৫৭ বর্ষ ৪৫ সংখ্যা / ৩ জুলাই ২০২০ / ১৮ আষাঢ় ১৪২৭
পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে রাজ্যজুড়ে বামপন্থী ও কংগ্রেস দলের যৌথ প্রতিবাদ-বিক্ষোভ কর্মসূচি
পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে বামফ্রন্ট, সহযোগী দলগুলি ও কংগ্রেসের যৌথ প্রতিবাদ। রেড রোডের ধারের কর্মসূচিতে বিমান বসুসহ নেতৃবৃন্দ।
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ পেট্রোপণ্যের লাগাতার মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে বামফ্রন্ট, সহযোগী দল এবং কংগ্রেস যৌথভাবে ২৯ জুন প্রতিবাদ বিক্ষোভ সংগঠিত করে। এদিন কলকাতা সহ রাজ্যজুড়ে এই প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। করোনার ভয়াবহ সংক্রমণে যখন সাধারণ মানুষ বিপর্যস্ত, তখন কেন্দ্রের মোদী সরকার মানুষের ওপর অতিরিক্ত বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছে। লক ডাউনের পর এ পর্যন্ত ২২ বার লাগাতার পেট্রোল, ডিজেলের দাম বাড়িয়েছে কেন্দ্রের সরকার। তাই এদিনের কর্মসূচি থেকে মোদী সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলা হয়েছে অতিমারী ও লকডাউনের সুযোগে কেন্দ্রের সরকার মানুষের পকেট কাটছে, আর তৃণমূল সরকার সেই লুটের ভাগ নিচ্ছে। রাজ্য সরকারকে জ্বালানি তেল থেকে অতিরিক্ত রাজস্ব সংগ্রহ বন্ধ করার দাবি জানানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত, পেট্রোল, ডিজেলের দাম লাগাতার বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে যৌথভাবে আন্দোলন-সংগ্রামের লক্ষ্যে ২৪ জুন বামফ্রন্ট ও কংগ্রেসের নেতৃবৃন্দের মধ্যে বৈঠক হয়। মধ্য কলকাতার ক্রান্তি প্রেসে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকেই স্থির হয়েছিল জেলা সদরগুলিতেও এই কর্মসূচি পালিত হবে এবং বামফ্রন্টের বাইরে সহযোগী দলগুলিকেও এই কর্মসূচিতে শামিল হওয়ার আবেদন জানানো হবে। এছাড়া সিপিআই(এম) সহ পাঁচটি বামপন্থী দলের পক্ষ থেকেও জাতীয় স্তরে প্রতিবাদ কর্মসূচি সংগঠিত করার আহ্বান জানানো হয়েছিল। সেই আহ্বানে অন্যান্য ধর্মনিরপেক্ষ বিরোধী দলগুলির সঙ্গে আলোচনা করে এই প্রতিবাদ কর্মসূচি সংগঠিত করার কথা বলা হয়েছিল। তারই পরিপ্রেক্ষিতে এদিন রাজ্যজুড়ে এই প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
বিশেষভাবে উল্লেখ্য, করোনা ভাইরাসের মারাত্মক সংক্রমণজনিত কারণে লকডাউন চলায় গরিব সাধারণ মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। কোটি কোটি মানুষ আকস্মিকভাবে কাজ হারিয়ে বিপন্ন হয়েছেন, অসংখ্য মানুষ মজুরি পাচ্ছেন না, দেশজুড়ে তৈরি হয়েছে প্রবল খাদ্য সঙ্কট। অন্যদিকে স্বাস্থ্য পরিষেবার অভাব, সরকারের অবহেলা, উদাসীনতায় চরম বিপদে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। জিনিসপত্রের আকাশছোঁয়া মূল্যবৃদ্ধির সঙ্কটে দিশাহারা গরিব সাধারণ মানুষ। বাড়ছে পরিবহণের খরচ। এই অবস্থায় পেট্রোপণ্যের লাগাতার দাম বাড়িয়ে দেশের সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে গভীর সঙ্কটে ফেলে দিয়েছে কেন্দ্রের সরকার। অথচ আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম কমলেও কর্পোরেট বান্ধবদের স্বার্থে দেশের বাজারে ডিজেল, পেট্রোলের দাম ক্রমাগত বাড়িয়ে চলেছে মোদী সরকার। এভাবেই জনগণের ওপর বাড়তি অর্থনৈতিক বোঝা চাপানোর বিরুদ্ধে এদিনের কর্মসূচি থেকে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।
ধর্মঘটে স্তব্ধ কয়লাখনি বেসরকারিকরণের প্রতিবাদে ২-৪ জুলাই - ৩ দিনব্যাপী কয়লা শিল্পের ধর্মঘটের প্রথম দিন। শ্রমিকরা ঐক্যবদ্ধভাবেই শামিল হয়েছেন ধর্মঘটে। যতদূর জানা যাচ্ছে কয়লা উত্তোলন বন্ধ প্রায় ১০০ শতাংশ খনিতেই। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, ধর্মঘটী শ্রমিকরা রানিগঞ্জের বসরা কয়লা খনির সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করছেন।
