান্নান মোল্লা, প্রভাত পট্টনায়েক, উৎসা পট্টনায়েক, জেএনইউ’র অধ্যাপক ও ছাত্ররা।