৫৭ বর্ষ ৪৫ সংখ্যা / ৩ জুলাই ২০২০ / ১৮ আষাঢ় ১৪২৭
২৫ জুন সারা দেশের সঙ্গে এরাজ্যেও প্রতিবাদ বিক্ষোভে মুখর হলেন কৃষিজীবীরা
রায়নায় কৃষক সংগঠনগুলির যৌথ সভায় বক্তা অমল হালদার।
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ টানা লকডাউন-এর জেরে চূড়ান্ত অনিশ্চয়তা এবং চরম সঙ্কট রাজ্যের গ্রামাঞ্চলগুলিতে। বহুদিন থেকেই ফসলের ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না কৃষকরা। তার দরুন এক ভয়াবহ অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন পশ্চিমবঙ্গের কৃষিজীবীরা। এর সঙ্গে বাড়তি বিপদ হিসেবে যুক্ত হয়েছে আমফানের ক্ষতি। কৃষকদের জীবন বিপর্যস্ত। ঠিক তখনই কৃষিক্ষেত্রকে কর্পোরেট লুটের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার খুলে দিচ্ছে। চরম বিপন্নতার মুখে দাঁড়িয়ে দেশের কৃষকরা। চুক্তি চাষের নামে কৃষিকে কর্পোরেট বা বাণিজ্য সংস্থার হাতে তুলে দিতে চায় মোদী সরকার। সরকার চায় অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আইন সংশোধন করতে। এর ফলে কৃষিতে অবাধ ফাটকা বাণিজ্য, মজুতদারি শুরু হবে যাতে কৃষকদের তো বটেই, চরম ক্ষতি হবে দেশের অর্থনীতিরও। এভাবে চললে ভূমিদাসত্ব কায়েম হবে সমাজে, আরও বেশি ঋণের জালে জড়াবেন কৃষক। এর ওপর লকডাউনের ফলে চাষের কাজ হারিয়েছেন বহু ভাগচাষি ও খেতমজুর। একইসঙ্গে, আমফান ঝড়ে সর্বস্বান্ত হয়ে গিয়েছেন এরাজ্যের বিরাট অংশের কৃষক ও মৎস্যচাষী। এক দুর্বিষহ অবস্থা। অথচ এখনো কোনো ক্ষতিপূরণ নেই কোনো সরকারের তরফে। এই পরিস্থিতিতে রুখে দাঁড়ালেন কৃষকরা। অধিকার রক্ষার দাবিতে ২৫ জুন রাজ্যজুড়ে প্রতিবাদ-বিক্ষোভে সোচ্চার হলেন কৃষক এবং খেতমজুররা। এদিন রাজ্যের ৩০০টিরও বেশি ব্লক এবং মহকুমা অফিসের সামনে বিক্ষোভ দেখানো হয় সারা ভারত কিষান সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির পশ্চিমবঙ্গ শাখার উদ্যোগে। বৃষ্টির মধ্যেও জেলায় জেলায় পথে নেমে ঐক্যবদ্ধভাবে বিক্ষোভ দেখান রাজ্যের কৃষিজীবী মানুষ। এই মুহূর্তে ত্রাণ নিয়ে চূড়ান্ত দলবাজি ও চুরির জেরেও কৃষিজীবী সহ রুখে দাঁড়িয়ে সোচ্চার হয়েছেন গ্রামাঞ্চলের সাধারণ মানুষ। তাদের স্বতঃস্ফূর্ত বিক্ষোভের জেরে রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা জনিত পরিস্থিতি ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছে। কাজের অভাব সহ ত্রাণ না পেয়ে মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে চুরির অভিযোগে অভিযুক্ত শাসকদলের জনপ্রতিনিধিদের কাছে জবাবদিহি চাইছেন।