৬০ বর্ষ ৪ সংখ্যা / ২ সেপ্টেম্বর, ২০২২ / ১৬ ভাদ্র, ১৪২৯
‘বাঘের যত সাহস চোখে’ ‘লাঠির চোটে পালায় গরু’
বরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়
বাঙলা নাকি বাঙালি আচমকা খেপেছে কে তা এখনও ‘পষ্ট’ নয়। তবে ছবিছাবা যতটুকু চোখে এসেছে তাতে বুদ্ধির গোড়ায় ধোঁয়া দিয়ে বুঝতে খুব একটা কষ্ট হয়নি যে, এ খেপা যে সে খেপা নয়। এ একেবারে গোড়া ধরে টানাটানি। এরকমভাবে অস্তিত্বের আদ্যক্ষর ধরে কেউ টানাটানি করে! নাহয় শেষ কয়েক বছরে অর্থনৈতিক দিক থেকে শুরু করে, নৈতিক দিক থেকে শুরু করে, শিক্ষার দিক থেকে শুরু করে, সাংস্কৃতিক দিক থেকে শুরু করে, ইতিহাসের দিক থেকে শুরু করে, ভূগোলের দিক থেকে শুরু করে, রাজনৈতিক দিক থেকে শুরু করে... আর কিছু বাকি রইলো নাকি? থাকলে নিজ নিজ দায়িত্বে বসিয়ে নেবেন। ‘ব’ কে স্ট্যাচু করে দিয়ে ‘ক’ বসিয়ে ‘কাঙালি করে দেবার চেষ্টা তো অনেকদিনের।
‘ব’-এ বাঙলা, ‘ব’-এ বাঙালি, ‘ব’-এ বাক, ‘ব’-এ বৃত্ত, ‘ব’-এ বিজ্ঞাপন, ‘ব’-এ বোধ, ‘ব’-এ বাধা, ‘ব’-এ বাঁশ, ‘ব’-এ বিষ, ‘ব’-এ বিলাপ, ‘ব’-এ বিবর্তন, ‘ব’-এ বিরূপ, ‘ব’-এ বিপদ, ‘ব’-এ বিহিত, ‘ব’-এ বিব্রত, ‘ব’-এ বধ, ‘ব’-এ বর্ণচোরা, ‘ব’-এ বিধ্বংসী, ‘ব’-এ বিলোপ, ‘ব’-এ ব্যাকরণ, ‘ব’-এ বিশৃঙ্খলা, ‘ব’-এ ব্যতিক্রম, ‘ব’-এ বিপ্লব, ‘ব’-এ বর্ধমান। আর যোগীন্দ্রনাথ সরকার লিখে গেছেন ‘ব’-এ ‘বাঘের যত সাহস চোখে’। এরকম লিখলে আরও অনেক অ্যাপ্রোপ্রিয়েট শব্দ খুঁজে খুঁজে লেখা যায়। তবে থিওরি আর প্র্যাক্টিকালে সংঘাত থাকা উচিত না হলেও একটা চোরা সংঘাত চিরকালই আছে। প্র্যাক্টিকাল-এ দক্ষরা মনে করেন ওসব থিওরি ফিওরি সব বেকার। বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকেই থিওরির জন্ম হয়। আর তত্ত্বের বিশেষজ্ঞরা মনে করেন থিওরি থাকলে তবেই তা প্র্যাক্টিকালি প্রয়োগ করা যায়! ওই ডিম আগে না মুরগি আগের মতোই কিছুটা। এ বিতর্কে ঢুকলে বেকার শব্দ খরচ। পরে কোনোসময় নাহয় ভেবে দেখা যাবে। বর্ধমানে বিস্ফোরণ নাকি বর্ধমানে বিশৃঙ্খলা নাকি বর্ধমানে বিধ্বংসী অথবা বর্ধমানে বোম্বেটে - জটায়ুর পরবর্তী উপন্যাসের নাম কী হতে পারে তিনিই ভাবুন। আমরা এই ফাঁকে একটু ইতিহাস চর্চা করে নিই।
