E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৬০ বর্ষ ২৯ সংখ্যা / ৩ মার্চ, ২০২৩ / ১৮ ফাল্গুন, ১৪২৯

কমিউনিস্ট ইশ্‌তেহার প্রকাশের ১৭৫ বছর

কমিউনিস্ট ইশ্‌তেহার - যেভাবে পড়েছি

সূর্য মিশ্র


ব্রিটিশ লাইব্রেরিতে সংরক্ষিত কমিউনিস্ট ইশ্‌তেহারের প্রথম প্রকাশনার প্রচ্ছদ।

এঙ্গেলস পরিহাস করে বলতেন, ‘‘মার্কস হলেন তাঁদের ‘যৌথ ফার্মে’র সিনিয়র পার্টনার।’’ কমিউনিস্ট লিগ, ওঁদের দু’জনকেই কমিউনিস্ট ইশ্‌তেহার লেখার দায়িত্ব দিয়েছিল। এঙ্গেলস ‘কমিউনিস্ট কনফেশন অফ ফেইথ’ ও ‘কমিউনিজমের নীতি’ - এ নিয়ে দু’টো খসড়া দিয়েছিলেন। কিন্তু মূল খসড়া মার্কস নিজে করেছেন এবং ১৮৪৮ সালের ১ ফেব্রুয়ারি তা জমা দিয়েছেন। তখন তাঁর তিরিশ পূর্ণ হতে তিন মাস বাকি। এঙ্গেলস তাঁর চেয়ে আড়াই বছর ছোটো। প্রথম দেখা একবার হয়েছিল ১৮৪২ সালে। এর বেশি কিছু নয়। কিন্তু ওঁরা পরস্পরকে চিনতেন ওঁদের লেখার মধ্য দিয়ে। ১৮৪৪ সালে প্রায় দশ দিন জুড়ে ওঁদের প্রথম মতবিনিময় হয়, আর পরের বছর ‘যৌথ ফার্মে’র পুরোদমে কাজ শুরু হয়। তখন কমিউনিস্ট লিগ তৈরি হয়নি। ‘লিগ অব জাস্ট’ ও আরও কিছু সংগঠন প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্যভাবে তখন কাজ করছিল। কমিউনিস্ট শব্দটা এবং নানারকম সাম্যবাদী ও সমাজতন্ত্রের ধারণা আগে থেকেই প্রচলিত ছিল। বেবুফ (Babeuf) ইশ্‌তেহারের প্রথম প্রকাশের ৫০ বছর আগে এর ব্যবহার করেছিলেন। ফরাসি বিপ্লবের সময়কার বেবুফ ও তাঁর অনুগামীদের মার্কস সপ্রশংস উল্লেখ করেছেন। মার্কস ১৮৪৩ সালেই হেগেলের দর্শনের সমালোচনা লেখা শুরু করেন। এবং ইশ্‌তেহার লেখার আগের বছর ‘থিসিস অন ফয়েরবাখ’-এর লেখা শেষ করেছিলেন। দর্শন দিয়ে শুরু কিন্তু সেই চর্চা বিস্তৃত হয়েছে অর্থনীতি-রাজনীতি সহ অন্যান্য ক্ষেত্রজুড়ে। এই সময়ে এঙ্গেলসের লেখা ইংল্যান্ডের শ্রমিকশ্রেণির অবস্থা এবং মার্কস-এঙ্গেলস-এর যৌথভাবে লেখা ‘জার্মান ইডিওলজি’, ‘হোলি ফ্যামিলি’ ইত্যাদি পর্ব ১৮৪৫-এ শুরু। ওই সালেই ব্রাসেলসে দু’জনের মধ্যে আলোচনায় একটা ঐক্যবদ্ধ বোঝাপড়া তৈরি হয়। যা তাঁদের জীবনের শেষদিন পর্যন্ত অটুট ছিল। মার্কস-এর মৃত্যুর পরে এঙ্গেলস ক্যাপিটাল-এর দ্বিতীয় ও তৃতীয় খণ্ড প্রকাশ করার দুরুহ কাজ ছাড়াও মার্কসবাদের সামগ্রিক বিকাশে অতুলনীয় পরিশ্রম করেছিলেন। এই সবকিছুর প্রেক্ষাপট ছিল মূলত পশ্চিম ইয়োরোপ জুড়ে একের পর এক গণবিদ্রোহের ঘটনা, যা আবার একবার ইশ্‌তেহার প্রকাশের অব্যবহিত পরেই ফ্রান্সে এবং ইয়োরোপের অন্যান্য দেশে অভ্যুত্থানে দেখা দিয়েছিল। কমিউনিস্ট ইশ্‌তেহার রচনার এই প্রেক্ষাপট বাদ দিয়ে ইশ্‌তেহারের মূল বিষয় অনুধাবন করা মুশকিল। ডি রিয়াজনভ-এর টীকা সহ ভি জি কিয়েরনান সম্পাদিত পুস্তকে এবং এঙ্গেলসের লেখা কমিউনিস্ট লিগের ইতিহাসে ইশ্‌তেহারের প্রেক্ষাপট সম্পর্কে বিশদ বিবরণ পাওয়া যায়। তারপরে থেকে এই সম্পর্কে আজ পর্যন্ত অনেক গবেষণামূলক রচনা প্রকাশিত হয়েছে।

কমিউনিস্ট ইশ্‌তেহারের ১৭৫ বছর উপলক্ষে ইতিমধ্যে আমাদের পত্র-পত্রিকা সহ অন্যত্র অনেক রচনা প্রকাশিত হয়েছে। এখানে ইশ্‌তেহারের মূল খণ্ডটি নিয়ে বর্ণনা নিষ্প্রয়োজন। শুধু এটা মনে রাখা দরকার ১৯১৭ সালে নভেম্বর বিপ্লব পর্যন্ত ১৮৪৮ সালের মূল পাণ্ডুলিপিতে টীকা ও পাদটীকা (মূলত এঙ্গেলসের) সহ ৩৫টি ভাষায় বিভিন্ন সংস্করণের সংখ্যা ছিল ৫৪৪টি (তথ্যসূত্রঃ আইজাজ আহমেদ)। একবিংশ শতাব্দীর শুরুতেই বিবিসি’র সমীক্ষায় সর্বাধিক পঠিত পুস্তক হলো ‘কমিউনিস্ট ইশ্‌তেহার’। ২০০৭-০৮-এর সংকটের পর এনিয়ে চর্চা আরও বেড়েছে বৈ কমেনি। এখানে কেবল মার্কস-এঙ্গেলস-এর যৌথ স্বাক্ষরে এবং মার্কস-এর মৃত্যুর পর এঙ্গেলস-এর স্বাক্ষরে প্রকাশিত মোট সাতটি সংস্করণের ভূমিকায় উল্লেখিত বিষয়গুলির কয়েকটির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হচ্ছে। এই ভূমিকাগুলির প্রথম দু’টি - জার্মান (১৮৭২), রুশ (১৮৮২) সংস্করণে মার্কস-এঙ্গেলস-এর যৌথ স্বাক্ষর ছিল। বাকি পাঁচটি মার্কস-এর মৃত্যুর পর এঙ্গেলসের স্বাক্ষরে প্রকাশিত হয়েছে। ১৮৭২ সালে জার্মান সংস্করণের ভূমিকার শুরুতেই লেখা হয়েছিল, ‘‘শ্রমিকদের আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান কমিউনিস্ট লিগের তখনকার দিনের অবস্থায় শুধু গুপ্ত সমিতি হওয়া ছাড়া উপায় ছিল না।’’ এবং শেষ প্যারায় উল্লেখ করা হয়েছিল, ‘‘কিন্তু, এই ইশ্‌তেহার এখন ঐতিহাসিক দলিল হয়ে পড়েছে, এর অদল-বদল করবার কোনো অধিকার আমাদের নেই। সম্ভবত পরবর্তী কোনো সংস্করণ বার হবে একটি ভূমিকা সহ যা ১৮৪৭ সাল থেকে আজ পর্যন্ত সময়ের ফাঁক পূরণে সেতু বন্ধনের কাজ করবে। বর্তমান নতুন মুদ্রণটি এত অপ্রত্যাশিত ছিল যে, আমাদের পক্ষে তার জন্য সময় ছিল না।’’

উপরোক্ত ভূমিকায় তাঁরা স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন যে, ‘‘ইশ্‌তেহারের মধ্যেই এই কথা বলা আছে যে, সব সময় এবং সর্বত্র ইশ্‌তেহারে উল্লিখিত নীতিগুলির ব্যবহারিক প্রয়োগ তৎকালীন বিদ্যমান অবস্থার উপরে নির্ভর করবে।’’ এবং সে কারণে মূল ইশ্‌তেহারের দ্বিতীয় অধ্যায়ের শেষে প্রস্তাবিত বৈপ্লবিক ব্যবস্থাগুলির উপরে কোনো বিশেষ জোর দেওয়া হয়নি। এই সংস্করণের অব্যবহিত পূর্বেই প্যারি কমিউনের অভিজ্ঞতার পরিপ্রেক্ষিতে ‘‘কিছু কিছু অনুপুঙ্খ বর্ণনা সেকেলে হয়ে পড়েছে’’। কমিউন একটা কথা বি‍‌শেষভাবে প্রমাণ করে দিয়েছে যে, ‘‘শ্রমিকশ্রেণি আগে থেকেই তৈরি রাষ্ট্রযন্ত্রটা শুধু দখল করেই তার নিজের উদ্দেশ্য সিদ্ধির জন্য কাজে লাগাতে পারে না।’’ এই শিক্ষাটি এখনও সমানভাবে প্রযোজ্য।

১৮৮২ সালে রুশ সংস্করণের ভূমিকাটি গুরুত্বপূর্ণ। ১৮৪৮ সালে প্রকাশিত ইশ্‌তেহার থেকেই বোঝা যায় যে, এটি মূলত ইয়োরোপ কেন্দ্রীক ছিল। এখন একথা জানা যে, পরবর্তীকালে মার্কস-এঙ্গেলস আমেরিকা, রাশিয়া ছাড়াও ঔপনিবেশিক শাসনে শোষিত দেশগুলির প্রতি তাঁদের দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছিলেন। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের শিল্প ক্ষেত্রে দ্রুত অগ্রগতির ফলে পশ্চিম ইয়োরোপের, বিশেষকরে ইংল্যান্ডের একচেটিয়া অধিকার যে শীঘ্রই ভেঙে যেতে বাধ্য সে কথা তাঁরা উল্লেখ করেছিলেন। অন্যদিকে ‘‘রাশিয়া ইয়োরোপে বিপ্লবী কাজের পুরোভাগে এসে দাঁড়িয়েছে’’ - এটা উল্লেখ করার পাশাপাশি সেখানে দেশের মোট জমির অর্ধেকেরও বেশি কৃষকদের যৌথ মালিকানায় থাকায় যে প্রশ্ন উঠেছিল তার উত্তরে তাঁরা লিখেছিলেন, ‘‘রাশিয়ায় বিপ্লব যদি পশ্চিমে সর্বহারা বিপ্লবের সংকেত হয়ে ওঠে, যাতে উভয়ে পরস্পরের পরিপূরক হয়ে দাঁড়ায়, তাহলে রাশিয়ায় ভূমির বর্তমান যৌথ মালিকানা কাজে লাগাতে পারে কমিউনিস্ট বিকাশের সূত্রপাত হিসাবে।’’ ইশ্‌তেহার প্রকাশের ১৭৫ বছরে দাঁড়িয়ে একথা বলা যায়, এশিয়া, আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকার বহু দেশেই একথাটি এখনও প্রাসঙ্গিক।

মার্কসের মৃত্যুর পর ১৮৮৩ সালের জার্মান সংস্করণের ভূমিকা থেকে পরবর্তী সংস্করণগুলির ভূমিকা একা এঙ্গেলসকেই লিখতে হয়েছে। ১৮৮৩ সালের সংস্করণে এঙ্গেলস স্পষ্টভাবে লিখেছিলেন, ‘‘ইশ্‌তেহারের ভিতর যে মূল চিন্তা প্রবহমান তাহলো এই - ইতিহাসের যুগে অর্থনৈতিক উৎপাদন এবং তার থেকে অনিবার্যভাবে উদ্ভূত সামাজিক গঠন হলো সেযুগের রাজনৈতিক এবং বৌদ্ধিক ইতিহাসের ভিত্তি; সুতরাং (জমিতে আদিম যৌথ মালিকানার অবসানের পর থেকে) সমগ্র ইতিহাস হয়ে এসেছে শ্রেণিসংগ্রামের ইতিহাস, সামাজিক বিবর্তনের বিভিন্ন পর্যায়ে শোষিত আর শোষক, অধীন আর অধিপতি শ্রেণির মধ্যে সংগ্রামের ইতিহাস; কিন্তু এই সংগ্রাম আজ এমন পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে যেখানে শোষিত এবং নিপীড়িত শ্রেণি (প্রলেতারিয়েত) নিজেকে তার শোষক এবং নিপীড়ক শ্রেণির (বুর্জোয়া শ্রেণির) কবল থেকে উদ্ধার করতে গেলে সঙ্গে সঙ্গে গোটা সমাজকে শোষণ, নিপীড়ন আর শ্রেণিসংগ্রাম থেকে চিরদিনের মতো মুক্তি দিয়ে ছাড়া সেটা আর করতে পারে না - এই মূল চিন্তাটি পুরোপুরি এবং একমাত্র মার্কস-এরই।

একথা আমি বহুবার বলেছি। কিন্তু ঠিক আজকেই এ বক্তব্য ‘ইশ্‌তেহার’-এরই পুরোভাগেও থাকা প্রয়োজন।’’ এই অংশের সঙ্গে যুক্ত পাদটীকা সহ পুরো বিষয়টি বিশ্ব কমিউনিস্ট আন্দোলনে এখনও গভীর অনুশীলনের দাবি রাখে।

১৮৮৮ সালের ইংরেজি সংস্করণে এঙ্গেলসের লেখা ভূমিকাটি এখনও আদ্যপ্রান্ত বার বার অনুশীলনের দাবি করে। এখানে শ্রমজীবী মানুষের আন্তর্জাতিক সমিতি (প্রথম আন্তর্জাতিক) গঠন ও পতনের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে সমাজতন্ত্রবাদ ও সাম্যবাদী সাহিত্যের মধ্যে পার্থক্যের বিষয়গুলি সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে। এখানে উল্লেখ করা যায় যে, মার্কস নিজে ‘গোথা কর্মসূচি’র সমালোচনায় একথা স্পষ্টভাবেই উল্লেখ করেছিলেন যে, সমাজতন্ত্র ও সাম্যবাদী ব্যবস্থার মধ্যে মৌলিক পার্থক্য হবে এই যে, প্রথমটির নীতি হবে প্রত্যেকে তার শ্রম অনুযায়ী পাবে, দ্বিতীয়টিতে পাবে প্রয়োজন অনুযায়ী।

১৮৯০ সালে জার্মান সংস্করণের ভূমিকায় ১৮৮৩ সালের জার্মান সংস্করণের ভূমিকার উল্লেখ করে এঙ্গেলস লিখেছেন, একটি নতুন জার্মান সংস্করণের প্রয়োজন হয়েছে এবং ইশ্‌তেহারের ক্ষেত্রে অনেক কিছু ঘটেছে যার উল্লেখ করা উচিত। এখানে কেবল সেই সংস্করণের শেষ অংশটি হুবহু উদ্ধৃত করা হচ্ছে -
‘দুনিয়ার মজদুর এক হও’! বিয়াল্লিশ বছর আগে, প্রথম প্যারিস বিপ্লবে সর্বহারা তার নিজস্ব দাবি নিয়ে হাজির হয়; ঠিক তারই পূর্বক্ষণে আমরা যখন পৃথিবীর সামনে এই কথা ঘোষণা করেছিলাম সেদিন অতি অল্প কণ্ঠেই তার প্রতিধ্বনি উঠেছিল; যাই হোক, ১৮৬৪ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর প‍‌শ্চিম ইয়োরোপের অধিকাংশ দেশের সর্বহারা ‘শ্রমজীবী মানুষের আন্তর্জাতিক সমিতি’তে (প্রথম আন্তর্জাতিক-লেখক) হাত মেলায়। ওই সমিতির স্মৃতি অতি গৌরবময়। সত্য বটে, আন্তর্জাতিক বেঁচে ছিল মাত্র নয় বছর, কিন্তু সকল দেশের সর্বহারাদের যে চিরন্তন ঐক্য এতে সৃষ্টি হয়েছিল, সে ঐক্য যে আজও জীবন্ত এবং আগের তুলনায় যে অনেক বেশি শক্তিশালী, বর্তমান কালটার থেকে তার আর কোনো বড়ো সাক্ষ্য নেই। কেননা, ঠিক আজকের দিনে যখন আমি এই পঙ্‌ক্তিগুলি লিখছি তখন ইয়োরোপ ও আমেরিকার সর্বহারারা তাদের লড়বার শক্তিকে পরিদর্শন করছে, এই প্রথম তারা সঙ্ঘবদ্ধ, তাদের সমাবেশ ঘটেছে একক বাহিনীরূপে, এক পতাকার নিচে, একটি আশু লক্ষ্যের জন্যঃ ১৮৬৬ সালে আন্তর্জাতিকের জেনেভা কংগ্রেসে ও ১৮৮৯ সালে প্যারিসে শ্রমিক কংগ্রেসে (যা দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক বলে পরিচিত - লেখক) আবার যা ঘোষিত হয়েছিল, সেইভাবে আইন পাশ করে সাধারণ আটঘণ্টা শ্রমদিন চালু করতে হবে। আজকের দৃশ্য সকল দেশের পুঁজিপতি ও জমিদারদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেবে যে, আজ সকল দেশের শ্রমিকরা সত্যিই এক হয়েছে।

নিজের চোখে তা দেখার জন্য যদি মার্কস এখনো আমার পাশে থাকতেন!’’

এঙ্গেলস ১৮৯২ সালে পোলিশ সংস্করণের ভূমিকায় (মূল জার্মান সংস্করণ থেকে নেওয়া) পোলান্ডের নির্দিষ্ট পরিস্থিতি উল্লেখ করে লিখেছেন যে, ‘‘আজকের বুর্জোয়াদের কাছে এ স্বাধীনতা, কম করে বললেও, নিরর্থক। তথাপি ইয়োরোপীয় জাতিগুলির ঐক্যবদ্ধ সহযোগিতার জন্য তার প্রয়োজন আছে। তা অর্জন করতে পারে কেবল নবীন পোলিশ সর্বহারা শ্রেণি এবং এদের হাতেই এ স্বাধীনতা নিরাপদ। ইয়োরোপের বাকি অং‍‌শের শ্রমিকদের পক্ষে পোলান্ডের স্বাধীনতা খোদ পোলিশ শ্রমিকদের মতোই প্রয়োজনীয়।’’

১৮৯৩ সালের ইতালীয় সংস্করণের ভূমিকা ইতালির পাঠকদের উদ্দেশে ভূমিকাটিই ছিল এঙ্গেলস লিখিত ইশ্‌তেহারের শেষ ভূমিকা। এই ভূমিকার কেবল শেষ প্যারাটিই এখানে উদ্ধৃত করা হলো -
‘‘অতীতে পুঁজিবাদ যে বিপ্লবী ভূমিকা নিয়েছিল, তার প্রতি পূর্ণ সুবিচার করছে ইশ্‌তেহার। প্রথম পুঁজিবাদী দেশ ছিল ইতালি। সামন্ততান্ত্রিক মধ্য যুগের অবসান ও আধুনিক পুঁজিবাদী যুগের উদ্বোধন-ক্ষণ চিহ্নিত এক বিরাট পুরুষের আবির্ভাবে। তিনি ইতালির দান্তে, তিনি যুগপৎ মধ্যযুগের শেষ ও আধুনিককালের প্রথম কবি। ১৩০০ সালের মতোই আজ এক নতুন ঐতিহাসিক যুগ এগিয়ে আসছে। ইতালি কি আমাদের এক নতুন দান্তে দেবে, যিনি সূচিত করবেন এই নতুন প্রলেতারীয় যুগের জন্মলগ্ন?’’

এঙ্গেলস-এর এই প্রশ্ন এখন আবার দুনিয়াজুড়ে ফিরে এসেছে।