E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৬০ বর্ষ ৪ সংখ্যা / ২ সেপ্টেম্বর, ২০২২ / ১৬ ভাদ্র, ১৪২৯

রাজ্য ও কেন্দ্র উভয় ক্ষেত্রেই শিক্ষা আক্রান্ত

শ্রুতিনাথ প্রহরাজ


বছর তিনেক আগে ‘দ্য ক্রনিক্যাল অফ হায়ার এডুকেশন’- এ প্রকাশিত এক নিবন্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন শাস্ত্রের অধ্যাপক জেসন স্ট্যানলি বলেছেন, ‘‘বিশ্বজুড়ে শিক্ষায় এমন একটা পদ্ধতি প্রয়োগের চেষ্টা চলছে যা ফ্যাসিবাদের পথ প্রশস্ত করছে।’’ ফ্যাসিবাদ বোঝাতে উনি বলেছেন, ‘‘জাতি ধর্ম বা সংস্কৃতি-ভিত্তিক একধরনের উগ্র জাতীয়তাবাদ যার প্রতিনিধিত্ব করে কোনো না কোনো স্বৈরতন্ত্রী নেতা, যে নিজেকে জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে দাবি করে।’’ এই ধরনের প্রচেষ্টা এক সর্বগ্রাসী কর্তৃত্ববাদ-এর জন্ম দেয় যা বহুত্ববাদ ও পরমত-সহিষ্ণুতার সংস্কৃতি বিরোধী। আমাদের দেশে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ ও তার অন্যতম প্রধান সেবক প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও তাঁর সরকারের বর্তমান কার্যকলাপ দেখলে স্ট্যানলি’র উপরোক্ত সতর্কবাণীর যাথার্থ্য উপলব্ধি করতে অসুবিধা হয়না। আমরাও আজ একই বিপদের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে নয়া শিক্ষানীতির মাধ্যমে বর্তমান ভারতের শিক্ষাক্ষেত্র দ্বিমুখী আক্রমণের শিকার। একদিকে করপোরেট পুঁজির আগ্রাসনে বেপরোয়া কেন্দ্রীকরণ, বেসরকারিকরণ ও বাণিজ্যিকীকরণ, অন্যদিকে হিন্দুত্ব ও হিন্দুরাষ্ট্রের কর্মসূচি বাস্তবায়নে পাঠ্যসূচিতে উগ্র হিন্দুত্ববাদী ইতিহাস (যার অধিকাংশই বিকৃত) ও সাংস্কৃতিক উপাদানের অন্তর্ভুক্তির প্রয়াস। এনসিইআরটি এবং তার অধীন ন্যাশনাল কারিকুলাম ফ্রেমওয়ার্ককে (এনসিএফ) সেইভাবে পাঠ্যসূচি গেরুয়াকরণের কাজে তারা ব্যবহার করেছে। তাই বিপন্ন দেশ, বিপন্ন সংবিধান। নয়া-উদার অর্থনীতির ও বর্তমানের লুটেরা আন্তর্জাতিক লগ্নিপুঁজির কারিগররা এবং হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্রশক্তির কাণ্ডারিগণ, একে অন্যের স্বার্থরক্ষায় দায়বদ্ধ থাকায় এই দ্বিমুখী আক্রমণের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে দেশের বিপদ সামগ্রিকভাবে অনেকটাই বেড়েছে, একই সাথে বিপদ বেড়েছে শিক্ষাক্ষেত্রেও। তাই, দেশ ও তার সংবিধান বাঁচাতে শিক্ষা বাঁচানোর লড়াইয়ে শুধু ছাত্র, শিক্ষক বা শিক্ষা কর্মী নয়, অভিভাবক সহ সব অংশের মানুষের সক্রিয় অংশগ্রহণ জরুরি। কোভিড অতিমারীর সংকট যখন সারা দেশে চরম বিপর্যয় ডেকে এনেছে, সংক্রমণ এড়াতে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলি যখন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে আছে, ঠিক সেই সময় জাতীয় শিক্ষানীতি ঘোষণা করলো কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। একইসাথে এদেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর বাধ্যবাধকতাকে একপ্রকার অস্বীকার করে, চাপিয়ে দেওয়া হলো জাতীয় শিক্ষানীতি। সরকারি বা সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের যথাযথ মানোন্নয়ন কেন ঘটছে না তার কোনো বস্তুনিষ্ঠ বিশ্লেষণ এই শিক্ষানীতিতে নেই, যা থাকা দরকার ছিল। অতীতের যথাযথ মূল্যায়নই ভবিষ্যতের পথ নির্দেশ করে। কেন শুধুমাত্র ছাত্র সংখ্যা কম এই অজুহাতে গত পাঁচ-ছ বছরে যে লক্ষাধিক প্রাথমিক ও উচ্চ প্রাথমিক স্কুল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে তার উল্লেখ এখানে নেই।