খুব বেশি পুরোনো ইতিহাস অবশ্য নয়। বছর কুড়ি আগেকার কথা। ২০০৩। তারিখ সেপ্টেম্বর ১৫। দিল্লিতে চাঁদের হাট। আছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী জর্জ ফার্নান্ডেজ। আছেন আরএসএস মুখপত্র পাঞ্চজন্যের সম্পাদক তরুণ বিজয়। আছেন মোহন ভাগবত, মদন দাস দেবী, আরএসএস-এর শীর্ষস্থানীয় এইচ ভি শেষাদ্রী, বিজেপি সাংসদ বলবীর পুঞ্জ এবং অবশ্যই কেন্দ্রের সেইসময়ের বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকারের দপ্তরবিহীন মন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই অনুষ্ঠানে আরএসএস-বিজেপি নেতৃত্বের সামনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, ‘কোনো কোনো আরএসএস নেতৃত্বের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে দেখা করলেও, এর আগে আমি কখনও এত আরএসএস নেতৃত্বের সঙ্গে সাক্ষাৎ করিনি। আপনারাই প্রকৃত দেশপ্রেমিক। আমি জানি, আপনারা দেশকে ভালোবাসেন। আপনারা দেশের খুব ছোটো এবং প্রান্তিক অঞ্চলের জন্যেও যত্নবান।’ ওইদিনই তিনি বলেন, ‘আপনারা যদি আমাকে এক শতাংশ সমর্থন দেন তাহলেই আমরা এই লাল সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারব।’ আরএসএস নেতৃত্বকে উদ্দেশ্য করে তিনি আরও জানান, ‘আমরা কমিউনিস্টদের বিরুদ্ধে লড়াইতে আপনাদের সঙ্গে আছি।’ ওইদিনই তিনি জানিয়েছিলেন, বিজেপি-র ‘ন্যাচারাল অ্যালাই’ তৃণমূল। আর বিজেপি-র রাজ্যসভা সাংসদ বলবীর পুঞ্জ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আমাদের প্রিয় মমতাদিদি সাক্ষাৎ দুর্গা...’। কারোর সন্দেহ হলে ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০০৩-এর দ্য টেলিগ্রাফ, টাইমস অফ ইন্ডিয়ার ডিজিটাল সংস্করণ দেখে নিতে পারেন। বিস্তারিত লেখা আছে। এই প্রসঙ্গিত প্রতিবেদনে টাইমস অফ ইন্ডিয়া হেডিং করেছিল - ‘মমতা’স ডেট উইথ আরএসএস’।
প-পি-চু-স। পরস্পর পিঠ চুলকানো সমিতি। দুই কুঁড়ের সেই গল্প আমাদের সকলেরই জানা। সেই সূত্র মেনেই আরএসএস-এর ঘোষিত ‘দুর্গা’র সঙ্গে ‘ন্যাচারাল অ্যালাই’ বিজেপি'র একটা প্রকাশ্য অথবা গোপন আঁতাত যে ছিল, আছে, থাকবে তা স্বাভাবিক। সে আঁতাত যতই চেপে রাখার চেষ্টা করা হোক, আর নির্বাচন এসে গেলে প্রধানমন্ত্রীর কোমরে দড়ি পরিয়ে ঘোরানোর হুমকি মুখ্যমন্ত্রী দিন না কেন, মাঝেমাঝেই কিছু ঘটনায় তা দুধ কা দুধ আর পানি কা পানি হয়ে যায়। সে কথায় পরে আসছি। আপাতত রাজ্যভিত্তিক কয়েকটা মেইনস্ট্রিম মিডিয়ার প্রকাশিত প্রতিবেদনের দিকে একটু নাহয় চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক।
