E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৯ বর্ষ ১৬ সংখ্যা / ৩ ডিসেম্বর, ২০২১ / ১৬ অগ্রহায়ণ, ১৪২৮

সিপিআই(এম) পুদুচেরি অঞ্চলের ২৩তম সম্মেলন


নিজস্ব সংবাদদাতাঃ ১৬ এবং ১৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হলো সিপিআই(এম)’র পুদুচেরি অঞ্চলের ২৩তম সম্মেলন। লাল পোশাকে সজ্জিত, রক্তপতাকা হাতে রেড ভলান্টিয়ারদের স্লোগান এবং সহস্রাধিক মানুষের বর্ণময় সুবিশাল মিছিলের মধ্যদিয়ে ১৬ নভেম্বর শুরু হয় সম্মেলনের কার্যক্রম। মিছিল শুরু হয় অবিভক্ত কমিউনিস্ট আন্দোলনের প্রয়াত বিশিষ্ট নেতা কমরেড জীবনানন্দম-এর প্রতিকৃতিতে মাল্যদানের সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠানের পর।

সম্মেলনস্থলের নামকরণ করা হয়েছিল কমরেড কে বরদারাজন এবং মিথিলি শিবরামনের নামে। ১৯৩৬ সালের জুলাই মাসে ৮ ঘণ্টা কাজের দাবিতে আন্দোলনরত ১২জন সুতা কলের শ্রমিকের শহিদিবরণের স্মরণে নির্মিত শহিদস্তম্ভ থেকে আনা মশালে প্রজ্জ্বলিত করা হয় সম্মেলনস্থলের মশাল। সেখানে রক্তপতাকা উত্তোলন করেন পুদুচেরির অন্যতম প্রবীণ সিপিআই(এম) নেতা সি এইচ বালমোহন। এরপর এই সময়কালে প্রয়াতদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রভাতী কল্যাণ মণ্ডপম হলে শুরু হয় প্রকাশ্য সমাবেশ।

প্রকাশ্য সমাবেশ স্থলটিকে ঘিরে পার্টির বিভিন্ন লড়াই সংগ্রামের আলেখ্য একটি চিত্র প্রদর্শনীর মাধ্যমে তুলে ধরা হয় সাধারণের জন্য। ওই সভায় একটি বই এবং সাংস্কৃতিক সংগঠনের সিডি প্রকাশিত হয়। প্রকাশ্য সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ভি পেরুমল। সভায় মুখ্য বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য টি কে রঙ্গরাজন। টি কে রঙ্গরাজন বলেন বিজেপি শাসনে অর্থনৈতিক সংকট এবং সামাজিক নিপীড়নের বিরুদ্ধে সংগঠিত প্রতিবাদের প্রয়োজনীয়তার কথা। তিনি বলেন, যদিও এন আর কংগ্রেস এখানে নির্বাচনে জয়ী হয়েছে কিন্তু বিজেপি এই সরকারের মূল চালিকা শক্তি যা মানুষের অধিকারের ওপর হস্তক্ষেপ করছে, আঘাত আনছে। তিনি পুদুচেরির যুবকদের কর্মসংস্থানের প্রসঙ্গটি তুলে ধরে বলেন, বাড়ি বাড়ি গিয়ে এই বেকারির বিরুদ্ধে মানুষকে সচেতন করতে হবে বিজেপি’র নীতি প্রসঙ্গে, গড়ে তুলতে হবে তীব্র প্রচার। সভায় উপস্থিত সিপিআই এবং সিপিআই(এমএল) নেতৃত্ব সম্মেলনের সাফল্য কামনা করেন।

সম্মেলনের উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুধা সুন্দরারামন। কৃষক আন্দোলনের ঐতিহাসিক তাৎপর্য তুলে ধরে তা সমর্থনের ডাক দিয়ে তিনি বলেন, কৃষকদের এই আন্দোলন দেশব্যাপী শ্রমিকদের জাতি-ধর্ম-বর্ণ-লিঙ্গ-আঞ্চলিকতা নির্বিশেষে সার্বিকভাবে ঐক্যবদ্ধ করেছে। তিনি নরেন্দ্র মোদি জমানায় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির নীতিগত দায় সম্পর্কে দোষারোপ করে বলেন, পেট্রোল, ডিজেল ও গ্যাস সিলিন্ডারের দাম সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের ক্রমাগত আকাশছোঁয়া মূল্যবৃদ্ধি পরিবারগুলিকে দারিদ্র্যের অতলে তলিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। তাই ভারত বিশ্ব ক্ষুধা তালিকায় ১১৬টি দেশের মধ্যে পৌঁছে গেছে ১০১তম স্থানে।