নয়া জাতীয় শিক্ষানীতিতে গ্রামীণ গরিব পরিবারগুলির সন্তানদের, আদিবাসী ও তফশিলি পরিবারের সন্তানদের এবং অন্যান্য আর্থিক দিক থেকে অসহায় পরিবারগুলির সন্তানদের শিক্ষার সুযোগ দেওয়ার প্রশ্নে রাষ্ট্রের ভূমিকা কী হবে তা বলা নেই। সংরক্ষণের বিষয়ে কোনো কথা বলা নেই, অথচ শিক্ষানীতি ঘোষণা হওয়ার আগেই সংরক্ষণ তুলে দেওয়ার রব তৈরি করা হচ্ছে সর্বত্র সুকৌশলে পরিকল্পিত উপায়ে। এর ফলে আগামীদিনে শিক্ষাক্ষেত্রে যে বৈষম্য বাড়বে এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। ক্রমবর্ধমান শিক্ষার ব্যয় সামলানো সম্ভব না হওয়ার কারণে এইসব পরিবারের সন্তানরা শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হবে। সামগ্রিকভাবে শিক্ষার গুণমান হ্রাস পাবে। এমনিতেই নয়া উদার অর্থনীতির হাত ধরে গত তিন দশকে এদেশে অন্যান্য ক্ষেত্রের সঙ্গে শিক্ষাক্ষেত্রেও দেশি-বিদেশি বেসরকারি বিনিয়োগ অনেকটা বেড়েছে। গত তিন দশকে দেশজুড়ে বেসরকারি স্কুল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যাপ্ত সংখ্যায় বৃদ্ধি পেয়েছে। নয়া শিক্ষানীতি চালু হলে এই সংখ্যা আরও বাড়বে। মানব-হিতৈষী (ফিলানথ্রপিক) প্রতিষ্ঠানগুলির পরিচালনাধীন বিদ্যালয়গুলিকে গুরুত্ব দেওয়ার প্রস্তাবের মধ্য দিয়ে আদতে, আরএসএস পরিচালিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলির সরকারি স্তরে মান্যতা দেওয়ার সুযোগ তৈরি করা হয়েছে। যেহেতু সময়ের পরিবর্তনের সাথে পাল্লা দিয়ে শিক্ষা ব্যবসার ধরন বদলেছে, তাই সরকারি শিক্ষানীতিতে চালু নিয়ন্ত্রণবিধির প্রয়োজনীয় পরিবর্তন এনে বদলে যাওয়া পরিস্থিতির উপযোগী বেসরকারি বিনিয়োগের ক্ষেত্র প্রস্তুত করা হয়েছে।

