E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৯ বর্ষ ১৬ সংখ্যা / ৩ ডিসেম্বর, ২০২১ / ১৬ অগ্রহায়ণ, ১৪২৮

৪৯ নম্বর ওয়ার্ডে সর্বকনিষ্ঠ বামফ্রন্ট প্রার্থীকে নিয়ে মানুষের উচ্ছ্বাস-আবেগ


প্রচারে সিপিআই(এম) প্রার্থী উপনীতা পান্ডে কুশল বিনিময় করছেন নাগরিকদের সাথে।

নিজস্ব সংবাদদাতাঃ এবারের পুর নির্বাচনে কলকাতা জেলার সর্বকনিষ্ঠ প্রার্থী ৪৯ নম্বর ওয়ার্ডের উপনীতা পান্ডের বামপন্থায় হাতেখড়ি কৈশোরেই। ব্রাহ্ম গার্লস স্কুলের এই ছাত্রী, পরে এসএফআই কর্মী মেহনতি মানুষের মতাদর্শের প্রতি আস্থাশীল তখন থেকেই। বর্তমানে যাদবপুর ইউনিভার্সিটির তুলনামূলক সাহিত্যের মাষ্টার্স-এর ছাত্রী। সেখানেও ছাত্রছাত্রীদের দাবীদাওয়ার লড়াইয়ে সামনের সারির মুখ উপনীতা। এবার উন্নত পুর পরিষেবা দেবার লড়াইতে ওয়ার্ডের মানুষের সক্রিয় শরিক হতে চান।

কোভিডের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে রেড ভলান্টিয়ারদের মধ্যে প্রথম সারিরও প্রথমে থাকা উপনীতাকে বৈঠকখানা রোড এলাকার মেয়ে হিসেবেই বেশি চেনেন ৪৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দারা। তাই শুধু রাজনৈতিক পরিচয়েই নয়, কৃতি ছাত্রী উপনীতা পুর ভোটে দাঁড়ানোয় উচ্ছসিত এলাকার মানুষ। সাধারণ মানুষের জীবনযন্ত্রণার শরিক হয়ে প্রতিনিয়ত গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অংশগ্রহণ, লকডাউন চলাকালীন রেড ভলান্টিয়ার্সের সক্রিয় কর্মী হয়ে এলাকাবাসীর প্রয়োজনে ওষুধ এনে দেওয়া, বয়স্কদের পাশে দাঁড়ানো অচিরেই তাকে পরিবারের একজন হয়ে উঠতে সাহায্য করেছে।

কোভিড মোকাবিলায় লকডাউনকে ঢাল করে অনলাইনে পড়াশুনার নামে শাসকশ্রেনির ডিজিটাল বিভাজনে ছিটকে গেছে বেশ কিছু গরিব পড়ুয়া। এসএফআই’র ধারাবাহিক আন্দোলনের ফলে সরকার বাধ্য হয়েছে পঠনপাঠন চালু করতে। সেই লড়াইয়ের কথা বলতে গিয়ে উপনীতা বলছিলেন, পুরসভার স্কুলগুলিতে পড়ুয়া নিচু ক্লাসের ছাত্র-ছাত্রীদের অনেককেই এখন দেখি কোলে মার্কেট সংলগ্ন এলাকায় ফুটপাতে দোকান পেতে ক্রেতার অপেক্ষায় থাকতে। লকডাউনে তাদের বাবা-মা কাজ হারিয়েছেন। তাই তাদের হাতে পড়াশোনার বইয়ের বদলে দাঁড়িপাল্লা। মিড ডে মিলের পালা চুকেছে স্কুলে, তাই ছোট ছোট ভুখা পেট এখন খিদে চেপে কী করে কিছু টাকা রোজগার করা যায় এই চিন্তার চাপে হারাচ্ছে তাদের শৈশব। এলাকার প্রাইভেট স্কুলগুলো চললেও কাছাকাছি থাকা পুরসভার স্কুলগুলো বন্ধ অনেকদিনই। নেই সরকারী কোনো বিকল্প। ভোটে দাঁড়িয়েছি এদের মুখে হাসি ফোটানোর চেষ্টা করবো বলেই। তাঁর আরও অভিযোগ, একটি স্কুল আবার স্থানীয় একটি কলেজের সেকেন্ড ক্যাম্পাস হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

