E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৯ বর্ষ ৪ সংখ্যা / ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১ / ১৭ ভাদ্র, ১৪২৮

৩১ আগস্ট খাদ্য আন্দোলন ও গণআন্দোলনের শহিদ দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত রাজ্যজুড়ে


সুবোধ মল্লিক স্কোয়ারে শহিদ বেদিতে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন বিমান বসু।

নিজস্ব সংবাদদাতাঃ ১৯৫৯ সালের ঐতিহাসিক খাদ্য আন্দোলন ও গণআন্দোলনের শহিদদের স্মরণে ৩১ আগস্ট দিনটি নানা কর্মসূচির মধ্যদিয়ে রাজ্যজুড়ে মর্যাদার সঙ্গে পালিত হয়েছে। এদিন সিপিআই(এম) এবং বামফ্রন্টের উদ্যোগে কোভিড স্বাস্থ্যবিধি মেনেই জেলায় জেলায় শহিদ বেদিতে মাল্যদান, সভা, মিছিল, রক্তদান শিবির ইত্যাদি পালিত হয়েছে।

এদিন জেলায় জেলায় কর্মসূচির পাশাপাশি কলকাতায় সুবোধ মল্লিক স্কোয়ারে কেন্দ্রীয় কর্মসূচিতে শহিদ স্মারক বেদিতে মাল্যদানের পর সংক্ষিপ্ত সভা হয়েছে। এখানে মাল্যদান করেছেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু, সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক সূর্য মিশ্র, সিপিআই(এম) নেতা রবীন দেব, শ্রীদীপ ভট্টাচার্য, মিনতি ঘোষ, অমিয় পাত্র, রেখা গোস্বামী, আভাস রায়চৌধুরী, কল্লোল মজুমদার, অনাদি সাহু, মদন ঘোষ, দীপক দাশগুপ্ত, কনীনিকা ঘোষ, মীনাক্ষি মুখার্জি। এছাড়াও এখানে মাল্যদান করেন আরএসপি’র সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মনোজ ভট্টাচার্য, সিপিআই’র রাজ্য সম্পাদক স্বপন ব্যানার্জি, ফরওয়ার্ড ব্লকের রাজ্য সম্পাদক নরেন চ্যাটার্জি, আরসিপিআই নেতা মিহির বাইন, ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা শিবনাথ সিন্‌হা, বলশেভিক পার্টির নেতা প্রবীর ঘোষ, ১২ই জুলাই কমিটির নেতা প্রবীর গুপ্ত প্রমুখ।

এখানে ’৫৯-এর খাদ্য আন্দোলনের প্রেক্ষাপট বর্ণনাসহ বর্তমান পরিস্থিতির উল্লেখ করে বিমান বসু বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার যেভাবে কৃষিআইন এনেছে এবং কর্পোরেট স্বার্থে কৃত্রিম খাদ্য সঙ্কট ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করেছে সেই সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে হবে। বর্তমান কৃষি আইনের ফলে আরও একবার সেই মজুতদারি এবং কালোবাজারির দিন ফিরে আসতে পারে। ১৯৫৯ সালের মতো খাদ্য সঙ্কট যাতে আর ফিরে আসতে না পারে তারজন্য বামপন্থীরা সর্বশক্তি দিয়ে লড়াই করবে। তিনি আরও বলেছেন, সমস্ত রকম অত্যাচার এবং বঞ্চনার বিরুদ্ধেও গণতন্ত্র রক্ষার লড়াই আরও তীব্র করতে হবে।

সূর্য মিশ্র তাঁর ভাষণে বলেন, নতুন কৃষি আইনের মাধ্যমে খাদ্যপণ্যের বাজার বৃহৎ পুঁজির হাতে তুলে দিতে চাইছে কেন্দ্রের সরকার।

আইনে বদল এনে অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের দামের নিয়ন্ত্রণ তারা খোলা বাজারের হাতে ছেড়ে দিয়েছে। আমরা বলছি, অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের দাম সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করতেই হবে। এর অন্যথা হলে ফের একবার খাদ্যসঙ্কট দেখা দিতে পারে। এই সঙ্কট থেকে বাঁচতে বামপন্থীদের বিকল্পনীতি মানুষের কাছে নিয়ে যেতে হবে।

তিনি আরও বলেছেন, সংযুক্ত কিষান মোর্চার ডাকা ২৫ সেপ্টেম্বরের দেশব্যাপী ধর্মঘট পালিত হবে রাজ্যজুড়েও। মমতা ব্যানার্জির সরকার কালা আইনের পক্ষে না বিপক্ষে, তার প্রমাণ সেইদিন মিলবে রাজপথে।

এদিনের সভায় এছাড়াও বক্তব্য রাখেন মনোজ ভট্টাচার্য, স্বপন ব্যানার্জি, নরেন চ্যাটার্জি, মিহির বাইন প্রমুখ।

এদিন হাওড়া জেলা বামফ্রন্টের আহ্বানে ঐতিহাসিক খাদ্য আন্দোলন স্মরণে ও শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ‘ফিরে দেখা ’৫৯’ শিরোনামে একটি আলোচনাসভা আয়োজিত হয়েছে। অনিল বিশ্বাস ভবনে আয়োজিত এই আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন সি পি আই (এম) নেতা শ্রীদীপ ভট্টাচার্য সহ জগন্নাথ ভট্টাচার্য, সমর কুণ্ডু, সোয়াকত হোসেন, প্রবীর ঘোষ প্রমুখ বামফ্রন্ট নেতৃবৃন্দ। এদিন পার্টির জেলা ও ২৭টি এরিয়া কমিটির দপ্তর এবং শাখা অফিসগুলোতে শহিদ দিবস পালিত হয়েছে।

এদিন দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায় পার্টির জেলাদপ্তর বারুইপুরে রক্তপতাকা উত্তোলন ও শহিদ বেদিতে মাল্যদান করেন শমিক লাহিড়ী। অন্যান্য নেতৃবৃন্দও মাল্যদান করেন। এদিন পার্টির ৪৮টি এরিয়া কমিটি এবং ছয় শতাধিক শাখায় শহিদদের স্মরণে কর্মসূচি পালিত হয়েছে। সোনারপুরে রক্তদান কর্মসূচি, আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

নদীয়া জেলাতেও এদিন যথাযথ মর্যাদায় দিনটি পালিত হয়েছে। কৃষ্ণনগর পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে খাদ্য আন্দোলনের শহিদদের স্মৃতিতে নির্মিত শহিদ বেদিতে মাল্যদান করেন জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক সুমিত দে সহ জেলা বামফ্রন্টের নেতৃবৃন্দ। পোস্ট অফিস মোড়ে আলোচনাসভায় দিনটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করেন সুমিত দে। বক্তব্য রাখেন অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। এদিন জেলার অন্যান্য স্থানেও যথাযথ মর্যাদায় দিনটি পালিত হয়েছে।

এদিন পূর্ব মেদিনীপুর জেলার বিভিন্ন স্থানেও শহিদ দিবস পালিত হয়। নিমতৌড়িতে জেলা দপ্তরে শহিদ বেদিতে মাল্যদান করেন সি পি আই (এম) জেলা সম্পাদক নিরঞ্জন সিহি সহ পার্টি নেতৃবৃন্দ। এছাড়া পার্টির প্রতিটি এরিয়া কমিটির উদ্যোগে দিনটি পালিত হয়।

পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় খাদ্য আন্দোলনের শহিদ ৮০ জনকে শ্রদ্ধা জানানো হয়। জেলাজুড়ে ১৩৭টি স্থানে শহিদ স্তম্ভে মাল্যদান, লালপতাকা উত্তোলন, পথসভা, হলসভা ও রক্তদান শিবির অনুষ্ঠিত হয়েছে। মেদিনীপুর শহরের মিরবাজারে পার্টির জেলা কার্যালয়ের সামনে এবং নারায়ণগড় বাজারে দু’টি স্থানে পতাকা উত্তোলন এবং সংক্ষিপ্ত সভায় বক্তব্য রাখেন জেলা সম্পাদক তরুণ রায়। জেলার প্রতিটি এরিয়া কমিটি সহ শাখা দপ্তরগুলিতে শহিদ দিবস পালিত হয়েছে। এদিনের কর্মসূচি থেকে ২৫ সেপ্টেম্বর সংযুক্ত মোর্চার ডাকে সর্বভারতীয় ধর্মঘটকে সফল করার আহ্বান জানানো হয়েছে।

উত্তর ২৪ পরগনা জেলাজুড়ে এই দিনটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয়েছে। বারাসত জেলা পার্টির দপ্তরে পতাকা উত্তোলন ও শহিদ বেদিতে মাল্যদান করা হয়। এছাড়া জেলার সর্বত্র পার্টির এরিয়া কমিটি ও শাখার উদ্যোগে দিনটি পালিত হয়েছে।

এদিন হুগলি জেলায় সর্বত্র খাদ্য আন্দোলন ও গণআন্দোলনের শহিদদের স্মরণে পতাকা উত্তোলন ও শহিদ বেদিতে মাল্যদান করা হয়। খানাকুলে রেড ভলা‍‌ন্টিয়ারদের উদ্যোগে রাজহাটি বন্দর হাইস্কুলে রক্তদান কর্মসূচি হয়েছে।

উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায়ও এই দিনটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয়েছে।