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দাবি আদায়ের স্বপক্ষে আন্দোলন সংগঠিত করে নৈরাজ্যের পরিস্থিতিকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যেতে চাইছেন বামপন্থীরা। তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে কৃষক এবং খেতমজুরদের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ২১ টি কৃষক সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত সারা ভারত কিষান সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির ডাকে এই বিক্ষোভ সংগঠিত হয়েছে। স্মারকলিপি জমা দেওয়া হয়েছে বিডিওদের কাছে। দেওয়া হয়েছে ডেপুটেশন। অবিলম্বে দাবি পূরণের কথা বলা হয়েছে বিক্ষোভ থেকে।
ডেবরায় পঞ্চায়েত দপ্তরের সামনে সারা ভারত কৃষক সভার প্রতিবাদ-বিক্ষোভ।
এ রাজ্যের সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক অমল হালদার ও সাংগঠনিক সম্পাদক কার্তিক পাল একটি বিবৃতিতে কৃষিজীবী জনগণ ব্যাপক সংখ্যায় আন্দোলনে অংশ নেওয়ায় তাদের সংগ্রামী অভিনন্দন জানিয়েছেন। বিবৃতিতে তাঁরা আরও বলেছেন রাজ্যজুড়ে ব্লক অফিস এবং মহকুমা দপ্তরের সামনে এদিন কৃষক বিক্ষোভ হয়েছে। কৃষকদের দাবির সমাধানের জন্য সরকার পদক্ষেপ না নিলে আরও বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
উল্লেখ্য, আগেই এই অর্ডিন্যান্সের তীব্র বিরোধিতা করেছে কৃষক সংগঠনগুলি। তাঁদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, প্রকৃত তদন্ত করে দেখতে হবে কারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। লকডাউনের ফলে অনেকের কাজ নেই, চাষবাস নেই। তার ওপর পেট্রোল, ডিজেলের দাম হুহু করে বাড়তে থাকায় নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম আকাশছোঁয়া হয়েছে। বাঁচবেন কী করে কৃষক, ভাগচাষী, খেতমজুররা? কেন্দ্র ও রাজ্যের সরকারের বরাদ্দ টাকা কৃষকরা পাচ্ছেন কই? আমাদের দাবি, এই ঝড়ের কারণে অবিলম্বে জাতীয় বিপর্যয় নীতি ঘোষণা করতে হবে। কৃষিক্ষেত্রে কেন্দ্রের অর্ডিন্যান্স প্রয়োগ করা চলবে না। কারণ বাণিজ্যিক চাষ কৃষকদের শেষ করে দেবে। এটা মেনে নেওয়া যায় না।
পশ্চিমবঙ্গ প্রাদেশিক কৃষক সভা, সারা ভারত কৃষক মহাসভা, অগ্রগামী কৃষক সভা, কেকেএসএস, সংযুক্ত কিষানসভা, সারা ভারত কৃষক সভা (বিবি গাঙ্গুলি স্ট্রিট) সহ ২১টি কৃষক সংগঠনের যুক্ত কমিটি সারা ভারত কিষাণ সংগ্রাম সমন্বয় কমিটি, পশ্চিমবঙ্গ এই আন্দোলনের ডাক দেয়। ২৫ জুন সাংবাদিক বৈঠকে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন হাফিজ আলম সইরানি, কার্তিক পাল, সমীর পূততুণ্ড প্রমুখ কৃষক আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ। তাঁরা বলেন, আমাদের প্রথম কাজ কৃষকদের আত্মঘাতী হওয়া থেকে বাঁচাতে হবে। নবান্ন মুখে বলে তারা বঞ্চিত মানুষের পাশে আছে। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে মহকুমা আধিকারিকরা বলে দিচ্ছেন, কৃষকদের পাওনাগণ্ডার বিষয়ে আমরা কিছু জানি না, আপনারা ওপরমহলে কথা বলুন। এভাবে তো চলতে পারে না। বৃহস্পতিবার ব্লক স্তরে ডেপুটেশন কর্মসূচির পর প্রয়োজনে আগামীদিনে আরও বৃহত্তর আন্দোলনে যাবেন এরাজ্যের কৃষকরা।