E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৬০ বর্ষ ২৯ সংখ্যা / ৩ মার্চ, ২০২৩ / ১৮ ফাল্গুন, ১৪২৯

পরাজিত তৃণমূল, বিজেপি

সাগরদিঘি বিধানসভা উপনির্বাচনে জয়ী বামফ্রন্ট সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী


সাগরদিঘিতে বায়রন বিশ্বাসের জয়ের পর বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস কর্মীদের উল্লাস।

নিজস্ব সংবাদদাতাঃ প্রায় ৫০ হাজার ভোটে জেতা আসনে শাসকদলকে হারিয়ে দুর্নীতি-দুষ্কৃতী তন্ত্রের বিরুদ্ধে মানুষ রায় দিলেন বামফ্রন্ট সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থীর পক্ষে। সাগরদিঘি বিধানসভার উপনির্বাচনে জয়ী হলেন বাম সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী বায়রন বিশ্বাস। ২৭ ফেব্রুয়ারি ভোট হয় এই কেন্দ্রে। তৃণমূল প্রার্থী দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়কে ২২,৯৮০ ভোটে হারিয়ে দিলেন তিনি। এই ফলাফলের মধ্য দিয়ে বিজেপি’র দেশব্যাপী বিভাজনের রাজনীতি ও তার কৌশলকেও এক সুরে ‘না’ বললেন বাংলার মানুষ। কংগ্রেস প্রার্থী পেয়েছেন ৮৭হাজার ৬৬৭ টি ভোট, যা মোট প্রদত্ত ভোটের ৪৭.৩৫ শতাংশ। ৩ মার্চ ফলপ্রকাশের দিন শুরুর কয়েক রাউন্ড ফল গণনার পরই স্পষ্ট হয়ে যায় জিতছেন বামফ্রন্ট সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী। উপনির্বাচনের প্রচারে বায়রন বিশ্বাসের সমর্থনে একের পর এক জনসভায় ঢল দেখা গিয়েছিল জনতার।

এই ফলাফলের জন্য সাগরদিঘির মানুষকে অভিনন্দনও জানিয়েছেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম এবং কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। মুর্শিদাবাদের এই কেন্দ্রের উপনির্বাচন জিততে মরিয়া তৃণমূল কোনো অপকৌশলই বাকি রাখেনি। এই বামফ্রন্ট সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থীর নামে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করা হয় হাওড়ার উলুবেড়িয়ায়। সাগরদিঘিতে কংগ্রেসের এক নেতাকে রাতে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ পুরনো এক মামলায়। তখনই পুলিশকে দিয়ে ভোটে প্রভাব বিস্তারের এই প্রক্রিয়ার কড়া বিরোধিতা করেন মহম্মদ সেলিম।

এই ফলাফলের প্রেক্ষিতে মহম্মদ সেলিম বলেছেন, এখানে আমরা বামফ্রন্ট কংগ্রেস প্রার্থীকে সমর্থন করেছিলাম যাতে বিজেপি এবং তৃণমূল বিরোধী ভোট ভাগাভাগি না হয়। শুধু সাগরদিঘির মানুষ নন, দুষ্কৃতী এবং দুর্নীতির যে তন্ত্র রাজ্য জুড়ে চলছে মানুষ তা থেকে মুক্তি পেতে চাইছেন। সেই ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটেছে নির্বাচনের ফলাফলে।

মানুষ আগেই মুক্তি চেয়েছিলেন, কিন্তু মমতা ব্যানার্জি বিজেপি-কে খাল কেটে কুমির আনার মতো এখানে নিয়ে এসেছিলেন বামপন্থীদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য। বিজেপির লক্ষ্য বিরোধী মুক্ত ভারত গড়তে হবে। তারই অংশ হিসেবে মানুষের মধ্যে যে বিভাজনের রাজনীতি তারা চালিয়েছে তাতে এটা বিলম্বিত হলো। রাজ্যের মানুষ বুঝলেন জাত-পাত-ধর্ম-বর্ণ-ভাষা-এলাকার নামে যারা রাজনীতি করছে, দেশটাকে তারাই লুট করছে। মানুষের অধিকার হরণ করছে। আমাদের লড়াই এই লুটেরাদের বিরুদ্ধে। সেই লড়াইয়ে আমরা বিজেপি-তৃণমূল বিরোধী সমস্ত শক্তিকে একত্রিত করব। মানুষ আমাদের সেই ভাবনাকে মর্যাদা দিয়েছেন।

