E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৭ বর্ষ ৪৫ সংখ্যা / ৩ জুলাই ২০২০ / ১৮ আষাঢ় ১৪২৭

ডাঃ রমেন কুণ্ডুর জীবনাবসান


নিজস্ব প্রতিনিধিঃ বিশিষ্ট চিকিৎসক ও জনস্বাস্থ্য আন্দোলনের অন্যতম প্রাণপুরুষ ডাঃ রমেন্দ্রনাথ কুণ্ডুর জীবনাবসান হয়েছে। দীর্ঘ দিন তিনি শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। ৩০ জুন, মঙ্গলবার বিধাননগরে নিজ বাসভবনে তাঁর মৃত্যু হয়। বয়স হয়েছিল ৯১ বছর।

ডাঃ রমেন কুণ্ডুর মৃত্যুর খবর পেয়ে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পুস্পস্তবক পাঠান বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু, সিপিআই(এম)'র রাজ্য সম্পাদক সূর্য মিশ্র ও পার্টির পলিট ব্যুরোর সদস্য মহম্মদ সেলিম। এ দিন সকালে পার্টির রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ডাঃ রামচন্দ্র ডোম, রাজ্যের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী ড. অসীম দাশগুপ্ত, পার্টির কলকাতা জেলা সম্পাদক কল্লোল মজুমদার ও পার্টির রাজ্য কমিটির সদস্য সুখেন্দু পাণিগ্রাহী তাঁর বাড়িতে গিয়ে রক্তপতাকা দিয়ে ডাঃ রমেন কুণ্ডুর মরদেহ আচ্ছাদিত করেন ও পুষ্পস্তবক দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। পিআরসি’র পক্ষ থেকে মালা দিয়ে শ্রদ্ধা জানান ডাঃ প্রদ্যোৎ শূর। এএইচএসডি, স্টুডেন্টস হেলথ হোম ও অন্যান্য একাধিক সংগঠনের প্রতিনিধিরাও শেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছে। নিমতলায় এ দিনই তাঁর শেষকৃত্য সন্পন্ন হয়েছে। ডাঃ রমেন কুণ্ডুর ছেলে ও পরিবারের সদস্যরা বর্তমান।

নবদ্বীপ হিন্দু স্কুল থেকে, প্রেসিডেন্সি কলেজ হয়ে ক্যালকাটা মেডিক্যাল কলেজে তাঁর শিক্ষা। প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়ার সময়েই অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র রমেন কুণ্ডু ছাত্র আন্দোলনের হাত ধরে কমিউনিস্ট পার্টির সংস্পর্শে আসেন। বামপন্থী আদর্শে উদ্বুদ্ধ হন এবং অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যপদ লাভ করেন। ১৯৫৫ সালে তিনি কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ থেকে চিকিৎসা শাস্ত্রে স্নাতক হন এবং পরের বছরেই ইংল্যান্ডে গিয়ে হাল রয়াল ইনফার্মারির রেডিওলজি বিভাগে যোগদান করেন। ১৯৫৯ সালে ডাঃ রমেন কুণ্ডু ইংল্যান্ডের কনজয়েন্ট বোর্ড থেকে রেডিওলজিতে ডিপ্লোমা করেন। ১৯৬০ সাল থেকে ১৯৬২ সাল পর্যন্ত তিনি ইংল্যান্ডের নিউ ক্যাসল টিচিং হাসপাতালের রয়্যাল ভিক্টোরিয়া ইনফার্মারির রেজিস্টার পদে নিযুক্ত হন। পরে ১৯৭৫ সালে দেশে ফিরে এসে তিনি কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের অধ্যাপক পদে আসীন হন। অবসরের আগে পর্যন্ত তিনি ওই বিভাগের প্রধান ছিলেন। রেডিওলজি বিষয়ক জ্ঞানে ও অভিজ্ঞতায় তিনি ছিলেন সারা ভারতে এক অনন্য ব্যক্তিত্ব। একাধিক আন্তর্জাতিক জার্নালে তাঁর বেশ কিছু আন্তর্জাতিক মানের গবেষণা পত্র প্রকাশিত হয়েছে।

ডাক্তারি পড়ার প্রথম বছরেই পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন ডাঃ রমেন কুণ্ডু। তারপরেও বহু বার কারাবরণ করেছেন। এমনকী খাদ্য আন্দোলনের সময়েও গ্রেপ্তার হয়ে জেলে আরও অনেকের সঙ্গে লাগাতার অনশনে বসেছিলেন। পরবর্তী যুগে প্রথিতযশা চিকিৎসক হয়েও আন্দোলন-সংগ্রামের পথ কখনও ত্যাগ করেননি। অধ্যাপনার পাশাপাশি জনস্বাস্থ্য আন্দোলন গড়ে তোলার কাজে নিয়োজিত ছিলেন ডাঃ রমেন কুণ্ডু। এ রাজ্যে জনস্বাস্থ্য আন্দোলন গড়ে তোলার ক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকা অনস্বীকার্য। স্টুডেন্টস হেলথ হোম আন্দোলনেও তিনি সক্রিয় থেকেছেন গোড়া থেকেই। তা ছাড়াও চিকিৎসকদের আন্দোলনে তিনি সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। জরুরি অবস্থার সময়ে যে চিকিৎসকদের অন্যত্র বদলি ও বরখাস্ত করা হয়েছিল, বামফ্রন্ট সরকার ক্ষমতায় আসার পর তাঁদের ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন তিনি। জীবনে বহু সম্মানের মধ্যে উল্লেখযোগ্যগুলির মধ্যে অন্যতম ছিল ১৯৯০সালে রাজ্য মেডিক্যাল ফ্যাকাল্টির সাম্মানিক ফেলো, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাড হক কাউন্সিলের সদস্য, ফ্যাকাল্টি অব পোস্ট গ্র্যাজুয়েট স্টাডিজ অব মেডিসিন, ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট মেডিক্যাল কাউন্সিলের ফ্যাকাল্টির সদস্য। তিনি পশ্চিমবঙ্গ সরকার পরিচালিত ইলেক্ট্রো মেডিক্যাল অ্যান্ড অ্যালায়েড ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যানও ছিলেন। এছাড়া আশুতোষ কলেজ ও শ্যামাপ্রসাদ কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি এবং স্টুডেন্টস হেলথ হোমের সভাপতি ছিলেন। অ্যাসোসিয়েশন অব হেলথ সার্ভিস ডক্টরস’র সভাপতিও ছিলেন।