৫৯ বর্ষ ৪ সংখ্যা / ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১ / ১৭ ভাদ্র, ১৪২৮
তিন কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে ২৫ সেপ্টেম্বর সংযুক্ত কিষান মোর্চার ডাকে ভারত বন্ধ
সিঙ্ঘু সীমান্তে সংযুক্ত কিষান মোর্চার সর্বভারতীয় কনভেনশন। বক্তব্য রাখছেন মরিয়ম ধাওয়ালে।
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ কৃষক স্বার্থ বিরোধী নয়া তিন কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে ২৫ সেপ্টেম্বর ভারত বন্ধের ডাক দিয়েছে সংযুক্ত কিষান মোর্চা। তার আগে ৫ সেপ্টেম্বর মুজফ্ফরনগরে হবে মহামিছিল। এই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে গ্রামে গ্রামে মজবুত কৃষক আন্দোলন গড়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ২৭ আগস্ট সিঙ্ঘু সীমান্তে দু’দিনের জাতীয় কনভেনশন থেকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ২৬ ও ২৭ আগস্ট এই কনভেনশন অনুষ্ঠিত হয়।
দেশের ২২টি রাজ্য থেকে ৩০০টির বেশি কৃষক এবং খেতমজুর সংগঠনের প্রতিনিধি সহ ১৮টি সর্বভারতীয় ট্রেড ইউনিয়ন, ৯টি মহিলা সংগঠন এবং ১৭টি ছাত্র-যুব সংগঠনের প্রায় দু’হাজার প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন এই গুরুত্বপূর্ণ কনভেনশনে। দু’দিনের এই কনভেনশন শেষে কনভেনশনের আহ্বায়ক আশিস মিত্তাল সাংবাদিক সম্মেলনে জানিয়েছেন, দু’দিনের জাতীয় কনভেনশনে বিপুল সাড়া পাওয়া গিয়েছে। কনভেনশনে সর্বসম্মতিতে কৃষি আইন ও বিদ্যুৎ বিল বাতিল সহ বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলন তীব্রতর করতে ভারত বন্ধের কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। গত বছর একই দিনে মহামারীর মধ্যে সফল ভারত বন্ধ পালন করেছে সংযুক্ত কিষান মোর্চা। এবারেও গত বছরের মতো একইদিনে ভারত বন্ধের কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, গত বছর থেকে এই বছর বন্ধ হবে আরও ব্যাপক। কনভেনশনে আলোচনায় দেশের প্রতিটি গ্রামে মজবুত কৃষক আন্দোলন গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রতিনিধিরা। কৃষক আন্দোলনকে সামনে রেখে উত্তর প্রদেশে আসন্ন নির্বাচনে বিজেপি-কে পরাস্ত করার জমি তৈরির লক্ষ্যে মুজফ্ফরনগরে সাম্প্রতিককালে বৃহত্তম সমাবেশ হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
এই কনভেনশনে সংযুক্ত কিষান মোর্চার প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, দেশের প্রতিটি রাজ্য ও জেলায় কৃষক মোর্চা গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হবে। প্রতিটি রাজ্য ও জেলায় কনভেনশন করে আন্দোলন কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে। প্রতিটি টোল প্লাজায় গিয়ে টোল আদায় বন্ধ করার কর্মসূচি পালন করা হবে। সরাসরি প্রতিরোধে নামতে হবে কৃষকদের। বিক্ষোভ দেখাতে হবে বিজেপি এবং বিজেপি’র শরিক বিধায়ক ও সাংসদদের বিরুদ্ধে।
মোট ৯০ জন প্রতিনিধি কনভেনশনে বক্তব্য রাখেন। তাঁরা কনভেনশনে জানিয়েছেন, কৃষকরা তাঁদের দাবি নিয়ে গত ৯ মাস ধরে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। এই আন্দোলন ভেঙে দিতে তৎপর আরএসএস-বিজেপি। সমস্ত প্ররোচনা রুখে আন্দোলনে অনড় রয়েছেন কৃষকেরা। সর্বনাশা তিন কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে আন্দোলন চলবে এবং সেই আন্দোলন দেশের প্রতিটি গ্রামে ছড়িয়ে দেওয়া হবে।
কৃষক নেতা রাকেশ টিকায়েত এই কনভেনশন উদ্বোধন করেছিলেন। তিনি স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন, কৃষকদের দাবিগুলি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে এই আন্দোলন চলবে। কনভেনশনের সাংগঠনিক কমিটির আহ্বায়ক আশিস মিত্তাল প্রতিনিধিদের সামনে খসড়া প্রতিবেদন পেশ করেন। প্রতিবেদনে চলতি কৃষক সংগ্রামকে আরও তীব্র করা এবং গোটা দেশে ছড়িয়ে দেবার আহ্বান জানানো হয়েছে। কনভেনশনে তিনটি পৃথক অধিবেশন হয়েছেন। একটি তিন কালা কৃষি আইন বাতিল, দ্বিতীয়টি শিল্প শ্রমিকদের নিয়ে, তৃতীয়টি ছিল কৃষি শ্রমিক, গ্রামীণ গরিব এবং আদিবাসীদের নিয়ে।
পাতিয়ালায় কৃষক জমায়েত।
কনভেনশনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে সারা ভারত কৃষক সভার সাধারণ সম্পাদক হান্নান মোল্লা বলেন, গত ৯ মাস ধরে এই ঐতিহাসিক কৃষক সংগ্রামে ৬০০ শহিদ হয়েছেন। তিনি বলেন, ভারতের ইতিহাসে এই রকম ৯ মাস ধরে শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আন্দোলন হয়নি। যে আন্দোলনে ৬০০’র বেশি কৃষক শহিদ হয়েছেন। স্বাধীনতার পর এত দীর্ঘ এবং শান্তিপূর্ণ আন্দোলন হয়নি, যার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন ৮০ কোটি মানুষ।
তিনি বলেছেন, সমস্ত অংশের শ্রমজীবী মানুষ এই আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়েছেন। মহিলা, ছাত্র-যুব সহ সমস্ত অংশের মানুষ কৃষক আন্দোলনের সমর্থনে এগিয়ে এসেছেন। ৫০০’র বেশি সংগঠন এই সংগ্রামে যুক্ত রয়েছে।
তিনি বলেন, এই আন্দোলনের বড়ো প্রভাব পড়েছে দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে। মানুষকে ধর্ম এবং জাতের নামে ভাগ করার কাজ করছে কিছু শক্তি। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, বিজেপি মানুষকে হিন্দু-মুসলমানে ভাগ করতে পারবে না। এই কনভেনশন থেকে আমরা সরকারকে সতর্ক করে বলছি সাধারণ, নিপীড়িত মানুষ মোদীর সঙ্গে নেই। কেন্দ্রের সরকার এই দেশকে ধ্বংস করতে পারবে না, দেশকে বিক্রি করতে পারবে না।