৬১ বর্ষ ১২ সংখ্যা / ৩ নভেম্বর, ২০২৩ / ১৬ কার্তিক, ১৪৩০
রেশন দুর্নীতি-যোগে মন্ত্রী জেলে
নজর ঘোরাতে মমতা ব্যানার্জি গল্প ফাঁদছেন
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ ১, ২, ৩। মদন মিত্র, পার্থ চ্যাটার্জির পর জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। তৃণমূল কংগ্রেসের সরকারের মন্ত্রী পদে থাকা অবস্থায় তৃতীয় ব্যক্তি যিনি কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার হাতে গ্রেপ্তার হলেন দুর্নীতির অভিযোগে। নির্লজ্জ তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব এখনও নির্বিকার, মন্ত্রীপদে বহাল রেখেছেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে। ২৬ অক্টোবর রেশন দুর্নীতি মামলায় প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী ও বর্তমান বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে ইডি গ্রেপ্তার করার পর তাই তাঁর পক্ষ নিয়ে ১ নভেম্বর সাফাই দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বাম আমলের ‘ভুয়ো রেশন কার্ডে’র গল্প ফেঁদে নজর ঘোরানোর মরিয়া চেষ্টা করছেন রাজ্য জুড়ে সমালোচনা ও ছি-ছিক্কারের থেকে।
মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগের জোরালো জবাব দিয়েছেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। তিনি বলেছেন, ‘১৩ বছর পর হুশ হলো? বামফ্রন্টের সময় দুর্নীতি হলে এতদিন কি করছিলেন?’ এ প্রসঙ্গে তিনি আগেই বলেছেন, ‘দুর্নীতিগ্রস্ত’দের শাস্তি দেওয়ার বদলে বাম আমলের খাদ্যমন্ত্রী পরেশ অধিকারীকে তৃণমূলে নিয়ে পদ দিয়েছেন কেন মুখ্যমন্ত্রী?
প্রায় ২১ ঘণ্টা ধরে তল্লাশি ও জিজ্ঞাসাবাদের পর ২৬ অক্টোবর রাত ৩টে ২০ মিনিট নাগাদ রেশন দুর্নীতি মামলার তদন্তে অসহযোগিতার অভিযোগে ইডি’র হাতে গ্রেপ্তার হন রাজ্যের প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী। ওইদিন খুব সকালে সল্টলেকের বিসি ব্লকে বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের দু’টি বাড়িতে ইডি হানা দেয়। গ্রেপ্তারির পর তাঁকে তাঁর বাড়ি থেকে বের করে নিয়ে যায় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট’র আধিকারিকরা। ইডি’র একটি সূত্রে জানা গেছে রেশন দুর্নীতির উৎস খুঁজে পেতেই ২৬ তারিখ সকাল থেকে আটটি জায়গায় এই তল্লাশি অভিযান শুরু হয়।
কিছুদিন আগেই নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগের তদন্তে খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষের বাড়িতে তল্লাশি চালায় সিবিআই। রেশন দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে ১০ অক্টোবর গ্রেপ্তার হন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী বাকিবুর রহমান। তাঁর বাড়িতে ৮ অক্টোবর থেকে তল্লাশি চালায় ইডি’র আধিকারিকরা। ব্যবসায়ী বাকিবুর রহমানকে জেরার পরেই উঠে এসেছে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। উঠে আসে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের নাম। প্রায় ৫৫ ঘণ্টা বাকিবুরের একাধিক বাড়ি এবং ডেরায় তল্লাশি চালানোর পর উদ্ধার হয়েছে রেশন দুর্নীতির প্রচুর নথি। নথির মধ্যে খাদ্য দপ্তরের স্ট্যাম্প সহ এমনকী পাওয়া গেছে বনমন্ত্রীর স্ত্রীকে বিদেশ পাঠানোর বিমানের টিকিটও, যা পরে বাতিল হয়। দেশে বিদেশে বহু জায়গায় বাকিবুর রহমানের একাধিক ব্যবসা, বিনিয়োগ রয়েছে বলে ইডি সূত্রে খবর। টালিগঞ্জের সিনেমাতেও তাঁর বিনিয়োগ রয়েছে, সেই সূত্রে পার্থ চ্যাটার্জির বান্ধবীর সঙ্গেও যোগ রয়েছে বলে জানা গেছে।
২৬ অক্টোবর শুধু রাজ্যের বনমন্ত্রীর বাড়ি নয়, তাঁর আপ্তসহায়ক অমিত দে’র নাগেরবাজারের ভগবতী পার্ক এলাকায় এবং স্বামী বিবেকানন্দ রোড এলাকায় দুটি ফ্লাটে হানা দেয় ইডি’র আধিকারিকরা। ইডি সূত্রে খবর, ব্যবসায়ী বাকিবুরের রহমানের সঙ্গে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের মোবাইল মেসেজ আদান প্রদানের চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। আবার মন্ত্রী ঘনিষ্ঠদের বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে হিসাব বহির্ভূত প্রায় ১৬ কোটি টাকার হদিশ পাওয়ায় সেই অ্যাকাউন্টগুলি ফ্রিজ করে দেওয়া হয়েছে। সন্দেহের তালিকায় রয়েছেন মন্ত্রী কন্যাও।
বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের গ্রেফতারির পর সুটিয়ার প্রতিবাদী তথা শিয়ালদহ মিত্র ইনস্টিটিউশনের প্রাক্তন শিক্ষক বরুণ বিশ্বাসের মৃত্যু রহস্য নিয়ে প্রশ্ন উঠে আসছে বিভিন্ন মাধ্যমে। ২০১২ সালের জুলাই মাসের গোড়ায় বরুণ বিশ্বাসকে খুন করা হয়েছিল। সেই ঘটনায় বরুণের বাবা এবং দাদা অভিযোগের আঙুল তুলেছিলেন জ্যোতিপ্রিয়র বিরুদ্ধে। অন্য মামলায় হলেও বৃহস্পতিবার জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক গ্রেফতার হয়েছেন। এই আবহে বরুণের দাদা, বাবা অভিযোগ করেছেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের নামে। আশা, এ বার হয়তো বরুণের খুনের সুবিচার পাবেন তাঁরা।