E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৯ বর্ষ ৪২ সংখ্যা / ৩ জুন, ২০২২ / ১৯ জ্যৈষ্ঠ, ১৪২৯

বৃত্তানুপ্রাস

বরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়


মার্চ মাসের ঘটনা। হলিউডের ডলবি থিয়েটারে ৯৪ তম আকাদেমি অ্যাওয়ার্ড-এর অনুষ্ঠানে সঞ্চালক ক্রিস রককে মঞ্চে উঠে চড় মারেন অভিনেতা উইল স্মিথ। যা নিয়ে বিস্তর জলঘোলা হয়। এর কিছুদিন আগে কর্তব্যরত এক ট্রাফিক পুলিশকে চড় মেরেছিলেন এক ব্যক্তি। বর্ধমান শহরে। জিটি রোড, কালীবাজারের কাছে। তারপর যা হওয়ার তাই হয়েছিল। দিনকয়েক আগে বাসন্তীর নফরগঞ্জ বৈদ্যনাথ বিদ্যাপীঠ স্কুলের পরিচালন সমিতির এক সহ সভাপতি চড় মারেন দ্বাদশ শ্রেণির এক ছাত্রকে। প্রতিবাদে ওই সহ সভাপতির অপসারণ চেয়ে শুরু হয়ে যায় ছাত্র বিক্ষোভ। আবার শাহিদ কাপুরকে নিয়ে প্রশ্ন করায় প্রশ্নকর্তাদের চড় মারবেন বলেছিলেন আলিয়া ভাট। প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হয়ে প্রেমিক বা প্রেমিকাকে চড় অথবা টক শোয়ে বিরুদ্ধ বক্তার বক্তব্য মানতে না পেরে অন ক্যামেরা চড়ও ইদানীংকালে হামেশাই দেখা যাচ্ছে।

কিছুদিন আগে এক বেসরকারি চ্যানেলের টিভি শো ‘আজ কা মুদ্দা’-তে হিন্দু মহাসভার স্বঘোষিত ধর্মগুরু ওমজি ও জ্যোতিষী রাখি বাঈ আলোচনার একপর্যায়ে হঠাৎই তীব্র বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েন। সবাইকে চমকে দিয়ে রাখি অন ক্যামেরা চড় মেরে দেন ওমজিকে। এরপর কী হয়েছিল তা অবশ্য ওই চ্যানেল দেখায়নি। আবার বনফুল তো একটা আস্ত ছোটোগল্পই লিখে ফেলেছিলেন - ‘থাপ্পড়’। সে প্রেক্ষিত যদিও আলাদা। তবে ঘটনাগুলো থেকে এটা প্রমাণিত যে, চড় মাহাত্ম্য একটা আছেই। তা সে চড় মেরে দেওয়া অথবা চড় মারার ইচ্ছা প্রকাশ করা - যাই হোক না কেন। তা নাহলে কি আর ভ্রমর ক্ষীরিকে ঠাস করে চড়িয়ে দেয়! সে তো ছিল বঙ্কিম যুগ। বহুকাল আগের কথা। যে চড় খেয়ে ক্ষীরি বলেছিল, “তা চড়চাপড় মারিলেই কি লোকের মুখ চাপা থাকিবে? তুমি রাগ করিবে বলিয়া আমরা ভয়ে কিছু বলিব না। কিন্তু না বলিলেও বাঁচি না।” অর্থাৎ এটা প্রমাণিত, বিতর্কের মুখে অথবা বিতর্ক থেকে বাঁচতে চড়িয়ে দেবার ইচ্ছা সুপ্ত রেখেই মানুষ বেঁচে থাকে। সত্যি মিথ্যে জানিনা। তবে কেউ কেউ দাবি করেন ভারতে নাকি চড় মারার প্রবণতা সবথেকে বেশি। যেখানে সাধারণত স্ত্রীদের চড়িয়ে থাকেন স্বামীরা। এটা প্রবণতা এবং সমীক্ষা থেকে প্রাপ্ত তথ্য। এরপরেই তালিকায় আছে সৌদি আরব। আছে রাশিয়াও। এখন তো আবার চড় মারা প্রতিযোগিতাও হয়। যে প্রতিযোগিতায় গত তিনবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন পোল্যান্ডের ডেভিড জালেওস্কি।

বুদ্ধিমান পাঠক এতক্ষণে নিশ্চয় বুঝে গেছেন চড় নিয়ে সাতসকালে কেন এত চচ্চড়ি? হ্যাঁ। ঠিকই ধরেছেন। প্রতিদিনের রাজনৈতিক চর্বিতচর্বণ থেকে নজর ঘোরাতে মাঝেমাঝে একটু আধটু চড়চর্চা করলে মন্দ হয় না। তাতে মূল সমস্যা থেকে নজর ঘোরানো যায়। আমি কত বড়ো হনু সেটা প্রমাণ করা যায়। গুন্ডা কন্ট্রোলের সাথে সাথে প্রশাসনের উঁচু তলার মানুষদেরও কীরকম কন্ট্রোল করতে পারি সেই বার্তা দেওয়া যায়। আবার নিচুতলায় বার্তা পৌঁছে দেওয়া যায় যে - দেখো বাপু। চড় তোমাকে হয়তো মারছি না। কিন্তু তোমরা আমার দয়াতেই বেঁচে বর্তে আছো। করে কম্মে খাচ্ছো। অতএব বেশি বাড়াবাড়ি কোরো না। আমার ইচ্ছে হলেই কিন্তু তোমাকে ঠাস ঠাস করে চারখান চড় কশাতেই পারি।

গত ৩০ মে প্রশাসনিক বৈঠক চলছিল পুরুলিয়ায়। সেখানে বিভিন্ন প্রকল্পের পাশাপাশি সেই প্রকল্পের কাজকর্ম কোন পর্যায়ে আছে সে সম্পর্কেও আলোচনা করা হয়। বৈঠক চলাকালীন অভিযোগ ওঠে স্থানীয় ইটভাটা থেকে পাওয়া রাজস্বের হিসেব মিলছে না। অভিযোগ শুনেই মুখ্যমন্ত্রী জেলাশাসককে উদ্দেশ্য করে বলেন - ইটভাটা থেকে আদায় করা রাজস্ব যাচ্ছে কোথায়? এগুলো কিন্তু তৃণমূল করেনি। প্রশাসনের নিচু তলার কর্মীরা এইসব কাণ্ড ঘটাচ্ছে। কী জেলা চালাচ্ছ তুমি (জেলাশাসক)? বিষয়টির ওপর নজর দেওয়া দরকার। এরপরেই মুখ্যমন্ত্রীকে বলতে শোনা যায়, ‘সবকিছু দিয়েও মানুষের এত লোভ হয় কী করে? আর কত চাই? আমার পার্টির লোক হলে টেনে চারটে থাপ্পড় মারতাম। তাদের আমি সবসময় শাসন করি’।

মুখ্যমন্ত্রীর জেলাশাসকের উদ্দেশ্যে এহেন মন্তব্যে হতবাক হয়ে যায় রাজনৈতিক মহল। রাজ্যসভার সাংসদ তথা আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য নিজের ফেসবুক পেজে এই প্রসঙ্গে লেখেন, ‘‘একজন জেলাশাসক, অবশ্যই আইএএস। তাঁকে প্রকাশ্য সভায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমার দলের হলে টেনে এক থাপ্পড় মারতাম। এই না হলে মুখ্যমন্ত্রী! মুখ্যসচিব বা মুখ্যপরামর্শক কি অপেক্ষা করছেন দুই থাপ্পড়ের অপেক্ষায়? হায় রে আত্মমর্যাদা বোধ! গুন্ডারানিকে এত ভয়?’’ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী এক বিবৃতিতে বলেন, ‘‘...আমি মুখ্যমন্ত্রীকে বলছি, আপনার দলের যে এমএলএ, এমপি, মন্ত্রীদের যাদের গত দশ বছরে পাঁচগুণ, সাতগুণ, দশগুণ, বিশগুণ সম্পত্তি বেড়েছে, লুঠের... তাদের ক'জনকে আপনি চড় মেরেছেন!?...’’

মুখ্যমন্ত্রীর হঠাৎ কেন একজন আমলাকে চড় মারার ইচ্ছে হলো সেটা বিতর্কিত। আর যাই হোক, আমলারা তো আর নির্বাচিত নন। অনেক পড়াশুনো করে খেটেখুটে মেধার ভিত্তিতে আমলা হওয়া যায়। ইচ্ছে হলেই তাঁদের এভাবে চড়িয়ে ঠান্ডা করা যায় না, আর শাক দিয়ে মাছও ঢাকা যায়না। ভারতে যদিও রাজনৈতিক নেতৃত্বের কাছে আমলাদের দুরমুশ হবার একাধিক উদাহরণ আছে, সেদিক থেকে এই ঘটনাকে ব্যতিক্রম বলা চলে না। কিন্তু প্রশ্ন সেই ঘুরে ফিরে একটাই। এটা কী নিছকই নিজের ক্ষমতা দেখানোর ইচ্ছা? অথবা সিবিআই, আদালত, বগটুই, কয়লা পাচার, এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি সহ বিভিন্ন ঘটনায় ‘পোবোল’ চাপে পড়ে, ঘরে বাইরে প্রবল সমালোচিত হওয়ার জেরে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ? জানা যায়নি এখনও। ভবিষ্যতেও জানা যাবেনা। তবে ‘ওরা’ কী ভাবলো তাতে গুরুত্ব না দিয়ে ‘আমরা’ আমাদের মতো করে একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছোতেই পারি।

গত কয়েক মাস ধরেই বিষয়গুলো চলছে। সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্যেই হোক অথবা যে কারণেই হোক সাম্প্রতিক সময়ে সিবিআই একটু নড়েচড়ে বসেছে। সারদা, নারদ মামলা কালাপাহাড়ের নিচে চাপা পড়ে গেলেও কয়লা পাচার কাণ্ড, ভোট পরবর্তী হিংসা মামলা, এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে একের পর এক নাম উঠেছে শুধুমাত্র তৃণমূল নেতা নেত্রীর অথবা তৃণমূলের সঙ্গে যুক্ত মানুষজনের। যে তালিকায় আছেন বীরভূমের দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা অনুব্রত মণ্ডল, রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী ও বর্তমানের শিল্প মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, বর্তমান শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী পরেশ অধিকারী, তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর স্ত্রী প্রমুখ। সিবিআই, ইডি বারবার এঁদের তলব করেছে। এঁরা বারবার হাজিরা এড়িয়েছেন। কেউ কেউ নিরাপদ আশ্রয় নিয়েছেন কোনো সরকারি অথবা বেসরকারি হাসপাতালে অথবা শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে হাজিরা এড়ানোর চেষ্টা করেছেন। এই যেমন ২ জুনও সিজিও কমপ্লেক্সে হাজিরা দিতে এসেছিলেন অনুব্রত মণ্ডল। রাজ্যের এক মন্ত্রী আবার কলকাতা আসার পথে বর্ধমান থেকে নিখোঁজ হয়েও গেছিলেন বলে শোনা যায়। তবু এখনও পর্যন্ত হাইকোর্টের তৎপরতায় এঁদের প্রায় সকলকেই হাজিরা দিতে হয়েছে, জেরা জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হতে হয়েছে। সেখানে তাঁদের কী কী জিজ্ঞাসা করা হয়েছে, বা কী কী নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছে তা কেউ জানেনা। এক্ষেত্রে মেইনস্ট্রিম মিডিয়ার মতো সূত্রের খবর বলে প্রশ্নমালা উত্তরমালা সাজিয়ে বসিয়ে দেওয়া খুব একটা সমীচীন নয়। তাই ‘সূত্রের খবর’ এড়িয়ে গেলাম।

এইসব বিতর্কের মাঝেই আরও দুটো ঘটনা ঘটে গেছে। একটা বাংলা আকাদেমির পুরস্কার প্রাপ্তি এবং অন্যটি রাজ্যের সমস্ত বিশ্ববিদ্যালের আচার্য পদ। ঘটনাচক্রে এখানেও দুটি ক্ষেত্রেই নাম জড়িয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর। প্রশ্ন উঠেছে নির্বাচনী হলফনামায় নিজের শিক্ষাগত যোগ্যতার ভুয়ো তথ্য দাখিল করা একজন ব্যক্তি কীভাবে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হতে পারেন? এই প্রসঙ্গে পুরোনো কাসুন্দি একটু ঘেঁটে নেওয়া দরকার। ১৯৮৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের হলফনামায় নিজেকে ডক্টরেট বলে দাবি করেছিলেন যাদবপুর কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী এবং রাজ্যের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যদিও পরে জানা যায়, যে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি পিএইচডি পেয়েছেন বলে দাবি করেছেন সেই ইস্ট জর্জিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনও অস্তিত্বই নেই। যা নিয়ে দ্য টেলিগ্রাফ পত্রিকায় ‘সিটি কংগ্রেস(আই) এমপি হ্যাস বোগাস পিএইচডি’ শিরোনামে এক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৮৫ সালের ২ মার্চ। যাক সে কথা।

গত ২৬ মে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু জানিয়েছেন, ‘‘মন্ত্রীসভায় সর্বসম্মতিক্রমে একটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য পদে রাজ্যপালের পরিবর্তে মুখ্যমন্ত্রীকে বসানো হবে। শীঘ্রই বিধানসভায় এই নিয়ে বিল আনবে সরকার।’’ অর্থাৎ, এবার থেকে রাজ্যের সমস্ত সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য পদে থাকবেন মুখ্যমন্ত্রী। যে ঘটনা প্রসঙ্গে সিপিআই(এম) নেতা সুজন চক্রবর্তী জানান, শিক্ষা দফতরকে কলুষিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এটা বাংলার দুর্ভাগ্য। আসলে সবই যখন উনি নিয়ন্ত্রণ করছেন, উপাচার্যরা বা বাদ থাকবেন কেন? তাঁদেরও নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছেন।

এই প্রসঙ্গে শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য পদে রাজ্যপালেরও থাকা উচিত নয় বা কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, তিনি মুখ্যমন্ত্রীই হন বা যেই হন কারও থাকা উচিত নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য হওয়া উচিত কোনো বড়ো শিক্ষাবিদ বা বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী, বড়ো কোনো লেখক বা সঙ্গীতজ্ঞ কোনো ব্যক্তির। কিন্তু কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বা রাজ্যপাল, যিনি নিজেও একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, এঁদের কারোরই বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য হওয়া উচিত নয়। এর উপর পশ্চিমবাংলার মুখ্যমন্ত্রীর মতো একজন বিতর্কিত ব্যক্তি যাঁর সাহিত্যকর্ম নিয়ে, যাঁর ডিগ্রি নিয়ে বারবার প্রশ্ন উঠেছে, তাঁকে আচার্য করা হচ্ছে। এখানে তাঁর নিজেরই আপত্তি করা উচিত ছিল, ঠিক যেমন আপত্তি করা উচিত ছিল বাংলা আকাডেমি থেকে সম্প্রতি ওনাকে যখন বিশেষ পুরস্কারে সম্মানিত করা হয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রীর অনুরাগী-ভক্তরা তাঁকে নানারকম পদ-সম্মান-পুরস্কার দিতেই পারেন, কিন্তু তিনি কীভাবে সজ্ঞানে এগুলো গ্রহণ করছেন? এটা আমার কাছে খুব আশ্চর্যের বিষয়। ওই যে মেগ্যালোম্যানিয়াক কথাটা ব্যবহার করা হয়। মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষেত্রে, অনিচ্ছা সত্ত্বেও আমারও ওই শব্দটাই ব্যবহার করতে ইচ্ছে করছে।’’

আর অধ্যাপক অম্বিকেশ মহাপাত্রের প্রশ্ন, রাজ্য মন্ত্রীসভা কি এরকম সিদ্ধান্ত নিতে পারে? তিনি আরও জানান, ‘‘প্রাথমিকভাবে এই সিদ্ধান্তটা শুনলে হাস্যাস্পদ বা শিক্ষাক্ষেত্রে অশনি সংকেত বলে মনে হতে পারে। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেখানে মুখ্যমন্ত্রী সেখানে এই ঘটনা স্বাভাবিক। গত ১১ বছর ধরে এই পরিবেশই তৈরি হয়ে আসছে রাজ্যে। মানুষ অভ্যস্ত হয়ে গেছে এই পরিবেশে। বুদ্ধিজীবীরা এই সিদ্ধান্তকেই বাহবা দেবেন।’’

এইসব ঘটনার পাশাপাশি অভিযোগ উঠেছে অধ্যাপক নিয়োগে দুর্নীতি নিয়েও। গত ২৫ মে কলেজ সার্ভিস কমিশন দপ্তরের সামনে বিক্ষোভ দেখান চাকরিপ্রার্থীরা। তাদের অভিযোগ, ‘সিএসসি’র চেয়ারম্যান দীপক করের তত্ত্বাবধানেই অধ্যাপক নিয়োগে দুর্নীতি শুরু হয়েছে। দুর্নীতির আঁতুড়ঘরে পরিণত হয়েছে সিএসসি। প্রকৃত মেধাবীদের বঞ্চিত করে চাকরি দেওয়া হয়েছে মেধা তালিকায় নাম না থাকা ব্যক্তিদেরও। কী জন্য, কার নির্দেশে এসব হয়েছে, তা জানতে আমরা তদন্ত দাবি করছি। আর বাংলার ছাত্র যুবকদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ছিনিমিনি খেলার দায়ে দীপক করকে পদত্যাগ করতে হবে।

বাড়ালেই বাড়ানো যেতে পারে। কিন্তু অভিযোগের পাল্লা আর ভারি করছি না। কারণ তাতে সুনিদ্রায় ব্যাঘাত ঘটতে পারে। আপাতত আমাদের মধ্যেকার একটা বড়ো অংশই ‘এই বেশ ভালো আছি’ গোছের দিবাস্বপ্নের ঘোরে দিন কাটাচ্ছি। ঘুম না ভাঙা পর্যন্ত নাহয় চলতে থাকুক মাৎস্যন্যায়। রাঘব বোয়ালরা ‘খেলা হবে’র সুরে খেলে যান। চুনোপুঁটিরা হাত পেতে প্রসাদের অপেক্ষায় থাকুন। আর বামেরা থাকুক মানুষকে জাগিয়ে তোলার লড়াইতে। এ সময়ের কবি রুনা চট্টোপাধ্যায়ের কবিতার লাইন তুলে বরং একবার বলি - ‘অপেক্ষাতে থাকছি না হয়, পৌঁছে যেও বিপ্লবে পথ চিনে।’