৫৯ বর্ষ ১৬ সংখ্যা / ৩ ডিসেম্বর, ২০২১ / ১৬ অগ্রহায়ণ, ১৪২৮
নিকাশি আর পরিস্রুত পানীয় জলের অভাবে ক্ষুব্ধ নাগরিকরা এবার চাইছেন রেড ভলান্টিয়ার অজন্তা দাসকে
১১৩ নম্বর ওয়ার্ডে বাড়ি বাড়ি প্রচারে সিপিআই(এম) প্রার্থী অজন্তা দাস।
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ ১১৩ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণতম প্রান্তের বাসিন্দারা নিজেদের দুঃখের কথা উপহাসের মোড়কে বলতে ভালবাসেন। তাঁরা বলেন, আমাদের ওয়ার্ড এই সরকারের জমানায় অনলাইনে পাঠরত পড়ুয়াদের মতো যেখানে ঊর্ধ্বাঙ্গে নিয়ম মেনে স্কুলের পোশাক থাকলেও বাকি নিয়ম মানার বালাই কম। কারণ, নেতাজি সুভাষ রোডের দক্ষিণ দিকের মেট্রো স্টেশন ঘেঁষা রাস্তার দু’পাশ সংলগ্ন বসতি এলাকা পুর পরিষেবার শাঁস-জল পেয়ে উজ্জ্বল। তাই এখানে জমির দাম বেশি, ফ্ল্যাটের দাম বেশি ইত্যাদি। এখানে রাস্তায় প্রয়োজন অনুযায়ী মাঝে মাঝেই পিচ পড়ে। নিন্দুকেরা বলে, শাসকদলের নন্দীভৃঙ্গীদের ভাঁড়ারে টান পড়লে কাটমানির রাস্তা সুগম করতেই আবার পিচ পড়ে! তারপর ঠিকাদারের অনুপ্রেরণা...। আর দক্ষিণে, ওয়ার্ডের প্রান্তিক অংশে রয়েছে সোনালী পার্ক, জয়শ্রী মন্দির থেকে শীতলা মন্দির পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকা যেখানে নিকাশির বেহাল দশার কোনো পরিবর্তন হয় নি গত ১০ বছরে। রাস্তায় উজ্জ্বল আলোও কম ওই এলাকায়। বৃষ্টিতে জমা জলে ডুবে থাকেন এখানকার বাসিন্দারা। অন্য এলাকায় যদি দু’দিনে জমা জল নামে, এখানে তার চেয়ে জল নামতে লাগে আরও অতিরিক্ত দু’দিন। এখানকার মানুষ একটু বৃষ্টিতেই কোমর সমান জলে ডুবে থাকেন ডেঙ্গু আর ম্যালেরিয়াকে সঙ্গী করে। ডুবে থাকেন বেহাল স্বাস্থ্য ব্যবস্থার শিকার হয়ে। আর পানীয় জলের হাহাকার অবশ্য ওয়ার্ড জুড়ে সর্বত্রই।
এখানে জমা জল পাম্প করে বের করতে হয় প্রতিবার। নিকাশের উন্নতি হয় না। এই অব্যবস্থার বিরুদ্ধে বামপন্থীরা ডেপুটেশন দিয়েছেন বেশ কয়েকবার। কী বিধায়ক অরূপ বিশ্বাস, কী কাউন্সিলর ভ্রুক্ষেপ করেনি কেউ। পানীয় জলের সার সার বালতি আর পাত্র এখানে নিম্নবিত্ত মানুষের ঘরে ঘরে। উদ্বাস্তু আন্দোলনের লড়াই সংগ্রামের উত্তরাধিকারীরা তাই বদল চান।