২৮ অক্টোবর, ২০১৬। ‘এই সময়’ পত্রিকার ডিজিটাল সংস্করণের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছিল ‘২০১১ সালে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার আগে বাংলায় আরএসএস-এর শাখা ছিল মাত্র ৪৭৫টি। কিন্তু গত পাঁচ বছরে এই হিন্দুত্ববাদী সামাজিক সংগঠনটির শাখা পশ্চিমবঙ্গ জোনে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১,৪৫০টি। অর্থাৎ, তৃণমূল সরকারের আমলে বাংলায় আরএসএস বৃদ্ধি পেয়েছে তিন গুণেরও বেশি।’ ওই সভা থেকেই জানানো হয়েছিল, রাজ্যে শেষ এক বছরে আরএসএস-এর শাখা বেড়েছে ৩০০টি। তৃণমূলের শাসনকালে রাজ্যে ক্রমশ বেড়েছে আরএসএস-এর সংগঠন - এই দাবি করা হয়েছিল স্বয়ং আরএসএস-এর পক্ষ থেকে। ওইদিন আরএসএস-এর পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়, তৃণমূলকে উৎখাত করার ডাক দেওয়া আমাদের কাজ নয়।
২৬ মার্চ, ২০১৭। ‘জি ২৪ ঘণ্টা’র ডিজিটাল সংস্করণের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘গত পাঁচ বছরে রাজ্যে প্রায় তিনগুণ বেড়েছে আরএসএস-এর শাখার সংখ্যা। বেড়েছে আরএসএস পরিচালিত স্কুলও।’ গত পাঁচ বছর এই রাজ্যে তাদের কাছে গোল্ডেন পিরিয়ড। ওইদিন রাজ্যের আরএসএস নেতৃত্বের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ২০১১ সালে রাজ্যে তাদের শাখার সংখ্যা ছিল ৫৮০। যা ২০১৪ সালে হয় ১,২৪০। ২০১৬-র ডিসেম্বরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১,৪৯২-তে। এর মধ্যে দক্ষিণবঙ্গেই শাখার সংখ্যা ১,০৬৭ এবং উত্তরবঙ্গে ৪২৬। শুধুমাত্র ২০১৫-১৬-তেই রাজ্যে ২৭৫টি নতুন শাখা তৈরি হয়েছে বলেও জানান আরএসএস নেতৃত্ব। এই সঙ্গেই জানানো হয় রাজ্যে আরএসএস পরিচালিত প্রাথমিক স্কুলের সংখ্যা ৩০৯টি। যাতে পড়ে ৬৬,০৯০ জন ছাত্রছাত্রী।
৯ অক্টোবর, ২০১৮। আনন্দবাজার পত্রিকার ডিজিটাল সংস্করণ। যেখানে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুসারে সংঘ সূত্রে দাবি করা হয় প্রচারের সুবিধার জন্য রাজ্যকে দক্ষিণ ও উত্তরে ভাগ করা হয়েছে। এছাড়াও সংগঠন বাড়ানোর লক্ষ্যে দার্জিলিং এবং কোচবিহারকে দু’ভাগে ভাগ করা হয়েছে। দক্ষিণবঙ্গের ৩৩টি সাংগঠনিক জেলায় আরএসএস-এর প্রায় ২ হাজার শাখা আছে। গতবছরের ৬০০ থেকে উত্তরবঙ্গে সংঘের শাখা ইতিমধ্যেই ১,২০০তে দাঁড়িয়েছে। শুধুমাত্র উত্তর দিনাজপুরেই সংঘের ১৫০টি শাখা সক্রিয়ভাবে কাজ করছে বলেও ওই প্রতিবেদনে জানানো হয়। ওই অঞ্চলে শাখার সংখ্যা আরও বাড়ানো হচ্ছে। ইসলামপুরের দাড়িভিট ছাড়াও গোয়ালপোখর, চাকুলিয়া, হেমতাবাদ, করণদিঘি এখন আরএসএস-এর শক্ত ঘাঁটি। প্রসঙ্গত, ইসলামপুরের দাড়িভিট স্কুল কাণ্ডে গুলিচালনার ঘটনা বোধহয় এখনও সবার স্মৃতি থেকে হারিয়ে যায়নি।