এ রাজ্যেও শিক্ষাব্যবস্থা এখন ভয়ংকর আক্রমণের মুখে। প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় - সর্বত্র গণতান্ত্রিক শিক্ষা প্রশাসন বলতে অবশিষ্ট আর কিছুই নেই। মধ্যশিক্ষা পর্ষদ চলছে প্রশাসক দিয়ে, উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদও প্রায় তাই। যাদবপুর বা প্রেসিডেন্সির মতো দু-একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাদ দিলে বাকি সব কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ছাত্র সংসদের কোনো নির্বাচন হয়নি। তাই, ছাত্রসংসদের অফিসগুলি এখন তৃণমূল কংগ্রেসের স্থানীয় কার্যালয়ে হয়ে দাঁড়িয়েছে। যাবতীয় দুর্নীতি, ভরতি নিয়ে তোলাবাজি ও গুন্ডাগিরি - এর সবটাই চলে এই অফিসগুলি থেকে। অল্প হলেও কিছু ক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানরাও (এমনকী উপাচার্য পর্যন্ত) এই দুর্নীতির অংশীদার হয়ে যাচ্ছেন যা বিপদের মাত্রা বাড়িয়ে তুলেছে। সর্বোচ্চ পর্যায়ের দলীয় দখলদারি সুনিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে ছাত্র-শিক্ষক-শিক্ষা কর্মী ও আধিকারিকদের গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত প্রতিনিধিত্বের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। মধু খাওয়ার নেশায় বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এখন তৃণমূলের স্থানীয় নেতাদের দখলদারির প্রতিযোগিতা চলছে। মাঝে মধ্যে এর খেসারত দিতে হচ্ছে শিক্ষক, শিক্ষা কর্মী সহ নিরীহ ছাত্র-ছাত্রীদের। আলোচ্য সময়ে শিক্ষার ব্যয় অনেকটাই বেড়েছে। আর তাই, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিতে বেআইনি অর্থ উপার্জনের নেশায় ছাত্রভরতি, পরীক্ষা বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অন্যান্য উন্নয়নমূলক কাজকে ঘিরে গড়ে উঠেছে সিন্ডিকেট। ভাগ বাঁটোয়ারা নিয়ে ঘটে চলেছে হিংসা হানাহানির ঘটনা। সব মিলিয়ে শিক্ষাঙ্গনে নৈরাজ্য চরম আকার নিয়েছে। ধর্মতলায় দলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রীর সভায় না গেলে ট্রান্সফার সার্টিফিকেট ধরিয়ে দেওয়া হবে - এমন হুমকিও শুনতে হচ্ছে অসহায় ছাত্র-ছাত্রীদের।

প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী পদে নিয়োগ যেটুকু হচ্ছে, শূন্য পদের সংখ্যা বাড়ছে তার তার চাইতে কয়েকগুণ বেশি। অধিকাংশ ক্ষেত্রে আংশিক ও চুক্তিভিত্তিক শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মীদের দিয়ে নামমাত্র পারিশ্রমিকের বিনিময়ে কাজ চালিয়ে নেওয়ার মাধ্যমে, রাজ্য সরকার শিক্ষাখাতে বরাদ্দ অর্থ ক্লাব, দুর্গাপূজা কমিটিগুলিকে বিলি করার বেআইনি বন্দোবস্ত পাকা করছে। সব মিলিয়ে শিক্ষাক্ষেত্রে এখন প্রায় লক্ষাধিক শূন্য পদ আছে যা পূরণের কোনো সদিচ্ছা রাজ্য সরকারের নেই। ফলে শিক্ষার সামগ্রিক গুণমান বিপজ্জনকভাবে হ্রাস পাচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বর্তমান প্রজন্মের ছাত্র-ছাত্রীরা। রাজ্যে গত এগারো বছরে শিক্ষাক্ষেত্রে বেসরকারি বিনিয়োগের পরিমাণ ভয়ংকর বৃদ্ধি পেয়েছে, যা স্বাধীনতা-উত্তরকালে রাজ্যের কোনো সরকারের আমলে ঘটেনি। শিক্ষার ব্যয় অস্বাভাবিক রকম বৃদ্ধি পাওয়ার এটি একটি অন্যতম কারণ। রাজ্যের সরকারি ও সরকারি সাহায্য প্রাপ্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির প্রতি আমজনতার অনাস্থা তৈরি করে, রাজ্য সরকার তথা শাসকদল এই কাজে নিরন্তর ইন্ধন জুগিয়েছে।

ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে নার্সারি থেকে শুরু করে একের পর এক বেসরকারি স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়। এখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ দরিদ্র পরিবারের ছেলেমেয়েদের ঢোকার সুযোগ নেই বললেই চলে। এদের মাথায় কোনো সামাজিক নিয়ন্ত্রণ নেই, তাই এখানেও চলছে দেদার লুট। এই বেপরোয়া লুটের লাইসেন্স দিয়েছে রাজ্য সরকার তথা শাসকদল, তাদের সংকীর্ণ রাজনৈতিক স্বার্থে। এই ব্যবস্থা ধরে রাখতে, সম্প্রতি রাজ্য সরকার আইন সংশোধন করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলির ভিজিটর পদে রাজ্যপালকে সরিয়ে শিক্ষামন্ত্রীকে বসিয়েছে। ভুলে গেলে চলবে না, কেন্দ্রের বর্তমান শাসকদলের মতো তৃণমূল কংগ্রেসও উদার অর্থনীতির ধারক ও বাহক। লকডাউনের সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও চড়া হারে ফিজ গুনতে হয়েছে অসহায় অভিভাবকদের। শিক্ষা প্রশাসনের সংস্কারের নামে নতুন আইন এনে রাজ্য সরকার কার্যত শিক্ষক, শিক্ষা কর্মীদের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিয়েছে। বদলির নামে স্বেচ্ছাচার শুরু হওয়ায় বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এখন অস্তিত্বের সংকটে পড়েছে। হয়তো আগামী দিনে এগুলি বন্ধ করে দেওয়ার লক্ষ্যে, পরিকল্পিত প্রয়াসে এই কাজ চলছে। ইতিমধ্যে বন্ধ হয়েছেও বেশ কিছু বিদ্যালয়। এই আক্রমণ রুখতে প্রয়োজন শিক্ষার ব্যয় কমিয়ে সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করা। রাজ্য সরকার হাঁটছে বিপরীত পথে।

ইদানীং প্রায়ই শুনতে হয়, বাম জমানায় নাকি এ রাজ্যে শিক্ষায় কোনো উন্নতি হয়নি! ১৯৭৭ সালে এ রাজ্যে বিশ্ববিদ্যালয় ছিল আটটি। চৌত্রিশ বছরের বাম জমানায় তা বেড়ে দাঁড়ায় ২২টিতে। এখনকার মতো ঢাল নেই তলোয়ার নেই নিধিরাম সর্দারের মতো একেরপর এক বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ঘোষণা নয়, পর্যাপ্ত সরকারি বরাদ্দ নিয়ে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠেছে প্রয়োজনীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সহ উপযুক্ত পরিকাঠামো নিয়ে। বামফ্রন্ট সরকার আসার আগে ডিগ্রি কলেজ ছিল ২৪৪টি। পরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪৭৮টি তে। পলিটেকনিক কলেজ ছিল ৮টি। বাম জমানায় আরও ৩৫টি নতুন পলিটেকনিক কলেজ তৈরি হয়। আইটিআই ছিল ছ’টি পরে বেড়ে দাঁড়ায় ২৯টি। সরকারি বেসরকারি মিলিয়ে বামফ্রন্ট সরকারের আমলে ৫৫ টি নতুন ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ গড়ে উঠেছে। সাতাত্তর সালে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল দু’লক্ষ পাঁচ হাজার। ২০১১ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষা দেয় ১০ লক্ষ ১৭ হাজার ছাত্র-ছাত্রী, যার মধ্যে আড়াই লক্ষেরও বেশি সংখ্যালঘু পরিবারের ছেলেমেয়েরা। আদিবাসী ছাত্র-ছাত্রী ছিল প্রায় ৬০ হাজার। এই সময়ে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছিল প্রায় ৬ লক্ষ, যার মধ্যে সংখ্যালঘু ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ছিল প্রায় দেড় লক্ষ। সাতাত্তর সালে মাদ্রাসা শিক্ষায় বাজেট বরাদ্দ ছিল ছ’লক্ষ টাকারও কম। ২০১১ সালে বামফ্রন্ট সরকারের শেষ বাজেটে মাদ্রাসা শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ৬১০ কোটি টাকা। ১৯৯৭ সালে স্কুল সার্ভিস কমিশন চালু হওয়ার পর ২০১০ সাল পর্যন্ত স্বচ্ছতার সঙ্গে মেধার ভিত্তিতে মোট শিক্ষক নিযুক্ত হয়েছেন ১,৩৪,৮১৮ জন। প্রধান শিক্ষক নিযুক্ত হয়েছেন ৯,৮৩৯ জন, গ্রন্থাগারিক ৬৫৭ জন। তবুও এরা বলেন বাম আমলে নাকি কিছুই হয়নি!