এই ওয়ার্ডেই এবার বামফ্রন্ট মনোনীত সিপিআই(এম)’র প্রার্থী অজন্তা দাস। এলাকার মানুষের গর্বের রেড ভলান্টিয়ারদের একজন নিরলস কর্মী, যিনি করোনা মহামারীর সময় মুমূর্ষু রোগীকে অক্সিজেন সিলিন্ডার পৌছে দিয়েছেন, অক্সিমিটার, ওষুধ পৌছে দিয়েছেন, মুমূর্ষু রোগীকে নিয়ে ছুটেছেন চিকিৎসা কেন্দ্রে। ডাক পেয়ে চূড়ান্ত ঝুঁকি সত্ত্বেও করোনা রোগীর বাড়ি গিয়ে শুশ্রূষা করেছেন, স্যানিটাইজ করেছেন। এক-দু’বার নয় বার বার। এই এসএফআই কর্মী, নেতাজি নগর ডে কলেজের ছাত্রী বলছেনও তাই যে, আবারও যাবেন মানুষ ডাকলে।
তৃণমূলের এবারের দেওয়াল লিখন সেভাবে শুরু হয়নি তার কারণ একটা খুচরো ঝামেলা হয়েছে দু’দল তৃণমূল কর্মীর মধ্যে। বিষয়টা নািক সেরকম কিছুই না তৃণমূলীদের কথায়। এলাকার এক বড়ো নেতা মেজ নেতাকে টাকা দিয়েছিলেন দেওয়াল চুনকাম করতে। আর মেজ নেতা সেজ নেতাকে কাটমানি রেখে বাকি টাকা দিয়েছেন চুনকামের জন্য। সেজ নেতাও তাই করেছেন। ফলে নিচুতলায় টাকা কম পৌঁছেছে। তাই শেষ পর্যন্ত যিনি করেছেন, তিনি নিজেরটুকু রেখে যা চুনকাম করেছেন দেওয়ালে তাতে মুশকিল হয়েছে। ফুটে উঠেছে আগের দেওয়াল লিখন। এই নিয়ে মেজ নেতা যখন সর্বকনিষ্ঠ নেতার কাছে কৈফিয়ৎ চেয়েছেন তখন নিচুতলার নেতাটি জবাব দিয়েছেন তুই টাকা দিয়েছিস যে তোকে কৈফিয়ৎ দেব। ব্যাস। শুরু মারপিট। পরে নাকি বড়োনেতার মধ্যস্থতায় সরস পরিবেশে মিটেছে সেই ঝামেলা। এলাকার মানুষ এই ঘটনার কথা বলছেন আর হাসছেন।
তবে এই ওয়ার্ডের দক্ষিণ অংশের দীনেশ নগর নিরঞ্জন পরিবার সোনালী পার্ক এলাকায় সিন্ডিকেট নেতাদের দলের মধ্যে গুলি বিনিময় নিত্যদিনের ঘটনা। এলাকার সাধারণ মানুষ একরাশ আতঙ্ক আর উৎকণ্ঠা নিয়ে রয়েছেন সেখানে। প্রথম প্রথম তাদের মুখে কুলুপ থাকলেও এখন তারা মুখ খুলছেন। মুখ খুলছেন অজন্তাদের কাছে। এলাকার পার্টি নেতাদের কাছে।
কারণ অভিযোগ এখানে তৃণমূল ঘনিষ্ঠ দুই করিৎকর্মা প্রোমোটার বাবলু ঘোষ আর জনি গাঙ্গুলীর বিরুদ্ধে। তারাই রয়েছেন গুলিবিনিময়ের পেছনে। যদিও তাদের দলবল তৃণমূল প্রার্থী অনিতা কর মজুমদারের সমর্থনে মিছিলে পাশাপাশি হেঁটেছে। বাবলু ঘোষ এখন শ্রীঘরে। কিছুদিন আগে আবার দুষ্কৃতীদের দ্বারা গুলিবিদ্ধ হয়েছেন আর একটা প্রোমোটার সাধন বণিক। মানুষ তাই ঘৃণা করছেন তৃণমূলকে। আবার তৃণমূল প্রার্থীর বিরুদ্ধে নাকি রয়েছে চিটফান্ডের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ। এলাকার মানুষ আড়ালে এনিয়ে মুখ খুলছেন নিয়মিত। এসব নিয়েই মানুষ ফুঁসছেন। ভোটের বাক্সে তার জবাব দিতেই পারেন তাঁরা।