১৫ মার্চ ২০১৮। জি ২৪ ঘণ্টার এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, আরএসএস নেতৃত্বের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে গত ৫ বছরে রাজ্যে তাদের শাখা বেড়েছে প্রায় ৭০ শতাংশ। ২০১৩ সালে ৭৫০ শাখার জায়গায় বর্তমানে শাখার সংখ্যা ১,২৭৯। যার মধ্যে দক্ষিণবঙ্গে শাখার সংখ্যা ৯১০ এবং উত্তরবঙ্গে ৩৬৯। রাজ্যে চলছে ৬২১টি সেবাকেন্দ্র। দেশের মধ্যে একমাত্র পশ্চিমবঙ্গেই সংগঠন বৃদ্ধির হার সবথেকে বেশি।
১ নভেম্বর, ২০১৯। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার ডিজিটাল সংস্করণে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘দীর্ঘকাল বাম শাসনাধীন বাংলায় সম্প্রতি আরএসএস-এর কার্যকলাপ বেড়েছে বেশ কয়েকগুণ। সংঘের দাবি, শুধু দক্ষিণবঙ্গেই এক বছরের ব্যবধানে আরএসএস-এর সদস্য সংখ্যা বেড়েছে ৪৭ শতাংশ। চলতি বছরে শাখা বেড়েছে ৩৯০টি।’ ওই প্রতিবেদনেই আরও বলা হয় ‘এখন দক্ষিণবঙ্গে ১,২৩৫টি শাখা রয়েছে। মিলন রয়েছে ১,৪০২টি। সপ্তাহান্তে কাজ করে মিলন। শাখাগুলো প্রতিদিন কাজ করে। ২০১৮ সালে এই শাখা ছিল ১,১০০-র মধ্যে। মিলন ছিল ১,৩০০। দক্ষিণবঙ্গে সব মিলিয়ে ৪৭ শতাংশ সদস্য বৃদ্ধি পেয়েছে।’ আর রাজ্যের মন্ত্রী তথা প্রয়াত তৃণমূল নেতা সুব্রত মুখোপাধ্যায় আরএসএস সম্পর্কে জানিয়েছিলেন “ওরা তো ধর্মীয় বা সামাজিক সংগঠন। ওরা কেন রাজনীতির কথা বলছে? আমাদের লড়াই তো আরএসএস-এর সঙ্গে নয়, বিজেপির সঙ্গে।” অর্থাৎ আরএসএস এবং বিজেপি এক নয় সেটাই বোঝাতে চেয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একদা ছায়াসঙ্গী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। যদিও মহম্মদ সেলিম সেইসময় স্পষ্টই জানিয়েছিলেন, “বিভাজন, ধর্মীয় আবেগ, ঘৃণা ও হিংসা নিয়ে ওরা অরাজনৈতিক খোলসের মধ্যে থেকে রাজনীতি করে। আদর্শগতভাবে এদের বিরুদ্ধে আমরা লাগাতার প্রচার করে গিয়েছি। তখন ঐক্যের শক্তি মজবুত ছিল বলে বিভাজনের রাজনীতি ঘাঁটি গাড়তে পারেনি। তৃণমূলের রাজত্বে বিভাজনের রাজনীতির ভিত্তি করে দেওয়ায় আরএসএস পায়ের তলায় মাটি খুঁজে পেয়েছে।”
১ নভেম্বর, ২০২১। এবিপি আনন্দ ডিজিটালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী জানিয়েছেন, বিজেপি এবং তৃণমূলের ডিএনএ এক। তৃণমূল সরকারের আমলেই রাজ্য জুড়ে শাখা বাড়িয়েছে আরএসএস। যদিও কংগ্রেসের আনা এই অভিযোগ খারিজ করে তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় বলেন, দেশে ক্ষমতায় আছে বিজেপি। বিভিন্ন রাজ্যে আরএসএস সংগঠন বাড়াতেই পারে। এই বিষয়ে রাজ্য সরকারের করার কিছুই নেই।