পুদুচেরি জেলা সাংগঠনিকভাবে তামিলনাড়ু রাজ্যের অন্তর্গত। পুদুচেরির সম্পাদক আর রাজানগাম রাজনৈতিক-সাংগঠনিক খসড়া রিপোর্ট পেশ করেন। সম্মেলনে মোট ২৩০ জন প্রতিনিধি এবং ৮ জন পর্যবেক্ষক উপস্থিত ছিলেন। আয় ব্যয় সংক্রান্ত হিসাব পেশ করেন এস রামচন্দ্রন।

রিপোর্টের উপর আলোচনায় প্রতিনিধিরা রাজনৈতিক অগ্রাধিকারের বিষয়সমূহ আরও নির্দিষ্ট করার ওপরে জোর দেন। বিদ্যুৎ শিল্পের বেসরকারিকরণ, সমস্ত বড়ো কাপড়ের কলগুলি বন্ধ হয়ে যাওয়ার দরুন বেরোজগারির পরিস্থিতি সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করার পাশাপাশি অসংগঠিত শ্রমিকদের মধ্যে সংগঠন গড়ে তোলার বিষয়টির ওপর জোর দেওয়া হয় আলোচনায়। রাস্তার ধারের বিভিন্ন হকার, দোকানকর্মী, অটোচালকদের মধ্যে সংগঠনকে বিস্তৃত করার ওপর জোর দেওয়া হয়। মহিলা, যুবক, দলিত এবং সংখ্যালঘুদের প্রতিদিন যে অসংখ্য সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে সেই ইস্যুগুলিকে নজর দেওয়ার বিষয়টিও প্রতিনিধিদের আলোচনায় গুরুত্বসহকারে উঠে আসে।

সম্মেলন থেকে ৬ জন মহিলা সহ ৩১ সদস্যের জেলা কমিটি সর্বসম্মতিক্রমে নির্বাচিত হয়। রাজানগাম সম্পাদক হিসেবে পুনরায় নির্বাচিত হন।

সমাপ্তি ভাষণে টি কে রঙ্গরাজন নতুন কমিটিকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, পার্টিকে যুবকদের মধ্যে বিশেষত যারা আইটি’র কর্মচারী সহ বিভিন্ন ঐতিহ্যগত শ্রমক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত, সংগঠনে তাদের নিয়ে এসে সুদৃঢ় সংগঠন গড়ে তোলা প্রয়োজন। এ প্রসঙ্গে পার্টির সাংগঠনিক দিক এবং রাজনৈতিক অগ্রাধিকারের বিষয়গুলি নির্দিষ্ট করতে সালকিয়া এবং কলকাতা প্লেনাম-এর নির্দেশিকা অনুসরণের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হয়।

সম্মেলন থেকে যে সমস্ত প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে তা হলো, পুদুচেরির মানুষের জীবন-জীবিকার অধিকার সুনিশ্চিত করা, তীব্র গণআন্দোলন গড়ে তোলা, পরিবেশ সংক্রান্ত ইস্যুগুলিকে আন্দোলনের বিষয়বস্তু করা, নয়াউদারবাদ সংক্রান্ত নীতি সমূহের নিন্দা, গণবণ্টন ব্যবস্থায় জোর দেওয়া, চালু করা বিদ্যুৎ ক্ষেত্রকে বেসরকারিকরণের বিরোধিতা, ১০০ দিনের কাজ সঠিক রূপায়ণ, ক্ষুদ্রশিল্প ক্ষেত্রে পরিবারভিত্তিক ঋণ সহায়তা সুলভ করা ইত্যাদি।

শেষে পার্টির স্বাধীন শক্তির বিকাশ এবং পার্টিকে শক্তিশালী করে গড়ে তোলার অঙ্গীকারের স্লোগানের মধ্য দিয়ে শেষ হয় পার্টি সম্মেলন।