কলকাতা পুরসভার এই ৪৯ নম্বর ওয়ার্ড কলকাতার শুধু নয়, পশ্চিমবাংলার মানুষের জনজীবনেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অঞ্চল। একদিকে যেখানে রয়েছে শিয়ালদহ স্টেশন অন্যদিকে গোটা পাঁচেক কলেজ এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। রাজ্যের অন্যতম বৃহৎ হোলসেল বাজার কোলে মার্কেট এই ওয়ার্ডে, যেখানে সারা দিনরাত চলে লোডিং এবং আনলোডিং-এর কাজ। একটু দুরেই থাকা কলেজ স্ট্রিটের দরুণ ছাপাই সংক্রান্ত বহু ছোট-বড় দোকান সংস্থা রয়েছে এখানে। রয়েছে খুচরো বাজার। আবার রয়েছে বহু বাড়ি যা পুরসভার ভাষায় বিপদজনক। তাই মেহনতি মানুষের নিত্য আনাগোনা উঠা-বসা এখানকার অলিগলিতে। ফুটপাথে কোনোক্রমে রাত কাটানো এই গরিব মানুষ শিকার শোষণ আর তোলাবাজির। সরকারের উপেক্ষা আর উদাসীনতার। যা নিয়ে বিকল্প ভাবনা রয়েছে উপনীতাদের। এলাকায় জমা জঞ্জালের জন্য ডেঙ্গু এবং ম্যালেরিয়ার প্রকোপ চূড়ান্ত - একথা বাজারি মিডিয়া জানলেও তা ফুটে ওঠে না বাণিজ্যিক পত্রিকাগুলির পাতায়। জল জমার সমস্যা রয়েছে এখানে। তা নিয়ে এলাকার দীর্ঘদিনের সাংসদ ওডিশার জেল ফেরত সুদীপ ব্যানার্জি উদাসীন। বিধায়ক, সুদীপ জায়া নয়না ব্যানার্জির অবস্থাও তথৈবচ। এলাকার বিপদজনক বাড়িগুলির বাসিন্দাদের বিকল্প বাসস্থানের ব্যবস্থা করেননি তারা। অনিশ্চয়তায় দিন কাটানো ওই বাড়িগুলির বাসিন্দারা তাই ত্রস্ত। কারণ সিন্ডিকেট ঘনিষ্ঠ আর প্রোমোটারদের নানা ধরনের চাউনির মুখোমুখি হতে হচ্ছে তাদের। এদের জন্য অবশ্য বিকল্প পরিকল্পনা রয়েছে বামপন্থীদের। উপনীতা বলছিলেন সেকথাও। গরিব খেটে খাওয়া মানুষদের পাশে লকডাউন-এর সময় যেভাবে তাঁরা দাঁড়িয়ে দেশে ফেরত পাঠিয়েছেন সেই অবস্থানের কথা এই অসংগঠিত শ্রমিকরা যে এখনো ভোলেননি প্রচারের সময় সেটা স্পষ্ট তাদের কৃতজ্ঞ শরীরী ভাষায়।

একটি শূন্য পাওয়া দলের হয়ে আপনি কেন দাঁড়ালেন এই প্রশ্নের উত্তরে উপনিতা রবীন্দ্রনাথকে উদ্ধৃত করে বললেন,
‘মরণ তোমার পারের তরী, কাঁদন তোমার পালের হাওয়া -
তোমার বীণা বাজায় প্রাণে বেরিয়ে যাওয়া, হারিয়ে যাওয়া
ভাঙল যাহা পড়ল ধুলায় যাক্‌ না চুলায় গো -
ভরল যা তাই দেখ্‌-না, রে ভাই, বাতাস ঘেরি, আকাশ ঘেরি ঐ...’