এখন যেমন মেধার ভিত্তিতে নিযুক্ত করার দাবি নিয়ে ন্যায় বিচারের আশায় কয়েক হাজার মেধাবী ছাত্র-ছাত্রী হয় আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন নতুবা ধারাবাহিক অনশন বা ধরনা কর্মসূচিতে শামিল হচ্ছেন। বাম আমলে কিন্তু এই বিপুল সংখ্যায় নিয়োগের প্রেক্ষিতে এধরনের কোনো অভিযোগ শুনতে হয়নি। নির্দিষ্ট অভিযোগ নিয়ে একটি মামলা আদালতে এসেছিল এ কথা ঠিক, প্রথম পর্যায়ে অভিযোগকারী তার পক্ষে রায় পেলেও উপযুক্ত মেরিটের অভাবে সর্বোচ্চ আদালতে তা খারিজ হয়ে যায়। এই নিয়োগ যে যথাযথভাবে হয়েছে তা আদালতও মেনে নিতে বাধ্য হয়। একথা বললাম এই কারণে, কিছুদিন আগে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু এই মামলা নিয়ে সাংবাদিকদের কাছে প্রকৃত ঘটনার বিবরণ না দিয়ে মিথ্যাচার করেছেন। গত এগারো বছরে প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত যাবতীয় নিয়োগে আপাদমস্তক দুর্নীতির পাঁকে ডুবে যাওয়া ও আদালতে ধরা পড়ার পর নাস্তানাবুদ হওয়ার কারণে তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের মুখ্যমন্ত্রী, শিক্ষা মন্ত্রী সহ পারিষদ দল নিজেদের পাপ ঢাকতে বাম আমলের নিয়োগ নিয়ে এহেন মিথ্যাচার করছেন। এমনকী এও বলছেন, তখনকার নিয়োগের কাগজপত্র নাকি বামেরা সব নষ্ট করে দিয়েছে! আসলে হাতেনাতে ধরা পড়ে জনসমক্ষে নাস্তানাবুদ হলে পেশাদার চোরও তার বাপের নাম ভুলে যায়। এদের হয়েছে সেই হাল! বাম আমলে যদি দুর্নীতি হয়েই থাকে, আপনারা দু’দফায় সরকারে থেকে তৃতীয়বার সরকারে এলেন অথচ এনিয়ে একটাও তদন্ত কমিটি তৈরি করা গেল না কেন? এর উত্তর তৃণমূল কংগ্রেসও জানে, সাধারণ মানুষও জানেন। আষাঢ়ে গল্প ফেঁদে কোনো লাভ নেই। জোর করে দুর্নীতিবাজ নেত্রীকে চটকদার বিজ্ঞাপনী প্রচারে ‘সততার প্রতীক’ বানিয়ে বাজারে ছাড়লে হয়তো সাময়িক লাভ হয়, তবে একটা সময় আসে যখন মানুষ বুঝতে পারেন কোনটা সাদা আর কোনটা কালো। চতুর্দিকে ঘুরে দাঁড়ানোর পালা শুরু হয়েছে তাই। আর সেই কারণে, দিশেহারা নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রীকে প্রকাশ্য সভায় সমালোচকদের জিভ টেনে ছিঁড়ে ফেলার হুমকি দিতে হয়। এধরনের হুমকি যত বাড়বে, শেষের সেদিন তত ঘনিয়ে আসবে।