২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২। ইটিভি ভারতের ডিজিটাল সংস্করণে জানানো হয়, “পশ্চিমবঙ্গ এবং উত্তরপূর্ব ভারতের প্রতিটি রাজ্যে পাঁচ হাজার করে নতুন শাখা খুলে জনসংযোগে জোর দিতে চাইছে রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘ।” এই কাজের জন্য কলকাতার কেশব ভবনকে উত্তর পূর্ব ভারতের প্রধান শাখা অফিসে পরিণত করা হয়েছে। বাঙলা থেকে এই রাজ্যগুলোর সংগঠন বৃদ্ধির কাজ শুরু করা হচ্ছে। আগামী লোকসভা নির্বাচনের আগে জনসংযোগ আরও বাড়িতে তোলার জন্য এই কাজে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। মোহন ভাগবত চাইছেন পশ্চিমবঙ্গ এবং উত্তরপূর্ব ভারতে সংগঠনকে ঢেলে সাজাতে।
মোটামুটি ৬ বছরের একটা টাইমলাইন। এর একটা কথাও আমার বলা নয়। বলেছে বামেদের ব্ল্যাকআউট করা, রাজ্যের তৃণমূল বিজেপি বাইনারি খেলে যাওয়া তথাকথিত মেইনস্ট্রিম সংবাদমাধ্যম। আরএসএস-কে উদ্ধৃত করে সমস্ত তথ্যও তাদেরই দেওয়া। যে তথ্য থেকে এটা স্পষ্ট যে, ‘যাঁর’ মধ্যে আরএসএস নেতৃত্ব ‘দুর্গা’কে খুঁজে পেয়েছিলেন সেই তিনিই তাঁর বাহিনী দিয়ে রাজ্যে আরএসএস-এর বৃদ্ধির অনুঘটক হিসেবে মসৃণ অপারেশন চালিয়ে গেছেন। এবার লেখার শেষ অংশটাতে আসা যাক। তাতে আপনি আশান্বিত হবেন বা নিরাশায় ডুববেন সেটাও আপনারই ব্যক্তিগত বিষয়। ঘটনাটা ৩১ আগস্ট মুখ্যমন্ত্রীর সাংবাদিক সম্মেলনের। যে সাংবাদিক সম্মেলনের একদম শেষভাগে এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দৃঢ়ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, ‘আরএসএস এত খারাপ ছিল না। আরএসএস এত খারাপ বলে আমি বিশ্বাসই করি না।’ মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন।
ইতিহাস, ভূগোল, বিজ্ঞান ঘেঁটে খিচুড়ি বানানোর যে ঘোর কলিযুগে আমাদের বর্তমান অবস্থান, সেখান থেকেই প্রতিদিন নতুন নতুন তথ্য সামনে আসে। কদিন আগেই আমরা যেমন জানতে পেরেছি, ‘বুলবুল পাখির পিঠে চেপে আন্দামান সেলুলার জেল থেকে বেরিয়ে ভারতে আসতেন সাভারকার!’ বিশ্বাস না হলেও এটাই সত্যি এবং এই তথ্য পড়ানো হচ্ছে কর্ণাটকের অষ্টম শ্রেণির পাঠ্যবইতে। লেখক কে টি গাট্টি। তেমনই অন্যদিকে আরএসএস প্রসঙ্গে এই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর ইচ্ছাকৃত অথবা অনিচ্ছাকৃত বক্তব্য। বিপদ কোনখানে, কোন জায়গায় লুকিয়ে, বিষবৃক্ষ কোথায় কোথায় কীভাবে শাখাপ্রশাখা বিস্তার করছে তা ক্রমশ ক্রমশ প্রকাশ্য। আগামীতে আরও হবে। যোগীন্দ্রনাথ সরকারের প্রসঙ্গ এর আগে একবার এই লেখায় এসেছে। ‘হাসিখুসি - প্রথম ভাগে’ ‘ব’ নিয়ে তিনি যেমন লিখেছেন, ‘বাঘের যত সাহস চোখে’ তেমনই তার ঠিক আগে ‘ল’ নিয়ে লিখে গেছেন ‘লাঠির চোটে পালায় গরু’। অতএব, এই লেখার সব দায় মাননীয় সরকারবাবুর...