৬০ বর্ষ ২৫ সংখ্যা / ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ / ১৯ মাঘ, ১৪২৯
সারা ভারত খেতমজুর ইউনিয়নের রাজ্য দ্বিতীয় সম্মেলন
প্রকাশ্য সমাবেশে বক্তব্য রাখছেন নিরাপদ সরদার।
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ তৃণমূলের জমানায় সংকটের তীব্রতা যেভাবে বাড়ছে, তাতে প্রান্তিক মানুষ কোণঠাসা হচ্ছেন প্রতিদিন। সংকটে নিমজ্জিত শ্রমজীবী মানুষের রুজি এবং আগামী প্রজন্মের ভবিষ্যৎ। এই পরিস্থিতিতে শ্রমজীবী মানুষের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামকে তীব্র করতে হবে। এই আহ্বান উঠে এসেছে সারা ভারত খেতমজুর ইউনিয়নের রাজ্য দ্বিতীয় সম্মেলনে। মুর্শিদাবাদের ফারাক্কায় এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে ২৭-২৮ জানুয়ারি।
এই সম্মেলন থেকে খেতমজুরদের দাবির ভিত্তিতে রেগা প্রকল্পে ২০০ দিনের কাজ, দৈনিক ৬০০ টাকা মজুরি, ৬০ বছর বয়স হলেই খেতমজুরদের মাসে ন্যূনতম ৬০০০ টাকা পেনশন, সকলের জন্য শিক্ষা, রেশন ও সামাজিক সুরক্ষার দাবিতে আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয়েছে। সম্মেলন থেকে ডাক দেওয়া হয়েছে, এইসব দাবি নিয়ে বুথে বুথে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
প্রকাশ্য সমাবেশের মধ্য দিয়ে এই সম্মেলনের সূচনা হয়। ২৭ জানুয়ারি ফারাক্কায় সৈয়দ নুরুল হাসান কলেজের মাঠে অনুষ্ঠিত এই সমাবেশ থেকে আহ্বান জানানো হয়েছে - তীব্র আন্দোলনের মধ্য দিয়েই কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের পতন ঘটাতে হবে। ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের মাধ্যমে জোরালো করতে হবে বিকল্প নীতির লড়াই। তৃণমূলের হামলা-হুমকি উপেক্ষা করেই গ্রামের মানুষ আসেন সমাবেশে। গঙ্গা-পদ্মা ভাঙন কবলিত গ্রামের মানুষের সঙ্গে মিছিল করে যোগ দেন রেল কলোনির উচ্ছেদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো ব্যবসায়ী থেকে কলোনিবাসীরা।
এদিনের সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সারা ভারত খেতমজুর ইউনিয়নের সভাপতি এ বিজয় রাঘবন, সংগঠনের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক বি ভেঙ্কট, সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক অমিয় পাত্র, সিপিআই(এম) মুর্শিদাবাদ জেলা কমিটির সম্পাদক জামির মোল্লা, শ্রমিক নেতা দীপক মিশ্র। সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের রাজ্য সভাপতি তুষার ঘোষ।
কমরেড আবুল হাসনাত খান নামাঙ্কিত ফারাক্কায় সৈয়দ নুরুল হাসান কলেজে কমরেড তিমির ঘোষ ও কমরেড কেপি শর্মা নামাঙ্কিত মঞ্চে ২৭ জানুয়ারি সন্ধ্যায় শুরু হয় প্রতিনিধি সম্মেলন। উদ্বোধন করেন সংগঠনের সর্বভারতীয় সভাপতি এ বিজয় রাঘবন। সম্পাদকীয় প্রতিবেদন পেশ করেন অমিয় পাত্র।
সম্পাদকীয় খসড়া প্রতিবেদনের ওপর প্রতিনিধিদের আলোচনায় উঠে আসে গ্রাম বাংলার নিদারুণ অর্থনৈতিক সংকটের ছবি। পরিণতিতে খেতমজুরদের অনেকেই চাষের কাজ ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন। কৃষিতে প্রযুক্তির দাপটে কমছে খেতমজুরদের মজুরি। তাঁরা বলেছেন, বামফ্রন্ট সরকার যে জমিতে শিল্প গড়ে কর্মসংস্থানের উদ্যোগ নিয়েছিল, তৃণমূলের জমানায় সেই জমি চলে যাচ্ছে জমি হাঙরদের হাতে। বিজেপি-তৃণমূল উত্তরবঙ্গ থেকে জঙ্গলমহল - সর্বত্র বিভাজনের ফাঁদ পাতছে। এছাড়াও প্রতিনিধিদের আলোচনায় উঠে এসেছে খেতমজুর মহিলাদের বঞ্চনা, একশো দিনের কাজে বঞ্চনা ইত্যাদি নানা প্রসঙ্গ। তাঁরা বলেছেন, তৃণমূল সরকার ও শাসকদলের প্রত্যক্ষ মদতে গ্রামে এক শ্রেণির নব্য ধনীদের ক্ষমতা বেড়েছে। এসবের বিরুদ্ধে গ্রামের শ্রমজীবী মানুষকে সচেতন ও ঐক্যবদ্ধ করে লড়াই চালাতে হবে।
সম্মেলনকে অভিনন্দন জানিয়ে বক্তব্য রেখেছেন সংগঠনের সর্বভারতীয় সম্পাদক বি ভেঙ্কট সহ দলিত শোষণ মুক্তি মঞ্চের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক রামচন্দ্র ডোম, সারা ভারত কৃষক সভার রাজ্য সম্পাদক অমল হালদার, ডিওয়াইএফআই’র রাজ্য সভাপতি ধ্রুবজ্যোতি সাহা।
সারা ভারত খেতমজুর ইউনিয়নের রাজ্য সম্মেলনে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের মোট ৪৪৮ জন প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। এই সম্মেলন থেকে ১২১ জনের রাজ্য কাউন্সিল ও ৭১ জনের রাজ্য কমিটি গঠিত হয়েছে। সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন নিরাপদ সরদার। সভাপতি হিসেবে তুষার ঘোষ পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন। আগামী ১৫-১৮ ফেব্রুয়ারি হাওড়ায় অনুষ্ঠিতব্য সংগঠনের সর্বভারতীয় সম্মেলনের জন্য ১১৫ জন প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন।