৬০ বর্ষ ২৫ সংখ্যা / ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ / ১৯ মাঘ, ১৪২৯
জামিন না দিয়ে সাজানো মামলায় জেল হেফাজত আইএসএফ বিধায়ক নওসাদ সিদ্দিকির
ভাঙড়ের বিধায়ক নওসাদ সিদ্দিকির মুক্তির দাবিতে জয়নগরে মিছিল। রয়েছেন কান্তি গাঙ্গুলি, প্রতীক উর রহমান সহ নেতৃবৃন্দ।
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ ভাঙড়ের বিধায়ক নওসাদ সিদ্দিকির মুক্তির দাবিতে বাংলার সর্বস্তরের গণতন্ত্রপ্রিয় মানুষ সোচ্চার হলেও তিনি জামিন পেলেন না। ১ ফেব্রুয়ারি ব্যাংকশাল কোর্টে মুখ্য মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট-এর বিধায়ক নওসাদ সিদ্দিকি সহ ১৮ জনকে ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত জেল হেফাজতে পাঠানো হয়েছে। ২২ জানুয়ারি থেকে তাঁদের পুলিশ হেফাজতে রাখার পরেও আদালতে এদিনও তাদের পুলিশি হেফাজত চাওয়া হয়েছিল।
৩০ জানুয়ারি কলকাতার জনসভা থেকে নওসাদ সিদ্দিকি-সহ আইএসএফ কর্মীদের গ্রেফতারের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে মুক্তির দাবি জানিয়েছেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। আদালতে এদিন বিধায়কের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেছেন, গ্রেপ্তার করার আগে বিধানসভার অধ্যক্ষের অনুমতি নেয়নি পুলিশ। এদিকে আইএসএফ-র পক্ষ থেকে এই পরিস্থিতিতে ধরনা, বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে আয়োজিত হয়েছে রাজ্যজুড়ে মিছিল, কনভেনশন।
আইএসএফ’র দ্বিতীয় বর্ষপূর্তির রাজনৈতিক কর্মসূচিকে ঘিরে ঘটনার সূত্রপাত ২২ জানুয়ারি। ওইদিন সকালে ভাঙড়ে পুলিশের উপস্থিতিতেই আক্রান্ত হয়েছিলেন বিধায়ক সহ আইএসএফ কর্মীরা। বিনা প্ররোচনায় সেদিন নওসাদ সিদ্দিকির ওপর চড়াও হয় তৃণমূল কর্মীরা। সেদিন আইএসএফ’র প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে একাধিক কর্মসূচি পালনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তৃণমূল নেতা আরাবুল ইসলামের নেতৃত্বে তৃণমূল কর্মীরা তা বানচাল করার পরিকল্পনা করেছিল আগেই। নিষ্ক্রিয় পুলিশের সামনে বিধায়কের ওপর চড়াও হয় এবং গাড়ি ভাঙচুর করে তৃণমূলীরা। বাধা দিতে এলে আক্রান্ত হন আইএসএফ কর্মীরা। পুলিশ সেদিন পরোক্ষে উৎসাহ জুগিয়েছিল তৃণমূলীদের। ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়নি একজন তৃণমূল কর্মীকেও। অথচ সেদিন তার আগেই তৃণমূল নেতা আরাবুল ইসলামের বাড়ির পেছনের সবজি খেত থেকে বোমা আগ্নেয়াস্ত্র ইত্যাদি উদ্ধার করা হয়। সেই ঘটনাতেও কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। আরাবুলের গ্রেপ্তারির দাবিতেও সোচ্চার ভাঙড়ের মানুষ।
২২ জানুয়ারি বিকেলে ধর্মতলায় দলীয় কর্মসূচিতে যোগ দিতে আসার সময় আইএসএফ কর্মীদের ভাঙড়ের বিভিন্ন জায়গায় সশস্ত্র অবস্থায় বাধা দেয় তৃণমূলীরা। তাদের গাড়ি ভাঙচুর করা হয় বিভিন্ন জায়গায়। তৃণমূলী হামলার প্রতিবাদে ধর্মতলায় শান্তিপূর্ণভাবে পথ অবরোধ করেন আইএসএফ কর্মীরা। এরপর আসরে নামে কলকাতা পুলিশ। গণতান্ত্রিক আন্দোলনের এই কর্মসূচির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে মমতা ব্যানার্জির পুলিশ বাহিনী। অভিযোগ, বিনা প্ররোচনায় নারী শিশু সহ আইএসএফ কর্মীদের ওপর নির্বিচারে লাঠি চালায় পুলিশ এবং গ্রেপ্তার করে তাদের।
গ্রেপ্তারির পর ভাঙচুর সহ বিভিন্ন গুরুতর অভিযোগ এনে তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা সাজায় পুলিশ। পুলিশের এই বেআইনি পদক্ষেপের বিরুদ্ধে নিন্দা করেন সমাজের সর্বস্তরের মানুষ। পুলিশি হেনস্থা এখানেই শেষ হয়নি। হেফাজতে থাকা বিধায়কের ওপর শারীরিক অত্যাচার করেছে পুলিশ। ব্যাপক মারধর করা হয়েছে বিধায়ক সহ আইএসএফ কর্মীদের। অমানবিক এবং কুরুচিপূর্ণ ব্যবহার করা হয়েছে আইএসএফ’র মহিলা কর্মীর সঙ্গেও। বিধায়ক নওসাদ সিদ্দিকি অভিযোগ করেছেন, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশেই পুলিশ আমাকে ধরে এনেছে। মিথ্যে কেস সাজিয়েছে এবং নির্যাতন করেছে।
এরপর লালবাজারে গেলে ধৃত বিধায়ক নওসাদ সিদ্দিকির সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয়নি সিপিআই(এম) নেতা সুজন চক্রবর্তীকে। তাঁকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। এই প্রসঙ্গে সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, নওসাদ সিদ্দিকি এ রাজ্যের বিধানসভার একমাত্র বিধায়ক যিনি শাসকদলের নন। তাঁকে লালবাজারে যেভাবে আটকে রাখা হয়েছে আমরা তার নিন্দা করি। আমাকে দেখা করতে দেওয়া হয়নি। হয়তো নবান্নর নির্দেশ নেই তাই। তিনি প্রশ্ন তোলেন, অনুব্রত মণ্ডল যদি হেফাজতে জামাই আদর পেতে পারে তাহলে একজন বিধায়কের জন্য আলাদা ব্যবস্থা কেন? এটা হতে পারে না।
আইএসএফ’র পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে রাজ্যের তৃণমূলের শাসনে গণতন্ত্র ও মানুষের সাংবিধানিক অধিকার আক্রান্ত বলে উল্লেখ করে বলা হয়েছে আদালতে আইনি লড়াই চলছে। আমাদের বিচারব্যবস্থার উপর পূর্ণ আস্থা আছে। আইনি প্রক্রিয়ার পাশাপাশি রাস্তায় নেমে রাজ্য সরকারের এই চরম-অগণতান্ত্রিক আচরণের বিরুদ্ধে জনমত গড়তে হবে।