E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৯ বর্ষ ৪২ সংখ্যা / ৩ জুন, ২০২২ / ১৯ জ্যৈষ্ঠ, ১৪২৯

শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদে বামফ্রন্টের প্রার্থী ঘোষণা


নিজস্ব সংবাদদাতাঃ শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের ৯টি আসনে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছে দার্জিলিঙ জেলা বামফ্রন্ট। মহকুমা পরিষদে ৯টি আসনের মধ্যে ৭টিতে বামফ্রন্ট মনোনীত সিপিআই(এম) প্রার্থী এবং একটিতে ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। বাকি একটি আসনে জাতীয় কংগ্রেসের গ্রহণ‍‌যোগ্য প্রার্থীকে সমর্থনের কথা জানিয়েছে বামফ্রন্ট। ৩০ মে অনিল বিশ্বাস ভবনে অনুষ্ঠিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন দার্জিলিঙ জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক জীবেশ সরকার।

মহকুমা পরিষদের নকশালবাড়ি ১নং (মনিরাম, হাতিঘিষা এবং নকশালবাড়ি নিয়ে গঠিত) সাধারণ আসনে সিপিআই(এম)’র গৌতম ঘোষ, নকশালবাড়ি ২নং আসনে (আপার ও লোয়ার বাগডোগরা ও গোঁসাইপুর, এসসি) সিপিআই(এম)’র নীরোদ সিংহ, মাটিগাড়া ৩নং আসনে (পাথরঘাটা ও চম্পাসারি এসটি, মহিলা) সিপিআই(এম)’র স্বস্তিকা রাম মাহালি, মাটিগাড়া ৪নং আসনে (আঠারোখাই, মাটিগাড়া ১/২, সাধারণ মহিলা) সিপিআই(এম)’র মণি থাপা, খড়িবাড়ি ৫নং (রানিগঞ্জ-পানিশালী এবং বিন্নাবাড়ি) আসনে ফরওয়ার্ড ব্লকের করুণাময় চৌধুরী, খড়িবাড়ি ৬নং আসনে (বুড়াগঞ্জ এবং খড়িবাড়ি-পানিশালী, এসসি) সিপিআই(এম)’র বাদল সরকার, ফাঁসিদেওয়া ৭নং (হেটমুরি, সিঙ্গিঝোড়া এবং ঘোষপুকুর, মহিলা) আসনে সিপিআই(এম)’র তসবিরা ছেত্রী, ফাঁসিদেওয়া ৯নং আসনে (বিধাননগর ২ এবং বিধাননগর ১, মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত) আসনে সিপিআই(এম) প্রার্থী শান্তা লাকড়া, ফাঁসিদেওয়া ৮নং আসনে (জালাস নিজামতারা, ফাঁসিদেওয়া, বাঁশগাঁও, কিসমত এবং চটহাট বাঁশগাঁও) আসনে জাতীয় কংগ্রেসের পক্ষ থেকে গ্রহণযোগ্য প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।

এদিনের সাংবাদিক সম্মেলনে জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক জীবেশ সরকার বলেন, মহকুমা পরিষদের ফাঁসিদেওয়া ৮নং আসনে জাতীয় কংগ্রেসের প্রার্থীকে সমর্থন করবে বামফ্রন্ট। এ বিষয়ে কংগ্রেসের জেলা নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কথা হয়েছে বলেও তিনি জানান। এছাড়া সিপিআই(এমএল) যেক’টি আসনে প্রার্থী দেবে ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচন করা হবে। এবিষয়ে ওই দলের রাজ্য সম্পাদকের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে বলেও তিনি জানান।

জীবেশ সরকার বলেন, শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের বোর্ড পরিচালনা করার মতো দক্ষ, যোগ্য, অভিজ্ঞ এবং পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে সক্ষম নেতৃস্থানীয়দের এবারের ত্রিস্তরীয় নির্বাচনে প্রার্থী করা হয়েছে। তিনি জানান, সংরক্ষণের জন্য কিছু অসুবিধা হচ্ছে। শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের সভাপতির আসনটি এবারের নির্বাচনে ওবিসিদের জন্য সংরক্ষিত রাখা হয়েছে। অথচ শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের নয়টি আসনের মধ্যে একটিও ওবিসিদের জন্য সংরক্ষিত আসন নেই। এ বিষয়ে রাজ্য নির্বাচন কমিশন ও উপযুক্ত নির্বাচনী কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে বলে তিনি জানান।

