৫৯ বর্ষ ৪২ সংখ্যা / ৩ জুন, ২০২২ / ১৯ জ্যৈষ্ঠ, ১৪২৯
কমরেড রামকৃষ্ণ ব্যানার্জির জীবনাবসান
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ প্রবীণ কমিউনিস্ট নেতা ও অবিভক্ত বর্ধমান জেলা পরিষদের প্রাক্তন সভাধিপতি কমরেড রামকৃষ্ণ ব্যানার্জির জীবনাবসান ঘটেছে। তিনি বেশ কিছুদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন। ২৭ মে, শুক্রবার সকালে মেমারিতে নিজের বাড়িতে সকাল ৬টা ৪৫ মিনিটে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। অবিভক্ত বর্ধমান জেলায় তিনি সিপিআই(এম)’র জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ছিলেন। বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর। বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু কমরেড রামকৃষ্ণ ব্যানার্জির জীবনাবসানে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন এবং তাঁর শোকাহত পরিবারের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানিয়েছেন।
কমরেড রামকৃষ্ণ ব্যানার্জির মরদেহ এদিন সকালে প্রথমে মেমারির বাড়িতে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য শায়িত রাখা হয়। এরপর মেমারিতে পার্টির এরিয়া কমিটির অফিসে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে বহু মানুষ প্রয়াত নেতাকে শ্রদ্ধা জানান। এরপর তাঁর মরদেহবাহী শকট পার্টির জেলা দপ্তর শাহেদুল্লাহ-বিজয় ভবনে নিয়ে আসা হয়। সেখানে তখন অসংখ্য মানুষ সমবেত হয়েছেন। কমরেড রামকৃষ্ণ ব্যানার্জির মরদেহে লাল পতাকা দিয়ে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেন পার্টিনেতা আভাস রায়চৌধুরী, অঞ্জু কর, সৈয়দ হোসেন, অরিন্দম কোঙার। এরপর প্রয়াত নেতার মরদেহে মালা দিয়ে শ্রদ্ধা জানান তাঁরা। পার্টিনেতা অমল হালদার, অচিন্ত্য মল্লিক, তাপস সরকার, তাপস চ্যাটার্জি, শুকুল সিকদার, সমর ঘোষ, সুকান্ত কোঙার প্রমুখ নেতৃবৃন্দ প্রয়াত কমরেডকে শ্রদ্ধা জানান। তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন পার্টির প্রবীণ নেতা মদন ঘোষ। তিনি তাঁর পরিবারের প্রতিও সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন। শোক জানিয়েছেন পার্টির পশ্চিম বর্ধমান জেলা সম্পাদক গৌরাঙ্গ চ্যাটার্জিও।
কমরেড রামকৃষ্ণ ব্যানার্জির জন্ম মেমারির বাগিলা গ্রাম পঞ্চায়েতের কেষ্টপুরে। অল্প বয়সে বাবার মৃত্যুর পর মা খুব কষ্ট করে তাঁকে লেখাপড়া শেখান। তীব্র দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে তিনি উচ্চশিক্ষা লাভ করেন। শ্রীরামপুর কলেজ থেকে স্নাতক হবার পর তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ পাশ করেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আন্দোলন এবং ছাত্র সংসদের নেতৃত্বেও ছিলেন। ছাত্রজীবনেই তিনি কমিউনিস্ট পার্টির সংস্পর্শে আসেন। কলকাতা থেকে ফিরে এসে তিনি মেমারির স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন। কিছুদিন বি টি কলেজে পড়ান। ১৯৭২ সালে আধা-ফ্যাসিবাদী সন্ত্রাসের কারণে তিনি ঘরছাড়া হয়ে জামালপুরে আশ্রয় নিয়েছিলেন।
কমরেড রামকৃষ্ণ ব্যানার্জি ১৯৬৭ সালে সিপিআই(এম)’র সদস্যপদ অর্জন করেন। ১৯৯১ সালে তিনি পার্টির অবিভক্ত বর্ধমান জেলা কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৮ সালে তিনি পার্টির জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য হন। সেই বছরই তিনি বর্ধমান জেলা পরিষদের সভাধিপতির দায়িত্ব পালন করতে শুরু করেন। কমরেড রামকৃষ্ণ ব্যানার্জির স্ত্রী স্মৃতিকণা ব্যানার্জি এলাকায় সিপিআই(এম) নেত্রী। তাঁদের এক পু্ত্র, এক কন্যা এবং নাতি-নাতনি সহ পরিবারের অন্যরা বর্তমান।
এদিন প্রয়াত কমরেডকে ফুল এবং মালা দিয়ে শ্রদ্ধা জানান বিভিন্ন গণসংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও পার্টির জেলা কমিটি এবং এরিয়া কমিটির সম্পাদকরা। এরপর তাঁর শেষ ইচ্ছা অনুসারে মরদেহ চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতিকল্পে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের অ্যানাটমি বিভাগে দান করা হয়।