তিনি বলেন, এখন যিনি সাগরদিঘি থেকে নির্বাচিত হয়েছেন তাকে মানুষের প্রতি সেই মর্যাদাকে রক্ষা করতে বিধানসভার ভেতরে এবং বাইরে ভূমিকা পালন করতে হবে। বিজেপি-তৃণমূল বিরোধী এই ঐক্যের ভাবনাকে আমাদের সবাইকে মর্যাদা দিতে হবে। বামফ্রন্ট নেতৃত্ব, কংগ্রেস নেতৃত্ব, এমনকি যারা বামফ্রন্টের মধ্যে নেই কংগ্রেসের মধ্যে নেই কিন্তু বিজেপি-তৃণমূল বিরোধী - সেই সমস্ত দল ব্যক্তি ও গোষ্ঠী সংগঠন আমাদের সবাইকে এই ভাবনায় উদ্বুদ্ধ হতে হবে। তাহলেই আমরা মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারব। শুধু নির্বাচনের ময়দানে নয়, মানুষের জীবন জীবিকা যারা লুট করছে তার বিরুদ্ধে লড়াইয়েও এ রাজ্যের মানুষ সফল হবেন, বিজেপি-কে আটকাতে পারা যাবে আর তৃণমূলকেও শাসন ক্ষমতা থেকে তাড়ানো যাবে। বামফ্রন্ট-সিপিআই(এম) আমরা সব সময় এই ঐক্যের ডাক দিয়েছি। ভবিষ্যতে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে সাগরদিঘির এই ফলাফল সুদূরপ্রসারী হবে।

নিয়োগ দুর্নীতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তৃণমূলকে কিছুদিন আগেই যারা ভোট দিয়েছিলেন তাঁরা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছেন চোর, জোচ্চর, দুর্নীতিবাজ লুটেরাদের পঞ্চায়েত থেকে নবান্নে বসিয়ে কি সর্বনাশ হয়েছে রাজ্যের। প্রতিদিন চাকরি চুরি, চাকরি নিলাম, চুরির টাকার বখরা নিয়ে খবর বেরোচ্ছে, নিচুতলার এজেন্টদের কোটি কোটি টাকার লেনদেনের খবর বেরোচ্ছে এবং সেটা ক্রমাগত কালীঘাটের দিকে এগোচ্ছে। মানুষ শুধু এসব দেখছেন না, সেই অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন সাগরদিঘির নির্বাচন সেটাই প্রমাণ করে। এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী।

কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীও অভিনন্দন জানিয়েছেন জনতাকে। তিনি বলেছেন, তৃণমূল এবং বিজেপি বিরোধী সব শক্তিকে এক জায়গায় থেকে লড়াই চালাতে হবে আগামী দিনেও।

অধুনা প্রয়াত সুব্রত সাহা যিনি ২০২১ সাল সহ এই কেন্দ্র থেকে আগেও একাধিকবার জিতেছিলেন তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে, সেই আপাত নিশ্চিত আসনে মাত্র ২ বছরের ব্যবধানে দল প্রায় ২৩ হাজার ভোটে হারল কীভাবে তা নিয়ে চর্চা এবং আতঙ্কের ছায়া ঘাসফুল শিবিরে। তৃতীয় স্থানে নেমে গেছে বিজেপি। উপনির্বাচনের এই হতাশাজনক ফলে মুষড়ে পড়েছে রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব। এই ফলাফলে বিজেপি-তৃণমূলের ছদ্ম দ্বৈরথের কার্যত অবসান ঘটল বলে মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহলের অনেকেই।

জামিন পেলেন নওসাদ সিদ্দিকি ধর্মতলায় ভাঙচুর এবং গন্ডগোলের মিথ্যা অভিযোগে পুলিশের সাজানো মামলায় জামিন পেলেন আই এস এফ বিধায়ক নওসাদ সিদ্দিক। ঘটনার ৪০ দিন পরে হাইকোর্ট থেকে তাকে জামিন দেওয়া হয়। এই জামিনকে স্বাগত জানিয়ে মহম্মদ সেলিম বলেছেন, আমরা চাই রাজনৈতিক কারণে করা সমস্ত মিথ্যা মামলা খারিজ করা হোক।