তিনি বলেন, বামফ্রন্টের বাইরেও অন্য বামপন্থী, গণতান্ত্রিক দল, শক্তি এবং কং‍‌গ্রেস দলের সাথেও আলোচনা হ‍‌য়েছে। গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি, মহকুমা পরিষদ প্রতিটি ক্ষেত্রে তৃণমূল এবং বিজেপি বিরোধী ভোটকে একত্রিত করে, তৃণমূল এবং বিজেপিকে পরাজিত করে ত্রিস্তরে মানুষের পঞ্চায়েত গঠন করা হবে। এবারের নির্বাচনে মানুষের কাছে আমাদের আহ্বান - জনমুখী পঞ্চায়ে‌ত গঠন করুন। এই আহ্বানকে সামনে রেখে স্থানীয় স্তরেও পঞ্চায়েত সমিতি এবং গ্রাম পঞ্চায়েতের ক্ষেত্রে প্রার্থী চয়ন করার ক্ষেত্রে এলাকার অন্যান্য গণতান্ত্রিক শক্তির সাথে আলোচনা চলছে। তৃণমূল এবং বিজেপি বিরোধী অন্যান্যদের সাথে আলোচনা করে প্রার্থী দেবার প্রক্রিয়া চলছে। সবক্ষেত্রেই এভাবে প্রার্থী দিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা হবে।

জীবেশ সরকার বলেন, মহকুমা পরিষদের নির্বাচন হবার কথা ছিল প্রায় দু’বছর আগে। কোভিডজনিত পরিস্থিতি ইত্যাদি বিভিন্ন ইস্যুকে সামনে রেখে রাজ্য সরকার নিজেদের খেয়ালখুশি মতো নির্বাচন করার পদ্ধতি গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, ‍শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের কাজ আন্তর্জাতিকভাবে ইউনিসেফের দ্বারা প্রশংসিত হওয়াই নয়, রাজ্য সরকারের নানা অসহযোগিতা সত্ত্বেও সাফল্যের সাথে পাঁচ বছর পরিচালিত হয়েছে এই বোর্ড। কিন্তু সেই সময় নির্বাচনে পরাজয় সত্ত্বেও নানা কায়দায় পঞ্চায়েতকে দখল করে তৃণমূলী পঞ্চায়েতে পরিণত করার জবরদখলের প্রক্রিয়াও ভয়ংকর আকার ধারণ করেছিল। প্রলোভন দেখিয়ে, পুলিশ লেলিয়ে দিয়ে, প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি এমনকী মহকুমা পরিষদের প্রার্থীদের প্রলুব্ধ করা হয়েছে। সব জায়গাতে জবরদখল আটকানো যায়নি।

ইতিমধ্যে তিনটি স্তরে মনোনয়নপত্র দাখিলের কাজ শুরু হয়ে গেছে। গত নির্বাচনে মহকুমা পরিষদের ক্ষেত্রে ৯টি আসনের মধ্যে বামফ্রন্ট ৬টি আসনে জয়ী হয়েছিল। এর মধ্যে সিপিআই(এম) ৫টিতে এবং ফরওয়ার্ড ব্লক ১টি আসনে জয়ী হয়েছিল। চারটি পঞ্চায়েত স‍‌মিতির সবক’‍‌টিতেই বামফ্রন্ট জয়ী হয়েছিল। এছাড়া ২২টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ১৪টিতে বামফ্রন্ট ও তার সহযোগীদের নিয়ে পঞ্চায়েত বোর্ড গঠন করা হয়ে‍‌ছিল।

আগামী ২৬ জুন শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। গত ২০২০ সালে শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের মেয়াদ শেষ হয়েছে। পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন টালবাহানা করে রাজ্য সরকার নির্বাচন হতে দেয়নি।

এদিনের সাংবাদিক সম্মেলনে সিপিআই(এম) নেতা অ‍‌শোক ভট্টাচার্য, সিপিআই(এম) জেলা সম্পাদক সমন পাঠক, সিপিআই(এম) নেতা গৌতম ঘোষ, জয় চক্রবর্তী, ফরওয়ার্ড ব্লকের অনিরুদ্ধ বোস, আরএসপি-র তাপস গোস্বামী, সিপিআই’র অনিমেষ ব্যানার্জি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।