এদিন কলকাতার রেড রোডে শারীরিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনেই বি আর আম্বেদকর মূর্তির সামনে বিকাল সাড়ে তিনটা নাগাদ প্রতিবাদ বিক্ষোভে শামিল হন বামফ্রন্ট, সহযোগী দল ও কংগ্রেস দলের নেতা-কর্মীরা। এদিন বিভিন্ন দলের নেতৃবৃন্দ বিভিন্ন দাবি সংবলিত পোস্টার বুকে ঝুলিয়ে মোদী সরকারের জনবিরোধী নীতির প্রতিবাদে স্লোগান দেন। পেট্রোল-ডিজেলের বর্ধিত মূল্য প্রত্যাহারের দাবি জানান। এদিনের এই কর্মসূচিতে শামিল হয়েছিলেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু, সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র, আরএসপি’র সাধারণ সম্পাদক মনোজ ভট্টাচার্য, সিপিআই-র রাজ্য সম্পাদক স্বপন ব্যানার্জি, ফরওয়ার্ড ব্লকের বাংলা কমিটির সম্পাদক নরেন চ্যাটার্জি, বামপরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী, সিপিআই (এম) নেতা অনাদি সাহু, কল্লোল মজুমদার, দীপক দাশগুপ্ত, রেখা গোস্বামী, কংগ্রেস নেতা প্রদীপ ভট্টাচার্যসহ এমএফবি, আরসিপিআই, সিপিআই (এম এল) লিবারেশন, ওয়ার্কার্স পার্টি, বলশেভিক পার্টি, পিডিএস, সিপিআই (এমে এল), সিপিবি, এনসিপি, এলজেডি, পশ্চিমবঙ্গ জনতা দলের নেতৃবৃন্দ।
পেট্রোল-ডিজেলের লাগাতার মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে এদিন কলকাতায় ২০টারও বেশি জায়গায় পেট্রোল পাম্পের সামনে বিক্ষোভ দেখান বামপন্থী দলের কর্মীরা। কোথাও কোথাও বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস যৌথভাবে প্রতিবাদ বিক্ষোভ জানিয়েছে।
এদিন রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে পেট্রোল-ডিজেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদের পাশাপাশি অবিলম্বে পেট্রোল-ডিজেলের ওপর চাপানো শুল্ক প্রত্যাহার ও দাম কমানোসহ আয়করের বাইরে থাকা সকল পরিবারকে আগামী ৬ মাস মাসিক ৭,৫০০ টাকা নগদ দেওয়া, সমস্ত গরিব মানুষকে ১০ কেজি করে খাদ্যশস্য দেওয়া, গ্রাম ও শহরে কাজের সুযোগ বৃদ্ধি ও বেকার ভাতা দেওয়ার দাবি জানানো হয়।
হাওড়া স্টেশনের সামনে বামফ্রন্ট ও সহযোগী দলগুলি বিক্ষোভ দেখান। বিক্ষোভে অংশ নেন কংগ্রেসও। এদিন জেলা শাসকের কাছে ডেপুটেশনও দেওয়া হয়েছে।
হুগলি জেলা জুড়েই এদিন বিক্ষোভ কর্মসূচি হয়েছে। চুঁচুড়া ঘড়ির মোড়ে বামফ্রন্ট ও কংগ্রেসের উদ্যোগে বিক্ষোভ সভা হয়েছে। এখানে বক্তব্য রাখেন সিপিআই (এম) জেলা সম্পাদক দেবব্রত ঘোষ, বিধানসভার বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান, জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক সুদর্শন রায়চৌধুরী প্রমুখ।
পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে তমলুকে বিক্ষোভ।
পূর্ব মেদিনীপুর জেলা জুড়ে এদিন বামফ্রন্ট, সহযোগী দল ও কংগ্রেসের পক্ষ থেকে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। তমলুকের মানিকতলা থেকে হাসপাতাল মোড় পর্যন্ত বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেন বহু মানুষ। মিছিলের নেতৃত্ব দেন জেলা বামফ্রন্ট আহ্বায়ক নিরঞ্জন সিহি।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার তিনটি মহকুমা শহরে বিক্ষোভ সভা ও মিছিল হয়েছে। মেদিনীপুর শহরে গান্ধী মূর্তির সামনে অবস্থান বিক্ষোভ কর্মসূচির সূচনা করেন জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক তরুণ রায়।
উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বারাসত চাঁপাডালির মোড়, মধ্যমগ্রাম, বারাসত দক্ষিণ-২, আমডাঙায় প্রতিবাদ বিক্ষোভ হয়েছে। এছাড়া বিধাননগর, রাজারহাটের বাগুইআটি মোড়, নিউ বারাকপুরের সাজিরহাট, বসিরহাট, দেগঙ্গা, বারাকপুর সদর, উত্তর বারাকপুর, টিটাগড়, হাবড়া, অশোকনগর, গোবরডাঙায় বিক্ষোভ, মিছিল, পথ অবরোধ ইত্যাদি হয়েছে।
দক্ষিণ ২৪ পরগনায় সিপিআই (এম)’র আহ্বানে যাদবপুর, গড়িয়া, পাটুলি, আমতলা, মহেশতলা, বজবজ, উস্থির সংগ্রামপুর, রায়দিঘি, ডায়মন্ডহারবার, কাকদ্বীপ প্রভৃতি বিভিন্ন জায়গায় প্রতিবাদ বিক্ষোভ, মিছিল, বিক্ষোভ সভার সাথে কোথাও আবার মোদীর কুশপুতুল পোড়ানো হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে উপস্থিত ছিলেন সিপিআই (এম) নেতা তুষার ঘোষ, কান্তি গাঙ্গুলি প্রমুখ।
এদিন উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলাতেও প্রতিবাদ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হয়েছে।